আব্দুর রাজ্জাক
আমার সিনিয়র বন্ধু মাসুদুর রহমান, সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রাসনাদার শহরের কুবান অ্যাগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটিতে প্ল্যান্ট ব্রিডিংয়ের ওপর পিএইচডি ডিগ্রির জন্য গবেষণা করছিলেন। ১৯৮৯ সালের দিকের কথা, আমার বন্ধু মস্কোয় এলে হোস্টেলে আমার সঙ্গে থাকতেন। বছরে তিন-চারবার মস্কোয় আসতেই হতো। একটা কথা বলে রাখি, আমার বন্ধু অত্যন্ত মেধাবী গবেষক ছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে বাংলাদেশেও বোর্ডে মেধাতালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে ছিলেন।
আমরা সেই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতাম। বন্ধু মাসুদের পিএইচডি থিসিসের গাইড ছিলেন সেই সময়কার অল সোভিয়েত হুইট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল ও কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, প্রফেসর দ্রগাবচেভ।
মাসুদুর রহমানকে আমি মাসুদ ভাই সম্বোধন করি, মাসুদ ভাই সেই ১৯৮৯ সালে আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসত্রইকা ও গ্লাসনস্ত অর্থাৎ পুনর্নির্মাণ ও বাক্স্বাধীনতার ব্যাপারে কথা বলছিলাম। তখন মাসুদ ভাই বলছিলেন, গত মাসে তিনি ও তাঁর গাইড প্রফেসর দ্রগাবচেভ ও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল একটি খামারবাড়িতে গবেষণার কাজে কয়েক দিন সম্মিলিতভাবে দিনরাত কাজ করেছিলেন। সেই সময় জেনারেল সাহেব ও গাইড আলোচনা করছিলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নে এখন যা চলছে, তা হলো টাইটানিক জাহাজের মতো। টাইটানিক জাহাজ ডোবার আগে ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জন স্মিথ বুঝতে পেরেছিলেন, জাহাজকে আর রক্ষা করা যাবে না। সেই সময় ক্যাপ্টেন সারা ফুলার অ্যাডামসের বিখ্যাত ‘নিয়ারার, মাই গড, টু দ্য’ ধর্মীয় সংগীত যাত্রীদের শোনাচ্ছিলেন। এই সংগীত বাজার মধ্য দিয়েই টাইটানিক জাহাজ সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়েছিল। জেনারেল সাহেব, মাসুদ ভাই ও তাঁর গাইডকে ব্যাখ্যা করেছিলেন, প্রেসত্রইকা ও গ্লাসনস্ত হলো সেই বিখ্যাত মিউজিক। আর ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জন স্মিথ হলো গর্বাচভ আর টাইটানিক জাহাজটি হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। জনগণ এখন সেই বিখ্যাত সংগীত সুরে সম্মোহিত হয়ে, জাহাজ ডোবার অপেক্ষা করছে। মূল কথা ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন অচিরেই ভেঙে যাবে।
সেই সময় মাসুদ ভাইয়ের এই কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল। দুই বছর পর নিজের চোখে দেখলাম ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরের কোনো এক সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেল। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল মাসুদ ভাইয়ের দুই বছর আগের সেই কথা। জেনারেল সাহেব জীবনে অনেক যুদ্ধ করেছেন। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জেনারেল পর্যন্ত হয়েছিলেন অবসরের আগে। সেই সময় এই দুই ব্যক্তির বয়স ছিল ষাটের ওপর।
এই কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, যেসব ব্যক্তি জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেছেন, নিজের জীবন দিয়ে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অনেক কিছু শিখেছেন, তাঁরা অনেক কিছুর ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন; সেই সমাজের সেই বাস্তবতার। এই দুই মহান ব্যক্তি জীবনের শেষ প্রান্তে সঠিক জিনিস উপলব্ধি করেছিলেন। কারণ, ওই দুই ব্যক্তি ছিলেন নিরপেক্ষ। কোনো কিছুর সম্মোহন তাঁদের আচ্ছাদিত করে রাখতে পারেনি। তাই সঠিক বিশ্লেষণ করেছিলেন।
বর্তমান পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিগুলো, যারা নিজেদের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ভাবে, মনে করে তাদের ধন-সম্পদ, প্রতিপত্তি সবকিছু অবিনস্বর, পৃথিবীর অনেক মানুষ, অনেক দেশ তাদের সম্মান করে, সমীহ করে তাদের গুণগানে মুগ্ধ।
তারা হয়তো জানে না, তাদের কানের কাছে ওই জনপ্রিয় সংগীত বেজেই চলেছে। কোনো এক সময় কোনো এক ক্যাপ্টেনের বাঁশিতে তাদের এই প্রতিপত্তি চুরমার হয়ে যাবে, ধসে পড়বে তাদের সাম্রাজ্য।
সময় থাকতে অহংকার ভুলে, পৃথিবীর মানুষের জন্য চিকিৎসা, খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করুন। এটা না করতে পারলে সবার সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃত্বপরায়ণ ব্যক্তিবর্গ ও তাঁদের সমাজ ডুবে যাবে, টাইটানিকের মতো।
লেখক: প্রকৌশলী
আমার সিনিয়র বন্ধু মাসুদুর রহমান, সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রাসনাদার শহরের কুবান অ্যাগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটিতে প্ল্যান্ট ব্রিডিংয়ের ওপর পিএইচডি ডিগ্রির জন্য গবেষণা করছিলেন। ১৯৮৯ সালের দিকের কথা, আমার বন্ধু মস্কোয় এলে হোস্টেলে আমার সঙ্গে থাকতেন। বছরে তিন-চারবার মস্কোয় আসতেই হতো। একটা কথা বলে রাখি, আমার বন্ধু অত্যন্ত মেধাবী গবেষক ছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে বাংলাদেশেও বোর্ডে মেধাতালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে ছিলেন।
আমরা সেই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতাম। বন্ধু মাসুদের পিএইচডি থিসিসের গাইড ছিলেন সেই সময়কার অল সোভিয়েত হুইট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল ও কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, প্রফেসর দ্রগাবচেভ।
মাসুদুর রহমানকে আমি মাসুদ ভাই সম্বোধন করি, মাসুদ ভাই সেই ১৯৮৯ সালে আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসত্রইকা ও গ্লাসনস্ত অর্থাৎ পুনর্নির্মাণ ও বাক্স্বাধীনতার ব্যাপারে কথা বলছিলাম। তখন মাসুদ ভাই বলছিলেন, গত মাসে তিনি ও তাঁর গাইড প্রফেসর দ্রগাবচেভ ও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল একটি খামারবাড়িতে গবেষণার কাজে কয়েক দিন সম্মিলিতভাবে দিনরাত কাজ করেছিলেন। সেই সময় জেনারেল সাহেব ও গাইড আলোচনা করছিলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নে এখন যা চলছে, তা হলো টাইটানিক জাহাজের মতো। টাইটানিক জাহাজ ডোবার আগে ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জন স্মিথ বুঝতে পেরেছিলেন, জাহাজকে আর রক্ষা করা যাবে না। সেই সময় ক্যাপ্টেন সারা ফুলার অ্যাডামসের বিখ্যাত ‘নিয়ারার, মাই গড, টু দ্য’ ধর্মীয় সংগীত যাত্রীদের শোনাচ্ছিলেন। এই সংগীত বাজার মধ্য দিয়েই টাইটানিক জাহাজ সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়েছিল। জেনারেল সাহেব, মাসুদ ভাই ও তাঁর গাইডকে ব্যাখ্যা করেছিলেন, প্রেসত্রইকা ও গ্লাসনস্ত হলো সেই বিখ্যাত মিউজিক। আর ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জন স্মিথ হলো গর্বাচভ আর টাইটানিক জাহাজটি হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। জনগণ এখন সেই বিখ্যাত সংগীত সুরে সম্মোহিত হয়ে, জাহাজ ডোবার অপেক্ষা করছে। মূল কথা ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন অচিরেই ভেঙে যাবে।
সেই সময় মাসুদ ভাইয়ের এই কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল। দুই বছর পর নিজের চোখে দেখলাম ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরের কোনো এক সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেল। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল মাসুদ ভাইয়ের দুই বছর আগের সেই কথা। জেনারেল সাহেব জীবনে অনেক যুদ্ধ করেছেন। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জেনারেল পর্যন্ত হয়েছিলেন অবসরের আগে। সেই সময় এই দুই ব্যক্তির বয়স ছিল ষাটের ওপর।
এই কথা বলার উদ্দেশ্য হলো, যেসব ব্যক্তি জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেছেন, নিজের জীবন দিয়ে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অনেক কিছু শিখেছেন, তাঁরা অনেক কিছুর ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন; সেই সমাজের সেই বাস্তবতার। এই দুই মহান ব্যক্তি জীবনের শেষ প্রান্তে সঠিক জিনিস উপলব্ধি করেছিলেন। কারণ, ওই দুই ব্যক্তি ছিলেন নিরপেক্ষ। কোনো কিছুর সম্মোহন তাঁদের আচ্ছাদিত করে রাখতে পারেনি। তাই সঠিক বিশ্লেষণ করেছিলেন।
বর্তমান পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিগুলো, যারা নিজেদের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ভাবে, মনে করে তাদের ধন-সম্পদ, প্রতিপত্তি সবকিছু অবিনস্বর, পৃথিবীর অনেক মানুষ, অনেক দেশ তাদের সম্মান করে, সমীহ করে তাদের গুণগানে মুগ্ধ।
তারা হয়তো জানে না, তাদের কানের কাছে ওই জনপ্রিয় সংগীত বেজেই চলেছে। কোনো এক সময় কোনো এক ক্যাপ্টেনের বাঁশিতে তাদের এই প্রতিপত্তি চুরমার হয়ে যাবে, ধসে পড়বে তাদের সাম্রাজ্য।
সময় থাকতে অহংকার ভুলে, পৃথিবীর মানুষের জন্য চিকিৎসা, খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করুন। এটা না করতে পারলে সবার সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃত্বপরায়ণ ব্যক্তিবর্গ ও তাঁদের সমাজ ডুবে যাবে, টাইটানিকের মতো।
লেখক: প্রকৌশলী
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। অনেকের কাছে এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের ওপর আস্থা রেখেছেন। নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল এবং নির্বাচনের পর ভোট গণনার সময় সারা রাত বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৬ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমার, শুধু আমার নয় বরং অনেকেরই। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়ার সুযোগ পেলাম, তখন প্রথম দিন বড় বোনের কাছ থেকে শাড়ি এনে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলাম। সেই দিনের শিহরণ, অনুভূতি এখনো শরীর-মনে দোলা দেয়।
১৬ ঘণ্টা আগেনির্বাচনের পরে যাঁরা মন্ত্রী হবেন, তাঁদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। প্রস্তাব এসেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে। সমালোচনার মুখে সেই পথ থেকে সরে এসেছে সরকার। বাতিল করা হয়েছে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত। বহু দুঃসংবাদের মধ্যে এটি একটি সুসংবাদ। গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল ধরনের এই কেনাকাটার বিষয়টি
১৬ ঘণ্টা আগেজাতীয় প্রেসক্লাবে ৭ সেপ্টেম্বর গণশক্তি আয়োজন করে ‘জুলাই সনদ ও নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা। সেই সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না যে প্রশ্নটি করেছেন, তা কোটি টাকার সঙ্গে তুলনা করাই যায়। তাঁর সহজ জিজ্ঞাসা—‘ভোটের দিন যাঁর যেখানে শক্তি আছে, তাঁর যদি মনে হয় জিততে পারবেন না...
২ দিন আগে