Ajker Patrika

নুরাল পাগলার দাফনকে কেন্দ্র করে যেভাবে সহিংসতা ঘটল

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ০০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দাফন শরিয়ত পরিপন্থীভাবে দেওয়া হয়েছে, তিনি নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করেন—এমন অভিযোগে তৌহিদি জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ থেকে আস্তানায় (দরবার শরিফ) হামলা হয়। এতে একজন নিহত এবং ১০-১২ জন পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা। ওই দিন রাতে মাটি থেকে ১২ ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় আস্তানায় তাঁর লাশ দাফন করেন ভক্তরা। পবিত্র কাবাঘরের আদলে তৈরি করা হয় কবর। এর পর থেকেই উত্তেজনা চলছিল জেলাজুড়ে, ফুঁসে ওঠে স্থানীয় আলেমসহ ‘তৌহিদি জনতা’। তাঁরা কবর সমতল করাসহ কয়েকটি দাবি জানায়।

২৫ আগস্ট জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বিক্ষুব্ধ জনতা এবং নুরাল পাগলার পরিবারের সদস্য ও ভক্তদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনায় কোনো সুরাহা হয়নি। ওই দিন তৌহিদি জনতা ও নুরাল পাগলার পরিবারের সদস্য ও ভক্তদের সঙ্গে আলোচনা করেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান। তাতেও কোনো সমাধান হয়নি। পরে বিক্ষোভের চাপে পড়ে কবরের রং পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় নুরাল পাগলার পরিবারের সদস্যরা।

২ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে অনৈতিক কার্যকলাপ হয়, এমন অভিযোগ তোলে উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। কয়েক ফুট উঁচুতে কবর শরিয়ত পরিপন্থী দাবি করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভের ঘোষণা দেন সংগঠনটির নেতারা।

এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির সভাপতি মাওলানা জালাল উদ্দিন প্রামাণিক। সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় রীতিনীতি বিকৃত ও কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে তাঁর আস্তানায় (দরবার শরিফ) ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগ করা হয়।

পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর (বুধবার) একই দাবিতে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। লিখিত বক্তব্যে জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি ইলিয়াস মোল্লা বলেন, গত ২৩ আগস্ট নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাঁকে গোয়ালন্দ পৌর সভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লার পাড়া এলাকায় মাটি থেকে ১২ ফুট উঁচুতে বেদি তৈরি করে দাফন করা হয় এবং পবিত্র কাবার আদলে রং করা হয়েছে ওই বেদির, যা শরিয়তবিরোধী। এতে ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের আশ্বাসে আগামী বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময় নেয় ওই কবর ১২ ফুট থেকে নামিয়ে স্বাভাবিক কবরের মতো করা হবে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।

লিখিত বক্তব্যে ইলিয়াস মোল্লা আরও বলেন, আগামীকালের মধ্যে কবর স্বাভাবিক না হলে শুক্রবার থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপরের শুক্রবার কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলায় বিক্ষোভ হবে। তারপরের শুক্রবার ঢাকা থেকে সারা দেশব্যাপী ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর রাজবাড়ী জেলা আমির মো. নুরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রাজবাড়ী শাখার সেক্রেটারি আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবে দরবার শরিফে ‘অপপ্রচারের বিরুদ্ধে’ সংবাদ সম্মেলন করেন নুরাল পাগলার ভক্তরা।

সংবাদ সম্মেলনে ভক্ত মেহেদি আল আমিন বলেন, আলেম ওলামাদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় নুরাল পাগলার কবর উঁচু থেকে নিচু করা হয়েছে, কবরের দেয়ালের রং পরিবর্তন ও ‘ইমাম মেহেদি দরবার শরিফ’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে মুসলমান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছাড়া এখানে খ্রিষ্টান ধর্মের কেউ আসে না।

দুপুর ১২টার দিকে গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফ পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসনসহ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির নুরুল ইসলাম।

পরিদর্শন শেষে জেলা জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, দাবির মধ্যে কবর নিচু করা হয়েছে। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে এবং মূল দাবি মেনে নেওয়ায় আগামী শুক্রবারের মার্চ ফর গোয়ালন্দসহ অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় দুপুরে জুমার পর বিক্ষোভ সমাবেশ করে তৌহিদী জনতা। বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলার দরবার শরীফে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বেলা ৩টার দিকে মঞ্চ থেকে ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা জালাল উদ্দিন প্রামাণিক, সদস্যসচিব বিএনপি নেতা আইয়ুব আলী খান সবাইকে সমাবেশে থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু উত্তেজিত জনতা মিছিল নিয়ে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা করে। ভেতর থেকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন ভক্তরা। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন।

নুরাল পাগলার দরবার শরীফে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। এ সময় নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে তুলে দরবার থেকে কিছুটা দূরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ওপর রাখা হয়। এরপর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলে বিক্ষুব্ধ জনতা। সংঘর্ষে আহত হয় দরবারের ভক্তসহ ৫০ জনের বেশি। নিহত হয় রাসেল মোল্লা নামে একজন।

শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই সেলিম বাদী হয়ে অজ্ঞাত সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেন। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এ মামলা করা হয়েছে।

সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রাকিবুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দরবার শরীফে সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে নুরাল পাগলার দরবার শরীফ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। নুরাল পাগলার দরবারে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি বলেও জানান ওসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২০৫০ সাল নাগাদ ইনফ্লুয়েন্সারদের চেহারা কেমন হবে, ধারণা দিলেন গবেষকেরা

দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ভয়েস ওভার ওয়াই-ফাই, সুবিধা কী

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যাচ্ছেন না মোদি, কী বার্তা দিচ্ছে দিল্লি

মেডিকেল কলেজ: মানের ঘাটতিতে হবে বন্ধ

রূপপুরের বালিশ-কাণ্ডে এক প্রকৌশলীকে বাধ্যতামূলক অবসর, অন্যজনের নিম্ন গ্রেডে অবনমন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত