শামীমা জামান
চলছে লাইভ। টেলিভিশন সংবাদ লাইভ। ফেসবুক পেজ লাইভ। বিশাল আয়োজন। লোকসমাগম ভিড়ের মাঝে একঝাঁক সাংবাদিক ঘাড়ে ক্যামেরা, হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে প্রস্তুত। কখন তিনি আসবেন। কখন, কখন, কখন? (এ বেলায় স্টার জলসার সিরিয়ালের মতো ঝাঁ ঝাঁ শব্দে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হবে, উপস্থিত সবাইকে একবার করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে হবে) দুঁদে সাংবাদিকদের সে কী উত্তেজনা! এত দিন পর যেন র্যাব মহাশয়েরা একটা দারুণ কাজ করছে। যেমনটা বাংলা ভাইকে ধরতে করেছিল! কিংবা বিদেশের উদাহরণ টানলে লাদেনের ধরা খাওয়ার দিন। আহা! কী টানটান উত্তেজনা! এক টিভির নারী সাংবাদিক ধারাভাষ্য দিচ্ছেন লাইভে। ঘণ্টাখানেক ধরে খানিক বাদে বাদেই তিনি বলছেন, ‘আর কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁকে নিয়ে আসা হবে..., এখনই তাঁকে আনা হচ্ছে..., এই তো তিনি আসছেন...,অবশেষে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো...ব্লা...ব্লা...ব্লা।’
এখন কথা হচ্ছে কে তিনি? কে সেইজন? মহামান্য? যাঁকে গ্রেপ্তার না করলে বিরাট বাংলাদেশ অশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল? তিনি আর কেউ নন। তিনি হিরো আলমের খালা, শেফুদার আপা, প্রবাসীদের সিস্টার জনাবা হেলেনা জাহাঙ্গীর..গীর...গীর...গীর... (এখানে নাজমুল হুসাইনের কণ্ঠ যাবে)।
কে এই হেলেনা জাহাঙ্গীর? এটি একটি বিরাট প্রশ্ন। কে তিনি? কীভাবে তাঁর উত্থান? আসলেই কি তিনি বিরাট কিছু?
তিনি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতিও ছিলেন। এ পরিচয় তুচ্ছ নয়। কিন্তু তুচ্ছ হয়তো তিনি নিজেকে নিজেই করে ফেলেছেন তাঁর আচরণগত সমস্যার কারণে। কী বলা যায় এটাকে? নার্সিসিস্ট কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার। কিন্তু সে তো অনেকেরই আছে এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে। কে নিজেকে শো না করে সোশ্যাল মিডিয়ায়? সবাইই শো-অফ পিপল। যুগটাই শো-অফের। আপনি বাসায় কি নরমাল তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে শো করছেন, না ঠিকই যেদিন পশ কোনো রেস্তোরাঁয় আধুনিক কোনো পরিবেশনায় খাচ্ছেন, একটা সেলফি তুলে শো-অফ করছেন?
আপনার গরিব আত্মীয়র সঙ্গে ছবি তুললে সেটি আপনি শো করছেন না। কিন্তু একদিনের দেখা বা শতচেষ্টা করে একজন সেলিব্রেটির পাশে ছবি তুললে আপনি সেই ছবি এডিট করতে লেগে যাবেন, পোস্ট করবেন। আপনি আপনার নতুন বইয়ের ছবি পোস্ট করেন, আপনার বারান্দার শখের বাগানের ফুল, পাতা, লতার ছবি পোস্ট করেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে আমরা সবাই আসলে শো-অফ করি। এখন হেলেনা জাহাঙ্গীর, মাহফুজুর রহমান কিংবা ঘন ঘন ফুলের বাগানে দাঁড়িয়ে থাকা মন্ত্রী মহোদয় তাঁদের ‘সোশ্যাল অ্যাকটিভিটিজ’ দিয়ে কিন্তু আপনাকে বিনোদিতই করছেন।
হেলেনা জাহাঙ্গীর গান করেন। ইউটিউবে তাঁর গান বহাল তবিয়তে আছে। মন ভালো করতে চাইলে আপনি দেখতে পারেন। তিনি উপস্থাপনা করেন। তাঁর ভুল, উদ্ভট ধরনের উচ্চারণ শুনে হোঁচট খেতে পারেন। তাই বলে আপনি তাঁকে এসব করা থেকে বিরত রাখতে পারেন না। বেশ কিছু অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তাঁর বাসায় মদের বোতল, হরিণের চামড়া, ছুরি, চাকু পাওয়া গেছে! কী সাংঘাতিক ব্যাপার! মহিলার ব্যাপারে দুষ্টু ছেলেরা বলে, তিনি নাকি চামড়ার বিজনেস করে এত বড়লোক হয়েছেন। তাই তাঁর বাসায় হরিণের চামড়া থাকতে পারে। আর মদ! আধুনিক সমাজে ওটি কি খুব ট্যাবু হয়ে আছে?
হেলেনার কাল হলো আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ। উনি তার সভাপতি। পোস্টটি ভাইরাল হলো। এই তো পাওয়া গেল ইস্যু। হেলেনা ভাইরাল। হেলেনা কী করেছেন? আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ করেছেন। আর যা করেছেন, তা রাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে অনেকেই করেন। তাঁরা ধরা পড়েন না। চাকরিজীবী লীগ করে হেলেনা ধরা পড়েছেন। তা দেখে আপনি হাসুন, ছি ছি করুন। কিন্তু বিশাল রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁর মতো ক্ষুদ্র একজন মানুষকে যে এতটা গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হলো, সেটাই বিস্ময়কর!
লেখক: নিউইয়র্কপ্রবাসী সাহিত্যিক
চলছে লাইভ। টেলিভিশন সংবাদ লাইভ। ফেসবুক পেজ লাইভ। বিশাল আয়োজন। লোকসমাগম ভিড়ের মাঝে একঝাঁক সাংবাদিক ঘাড়ে ক্যামেরা, হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে প্রস্তুত। কখন তিনি আসবেন। কখন, কখন, কখন? (এ বেলায় স্টার জলসার সিরিয়ালের মতো ঝাঁ ঝাঁ শব্দে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হবে, উপস্থিত সবাইকে একবার করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে হবে) দুঁদে সাংবাদিকদের সে কী উত্তেজনা! এত দিন পর যেন র্যাব মহাশয়েরা একটা দারুণ কাজ করছে। যেমনটা বাংলা ভাইকে ধরতে করেছিল! কিংবা বিদেশের উদাহরণ টানলে লাদেনের ধরা খাওয়ার দিন। আহা! কী টানটান উত্তেজনা! এক টিভির নারী সাংবাদিক ধারাভাষ্য দিচ্ছেন লাইভে। ঘণ্টাখানেক ধরে খানিক বাদে বাদেই তিনি বলছেন, ‘আর কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁকে নিয়ে আসা হবে..., এখনই তাঁকে আনা হচ্ছে..., এই তো তিনি আসছেন...,অবশেষে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো...ব্লা...ব্লা...ব্লা।’
এখন কথা হচ্ছে কে তিনি? কে সেইজন? মহামান্য? যাঁকে গ্রেপ্তার না করলে বিরাট বাংলাদেশ অশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল? তিনি আর কেউ নন। তিনি হিরো আলমের খালা, শেফুদার আপা, প্রবাসীদের সিস্টার জনাবা হেলেনা জাহাঙ্গীর..গীর...গীর...গীর... (এখানে নাজমুল হুসাইনের কণ্ঠ যাবে)।
কে এই হেলেনা জাহাঙ্গীর? এটি একটি বিরাট প্রশ্ন। কে তিনি? কীভাবে তাঁর উত্থান? আসলেই কি তিনি বিরাট কিছু?
তিনি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতিও ছিলেন। এ পরিচয় তুচ্ছ নয়। কিন্তু তুচ্ছ হয়তো তিনি নিজেকে নিজেই করে ফেলেছেন তাঁর আচরণগত সমস্যার কারণে। কী বলা যায় এটাকে? নার্সিসিস্ট কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার। কিন্তু সে তো অনেকেরই আছে এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে। কে নিজেকে শো না করে সোশ্যাল মিডিয়ায়? সবাইই শো-অফ পিপল। যুগটাই শো-অফের। আপনি বাসায় কি নরমাল তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে শো করছেন, না ঠিকই যেদিন পশ কোনো রেস্তোরাঁয় আধুনিক কোনো পরিবেশনায় খাচ্ছেন, একটা সেলফি তুলে শো-অফ করছেন?
আপনার গরিব আত্মীয়র সঙ্গে ছবি তুললে সেটি আপনি শো করছেন না। কিন্তু একদিনের দেখা বা শতচেষ্টা করে একজন সেলিব্রেটির পাশে ছবি তুললে আপনি সেই ছবি এডিট করতে লেগে যাবেন, পোস্ট করবেন। আপনি আপনার নতুন বইয়ের ছবি পোস্ট করেন, আপনার বারান্দার শখের বাগানের ফুল, পাতা, লতার ছবি পোস্ট করেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে আমরা সবাই আসলে শো-অফ করি। এখন হেলেনা জাহাঙ্গীর, মাহফুজুর রহমান কিংবা ঘন ঘন ফুলের বাগানে দাঁড়িয়ে থাকা মন্ত্রী মহোদয় তাঁদের ‘সোশ্যাল অ্যাকটিভিটিজ’ দিয়ে কিন্তু আপনাকে বিনোদিতই করছেন।
হেলেনা জাহাঙ্গীর গান করেন। ইউটিউবে তাঁর গান বহাল তবিয়তে আছে। মন ভালো করতে চাইলে আপনি দেখতে পারেন। তিনি উপস্থাপনা করেন। তাঁর ভুল, উদ্ভট ধরনের উচ্চারণ শুনে হোঁচট খেতে পারেন। তাই বলে আপনি তাঁকে এসব করা থেকে বিরত রাখতে পারেন না। বেশ কিছু অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তাঁর বাসায় মদের বোতল, হরিণের চামড়া, ছুরি, চাকু পাওয়া গেছে! কী সাংঘাতিক ব্যাপার! মহিলার ব্যাপারে দুষ্টু ছেলেরা বলে, তিনি নাকি চামড়ার বিজনেস করে এত বড়লোক হয়েছেন। তাই তাঁর বাসায় হরিণের চামড়া থাকতে পারে। আর মদ! আধুনিক সমাজে ওটি কি খুব ট্যাবু হয়ে আছে?
হেলেনার কাল হলো আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ। উনি তার সভাপতি। পোস্টটি ভাইরাল হলো। এই তো পাওয়া গেল ইস্যু। হেলেনা ভাইরাল। হেলেনা কী করেছেন? আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ করেছেন। আর যা করেছেন, তা রাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে অনেকেই করেন। তাঁরা ধরা পড়েন না। চাকরিজীবী লীগ করে হেলেনা ধরা পড়েছেন। তা দেখে আপনি হাসুন, ছি ছি করুন। কিন্তু বিশাল রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁর মতো ক্ষুদ্র একজন মানুষকে যে এতটা গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হলো, সেটাই বিস্ময়কর!
লেখক: নিউইয়র্কপ্রবাসী সাহিত্যিক
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। অনেকের কাছে এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের ওপর আস্থা রেখেছেন। নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল এবং নির্বাচনের পর ভোট গণনার সময় সারা রাত বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমার, শুধু আমার নয় বরং অনেকেরই। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়ার সুযোগ পেলাম, তখন প্রথম দিন বড় বোনের কাছ থেকে শাড়ি এনে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলাম। সেই দিনের শিহরণ, অনুভূতি এখনো শরীর-মনে দোলা দেয়।
১৯ ঘণ্টা আগেনির্বাচনের পরে যাঁরা মন্ত্রী হবেন, তাঁদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। প্রস্তাব এসেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে। সমালোচনার মুখে সেই পথ থেকে সরে এসেছে সরকার। বাতিল করা হয়েছে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত। বহু দুঃসংবাদের মধ্যে এটি একটি সুসংবাদ। গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল ধরনের এই কেনাকাটার বিষয়টি
১৯ ঘণ্টা আগেজাতীয় প্রেসক্লাবে ৭ সেপ্টেম্বর গণশক্তি আয়োজন করে ‘জুলাই সনদ ও নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা। সেই সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না যে প্রশ্নটি করেছেন, তা কোটি টাকার সঙ্গে তুলনা করাই যায়। তাঁর সহজ জিজ্ঞাসা—‘ভোটের দিন যাঁর যেখানে শক্তি আছে, তাঁর যদি মনে হয় জিততে পারবেন না...
২ দিন আগে