Ajker Patrika

একটি ধর্ষণকাণ্ড ও নিরাপত্তা

সম্পাদকীয়
একটি ধর্ষণকাণ্ড ও নিরাপত্তা

মেয়েটি কি বাবার কাছেই যাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিল? নাকি বাবার স্মৃতি মনে গেঁথেই নতুন জীবন গড়তে চেয়েছিল? এসব প্রশ্নের আর উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না মেয়েটির কাছে। কেননা আত্মহননের পর মেয়েটি আর মনের কথা বলতে পারবে না। মৃত্যুর আগে এমনিতেও চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল সে। জুলাই আন্দোলনে শহীদ বাবার কবর জিয়ারত করে বাড়ি ফিরতে থাকা যে মেয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়, ট্রমার কারণে তার নীরব হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মরে গিয়েও যেন অনেক কথা বুঝিয়ে গেল এইচএসসি পড়ুয়া ওই কিশোরী। তার আত্মহত্যার খবর ছাপা হয়েছে ২৮ এপ্রিলের আজকের পত্রিকায়।

জুলাই আন্দোলনের একটি বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল আমাদের দেশ সব ধরনের বৈষম্য থেকে মুক্ত হবে। কিন্তু ৯ মাস যেতে না যেতেই দেশের যে অবস্থা হয়েছে, একজন মানুষ যে নিরাপদে থাকবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেই আন্দোলনে শহীদ হয়েছিল মেয়েটির বাবা। তাঁর শহীদ হওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই এই কারণটাও ছিল—দেশটা অন্তত নিরাপদ হবে নিজের সন্তানদের জন্য, ভারসাম্য থাকবে সবকিছুতে। কিন্তু নিজ এলাকাতেই সমবয়সী ছেলেদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলো তাঁর মেয়ে। সেই ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে মেয়েটিকে ভয় দেখিয়ে যে কাণ্ড ঘটানো হলো, সেটা কেমন করে একটা পরিবর্তিত সমাজে ঘটতে পারে—সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

তার মানে আন্দোলনের পর ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন এসেছে, এ রকম কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। যদিও এই একটি ঘটনা দিয়ে সবকিছু বিচার করা যায় না, কিন্তু এ কথা বলা যায় যে, দেশে যেভাবে অন্যায়-অপরাধ চলছিল, এখনো ঠিক সেইভাবেই চলছে। আইনের শাসন বলতে যা বলা হচ্ছে সে রকম কিছুর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভীষণ অবনতি হয়েছে। আর সেই কারণে ভুগছে তারা, যাদের জীবনে মুক্তি আসার কথা ছিল।

শুধু ধর্ষণের ব্যাপারে বললেই তো হচ্ছে না, মূলত যে বিষয়গুলো নিয়ে আজকাল কথাবার্তা হচ্ছে, তার সবকিছুতেই রাজনীতি এসে যুক্ত হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেভাবে মন্দ হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো যে পথ বেছে নিচ্ছে, তা একেবারেই মানবিক নয়। অর্থাৎ মানবিক একটা আকাঙ্ক্ষা যে প্রস্ফুটিত হবে বা মানুষের আশা পূরণ হবে—সে গুড়ে বালি। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে হয়।

এই মুহূর্তে সরকারের উচিত হবে সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা এবং নারী, শিশু, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি সব বিষয়ে আলাদাভাবে নজর রাখা। ধর্ষণের বিষয়ে নতুন করে, বড় করে বলার কিছু নেই। শুধু বলা যায়, স্থানীয়ভাবে মানুষকে সচেতন হতে হবে। এই ডিজিটাল যুগে নানা ধরনের বিকৃত যৌন কর্মকাণ্ড দেখে উত্তেজিত কিংবা উন্মাদ হওয়া পুরুষদের নিবৃত্ত করার জন্য যথাযথভাবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। পরিবার থেকেই ছেলেদের শেখাতে হবে—নারীরা যৌন কামনা পূরণের ভোগ্যবস্তু নয়, সম্মান-তালিকার শীর্ষে তাদের স্থান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত