শোয়েব সাম্য সিদ্দিক
গত কয়েক দশকে লেনদেনের ধরনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। একসময় অর্থ মানেই ছিল হাতে ধরা কাগজের নোট বা ধাতব কয়েন। বাজারে গেলে টাকা গুনতে হতো, খুচরা জোগাড় করতে হতো, এমনকি অনেক সময় পকেটভর্তি নগদ অর্থ নিয়ে ঘোরাই ছিল স্বাভাবিক। দোকান থেকে শুরু করে বাসাভাড়া বা বেতন—সবকিছুই নগদ টাকার মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতি আর সময়ের পরিবর্তনে মানুষের অভ্যাসও বদলেছে। এখন আর হাতে টাকা নেওয়ার ঝামেলা নেই, মোবাইল ফোন কিংবা ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে মুহূর্তেই লেনদেন করা যায়। অর্থে সরাসরি হাত না দিয়েই যে লেনদেন হয় সেটাই আজকের ‘ক্যাশলেস ব্যবস্থা’।
ক্যাশলেস ব্যবস্থায় যেকোনো লেনদেনে নগদ টাকার বদলে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। মোবাইল অ্যাপ, ব্যাংক কার্ড বা কিউআর কোডের মাধ্যমে টাকা পাঠানো বা গ্রহণ করা যায়। এটি সময় বাঁচায়, ঝামেলা কমায় এবং নিরাপত্তা বাড়ায়। বাংলাদেশে এই ব্যবস্থা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে, বিশেষ করে গত এক দশকে।
ক্যাশলেস লেনদেনের ধারণা প্রথম জনপ্রিয় হয়েছিল উন্নত বিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ইত্যাদি দেশে অনেক আগেই ব্যাংক কার্ড ও ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার সূচনা হয়। ক্যাশলেস সোসাইটির অন্যতম দৃষ্টান্ত বর্তমানে নরডিক দেশ সুইডেন, যেখানে এখন নগদ অর্থের ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলা চলে। মাত্র ১০ শতাংশের কমসংখ্যক মানুষ এখন ক্যাশ ব্যবহার করে সেখানে। আইএমএফের ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্কে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ক্যাশলেস লেনদেনে অভ্যস্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুইডেন হয়তো বিশ্বের প্রথম সম্পূর্ণ ক্যাশলেস দেশ হবে। এসব দেশে উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা মানুষের আস্থা বাড়িয়েছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য শিক্ষণীয়।
বাংলাদেশে নগদহীন লেনদেনের হালহকিকত
গত এক দশকে বাংলাদেশে ক্যাশলেস লেনদেন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) যেমন বিকাশ, নগদ ও রকেট শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বিকাশের ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু মোবাইল লেনদেনেই প্রায় ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, মোবাইল ওয়ালেট এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা চালু করে সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত করেছে। বিশেষ করে করোনার সময়ে ঘরে বসে কেনাকাটা ও বিল পরিশোধের প্রয়োজনীয়তা মানুষের মধ্যে ডিজিটাল লেনদেন শেখার প্রবণতা বাড়িয়েছে। ফলস্বরূপ, নগদ লেনদেনের ওপর নির্ভরশীলতা কমে গিয়ে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি ক্যাশলেস অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে, গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সেবার সীমাবদ্ধতা এবং ডিজিটাল শিক্ষার অভাবে ক্যাশলেস ব্যবস্থা পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েনি।
রাজশাহীর নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ অচিন্ত্য কুমার মল্লিকের একটি অভিজ্ঞতা এই রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে। গত আগস্ট মাসে হাসপাতালে কর্মরত ডা. অচিন্ত্য জরুরি রোগী দেখে বিশ্রামের জন্য বের হচ্ছিলেন। তাঁর ওয়ালেটে থাকা শেষ টাকাটিও খাবারের জন্য খরচ করলেন। মনে করেছিলেন, বাসায় ফেরার পথে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা তুলে নেবেন বা কেনাকাটা করবেন অ্যাপ দিয়েই। কিন্তু বাসা লাগোয়া একটি ছোট দোকানে কেনাকাটা শেষে দেখলেন, সেখানে কোনো কিউআর কোড নেই, দোকানদার কেবল নগদ টাকা গ্রহণ করছেন। পাশের এলাকায় এটিএম বুথও খুঁজে পেলেন না। দোকানের সামনে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে ভাবলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু বাস্তবতায় এখনো নগদের হাতছানি থেকে মুক্তি পাইনি।’
গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বিল পরিশোধ ও লেনদেন করছেন। তবে ইন্টারনেট সেবার দুর্বলতার কারণে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়েন। অন্যদিকে ঢাকার এক দোকানদার রফিক কিউআর কোড ব্যবহার শুরু করেছেন, কিন্তু এখনো অনেক গ্রাহক নগদ দিয়েই লেনদেন করতে পছন্দ করেন। তাই তিনি সচেষ্টভাবে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এই ছোট ছোট ঘটনাগুলো দেশের ক্যাশলেস ব্যবস্থার অগ্রগতির পাশাপাশি চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে।
সরকার ও ব্যাংকগুলো সচেতনতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা জোরদারের মাধ্যমে ক্যাশলেস ব্যবস্থাকে আরও জনপ্রিয় করতে কাজ করছে। ভারতের উদাহরণ এখানে অনুকরণীয়। ভারতে ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা কিউআর কোড ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে (ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়, ২০২৩)।
ডিজিটাল লেনদেনের প্রয়োজনীয়তা
নগদ অর্থের ব্যবহার অনেক সময় ঝামেলার কারণ হয়। হাতে টাকা থাকলে হারানো বা চুরির ঝুঁকি থাকে। টাকা নষ্ট বা ছিঁড়ে যাওয়ার সমস্যাও আছে। জাল টাকার প্রচলন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে। বড় লেনদেনে নগদ টাকা গোনা, খুচরা করা, হিসাব মেলানো সময়সাপেক্ষ ও কঠিন। আবার, ব্যাংকে লাইনে দাঁড়ানোও সময়ের অপচয়। ক্যাশলেস ব্যবস্থা এই সমস্যাগুলো দূর করতে পারে। এটি নিরাপদ, দ্রুত এবং সহজ। করোনার সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে ক্যাশলেস লেনদেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত ১০ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, টাকা ছাপানো, পরিবহন ও বণ্টনে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। ক্যাশলেস ব্যবস্থা চালু হলে এই খরচ অনেকাংশে কমে আসবে, যা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যাবে (বাংলাদেশ ব্যাংক, ২০২৫)। ক্যাশলেস ব্যবস্থা পরিবেশবান্ধব। নগদ অর্থ ছাপানোর জন্য অনেক গাছ কাটতে হয়, আর নোট-কয়েনের পরিবহনেও জ্বালানি খরচ হয়। ক্যাশলেস লেনদেন পরিবেশের ওপর চাপ কমায়, কারণ এতে কাগজ বা প্লাস্টিকের নোট বা কয়েনের প্রয়োজন কমে।
সবশেষে, এই পদ্ধতি লেনদেনকে আরও স্বচ্ছ করে তোলে, ঝামেলা কমায়, সময় বাঁচায়। ডিজিটাল লেনদেনের সব তথ্য অনলাইনে সংরক্ষিত থাকে, যা লেনদেনের ট্র্যাক রাখতে এবং জালিয়াতি কমাতে সাহায্য করে।
ক্যাশলেস ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জগুলো
ক্যাশলেস ব্যবস্থা আমাদের জীবনে অনেক সুবিধা নিয়ে এলেও এর সফল বাস্তবায়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাধা ও সমস্যা রয়েছে, যেগুলো মোকাবিলা করতে হবে। এগুলোর সমাধান না হলে ক্যাশলেস ব্যবস্থার পূর্ণ সুবিধা পাওয়া কঠিন হবে।
১. অনেকে, বিশেষ করে বয়স্ক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত নন এবং এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। এ জন্য ব্যাপক সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।
২. ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে জড়িত তথ্য ও অর্থ সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা থাকা জরুরি। হ্যাকিং, ফিশিং, তথ্য চুরির মতো ঝুঁকি রয়েছে। তাই সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও মানুষের সচেতনতা বাড়ানো খুব জরুরি।
৩. প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সীমিত প্রাপ্যতা ডিজিটাল লেনদেনে বাধা। এই অসুবিধার কারণে অনেক মানুষ ডিজিটাল লেনদেনে যুক্ত হতে পারছে না।
৪. যদিও নগদ লেনদেনের অনেক খরচ কমে যায়, তবু কিছু ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য লেনদেন ফি বা সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য হয়, যা তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
৫. ক্যাশলেস ব্যবস্থার নিরাপদ ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। অনেক সময় ভুল লেনদেন, পাসওয়ার্ড রক্ষা না করা বা সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করার কারণে সমস্যা তৈরি হয়।
৬. ক্যাশলেস লেনদেনের নিরাপত্তা, গ্রাহক সুরক্ষা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় শক্তিশালী আইন ও নীতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেন সম্পর্কিত আইনি ফ্রেমওয়ার্ক এখনো পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি।
গত ছয় বছরে বাংলাদেশের লেনদেনে বড় পরিবর্তন এসেছে। মোবাইল ব্যাংকিং ও ই-কমার্সের প্রসারে মানুষ ঘরে বসেই টাকা লেনদেন ও কেনাকাটা করছে, ফলে নগদের ওপর নির্ভরতা কমেছে। ক্রেডিট, ডেবিট এবং প্রিপেইড কার্ডের ব্যবহারও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালের মধ্যে এই তিন ধরনের কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন প্রায় ৩৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মানে, মানুষ ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে ধীরে ধীরে আস্থা অর্জন করছে এবং নগদ থেকে ক্যাশলেস লেনদেনে রূপান্তরিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল পেমেন্টে নতুন প্রযুক্তি চালু করছে, যেমন কিউআর কোড, অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্স। লক্ষ্য—২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ এবং ২০৩১ সালের মধ্যে শতভাগ লেনদেন ডিজিটালে আনা। এতে লেনদেন হবে দ্রুত, সাশ্রয়ী ও স্বচ্ছ। ক্যাশলেস ব্যবস্থা শুধু আধুনিক লেনদেন নয় বরং ভবিষ্যতের অনিবার্য অংশ। এটি দৈনন্দিন জীবন ও দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। তবে প্রয়োজন সচেতনতা, শক্তিশালী অবকাঠামো ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গত কয়েক দশকে লেনদেনের ধরনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। একসময় অর্থ মানেই ছিল হাতে ধরা কাগজের নোট বা ধাতব কয়েন। বাজারে গেলে টাকা গুনতে হতো, খুচরা জোগাড় করতে হতো, এমনকি অনেক সময় পকেটভর্তি নগদ অর্থ নিয়ে ঘোরাই ছিল স্বাভাবিক। দোকান থেকে শুরু করে বাসাভাড়া বা বেতন—সবকিছুই নগদ টাকার মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতি আর সময়ের পরিবর্তনে মানুষের অভ্যাসও বদলেছে। এখন আর হাতে টাকা নেওয়ার ঝামেলা নেই, মোবাইল ফোন কিংবা ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে মুহূর্তেই লেনদেন করা যায়। অর্থে সরাসরি হাত না দিয়েই যে লেনদেন হয় সেটাই আজকের ‘ক্যাশলেস ব্যবস্থা’।
ক্যাশলেস ব্যবস্থায় যেকোনো লেনদেনে নগদ টাকার বদলে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। মোবাইল অ্যাপ, ব্যাংক কার্ড বা কিউআর কোডের মাধ্যমে টাকা পাঠানো বা গ্রহণ করা যায়। এটি সময় বাঁচায়, ঝামেলা কমায় এবং নিরাপত্তা বাড়ায়। বাংলাদেশে এই ব্যবস্থা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে, বিশেষ করে গত এক দশকে।
ক্যাশলেস লেনদেনের ধারণা প্রথম জনপ্রিয় হয়েছিল উন্নত বিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ইত্যাদি দেশে অনেক আগেই ব্যাংক কার্ড ও ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার সূচনা হয়। ক্যাশলেস সোসাইটির অন্যতম দৃষ্টান্ত বর্তমানে নরডিক দেশ সুইডেন, যেখানে এখন নগদ অর্থের ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বলা চলে। মাত্র ১০ শতাংশের কমসংখ্যক মানুষ এখন ক্যাশ ব্যবহার করে সেখানে। আইএমএফের ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্কে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ক্যাশলেস লেনদেনে অভ্যস্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুইডেন হয়তো বিশ্বের প্রথম সম্পূর্ণ ক্যাশলেস দেশ হবে। এসব দেশে উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা মানুষের আস্থা বাড়িয়েছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য শিক্ষণীয়।
বাংলাদেশে নগদহীন লেনদেনের হালহকিকত
গত এক দশকে বাংলাদেশে ক্যাশলেস লেনদেন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) যেমন বিকাশ, নগদ ও রকেট শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বিকাশের ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু মোবাইল লেনদেনেই প্রায় ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, মোবাইল ওয়ালেট এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা চালু করে সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত করেছে। বিশেষ করে করোনার সময়ে ঘরে বসে কেনাকাটা ও বিল পরিশোধের প্রয়োজনীয়তা মানুষের মধ্যে ডিজিটাল লেনদেন শেখার প্রবণতা বাড়িয়েছে। ফলস্বরূপ, নগদ লেনদেনের ওপর নির্ভরশীলতা কমে গিয়ে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি ক্যাশলেস অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে, গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সেবার সীমাবদ্ধতা এবং ডিজিটাল শিক্ষার অভাবে ক্যাশলেস ব্যবস্থা পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েনি।
রাজশাহীর নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ অচিন্ত্য কুমার মল্লিকের একটি অভিজ্ঞতা এই রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে। গত আগস্ট মাসে হাসপাতালে কর্মরত ডা. অচিন্ত্য জরুরি রোগী দেখে বিশ্রামের জন্য বের হচ্ছিলেন। তাঁর ওয়ালেটে থাকা শেষ টাকাটিও খাবারের জন্য খরচ করলেন। মনে করেছিলেন, বাসায় ফেরার পথে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা তুলে নেবেন বা কেনাকাটা করবেন অ্যাপ দিয়েই। কিন্তু বাসা লাগোয়া একটি ছোট দোকানে কেনাকাটা শেষে দেখলেন, সেখানে কোনো কিউআর কোড নেই, দোকানদার কেবল নগদ টাকা গ্রহণ করছেন। পাশের এলাকায় এটিএম বুথও খুঁজে পেলেন না। দোকানের সামনে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে ভাবলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু বাস্তবতায় এখনো নগদের হাতছানি থেকে মুক্তি পাইনি।’
গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বিল পরিশোধ ও লেনদেন করছেন। তবে ইন্টারনেট সেবার দুর্বলতার কারণে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়েন। অন্যদিকে ঢাকার এক দোকানদার রফিক কিউআর কোড ব্যবহার শুরু করেছেন, কিন্তু এখনো অনেক গ্রাহক নগদ দিয়েই লেনদেন করতে পছন্দ করেন। তাই তিনি সচেষ্টভাবে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এই ছোট ছোট ঘটনাগুলো দেশের ক্যাশলেস ব্যবস্থার অগ্রগতির পাশাপাশি চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে।
সরকার ও ব্যাংকগুলো সচেতনতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা জোরদারের মাধ্যমে ক্যাশলেস ব্যবস্থাকে আরও জনপ্রিয় করতে কাজ করছে। ভারতের উদাহরণ এখানে অনুকরণীয়। ভারতে ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা কিউআর কোড ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে (ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়, ২০২৩)।
ডিজিটাল লেনদেনের প্রয়োজনীয়তা
নগদ অর্থের ব্যবহার অনেক সময় ঝামেলার কারণ হয়। হাতে টাকা থাকলে হারানো বা চুরির ঝুঁকি থাকে। টাকা নষ্ট বা ছিঁড়ে যাওয়ার সমস্যাও আছে। জাল টাকার প্রচলন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে। বড় লেনদেনে নগদ টাকা গোনা, খুচরা করা, হিসাব মেলানো সময়সাপেক্ষ ও কঠিন। আবার, ব্যাংকে লাইনে দাঁড়ানোও সময়ের অপচয়। ক্যাশলেস ব্যবস্থা এই সমস্যাগুলো দূর করতে পারে। এটি নিরাপদ, দ্রুত এবং সহজ। করোনার সময় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে ক্যাশলেস লেনদেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত ১০ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, টাকা ছাপানো, পরিবহন ও বণ্টনে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। ক্যাশলেস ব্যবস্থা চালু হলে এই খরচ অনেকাংশে কমে আসবে, যা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যাবে (বাংলাদেশ ব্যাংক, ২০২৫)। ক্যাশলেস ব্যবস্থা পরিবেশবান্ধব। নগদ অর্থ ছাপানোর জন্য অনেক গাছ কাটতে হয়, আর নোট-কয়েনের পরিবহনেও জ্বালানি খরচ হয়। ক্যাশলেস লেনদেন পরিবেশের ওপর চাপ কমায়, কারণ এতে কাগজ বা প্লাস্টিকের নোট বা কয়েনের প্রয়োজন কমে।
সবশেষে, এই পদ্ধতি লেনদেনকে আরও স্বচ্ছ করে তোলে, ঝামেলা কমায়, সময় বাঁচায়। ডিজিটাল লেনদেনের সব তথ্য অনলাইনে সংরক্ষিত থাকে, যা লেনদেনের ট্র্যাক রাখতে এবং জালিয়াতি কমাতে সাহায্য করে।
ক্যাশলেস ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জগুলো
ক্যাশলেস ব্যবস্থা আমাদের জীবনে অনেক সুবিধা নিয়ে এলেও এর সফল বাস্তবায়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাধা ও সমস্যা রয়েছে, যেগুলো মোকাবিলা করতে হবে। এগুলোর সমাধান না হলে ক্যাশলেস ব্যবস্থার পূর্ণ সুবিধা পাওয়া কঠিন হবে।
১. অনেকে, বিশেষ করে বয়স্ক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত নন এবং এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। এ জন্য ব্যাপক সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।
২. ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে জড়িত তথ্য ও অর্থ সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা থাকা জরুরি। হ্যাকিং, ফিশিং, তথ্য চুরির মতো ঝুঁকি রয়েছে। তাই সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও মানুষের সচেতনতা বাড়ানো খুব জরুরি।
৩. প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সীমিত প্রাপ্যতা ডিজিটাল লেনদেনে বাধা। এই অসুবিধার কারণে অনেক মানুষ ডিজিটাল লেনদেনে যুক্ত হতে পারছে না।
৪. যদিও নগদ লেনদেনের অনেক খরচ কমে যায়, তবু কিছু ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য লেনদেন ফি বা সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য হয়, যা তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
৫. ক্যাশলেস ব্যবস্থার নিরাপদ ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। অনেক সময় ভুল লেনদেন, পাসওয়ার্ড রক্ষা না করা বা সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করার কারণে সমস্যা তৈরি হয়।
৬. ক্যাশলেস লেনদেনের নিরাপত্তা, গ্রাহক সুরক্ষা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় শক্তিশালী আইন ও নীতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেন সম্পর্কিত আইনি ফ্রেমওয়ার্ক এখনো পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি।
গত ছয় বছরে বাংলাদেশের লেনদেনে বড় পরিবর্তন এসেছে। মোবাইল ব্যাংকিং ও ই-কমার্সের প্রসারে মানুষ ঘরে বসেই টাকা লেনদেন ও কেনাকাটা করছে, ফলে নগদের ওপর নির্ভরতা কমেছে। ক্রেডিট, ডেবিট এবং প্রিপেইড কার্ডের ব্যবহারও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালের মধ্যে এই তিন ধরনের কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন প্রায় ৩৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মানে, মানুষ ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে ধীরে ধীরে আস্থা অর্জন করছে এবং নগদ থেকে ক্যাশলেস লেনদেনে রূপান্তরিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল পেমেন্টে নতুন প্রযুক্তি চালু করছে, যেমন কিউআর কোড, অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্স। লক্ষ্য—২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ এবং ২০৩১ সালের মধ্যে শতভাগ লেনদেন ডিজিটালে আনা। এতে লেনদেন হবে দ্রুত, সাশ্রয়ী ও স্বচ্ছ। ক্যাশলেস ব্যবস্থা শুধু আধুনিক লেনদেন নয় বরং ভবিষ্যতের অনিবার্য অংশ। এটি দৈনন্দিন জীবন ও দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। তবে প্রয়োজন সচেতনতা, শক্তিশালী অবকাঠামো ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করার কথা। যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের সুন্দর, সফল বাস্তবায়নের জন্য তা জরুরিও। যেকোনো দেশ ও জাতি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে জনবল তৈরি করে। প্রত্যাশা করে সবার মিলিত প্রয়াসে জনকল্যাণ
১ দিন আগেবিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাজের ধরন ও রুটই ভিন্ন। কাজের পরিধিও আলাদা। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চার বছরের সিলেবাসে আসলে ফিল্ডে কাজ করার জন্যই প্রস্তুত করা হয়। ফিল্ডের কাজ ইমপ্লিমেন্ট করতে এবং ফিল্ডের খুঁটিনাটি বিষয়ে তাঁদেরকে তৈরি করা হয়। সুতরাং তাঁরা ফিল্ড লেভেল বিশেষজ্ঞ, এটা অস্বীকার করার সুযোগ
১ দিন আগেআজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। এই মহিমান্বিত দিনে মানবজাতির ইতিহাসে এক নতুন সূর্যের উদয় হয়েছিল মক্কার মরু প্রান্তরে। মা আমিনার কোল আলোকিত করেজন্ম নিয়েছিলেন এক মহামানব—যিনি বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর আগমনে অজ্ঞানতা ও বর্বরতার ঘোর আঁধার ভেদ করে সূচনা হয়েছিল
১ দিন আগেখবরটি শুনতে অসম্ভব বলে মনে হলেও, বাস্তবতা এই যে প্রযুক্তির রমরমা বিকাশের সময়ে বাংলাদেশের প্রান্তিক এক জনপদে এখনো বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির ব্যবস্থা নেই। ২ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রাঙামাটির ভারত সীমান্তবর্তী বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ...
২ দিন আগে