Ajker Patrika

বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

সম্পাদকীয়
বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

খবরটি শুনতে অসম্ভব বলে মনে হলেও, বাস্তবতা এই যে প্রযুক্তির রমরমা বিকাশের সময়ে বাংলাদেশের প্রান্তিক এক জনপদে এখনো বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির ব্যবস্থা নেই। ২ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রাঙামাটির ভারত সীমান্তবর্তী বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এখনো বিশুদ্ধ পানি থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত। যেখানে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, সেখানে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনো তাদের জীবনের সবচেয়ে মৌলিক অধিকার বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। তারা বাধ্য হচ্ছে নদী, ছড়া বা কুয়ার দূষিত পানি পান করতে, যা তাদের জীবনকে ঠেলে দিচ্ছে এক চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে।

এই দুর্দশার মূলে রয়েছে সরকারি উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনা। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বাসিন্দাদের কথায় উঠে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতার চিত্র। তাঁরা জানান, কোনো সরকারি সংস্থা কখনো তাঁদের এলাকায় নলকূপ বসানোর সম্ভাব্যতা যাচাই করেনি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দেওয়া তথ্য আরও হতাশাজনক। তিনি স্বীকার করেছেন, এসব এলাকায় কখনো সার্ভে হয়নি এবং বরাদ্দ কম থাকায় ঠিকাদারেরা সেখানে কাজ করতে আগ্রহী নন। এটি একধরনের দায়সারা জবাব। দেশের প্রান্তিক মানুষের জীবন যেখানে ঝুঁকির মুখে, সেখানে কেবল বরাদ্দের অভাব বা ঠিকাদারের অনীহা কোনো অজুহাত হতে পারে না। এ ধরনের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয়, নীতিনির্ধারকদের কাছে এই অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের সমস্যার কোনো গুরুত্ব নেই।

এই পানিসংকটের সরাসরি প্রভাব পড়ছে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর। দূষিত পানি পান করার কারণে সারা বছর এলাকাবাসী ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। এই অঞ্চলে কোনো স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র না থাকায় তাঁদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ফলে একটি গ্রামে দুই মাসের ব্যবধানে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার কারণে এই মৃত্যুগুলো হয়েছে। এ ছাড়া এলাকার লোকজন পশুপালনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে পানির উৎসগুলো দূষিত হচ্ছে, যা তাদের আরও বিপদের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

সরকারকে এই সংকট সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেমন এই অঞ্চলের জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ দিয়ে সেটা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ভূ-প্রকৃতিগত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে, যা কেবল নলকূপ স্থাপন নয়, বরং এই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়ক হয়।

বিশুদ্ধ পানি মানুষের মৌলিক অধিকার। এটি কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নয়, বরং একটি সুস্থ ও নিরাপদ জীবনের জন্য অপরিহার্য। রাঙামাটির এই ৪০ হাজার মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি। সেই দায় রাষ্ট্র ও সরকারি কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত