Ajker Patrika

‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ’

ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ’

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় শরীরের বিশেষ অঙ্গসমূহ বিশেষ পদ্ধতিতে ধৌত করাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বলা হয়। অপর মতে, শরীরের সব নাপাকী দূর করে পবিত্র হওয়াকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বলা হয়। তা ছাড়া, বাহ্যিক পবিত্রতা, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহকে পাপাচার থেকে পবিত্র রাখা, অন্তরকে অসৎ চিন্তা থেকে মুক্ত রাখা এবং মন-মস্তিষ্ককে আল্লাহ ব্যতীত অন্য চিন্তা থেকে মুক্ত রাখাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অন্তর্ভুক্ত। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কারণে অপবিত্র হয়ে যায়, তাকে পবিত্র হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে সুরা মায়িদার ৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা অপবিত্র হয়ে থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে।’ যদি কেউ পরিচ্ছন্ন পোশাকে ইবাদত না করে, তার কোনো ইবাদতই কবুল হবে না। সুরা মুদ্দাসসিরের ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমার পরিচ্ছদসমূহ পবিত্র রাখো।’ আর যদি পানি না পাওয়া যায় অথবা কোনো রোগের কারণে পানি ব্যবহার ক্ষতির কারণ হয়ে যায়, তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে পরিষ্কার হওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুরা মায়িদার ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি পীড়িত হও অথবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আগমন করে অথবা তোমরা স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গত হও এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে।’

জুমার দিন সালাত আদায়ের আগে গোসলের হুকুম দেওয়া হয়েছে, যেন কেউ গোসলের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে জুমার জামাতে শরিক হতে পারে। কারও অপরিচ্ছন্নতা ও দেহের দুর্গন্ধের কারণে যেন কোনো নামাজি কষ্ট না পান। প্রস্রাব-পায়খানা শেষে পবিত্র হওয়া এবং নির্দিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ময়লা দূর করা অপরিহার্য করা হয়েছে। এসব নির্দেশের মাধ্যমে জানা যায়, ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বিশেষ। একে গুরুত্ব দিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধাংশ।’ শুধু তা-ই নয়, সুরা বাকারার ২২২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন।’

মুসলমানরা যেন পরিচ্ছন্নতা অনুসরণ করে এবং সব ধরনের অপবিত্রতা ও কলুষতা থেকে মুক্ত থাকে এ লক্ষ্যে ইসলাম বিভিন্ন বিধিবিধান আরোপ করেছে। যেমন, ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর উভয় হাত ভালোভাবে ধোয়া, অতঃপর পানির পাত্রে হাত রাখা, নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করা, হাত-পায়ের নখ ও মাথার চুল ছোট করা, গোঁফ ছেঁটে ফেলা, চুল আঁচড়ানো, বোগল ও নাভির নিচের পশম মুণ্ডানো, সপ্তাহে কমপক্ষে এক দিন গোসল করা, কাপড় ধৌত করা, পোশাক পরিবর্তন করা এবং আতর, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করা। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘একদা মহানবী (সা.) গরমের দিনে জুমার সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে প্রবেশ করলেন। উপস্থিত মুসল্লিগণ ঘর্মাসিক্ত হওয়ায় তিনি মসজিদের মধ্যে দুর্গন্ধ অনুভব করলেন। তখন তিনি তাদের লক্ষ করে বললেন, ‘হে লোক সকল! শুক্রবার এলে তোমরা গোসল করবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি সাধ্যানুযায়ী উত্তম তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করবে।’

অনুরূপভাবে রাস্তায় চলাচলকারী এবং বৃক্ষের নিচে আশ্রয় গ্রহণকারী পথিকের যেন কষ্ট না হয় এ জন্য পানির ঘাট, গোসলখানা, চলার পথ, গাছের ছায়ায় প্রস্রাব-পায়খানা করা, স্থির পানিতে ও খাড়া স্থানে প্রস্রাব করা ও দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। জুমার দিন ছাড়া অন্যান্য সময়ও দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্যদ্রব্য যেমন, পিঁয়াজ ও রসুন আহার করে মসজিদে আসা নিষেধ। কেননা এতে পার্শ্ববর্তী মুসল্লিদের কষ্ট হয়ে সালাতে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে।

আত্মিকভাবেও কলুষমুক্ত হয়ে সব পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে পরিচ্ছন্ন থাকা যায়। সেজন্য ইসলামি জিন্দেগি অবলম্বন করার বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের তৌফিক দান করুন। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে উদ্বেগ শশী থারুরের, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

‘বেয়াদবি ছুটায় দেব’: সরি বলতে অসুবিধা নেই, বললেন সেই জামায়াত নেতা

নতুন ট্রেন্ড ন্যানো ব্যানানা, নিজের থ্রিডি ফিগারিন বানাবেন যেভাবে

ইসরায়েলের হামলার কী জবাব হবে—আরব-ইসলামিক সম্মেলন ডাকল কাতার

রাজাকারের বাচ্চারা মুক্তিযুদ্ধকে বিনাশ করতে পারবে না: ফজলুর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত