Ajker Patrika

বিশাল বিনোদন!

শামীমা জামান
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২১, ১৬: ১৪
বিশাল বিনোদন!

চলছে লাইভ। টেলিভিশন সংবাদ লাইভ। ফেসবুক পেজ লাইভ। বিশাল আয়োজন। লোকসমাগম ভিড়ের মাঝে একঝাঁক সাংবাদিক ঘাড়ে ক্যামেরা, হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে প্রস্তুত। কখন তিনি আসবেন। কখন, কখন, কখন? (এ বেলায় স্টার জলসার সিরিয়ালের মতো ঝাঁ ঝাঁ শব্দে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হবে, উপস্থিত সবাইকে একবার করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে হবে) দুঁদে সাংবাদিকদের সে কী উত্তেজনা! এত দিন পর যেন  র‍্যাব মহাশয়েরা একটা দারুণ কাজ করছে। যেমনটা বাংলা ভাইকে ধরতে করেছিল! কিংবা বিদেশের উদাহরণ টানলে লাদেনের ধরা খাওয়ার দিন। আহা! কী টানটান উত্তেজনা! এক টিভির নারী সাংবাদিক ধারাভাষ্য দিচ্ছেন লাইভে।  ঘণ্টাখানেক ধরে খানিক বাদে বাদেই তিনি বলছেন, ‘আর কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁকে নিয়ে আসা হবে..., এখনই তাঁকে আনা হচ্ছে..., এই তো তিনি আসছেন...,অবশেষে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো...ব্লা...ব্লা...ব্লা।’

এখন কথা হচ্ছে কে তিনি? কে সেইজন? মহামান্য? যাঁকে গ্রেপ্তার না করলে বিরাট বাংলাদেশ অশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল? তিনি আর কেউ নন। তিনি হিরো আলমের খালা, শেফুদার আপা, প্রবাসীদের সিস্টার জনাবা হেলেনা জাহাঙ্গীর..গীর...গীর...গীর... (এখানে নাজমুল হুসাইনের কণ্ঠ যাবে)।

কে এই হেলেনা জাহাঙ্গীর? এটি একটি বিরাট প্রশ্ন। কে তিনি? কীভাবে তাঁর উত্থান? আসলেই কি তিনি বিরাট কিছু?

তিনি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতিও ছিলেন। এ পরিচয় তুচ্ছ নয়। কিন্তু তুচ্ছ হয়তো তিনি নিজেকে নিজেই করে ফেলেছেন তাঁর আচরণগত সমস্যার কারণে। কী বলা যায় এটাকে? নার্সিসিস্ট কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার। কিন্তু সে তো অনেকেরই আছে এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে। কে নিজেকে শো না করে সোশ্যাল মিডিয়ায়? সবাইই শো-অফ পিপল। যুগটাই শো-অফের। আপনি বাসায় কি নরমাল তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে শো করছেন, না ঠিকই যেদিন পশ কোনো রেস্তোরাঁয় আধুনিক কোনো পরিবেশনায় খাচ্ছেন, একটা সেলফি তুলে শো-অফ করছেন?

আপনার গরিব আত্মীয়র সঙ্গে ছবি তুললে সেটি আপনি শো করছেন না। কিন্তু একদিনের দেখা বা শতচেষ্টা করে একজন সেলিব্রেটির পাশে ছবি তুললে আপনি সেই ছবি এডিট করতে লেগে যাবেন, পোস্ট করবেন। আপনি আপনার নতুন বইয়ের ছবি পোস্ট করেন, আপনার বারান্দার শখের বাগানের ফুল, পাতা, লতার ছবি পোস্ট করেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে আমরা সবাই আসলে শো-অফ করি। এখন হেলেনা জাহাঙ্গীর, মাহফুজুর রহমান কিংবা ঘন ঘন ফুলের বাগানে দাঁড়িয়ে থাকা মন্ত্রী মহোদয় তাঁদের ‘সোশ্যাল অ্যাকটিভিটিজ’ দিয়ে কিন্তু আপনাকে বিনোদিতই করছেন।

হেলেনা জাহাঙ্গীর গান করেন। ইউটিউবে তাঁর গান বহাল তবিয়তে আছে। মন ভালো করতে চাইলে আপনি দেখতে পারেন। তিনি উপস্থাপনা করেন। তাঁর ভুল, উদ্ভট ধরনের উচ্চারণ শুনে হোঁচট খেতে পারেন। তাই বলে আপনি তাঁকে এসব করা থেকে বিরত রাখতে পারেন না। বেশ কিছু অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তাঁর বাসায় মদের বোতল, হরিণের চামড়া, ছুরি, চাকু পাওয়া গেছে! কী সাংঘাতিক ব্যাপার! মহিলার ব্যাপারে দুষ্টু ছেলেরা বলে, তিনি নাকি চামড়ার বিজনেস করে এত বড়লোক হয়েছেন। তাই তাঁর বাসায় হরিণের চামড়া থাকতে পারে।  আর মদ! আধুনিক সমাজে ওটি কি খুব ট্যাবু হয়ে আছে?

হেলেনার কাল হলো আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ। উনি তার সভাপতি। পোস্টটি ভাইরাল হলো। এই তো পাওয়া গেল ইস্যু। হেলেনা ভাইরাল। হেলেনা কী করেছেন? আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ করেছেন। আর যা করেছেন, তা রাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে অনেকেই করেন। তাঁরা ধরা পড়েন না। চাকরিজীবী লীগ করে হেলেনা ধরা পড়েছেন। তা দেখে আপনি হাসুন, ছি ছি করুন। কিন্তু বিশাল রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁর মতো ক্ষুদ্র একজন মানুষকে যে এতটা গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হলো, সেটাই বিস্ময়কর! 

লেখক: নিউইয়র্কপ্রবাসী সাহিত্যিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেঘমল্লারের জবাবের পর ডাকসু ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যা লিখলেন শশী থারুর

সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ডে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করবেন যেভাবে

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইলেন ফখরুল

শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হলো না জাবি শিক্ষক মৌমিতার

অনিয়মের অভিযোগ এনে জাকসু নির্বাচন কমিশন সদস্যের পদত্যাগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত