Ajker Patrika

প্রতারণা

সম্পাদকীয়
প্রতারণা

বাদাম বিক্রেতা বলেছে সে পুলিশ। তাতেই মজে গেছে কলেজপড়ুয়া মেয়েটা। মিসড কলের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে করেছেন প্রেম, তারপর বিয়ে। সেই মেয়ের বাড়িতেই এএসপি পরিচয় দেওয়া আব্দুল আলীম শুরু করেছেন বসবাস। রংপুরের সৈয়দপুর নামের একটি ফাঁড়িতে নাকি তাঁর পোস্টিং। একসময় সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। এবং ধরা পড়ে যান তিনি। তিনি যে পুলিশের এএসপি নন; বরং পরিচয়-লুকানো বাদাম বিক্রেতা, সেটা ফাঁস হয়ে যায়। ফলে আটক করা হয় তাঁকে।

ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ায়। ছাপা হয়েছে আজকের পত্রিকায়।

এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা অনেক আছে। প্রতারকেরা ধূর্ত হয় বলেই  প্রতারণা করে পার পেয়ে যায়। কখনো কখনো কোনো কোনো প্রতারক ‘শিক্ষা-দীক্ষা-গুণে-মানে’ উচ্চশ্রেণির হতে না পারায় আটক হয়। আমাদের বাদাম বিক্রেতা আব্দুল আলীম সে গোত্রেরই একজন।

প্রচলিত আইনে আব্দুল আলীমের বিচার হবে। এ নিয়ে এখানে কিছুই বলার নেই। শুধু এই প্রতারণার কথা পড়ে এ ধরনের আরও কয়েকটি প্রতারণার ঘটনা মনে পড়ে গেল। কোনোটা পাওয়া গেছে সাহিত্যে, কোনোটা বাস্তবজীবনে।

নিউইয়র্কের ব্রুকলিন ব্রিজটা যে কতবার বিক্রি করেছেন জর্জ পার্কার! খুবই বিশ্বাসযোগ্যভাবে কোনো পর্যটকের কাছে গিয়ে তিনি বলতেন, ‘শুভ অপরাহ্ণ। আপনার জন্য একটা ভালো অফার আছে।’

‘মানে?’

‘এই ব্রুকলিন ব্রিজটা আমার। কম দামে বিক্রি করে দিতে চাই।’

এরপর বোকা পর্যটককে ঘোল খাইয়ে ‘সরকারি’ দলিলপত্র করে দিতেন অল্প টাকায়। বলতেন, এই ব্রিজ দিয়ে কোনো পথচারী কিংবা গাড়ি যদি চলে, তাহলে সেই ব্যক্তি বা গাড়িচালকের কাছ থেকে টোল আদায় করতে পারবে সে। ব্রিজের নতুন মালিক টোল আদায় করতে গেলেই পুলিশ চলে আসত। তখন নিজের নির্বুদ্ধিতার মাশুল দিতে হতো তাঁকে।

বলা ভালো, জর্জ পার্কার ছিলেন একজন পেশাদার ক্যানভাসার। কথার তুবড়িতে তিনি সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা বানাতে পারতেন।

আমরা বিখ্যাত রুশ লেখক নিকোলাই গোগলের রেভিজোর বা ইনস্পেক্টর জেনারেল নাটকটির কথাও তুলে আনা যায়। পিটার্সবার্গের খুদে কেরানি ইভান খলেস্তাকোভের চাতুরী নিয়েই গড়ে উঠেছে কাহিনি। ছোট্ট একটি জনপদে আসবেন ইনস্পেক্টর জেনারেল, এখানকার সরকারি কর্মচারীদের কাজের হিসাব নেবেন। এই খবর রটে যাওয়ায় অসাধু কর্মকর্তারা তাদের চুরিচামারি ধরা পড়ার ভয়ে আগে থেকেই টাকাপয়সা দিয়ে হাত করতে চায় ইনস্পেক্টর জেনারেলকে। খলেস্তাকোভই যে ইনস্পেক্টর জেনারেল, সেটা বিশ্বাস করে তারা। খলেস্তাকোভও মওকা পেয়ে যায়। সে যে একজন কপর্দকহীন কেরানি, সেটা তো কেউ জানে না। সুযোগটা নিয়ে এমন সব কাণ্ডকীর্তি গড়ে তোলে সে, যা বলার মতো নয়।

আব্দুল আলীমের যদি জেল হয়, তাহলে কারা কর্তৃপক্ষের উচিত হবে তাঁকে গোগলের ইনস্পেক্টর জেনারেল বইটি পড়তে দেওয়া। আর ব্রুকলিন ব্রিজ বিক্রির ঘটনাটাও গল্পচ্ছলে তাঁকে বলে দেওয়া। ছিঁচকে প্রতারণার দায়ে বন্দী একজনের উচ্চাঙ্গের প্রতারণা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। তাতে নিজেকে নিয়ে লজ্জা পেয়ে সে হয়তো প্রতারণা ছেড়েও দিতে পারে! 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত