আবু তাহের খান

গণমাধ্যমের খবর, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি নিবন্ধন এবং ইউনিক আইডিসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার একটি স্থায়ী নাগরিক নিবন্ধন কমিশন (সিআরসি) গঠন করতে যাচ্ছে (আজকের পত্রিকা, ৫ মার্চ ২০২৫)। ওই খবর থেকে এটিও জানা যায় যে উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইতিমধ্যে এই কমিশনের সম্ভাব্য কাঠামো, কার্যক্রম ও আনুষঙ্গিক বিষয়সংবলিত অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়ন করেছে, যা নিয়ে ৩ মার্চ আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৎপরতার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, উল্লিখিত কমিশন গঠনের বিষয়টিকে সরকার বিশেষ অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব দিয়ে খুবই দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
এখন কথা হচ্ছে, যেসব কাজ সম্পাদনের কথা বলে কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে কাজগুলো সর্বোচ্চ দক্ষতার সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ও হয়রানিমুক্ত ব্যবস্থার অধীনে সম্পন্ন করার জন্য এরূপ একটি কমিশন গঠনই সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত কি না, তা কি যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়েছে? নাকি এনআইডি কার্যক্রম আগের মতো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে থেকে যাবে, নাকি তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত হবে মর্মে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, সে বিতর্ককে প্রশমনের জন্যই এটি করা হয়েছে? প্রশ্নগুলো কেন উঠল, সেটি এবং উল্লিখিত কর্মকাণ্ডগুলো সম্পাদনের জন্য সিআরসি গঠন কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে আলোচনা হওয়াটা খুবই জরুরি। কারণ, নানা অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানের আধিক্যের ভারে বাংলাদেশের রাষ্ট্র খাতের এমনিতেই চরম ন্যুব্জ দশা। তার ওপর আগে থেকে চলে আসা একটি পুরোনো কাজের জন্য যদি নতুন করে এনআরসির মতো আরেকটি মাথাভারী প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাতে রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয়ই শুধু বাড়বে না, আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের সমস্যাও বাড়বে এবং সেবাদানের ক্ষেত্রে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হবে।
২০১০-এর দশকের গোড়া থেকে শুরু হওয়া এনআইডিসংক্রান্ত কার্যক্রম গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে ইসির আওতাতেই চলে আসছিল। ২০২৩ সালে এসে হঠাৎ করেই এ দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় ন্যস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাজটি দীর্ঘদিন থেকে ইসির আওতায় চলে আসার সুবাদে অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে এনআইডির সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকার কারণে ইসি এটি তাদের নিজেদের আওতায়ই রাখতে চায়, যে দাবি তারা ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকেও উত্থাপন করেছে। তদুপরি এ দাবি পুনর্ব্যক্ত করে ৯ মার্চ তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে পুনরায় একটি চিঠি পাঠিয়েছে। এদিকে ১২ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এনআইডিসহ নাগরিকের ডেটা নিয়ন্ত্রণে ‘জাতীয় ডেটা কর্তৃপক্ষ’ (এনডিএ) গঠিত হবে। তাঁর বক্তব্যে এ কাজে স্থানীয় সরকারের ভূমিকাকে অনেকটা তাচ্ছিল্যও করা হয়েছে। মোটকথা, বিষয়টি এখন এক হযবরল অবস্থার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এনআইডি কার্ড প্রদানের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় ন্যস্ত করার কারণটি মোটেও বোধগম্য নয়। কেননা, নাগরিকমাত্রই, এমনকি তিনি যদি চিহ্নিত বা দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীও হন, এনআইডি কার্ড পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ অবস্থায় এনআইডি কার্যক্রম কার আওতায় সম্পন্ন হবে, এ নিয়ে উল্লিখিত দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যেই নতুন করে সিআরসি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে এসবের ভিড়ে এনডিএর অবস্থান কী হবে, সেটিও বোঝা দরকার। তবে এটি প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এনআইডি প্রদানের কাজটি এ-জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান করে না, করে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো, যেটি বাংলাদেশেও হওয়া উচিত। ফলে এ কাজের জন্য নতুন করে সিআরসি বা এনডিএ গঠন না করে কাজটি কীভাবে ক্রমান্বয়ে পুরোপুরিভাবে স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা যায়, তা গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা উচিত।
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজটিও বিশ্বজুড়ে প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবেই স্থানীয় সরকার কর্তৃক সম্পন্ন হয়ে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও সে ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এখানে এটি চালু হয়েছে মূলত পাসপোর্ট ও এনআইডি প্রদানসংক্রান্ত কাজের শর্তের অংশ হিসেবে, স্বতন্ত্র ব্যবস্থা হিসেবে নয়। আসলে এটিকে নিয়মিত বাধ্যতামূলক নাগরিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে চালু করা প্রয়োজন। অর্থাৎ যেকোনো নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যুর বিষয়টি তার অভিভাবককে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কার্যালয়ে নিবন্ধিত করতে হবে। আর সে নিবন্ধিত তথ্যই সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান (নির্বাচন কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) তাদের নিজ নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করবে। কিন্তু এর জন্য কোনো অবস্থাতেই সিআরসি বা এনডিএর মতো মাথাভারী বাড়তি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই।
এসব করা হলে তা স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও স্বনির্ভর করে তোলার চিন্তাভাবনাকে আরও পিছিয়ে দেবে, যার আভাস ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের কথাতেও রয়েছে। এমনিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনীতিক বা আমলা কেউই নিজেদের স্বার্থ ও ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী হতে দিতে চান না। এ অবস্থায় রাজধানীকেন্দ্রিক সিআরসি বা এনডিএ গঠন করা হলে এর মাধ্যমে রাজনীতিক ও আমলাদের ওই হীন আকাঙ্ক্ষাই আরও প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা পাবে। মোটকথা, এসব মাথাভারী প্রতিষ্ঠানের চিন্তা পরিপূর্ণভাবেই সংবিধান নির্দেশিত স্বনির্ভর-শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা ধারণার পরিপন্থী এবং এই মুহূর্তে এ ধরনের চিন্তাভাবনা নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে পারে।
বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদসংক্রান্ত নিবন্ধন ব্যবস্থাটি বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি কাজ। জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধনের মতো এটিও যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় সরকারের আওতায় ন্যস্ত করা উচিত। আর এনআরসির আওতায় ইউনিক আইডি প্রদানসংক্রান্ত যে সেবার কথা বলা হচ্ছে, সেটি বস্তুত আইডি কার্ড সেবারই সম্প্রসারিত অংশ। ফলে এটিও খুব স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় সরকারের আওতায় থাকা উচিত। তারপরও এ নিয়ে বলতে হচ্ছে এ কারণে যে সিআরসি গঠনের যুক্তি হিসেবে ইউনিক আইডি প্রদানকেও একটি স্বতন্ত্র কাজ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যা ধারণাগতভাবে সঠিক নয়।
এরপরও যদি উল্লিখিত বাস্তবতা এবং তথ্য ও যুক্তিকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার সিআরসি বা এনডিএ গঠন করে, তাহলে একেবারে প্রথমেই যা ঘটবে তা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের সমস্যা। কারণ, মাঠপর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো বিস্তৃততর নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে উল্লিখিত তথ্যের জন্য তাদের শেষ পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের ওপরই নির্ভর করতে হবে। এবং এতে করে সমন্বয়ের সমস্যাই শুধু বাড়বে না, পুরো প্রক্রিয়াটিই এক বিদঘুটে জটিল আকার ধারণ করবে। আর যদি বলা হয় যে তারা সারা দেশে তাদের বিস্তৃততর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে, তাহলে তা হবে আরও এক অনাকাঙ্ক্ষিত ও অবাস্তব চিন্তা। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের আওতায় যেকোনো নতুন কমিশন বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা মানেই রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, যা ইতিমধ্যে সামন্ত যুগের রাজসিক কাজকারবারকেও ছাড়িয়ে গেছে।
বাজেটের আওতায় বাংলাদেশের ‘রাজ কর্মচারীদের’ পেছনে ব্যয়িত অর্থের হিস্যা এখন প্রায় ৪৩ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকেরা নিশ্চয়ই তা আর বাড়াতে চাইবেন না। তা ছাড়া, সরকারের কথিত সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গেও এরূপ প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির ধারণা সংগতিপূর্ণ নয়। সরকারের সংস্কার কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য তো রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা জনসেবাকে জটিলতামুক্ত করা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা এবং রাষ্ট্রের পরিচালনার ব্যয় কমিয়ে আনা। কিন্তু উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠনের মধ্য দিয়ে এগুলোর সব কটিই লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সব মিলিয়ে তাই বিনীত প্রস্তাব, রাষ্ট্রের নাগরিকদের এনআইডি ও ইউনিক আইডি প্রদান এবং তাদের জন্ম-মৃত্যু, বিবাহবিচ্ছেদ ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য নিবন্ধনসংক্রান্ত সেবার জন্য নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজন নেই। বরং প্রয়োজন হচ্ছে এ কাজগুলোকে ক্রমান্বয়ে স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করার বিষয়ে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। আর তা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সরকারের দায়িত্ব হবে বিদ্যমান কাঠামোর আওতাতেই এ সেবাগুলোকে কীভাবে সব ধরনের ঝঞ্ঝাট-জটিলতা ও হয়রানিমুক্ত ব্যবস্থার আওতায় প্রদান করা যায়, তা নিশ্চিত করা। আশা করব, প্রধান উপদেষ্টা গঠনমূলক ভিন্নমতকে স্বাগত জানিয়ে প্রায়ই যেসব বক্তব্য দেন, সেসবের সঙ্গে সংগতি রেখে এসব নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্যোগ থেকে সরকারকে বিরত রাখবেন। তবে উল্লিখিত সেবাগুলোকে কীভাবে আরও জনবান্ধব করে তোলা যায়, সে ব্যাপারে নিজের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি রাষ্ট্রকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন।
লেখক: আবু তাহের খান
অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি

গণমাধ্যমের খবর, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি নিবন্ধন এবং ইউনিক আইডিসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার একটি স্থায়ী নাগরিক নিবন্ধন কমিশন (সিআরসি) গঠন করতে যাচ্ছে (আজকের পত্রিকা, ৫ মার্চ ২০২৫)। ওই খবর থেকে এটিও জানা যায় যে উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইতিমধ্যে এই কমিশনের সম্ভাব্য কাঠামো, কার্যক্রম ও আনুষঙ্গিক বিষয়সংবলিত অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়ন করেছে, যা নিয়ে ৩ মার্চ আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৎপরতার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, উল্লিখিত কমিশন গঠনের বিষয়টিকে সরকার বিশেষ অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব দিয়ে খুবই দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
এখন কথা হচ্ছে, যেসব কাজ সম্পাদনের কথা বলে কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে কাজগুলো সর্বোচ্চ দক্ষতার সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ও হয়রানিমুক্ত ব্যবস্থার অধীনে সম্পন্ন করার জন্য এরূপ একটি কমিশন গঠনই সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত কি না, তা কি যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়েছে? নাকি এনআইডি কার্যক্রম আগের মতো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে থেকে যাবে, নাকি তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত হবে মর্মে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, সে বিতর্ককে প্রশমনের জন্যই এটি করা হয়েছে? প্রশ্নগুলো কেন উঠল, সেটি এবং উল্লিখিত কর্মকাণ্ডগুলো সম্পাদনের জন্য সিআরসি গঠন কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে আলোচনা হওয়াটা খুবই জরুরি। কারণ, নানা অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানের আধিক্যের ভারে বাংলাদেশের রাষ্ট্র খাতের এমনিতেই চরম ন্যুব্জ দশা। তার ওপর আগে থেকে চলে আসা একটি পুরোনো কাজের জন্য যদি নতুন করে এনআরসির মতো আরেকটি মাথাভারী প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাতে রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয়ই শুধু বাড়বে না, আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের সমস্যাও বাড়বে এবং সেবাদানের ক্ষেত্রে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হবে।
২০১০-এর দশকের গোড়া থেকে শুরু হওয়া এনআইডিসংক্রান্ত কার্যক্রম গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে ইসির আওতাতেই চলে আসছিল। ২০২৩ সালে এসে হঠাৎ করেই এ দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় ন্যস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাজটি দীর্ঘদিন থেকে ইসির আওতায় চলে আসার সুবাদে অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে এনআইডির সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকার কারণে ইসি এটি তাদের নিজেদের আওতায়ই রাখতে চায়, যে দাবি তারা ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকেও উত্থাপন করেছে। তদুপরি এ দাবি পুনর্ব্যক্ত করে ৯ মার্চ তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে পুনরায় একটি চিঠি পাঠিয়েছে। এদিকে ১২ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এনআইডিসহ নাগরিকের ডেটা নিয়ন্ত্রণে ‘জাতীয় ডেটা কর্তৃপক্ষ’ (এনডিএ) গঠিত হবে। তাঁর বক্তব্যে এ কাজে স্থানীয় সরকারের ভূমিকাকে অনেকটা তাচ্ছিল্যও করা হয়েছে। মোটকথা, বিষয়টি এখন এক হযবরল অবস্থার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এনআইডি কার্ড প্রদানের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় ন্যস্ত করার কারণটি মোটেও বোধগম্য নয়। কেননা, নাগরিকমাত্রই, এমনকি তিনি যদি চিহ্নিত বা দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীও হন, এনআইডি কার্ড পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ অবস্থায় এনআইডি কার্যক্রম কার আওতায় সম্পন্ন হবে, এ নিয়ে উল্লিখিত দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যেই নতুন করে সিআরসি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে এসবের ভিড়ে এনডিএর অবস্থান কী হবে, সেটিও বোঝা দরকার। তবে এটি প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এনআইডি প্রদানের কাজটি এ-জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান করে না, করে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো, যেটি বাংলাদেশেও হওয়া উচিত। ফলে এ কাজের জন্য নতুন করে সিআরসি বা এনডিএ গঠন না করে কাজটি কীভাবে ক্রমান্বয়ে পুরোপুরিভাবে স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা যায়, তা গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা উচিত।
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজটিও বিশ্বজুড়ে প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবেই স্থানীয় সরকার কর্তৃক সম্পন্ন হয়ে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও সে ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এখানে এটি চালু হয়েছে মূলত পাসপোর্ট ও এনআইডি প্রদানসংক্রান্ত কাজের শর্তের অংশ হিসেবে, স্বতন্ত্র ব্যবস্থা হিসেবে নয়। আসলে এটিকে নিয়মিত বাধ্যতামূলক নাগরিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে চালু করা প্রয়োজন। অর্থাৎ যেকোনো নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যুর বিষয়টি তার অভিভাবককে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কার্যালয়ে নিবন্ধিত করতে হবে। আর সে নিবন্ধিত তথ্যই সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান (নির্বাচন কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) তাদের নিজ নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করবে। কিন্তু এর জন্য কোনো অবস্থাতেই সিআরসি বা এনডিএর মতো মাথাভারী বাড়তি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই।
এসব করা হলে তা স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও স্বনির্ভর করে তোলার চিন্তাভাবনাকে আরও পিছিয়ে দেবে, যার আভাস ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের কথাতেও রয়েছে। এমনিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনীতিক বা আমলা কেউই নিজেদের স্বার্থ ও ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী হতে দিতে চান না। এ অবস্থায় রাজধানীকেন্দ্রিক সিআরসি বা এনডিএ গঠন করা হলে এর মাধ্যমে রাজনীতিক ও আমলাদের ওই হীন আকাঙ্ক্ষাই আরও প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা পাবে। মোটকথা, এসব মাথাভারী প্রতিষ্ঠানের চিন্তা পরিপূর্ণভাবেই সংবিধান নির্দেশিত স্বনির্ভর-শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা ধারণার পরিপন্থী এবং এই মুহূর্তে এ ধরনের চিন্তাভাবনা নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে পারে।
বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদসংক্রান্ত নিবন্ধন ব্যবস্থাটি বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি কাজ। জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধনের মতো এটিও যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় সরকারের আওতায় ন্যস্ত করা উচিত। আর এনআরসির আওতায় ইউনিক আইডি প্রদানসংক্রান্ত যে সেবার কথা বলা হচ্ছে, সেটি বস্তুত আইডি কার্ড সেবারই সম্প্রসারিত অংশ। ফলে এটিও খুব স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় সরকারের আওতায় থাকা উচিত। তারপরও এ নিয়ে বলতে হচ্ছে এ কারণে যে সিআরসি গঠনের যুক্তি হিসেবে ইউনিক আইডি প্রদানকেও একটি স্বতন্ত্র কাজ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যা ধারণাগতভাবে সঠিক নয়।
এরপরও যদি উল্লিখিত বাস্তবতা এবং তথ্য ও যুক্তিকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার সিআরসি বা এনডিএ গঠন করে, তাহলে একেবারে প্রথমেই যা ঘটবে তা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের সমস্যা। কারণ, মাঠপর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো বিস্তৃততর নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে উল্লিখিত তথ্যের জন্য তাদের শেষ পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের ওপরই নির্ভর করতে হবে। এবং এতে করে সমন্বয়ের সমস্যাই শুধু বাড়বে না, পুরো প্রক্রিয়াটিই এক বিদঘুটে জটিল আকার ধারণ করবে। আর যদি বলা হয় যে তারা সারা দেশে তাদের বিস্তৃততর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে, তাহলে তা হবে আরও এক অনাকাঙ্ক্ষিত ও অবাস্তব চিন্তা। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের আওতায় যেকোনো নতুন কমিশন বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা মানেই রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, যা ইতিমধ্যে সামন্ত যুগের রাজসিক কাজকারবারকেও ছাড়িয়ে গেছে।
বাজেটের আওতায় বাংলাদেশের ‘রাজ কর্মচারীদের’ পেছনে ব্যয়িত অর্থের হিস্যা এখন প্রায় ৪৩ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকেরা নিশ্চয়ই তা আর বাড়াতে চাইবেন না। তা ছাড়া, সরকারের কথিত সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গেও এরূপ প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির ধারণা সংগতিপূর্ণ নয়। সরকারের সংস্কার কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য তো রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা জনসেবাকে জটিলতামুক্ত করা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা এবং রাষ্ট্রের পরিচালনার ব্যয় কমিয়ে আনা। কিন্তু উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠনের মধ্য দিয়ে এগুলোর সব কটিই লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সব মিলিয়ে তাই বিনীত প্রস্তাব, রাষ্ট্রের নাগরিকদের এনআইডি ও ইউনিক আইডি প্রদান এবং তাদের জন্ম-মৃত্যু, বিবাহবিচ্ছেদ ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য নিবন্ধনসংক্রান্ত সেবার জন্য নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজন নেই। বরং প্রয়োজন হচ্ছে এ কাজগুলোকে ক্রমান্বয়ে স্থানীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করার বিষয়ে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। আর তা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সরকারের দায়িত্ব হবে বিদ্যমান কাঠামোর আওতাতেই এ সেবাগুলোকে কীভাবে সব ধরনের ঝঞ্ঝাট-জটিলতা ও হয়রানিমুক্ত ব্যবস্থার আওতায় প্রদান করা যায়, তা নিশ্চিত করা। আশা করব, প্রধান উপদেষ্টা গঠনমূলক ভিন্নমতকে স্বাগত জানিয়ে প্রায়ই যেসব বক্তব্য দেন, সেসবের সঙ্গে সংগতি রেখে এসব নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্যোগ থেকে সরকারকে বিরত রাখবেন। তবে উল্লিখিত সেবাগুলোকে কীভাবে আরও জনবান্ধব করে তোলা যায়, সে ব্যাপারে নিজের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি রাষ্ট্রকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন।
লেখক: আবু তাহের খান
অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি

গত এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’-এর পূর্বাভাস জানিয়েছিল, এ বছর বাংলাদেশে নতুন করে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে এবং দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২১ দশমিক ২ শতাংশে।
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের কৃষি এখন এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে। একদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে আবাদি জমি; অন্যদিকে কৃষিশ্রমিকের অভাব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। স্বাধীনতার পর যেখানে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৭৫ শতাংশ কৃষিনির্ভর ছিল, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে প্রায় ৪৫ শতাংশে।
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে যখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে—এ রকম পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত নতুন খসড়া নীতিমালা উচ্চশিক্ষার এ সেক্টরে একটা পরিবর্তনের আশাবাদ তৈরি করতে পারে।
৮ ঘণ্টা আগে
ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
১ দিন আগেএকটি ন্যূনতম সভ্য রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তাদের মনের মধ্যে এ আকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে যে, এ রাষ্ট্র তথা এর পরিচালক ও রাজনীতিকেরা জনগণের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বিরাজমান সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন এবং তা দূরীকরণের উপায় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করবেন। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের সব চিন্তাই সংসদ নির্বাচন নিয়ে, তাই তারা এ বিষয়টির প্রতি তেমন নজর দিতে পারছে না।
আবু তাহের খান

গত এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’-এর পূর্বাভাস জানিয়েছিল, এ বছর বাংলাদেশে নতুন করে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে এবং দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২১ দশমিক ২ শতাংশে। বিশ্বব্যাংকের অধিকাংশ পরামর্শ ও সহায়তা বাংলাদেশের জন্য পরিত্যাজ্য হলেও তাদের এ পূর্বাভাসকে আমলে নেওয়ার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, এটি বাংলাদেশের বিত্তসহায়ক ও জনবিমুখ অর্থনৈতিক নীতিমালাজনিত এমন এক ফলাফলকে তুলে ধরেছে, যে বিষয়ে বাংলাদেশ জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে দেশে দারিদ্র্যের হার সামনের দিনগুলোতে ক্রমান্বয়ে আরও বাড়তেই থাকবে এবং এর ফলে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ, বিশেষত দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের আওতাধীন জনগোষ্ঠী ক্ষুধা, অপুষ্টি ও অনাহারের মতো বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ওই পূর্বাভাসের পর ইতিমধ্যে ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু উল্লিখিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় অদ্যাবধি রাষ্ট্রের নীতিকাঠামোতে এমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা পরবর্তী বছরগুলোতে গিয়ে উল্লিখিত দারিদ্র্য বৃদ্ধির হারকে রুখে দিতে পারবে। তবে এ সরকার যেহেতু একটি অন্তর্বর্তী সরকার, সেহেতু এ বিষয়ে তাদের নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির আসন্ন নির্বাচনে (যদি হয়) জিতে যারা ক্ষমতায় যেতে চায়, তাদের কি এ বিষয়ে কোনো অঙ্গীকার, প্রস্তুতি বা চিন্তাভাবনা আছে? তাদের কথাবার্তা ও আচরণ দেখে তো তেমনটি মনে হচ্ছে না। বিষয়টি তাহলে দাঁড়াচ্ছে এই যে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানগত দুর্বলতা এবং এ বিষয়ে ক্ষমতায় যেতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোর সীমাহীন নির্লিপ্ততা—এ দুয়ে মিলে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি মোকাবিলা-প্রচেষ্টা এখন একেবারেই শূন্যের কোঠায়। ফলে দেশের দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলো এখন চরম খাদ্যাভাব ও অপুষ্টিতে ভুগছে। তাদের সন্তানেরা গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষায় প্রবেশাধিকার না পেয়ে নিম্নব্যয়ের মানহীন মাদ্রাসাশিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। চিকিৎসার জন্য শহরের সরকারি হাসপাতালই তাদের মূল ভরসা, যেখানে চাহিদার তুলনায় সেবা সরবরাহের পরিমাণ খুবই অপ্রতুল। আর ভোগ্যপণ্যের অতি উচ্চমূল্যের কারণে তাদের মধ্যকার একটি বড় অংশই দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম উপকরণটুকু সংগ্রহ করতে না পেরে প্রায়ই অর্ধাহার বা আপসমূলক নিম্ন-আহারের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। মোট কথা, বিত্তবান, সুবিধাভোগী ও রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে রাতারাতি অবৈধ বিত্তের মালিক হয়ে ওঠা নব্য বিত্তবানেরা ছাড়া দেশের সিংহভাগ মানুষকেই এখন চরম অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দেশের সাধারণ মানুষের এইসব দুর্ভোগ ও মানবেতর জীবনযাপনের কষ্ট রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের বোধ, চিন্তা ও উপলব্ধিকে একেবারেই স্পর্শ করতে পারছে না অথবা বলা যেতে পারে, এসব কষ্ট উপলব্ধি করার মতো বোধই তাঁদের নেই। অন্যদিকে নিকট ভবিষ্যতে যাঁরা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নের দায়িত্বে যাবেন বলে আশা করছেন, তাঁরাও ঘুণাক্ষরে ভাবছেন না সাধারণ মানুষের জীবন কীভাবে ক্রমেই বিপন্ন থেকে বিপন্নতর হয়ে পড়ছে। আর উন্নয়ন অর্থনীতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রই জানেন, ক্রমহ্রাসমান দারিদ্র্য যদি মাঝপথে এসে আবার পশ্চাৎমুখী হতে শুরু করে অর্থাৎ বাড়তে থাকে, তাহলে সেটিকে আর শিগগির কমিয়ে আনতে পারাটা অনেকটাই সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। এবং দারিদ্র্যবিমোচন-প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সম্ভবত এই মুহূর্তে সে রকম একটি অন্তর্বর্তী সংকটকালই পার করছে। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার ও বৈদেশিক চুক্তি সম্পাদনের পেছনে তাদের অধিকাংশ সময় ও মনোযোগ নিবদ্ধ করার কারণে জনস্বার্থের প্রতি তারা যে উপেক্ষামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে, বস্তুত তা থেকেই এ সংকটের সৃষ্টি।
জনস্বার্থের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপেক্ষা ও নির্লিপ্ততার সবচেয়ে বড় শিকার এখন কৃষক ও কৃষি খাত এবং আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শ্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত শ্রমজীবী মানুষ। আর তাদের অধিকাংশই যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া মানুষ এবং তারা যেহেতু সংগঠিত নয় বলে প্রতিবাদ করার কোনো সামর্থ্যও তাদের নেই। অন্যদিকে ক্ষমতারোহণের লড়াইয়ে উন্মত্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতামগ্নতা এতটাই প্রচণ্ড হয়ে উঠেছে যে তাদের পক্ষেও আর কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের দিকে তাকানোর ফুরসত নেই। অতএব দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের মানুষের আপাতত এটাই নিয়তি যে, তাদের আরও কিছুকাল ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অনাহার, পুষ্টিহীনতা, অশিক্ষা, চিকিৎসাহীনতা, বাসস্থান-সংকট, মব-অত্যাচার ইত্যাদি বিষয়গুলোকে মোকাবিলা করেই টিকে থাকতে হবে।
তো এই যখন দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনযাপনের স্তর ও বৈশিষ্ট্য, তখন একটি ন্যূনতম সভ্য রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তাদের মনের মধ্যে এ আকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে যে, এ রাষ্ট্র তথা এর পরিচালক ও রাজনীতিকেরা জনগণের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বিরাজমান সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন এবং তা দূরীকরণের উপায় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করবেন। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের সব চিন্তাই সংসদ নির্বাচন নিয়ে, তাই তারা এ বিষয়টির প্রতি তেমন নজর দিতে পারছে না। অন্যদিকে, ক্ষমতায় যেতে ইচ্ছুক রাজনীতিকেরা জনগণের জীবনযাপনের সে কষ্ট ও দুর্ভোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন তো দূরের কথা, তাঁদের কাছে জনগণ নিছকই ভোটের সময়কার বক্তৃতা-মাঠের মাথাগুনতির অলংকার ও উপকরণ মাত্র। আর সে কারণেই বিশ্বব্যাংক যখন তথ্য দেয় যে দারিদ্র্য আবার ফিরে আসছে, তখন মাঠের জীবনে অভ্যস্ত মানুষ হিসেবে ভয় হয়—বাংলাদেশ আবার দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো বা মোজাম্বিকের দিকে যাত্রা করছে না তো?
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মানব উন্নয়ন সূচকে (এইচডিআই) বাংলাদেশ এই সেদিনও শ্রীলঙ্কা ও ভারত ব্যতীত অন্য পাঁচটি দেশের তুলনায় প্রায় সব কটি সূচকেই সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে ছিল। এমনকি বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল শ্রীলঙ্কা ও ভারতের চেয়েও এগিয়ে। কিন্তু দারিদ্র্যহার বৃদ্ধির পূর্ব-প্রবণতা আবার ফিরে আসার পরিপ্রেক্ষিতে আশঙ্কা হয়, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হয়তো পুনরায় পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের পর্যায়ে নেমে যেতে পারে। এই সেদিনও বাংলাদেশের তুলনায় বহু ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা ভিয়েতনাম এখন বাংলাদেশকে প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই আর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গণ্য করে না। এমনকি বাংলাদেশের নাগরিকদের তারা ভিসাও দিতে চায় না। ২০২২ সালের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কায় প্রচণ্ড জনবিক্ষোভের মুখে সরকার পতনের মাত্র এক বছরের মধ্যে দেশটি শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এখন ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা বাংলাদেশের তুলনায় দশমিক ৪ শতাংশ বেশি এবং সার্কভুক্ত দেশ হয়েও বাংলাদেশকে ভিসা দিতে তারা কড়াকড়ি করছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন শুধু পাকিস্তানের (৩.২ শতাংশ) ও আফগানিস্তানের (২.৭ শতাংশ) চেয়ে এগিয়ে আছে।
এসব বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করার অবকাশ কি মনে হয় অন্তর্বর্তী সরকার বা ‘ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে’ অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকারী দলসমূহের আছে? নেই। উপরিউক্ত পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর দেশে দারিদ্র্যের হার যেখানে ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ছে, সেখানে পরবর্তী বছরগুলোতেও যদি এ ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি ও সাধারণ জনগণের বিপর্যস্ত জীবনমানের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে বৈকি! রাষ্ট্রের পরিচালকদের এ ব্যাপারে নির্বিকার থাকা চলে না। দেশ ও দেশের সাধারণ মানুষের এই মুহূর্তের কষ্টময় জীবনযাপনের প্রতি ন্যূনতম মমতা জানিয়ে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক

গত এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’-এর পূর্বাভাস জানিয়েছিল, এ বছর বাংলাদেশে নতুন করে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে এবং দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২১ দশমিক ২ শতাংশে। বিশ্বব্যাংকের অধিকাংশ পরামর্শ ও সহায়তা বাংলাদেশের জন্য পরিত্যাজ্য হলেও তাদের এ পূর্বাভাসকে আমলে নেওয়ার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, এটি বাংলাদেশের বিত্তসহায়ক ও জনবিমুখ অর্থনৈতিক নীতিমালাজনিত এমন এক ফলাফলকে তুলে ধরেছে, যে বিষয়ে বাংলাদেশ জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে দেশে দারিদ্র্যের হার সামনের দিনগুলোতে ক্রমান্বয়ে আরও বাড়তেই থাকবে এবং এর ফলে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ, বিশেষত দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের আওতাধীন জনগোষ্ঠী ক্ষুধা, অপুষ্টি ও অনাহারের মতো বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ওই পূর্বাভাসের পর ইতিমধ্যে ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু উল্লিখিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় অদ্যাবধি রাষ্ট্রের নীতিকাঠামোতে এমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা পরবর্তী বছরগুলোতে গিয়ে উল্লিখিত দারিদ্র্য বৃদ্ধির হারকে রুখে দিতে পারবে। তবে এ সরকার যেহেতু একটি অন্তর্বর্তী সরকার, সেহেতু এ বিষয়ে তাদের নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির আসন্ন নির্বাচনে (যদি হয়) জিতে যারা ক্ষমতায় যেতে চায়, তাদের কি এ বিষয়ে কোনো অঙ্গীকার, প্রস্তুতি বা চিন্তাভাবনা আছে? তাদের কথাবার্তা ও আচরণ দেখে তো তেমনটি মনে হচ্ছে না। বিষয়টি তাহলে দাঁড়াচ্ছে এই যে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানগত দুর্বলতা এবং এ বিষয়ে ক্ষমতায় যেতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোর সীমাহীন নির্লিপ্ততা—এ দুয়ে মিলে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি মোকাবিলা-প্রচেষ্টা এখন একেবারেই শূন্যের কোঠায়। ফলে দেশের দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলো এখন চরম খাদ্যাভাব ও অপুষ্টিতে ভুগছে। তাদের সন্তানেরা গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষায় প্রবেশাধিকার না পেয়ে নিম্নব্যয়ের মানহীন মাদ্রাসাশিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। চিকিৎসার জন্য শহরের সরকারি হাসপাতালই তাদের মূল ভরসা, যেখানে চাহিদার তুলনায় সেবা সরবরাহের পরিমাণ খুবই অপ্রতুল। আর ভোগ্যপণ্যের অতি উচ্চমূল্যের কারণে তাদের মধ্যকার একটি বড় অংশই দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম উপকরণটুকু সংগ্রহ করতে না পেরে প্রায়ই অর্ধাহার বা আপসমূলক নিম্ন-আহারের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। মোট কথা, বিত্তবান, সুবিধাভোগী ও রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে রাতারাতি অবৈধ বিত্তের মালিক হয়ে ওঠা নব্য বিত্তবানেরা ছাড়া দেশের সিংহভাগ মানুষকেই এখন চরম অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দেশের সাধারণ মানুষের এইসব দুর্ভোগ ও মানবেতর জীবনযাপনের কষ্ট রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের বোধ, চিন্তা ও উপলব্ধিকে একেবারেই স্পর্শ করতে পারছে না অথবা বলা যেতে পারে, এসব কষ্ট উপলব্ধি করার মতো বোধই তাঁদের নেই। অন্যদিকে নিকট ভবিষ্যতে যাঁরা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নের দায়িত্বে যাবেন বলে আশা করছেন, তাঁরাও ঘুণাক্ষরে ভাবছেন না সাধারণ মানুষের জীবন কীভাবে ক্রমেই বিপন্ন থেকে বিপন্নতর হয়ে পড়ছে। আর উন্নয়ন অর্থনীতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রই জানেন, ক্রমহ্রাসমান দারিদ্র্য যদি মাঝপথে এসে আবার পশ্চাৎমুখী হতে শুরু করে অর্থাৎ বাড়তে থাকে, তাহলে সেটিকে আর শিগগির কমিয়ে আনতে পারাটা অনেকটাই সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। এবং দারিদ্র্যবিমোচন-প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সম্ভবত এই মুহূর্তে সে রকম একটি অন্তর্বর্তী সংকটকালই পার করছে। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার ও বৈদেশিক চুক্তি সম্পাদনের পেছনে তাদের অধিকাংশ সময় ও মনোযোগ নিবদ্ধ করার কারণে জনস্বার্থের প্রতি তারা যে উপেক্ষামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে, বস্তুত তা থেকেই এ সংকটের সৃষ্টি।
জনস্বার্থের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপেক্ষা ও নির্লিপ্ততার সবচেয়ে বড় শিকার এখন কৃষক ও কৃষি খাত এবং আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শ্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত শ্রমজীবী মানুষ। আর তাদের অধিকাংশই যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া মানুষ এবং তারা যেহেতু সংগঠিত নয় বলে প্রতিবাদ করার কোনো সামর্থ্যও তাদের নেই। অন্যদিকে ক্ষমতারোহণের লড়াইয়ে উন্মত্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতামগ্নতা এতটাই প্রচণ্ড হয়ে উঠেছে যে তাদের পক্ষেও আর কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের দিকে তাকানোর ফুরসত নেই। অতএব দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের মানুষের আপাতত এটাই নিয়তি যে, তাদের আরও কিছুকাল ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অনাহার, পুষ্টিহীনতা, অশিক্ষা, চিকিৎসাহীনতা, বাসস্থান-সংকট, মব-অত্যাচার ইত্যাদি বিষয়গুলোকে মোকাবিলা করেই টিকে থাকতে হবে।
তো এই যখন দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনযাপনের স্তর ও বৈশিষ্ট্য, তখন একটি ন্যূনতম সভ্য রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তাদের মনের মধ্যে এ আকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে যে, এ রাষ্ট্র তথা এর পরিচালক ও রাজনীতিকেরা জনগণের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বিরাজমান সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন এবং তা দূরীকরণের উপায় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করবেন। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের সব চিন্তাই সংসদ নির্বাচন নিয়ে, তাই তারা এ বিষয়টির প্রতি তেমন নজর দিতে পারছে না। অন্যদিকে, ক্ষমতায় যেতে ইচ্ছুক রাজনীতিকেরা জনগণের জীবনযাপনের সে কষ্ট ও দুর্ভোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন তো দূরের কথা, তাঁদের কাছে জনগণ নিছকই ভোটের সময়কার বক্তৃতা-মাঠের মাথাগুনতির অলংকার ও উপকরণ মাত্র। আর সে কারণেই বিশ্বব্যাংক যখন তথ্য দেয় যে দারিদ্র্য আবার ফিরে আসছে, তখন মাঠের জীবনে অভ্যস্ত মানুষ হিসেবে ভয় হয়—বাংলাদেশ আবার দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো বা মোজাম্বিকের দিকে যাত্রা করছে না তো?
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মানব উন্নয়ন সূচকে (এইচডিআই) বাংলাদেশ এই সেদিনও শ্রীলঙ্কা ও ভারত ব্যতীত অন্য পাঁচটি দেশের তুলনায় প্রায় সব কটি সূচকেই সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে ছিল। এমনকি বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল শ্রীলঙ্কা ও ভারতের চেয়েও এগিয়ে। কিন্তু দারিদ্র্যহার বৃদ্ধির পূর্ব-প্রবণতা আবার ফিরে আসার পরিপ্রেক্ষিতে আশঙ্কা হয়, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হয়তো পুনরায় পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের পর্যায়ে নেমে যেতে পারে। এই সেদিনও বাংলাদেশের তুলনায় বহু ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা ভিয়েতনাম এখন বাংলাদেশকে প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই আর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গণ্য করে না। এমনকি বাংলাদেশের নাগরিকদের তারা ভিসাও দিতে চায় না। ২০২২ সালের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কায় প্রচণ্ড জনবিক্ষোভের মুখে সরকার পতনের মাত্র এক বছরের মধ্যে দেশটি শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এখন ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা বাংলাদেশের তুলনায় দশমিক ৪ শতাংশ বেশি এবং সার্কভুক্ত দেশ হয়েও বাংলাদেশকে ভিসা দিতে তারা কড়াকড়ি করছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন শুধু পাকিস্তানের (৩.২ শতাংশ) ও আফগানিস্তানের (২.৭ শতাংশ) চেয়ে এগিয়ে আছে।
এসব বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করার অবকাশ কি মনে হয় অন্তর্বর্তী সরকার বা ‘ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে’ অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকারী দলসমূহের আছে? নেই। উপরিউক্ত পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর দেশে দারিদ্র্যের হার যেখানে ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ছে, সেখানে পরবর্তী বছরগুলোতেও যদি এ ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি ও সাধারণ জনগণের বিপর্যস্ত জীবনমানের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে বৈকি! রাষ্ট্রের পরিচালকদের এ ব্যাপারে নির্বিকার থাকা চলে না। দেশ ও দেশের সাধারণ মানুষের এই মুহূর্তের কষ্টময় জীবনযাপনের প্রতি ন্যূনতম মমতা জানিয়ে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক

গণমাধ্যমের খবর, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি নিবন্ধন এবং ইউনিক আইডিসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার একটি স্থায়ী নাগরিক নিবন্ধন কমিশন (সিআরসি) গঠন করতে যাচ্ছে (আজকের পত্রিকা, ৫ মার্চ ২০২৫)।
১৪ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশের কৃষি এখন এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে। একদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে আবাদি জমি; অন্যদিকে কৃষিশ্রমিকের অভাব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। স্বাধীনতার পর যেখানে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৭৫ শতাংশ কৃষিনির্ভর ছিল, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে প্রায় ৪৫ শতাংশে।
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে যখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে—এ রকম পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত নতুন খসড়া নীতিমালা উচ্চশিক্ষার এ সেক্টরে একটা পরিবর্তনের আশাবাদ তৈরি করতে পারে।
৮ ঘণ্টা আগে
ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
১ দিন আগেশাইখ সিরাজ

বাংলাদেশের কৃষি এখন এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে। একদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে আবাদি জমি; অন্যদিকে কৃষিশ্রমিকের অভাব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। স্বাধীনতার পর যেখানে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৭৫ শতাংশ কৃষিনির্ভর ছিল, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে প্রায় ৪৫ শতাংশে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষিতে কর্মরত মানুষের হার নেমে আসবে ২০ শতাংশে।
এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন বাড়ানোর একমাত্র টেকসই উপায় হলো কৃষি যান্ত্রিকীকরণ; যেখানে যন্ত্র শ্রমের বিকল্প হয়ে উঠছে, উৎপাদন ব্যয় কমাচ্ছে, আর কৃষককে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখছে।
বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের সূচনা ষাটের দশকে, তখন হাতে আসে পাওয়ার টিলার ও সেচপাম্প। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকারি উদ্যোগে ৪০ হাজার লো-লিফট পাম্প বিতরণ করা হয়। এরপর ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করলে বেসরকারি খাত যন্ত্র ব্যবসায় প্রবেশ করে। যান্ত্রিকীকরণের গতি তখন থেকে বাড়তে থাকে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৯৫ শতাংশ জমি চাষ হয় পাওয়ার টিলারে, ৯৫ শতাংশ সেচ হয় মেশিনে এবং ৭০ শতাংশ ফসল মাড়াই যান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন হয়। কিন্তু রোপণ ও কর্তনের ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি এখনো সীমিত; রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহার মাত্র ১২.৪ শতাংশ এবং কম্বাইন হার্ভেস্টার ১৭.৩ শতাংশ কৃষকের মধ্যে সীমিত (বিআরআরআই ও ডিএই সমীক্ষা, ২০১৮)। যদিও এই তথ্য নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
২০১৯ সালে সরকার যান্ত্রিকীকরণে গতি আনতে ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প (২০২০-২০২৫)’ হাতে নেয়। যার বাজেট ছিল ৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে। প্রকল্পের তথ্যমতে, ৫১ প্রকার কৃষিযন্ত্রে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে পাহাড়ি ও চরাঞ্চলে এবং ৫০ শতাংশ ভর্তুকি অন্য এলাকায়। বিশেষত যে যন্ত্রগুলোতে ভর্তুকি দেওয়া হয়, সেসব যন্ত্র ক্ষুদ্র বা মাঝারি কৃষকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আমি বারবার বলে আসছিলাম, ক্ষুদ্র কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি না দিলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ উদ্যোগটি সফল হবে না। মনে পড়ে, বরগুনায় মাঠে কাজ করার সময় কয়েকজন কৃষক বলছিলেন, যাঁরা কৃষিযন্ত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন, তাঁদের কেউই কৃষিযন্ত্র পাননি। অথচ যিনি পেয়েছেন, তিনি কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত নন।
নেত্রকোনার হাওর এলাকায় কাজ করার সময় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, হার্ভেস্টার দ্রুত সময়ে ফসল তোলার কাজে সহায়তা করেছে, ফলে পানি চলে আসার আগেই গত দুই বছর ফসল তুলতে পেরেছেন তাঁরা। তবে বড় অভিযোগ ছিল, একজনই পেয়েছেন একাধিক যন্ত্র। তবে আশার কথা, কৃষিযন্ত্রের ব্যবহারে হাওর অঞ্চলের মতো জায়গা থেকে অতিদ্রুত ধান কেটে নিতে পারায় ফসলকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে।
যান্ত্রিকীকরণ যেমন শ্রমঘাটতি পূরণ করছে, উৎপাদন খরচও কমাচ্ছে। গবেষণা অনুযায়ী, পাওয়ার টিলারে জমি চাষ করলে সময় ৬০ শতাংশ কমে, কম্বাইন হার্ভেস্টারে ধান কাটা ও মাড়াই করলে খরচ ৩০-৪০ শতাংশ কমে, আর ক্ষতি (ধান চিটা যাওয়া ইত্যাদি) কমে ১০-১৫ শতাংশ থেকে ২-৩ শতাংশে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) তথ্য অনুযায়ী, এক বিঘা ধান কাটতে যেখানে শ্রমিক লাগে ১২-১৫ জন, কম্বাইন হার্ভেস্টার তা করে ফেলে মাত্র ২০-২৫ মিনিটে। অর্থাৎ এক মেশিন দিনে ২৫-৩০ বিঘা জমির কাজ শেষ করতে পারে, যা আগে লাগত তিন দিন এবং কমপক্ষে ৫০ শ্রমিক।
যান্ত্রিকীকরণ শুধু কৃষকের কাজ সহজ করছে না, নতুন গ্রামীণ উদ্যোক্তা শ্রেণিও তৈরি করছে। যাঁরা নিজের জমি না থাকলেও এখন যন্ত্র কিনে অন্য কৃষককে সেবা দিয়ে আয় করছেন। একজন কম্বাইন হার্ভেস্টার মালিক বছরে গড়ে ১৫০০-২০০০ বিঘা জমিতে সেবা দেন, আয় করতে পারেন ভালো।
তবে সমস্যা এখনো বহু। একটি কম্বাইন হার্ভেস্টারের দাম ২৫-৩০ লাখ টাকা, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ১২-১৫ লাখ। গড় জমি আয়তন মাত্র ০.৬ হেক্টর, ফলে বড় মেশিনের কার্যকারিতা কমে যায়। ৪০ শতাংশ কৃষক অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে সেবা পাওয়া যায় না (বিআইডিএস সমীক্ষা, ২০২৩)। বর্তমানে দেশে প্রয়োজন প্রায় ৬০ হাজার প্রশিক্ষিত মেকানিক, আছে মাত্র ১৫ হাজার।
২০২০ সালের জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিতে বলা আছে, কৃষিকে দক্ষ, লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব খাতে রূপান্তর করা হবে। কিন্তু মাঠে দেখা যায়, অনেক সময় ভর্তুকি বণ্টনে অস্বচ্ছতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং মনিটরিংয়ের ঘাটতি প্রকৃত কৃষককে বঞ্চিত করছে।
যান্ত্রিকীকরণ শুধু কৃষির পরিশ্রম কমাবে না, বরং ভবিষ্যৎ খাদ্যনিরাপত্তার ভিত্তি তৈরি করবে। এর জন্য প্রয়োজন হাওর, চর, পাহাড়ে আলাদা যন্ত্র ও কৌশল প্রয়োগ, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে ‘অ্যাগ্রি-মেশিনারি টেকনিশিয়ান’ কোর্স বাধ্যতামূলক করা, যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে স্থানীয় কারখানা স্থাপন যেন বছরে ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব হয়, যন্ত্র বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং সেন্সর, ড্রোন ও ডেটাভিত্তিক যন্ত্র ব্যবস্থাপনা ধীরে ধীরে চালু করা।
বাংলাদেশের কৃষি এখন উৎপাদন থেকে দক্ষতায় উত্তরণের পথে। এ যাত্রায় যন্ত্রই হবে কৃষকের প্রধান সহযাত্রী। কিন্তু যন্ত্র যেন শুধু প্রদর্শনী না হয়, তা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন হবে নীতি, প্রশিক্ষণ, বাজার ও মনিটরিংয়ের সমন্বয়। যন্ত্রের শব্দ যেন কৃষকের ক্লান্তির নয়, আশার প্রতিধ্বনি হয়ে ওঠে। কারণ, কৃষকই জানেন, যন্ত্রের চেয়ে বড় জাদু তাঁর হাতে নেই, যদি তিনি সুযোগটা পান সঠিকভাবে।
সময়ের সঙ্গে পাল্টে চলেছে পৃথিবী। সেই সঙ্গে আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে বিশ্বের কৃষি ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন কৌশল। খাদ্যনিরাপত্তার প্রশ্নে প্রতিটি রাষ্ট্রই উদ্যোগী হচ্ছে স্মার্ট কৃষির বিকাশে। পরিবর্তিত কৃষি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কৃষিকৌশল নিয়ে গবেষণা ও যান্ত্রিক উৎকর্ষে খুব দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত দেশগুলো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কম লোকের অংশগ্রহণে স্বল্প সময়ে বেশি উৎপাদন নিশ্চিত করছে। সেখানে আমাদের মতো কৃষিপ্রধান দেশের অবস্থান নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এই সময়ে বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে না পারলে ভবিষ্যতের পথে পিছিয়ে থাকতে হবে অনেক দূর।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই

বাংলাদেশের কৃষি এখন এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে। একদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে আবাদি জমি; অন্যদিকে কৃষিশ্রমিকের অভাব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। স্বাধীনতার পর যেখানে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৭৫ শতাংশ কৃষিনির্ভর ছিল, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে প্রায় ৪৫ শতাংশে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষিতে কর্মরত মানুষের হার নেমে আসবে ২০ শতাংশে।
এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন বাড়ানোর একমাত্র টেকসই উপায় হলো কৃষি যান্ত্রিকীকরণ; যেখানে যন্ত্র শ্রমের বিকল্প হয়ে উঠছে, উৎপাদন ব্যয় কমাচ্ছে, আর কৃষককে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখছে।
বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের সূচনা ষাটের দশকে, তখন হাতে আসে পাওয়ার টিলার ও সেচপাম্প। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকারি উদ্যোগে ৪০ হাজার লো-লিফট পাম্প বিতরণ করা হয়। এরপর ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করলে বেসরকারি খাত যন্ত্র ব্যবসায় প্রবেশ করে। যান্ত্রিকীকরণের গতি তখন থেকে বাড়তে থাকে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৯৫ শতাংশ জমি চাষ হয় পাওয়ার টিলারে, ৯৫ শতাংশ সেচ হয় মেশিনে এবং ৭০ শতাংশ ফসল মাড়াই যান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন হয়। কিন্তু রোপণ ও কর্তনের ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি এখনো সীমিত; রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহার মাত্র ১২.৪ শতাংশ এবং কম্বাইন হার্ভেস্টার ১৭.৩ শতাংশ কৃষকের মধ্যে সীমিত (বিআরআরআই ও ডিএই সমীক্ষা, ২০১৮)। যদিও এই তথ্য নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
২০১৯ সালে সরকার যান্ত্রিকীকরণে গতি আনতে ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প (২০২০-২০২৫)’ হাতে নেয়। যার বাজেট ছিল ৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে। প্রকল্পের তথ্যমতে, ৫১ প্রকার কৃষিযন্ত্রে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে পাহাড়ি ও চরাঞ্চলে এবং ৫০ শতাংশ ভর্তুকি অন্য এলাকায়। বিশেষত যে যন্ত্রগুলোতে ভর্তুকি দেওয়া হয়, সেসব যন্ত্র ক্ষুদ্র বা মাঝারি কৃষকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আমি বারবার বলে আসছিলাম, ক্ষুদ্র কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি না দিলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ উদ্যোগটি সফল হবে না। মনে পড়ে, বরগুনায় মাঠে কাজ করার সময় কয়েকজন কৃষক বলছিলেন, যাঁরা কৃষিযন্ত্রের জন্য আবেদন করেছিলেন, তাঁদের কেউই কৃষিযন্ত্র পাননি। অথচ যিনি পেয়েছেন, তিনি কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত নন।
নেত্রকোনার হাওর এলাকায় কাজ করার সময় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, হার্ভেস্টার দ্রুত সময়ে ফসল তোলার কাজে সহায়তা করেছে, ফলে পানি চলে আসার আগেই গত দুই বছর ফসল তুলতে পেরেছেন তাঁরা। তবে বড় অভিযোগ ছিল, একজনই পেয়েছেন একাধিক যন্ত্র। তবে আশার কথা, কৃষিযন্ত্রের ব্যবহারে হাওর অঞ্চলের মতো জায়গা থেকে অতিদ্রুত ধান কেটে নিতে পারায় ফসলকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে।
যান্ত্রিকীকরণ যেমন শ্রমঘাটতি পূরণ করছে, উৎপাদন খরচও কমাচ্ছে। গবেষণা অনুযায়ী, পাওয়ার টিলারে জমি চাষ করলে সময় ৬০ শতাংশ কমে, কম্বাইন হার্ভেস্টারে ধান কাটা ও মাড়াই করলে খরচ ৩০-৪০ শতাংশ কমে, আর ক্ষতি (ধান চিটা যাওয়া ইত্যাদি) কমে ১০-১৫ শতাংশ থেকে ২-৩ শতাংশে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) তথ্য অনুযায়ী, এক বিঘা ধান কাটতে যেখানে শ্রমিক লাগে ১২-১৫ জন, কম্বাইন হার্ভেস্টার তা করে ফেলে মাত্র ২০-২৫ মিনিটে। অর্থাৎ এক মেশিন দিনে ২৫-৩০ বিঘা জমির কাজ শেষ করতে পারে, যা আগে লাগত তিন দিন এবং কমপক্ষে ৫০ শ্রমিক।
যান্ত্রিকীকরণ শুধু কৃষকের কাজ সহজ করছে না, নতুন গ্রামীণ উদ্যোক্তা শ্রেণিও তৈরি করছে। যাঁরা নিজের জমি না থাকলেও এখন যন্ত্র কিনে অন্য কৃষককে সেবা দিয়ে আয় করছেন। একজন কম্বাইন হার্ভেস্টার মালিক বছরে গড়ে ১৫০০-২০০০ বিঘা জমিতে সেবা দেন, আয় করতে পারেন ভালো।
তবে সমস্যা এখনো বহু। একটি কম্বাইন হার্ভেস্টারের দাম ২৫-৩০ লাখ টাকা, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ১২-১৫ লাখ। গড় জমি আয়তন মাত্র ০.৬ হেক্টর, ফলে বড় মেশিনের কার্যকারিতা কমে যায়। ৪০ শতাংশ কৃষক অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে সেবা পাওয়া যায় না (বিআইডিএস সমীক্ষা, ২০২৩)। বর্তমানে দেশে প্রয়োজন প্রায় ৬০ হাজার প্রশিক্ষিত মেকানিক, আছে মাত্র ১৫ হাজার।
২০২০ সালের জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিতে বলা আছে, কৃষিকে দক্ষ, লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব খাতে রূপান্তর করা হবে। কিন্তু মাঠে দেখা যায়, অনেক সময় ভর্তুকি বণ্টনে অস্বচ্ছতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং মনিটরিংয়ের ঘাটতি প্রকৃত কৃষককে বঞ্চিত করছে।
যান্ত্রিকীকরণ শুধু কৃষির পরিশ্রম কমাবে না, বরং ভবিষ্যৎ খাদ্যনিরাপত্তার ভিত্তি তৈরি করবে। এর জন্য প্রয়োজন হাওর, চর, পাহাড়ে আলাদা যন্ত্র ও কৌশল প্রয়োগ, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে ‘অ্যাগ্রি-মেশিনারি টেকনিশিয়ান’ কোর্স বাধ্যতামূলক করা, যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে স্থানীয় কারখানা স্থাপন যেন বছরে ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব হয়, যন্ত্র বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং সেন্সর, ড্রোন ও ডেটাভিত্তিক যন্ত্র ব্যবস্থাপনা ধীরে ধীরে চালু করা।
বাংলাদেশের কৃষি এখন উৎপাদন থেকে দক্ষতায় উত্তরণের পথে। এ যাত্রায় যন্ত্রই হবে কৃষকের প্রধান সহযাত্রী। কিন্তু যন্ত্র যেন শুধু প্রদর্শনী না হয়, তা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন হবে নীতি, প্রশিক্ষণ, বাজার ও মনিটরিংয়ের সমন্বয়। যন্ত্রের শব্দ যেন কৃষকের ক্লান্তির নয়, আশার প্রতিধ্বনি হয়ে ওঠে। কারণ, কৃষকই জানেন, যন্ত্রের চেয়ে বড় জাদু তাঁর হাতে নেই, যদি তিনি সুযোগটা পান সঠিকভাবে।
সময়ের সঙ্গে পাল্টে চলেছে পৃথিবী। সেই সঙ্গে আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে বিশ্বের কৃষি ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন কৌশল। খাদ্যনিরাপত্তার প্রশ্নে প্রতিটি রাষ্ট্রই উদ্যোগী হচ্ছে স্মার্ট কৃষির বিকাশে। পরিবর্তিত কৃষি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কৃষিকৌশল নিয়ে গবেষণা ও যান্ত্রিক উৎকর্ষে খুব দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত দেশগুলো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কম লোকের অংশগ্রহণে স্বল্প সময়ে বেশি উৎপাদন নিশ্চিত করছে। সেখানে আমাদের মতো কৃষিপ্রধান দেশের অবস্থান নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এই সময়ে বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে না পারলে ভবিষ্যতের পথে পিছিয়ে থাকতে হবে অনেক দূর।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই

গণমাধ্যমের খবর, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি নিবন্ধন এবং ইউনিক আইডিসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার একটি স্থায়ী নাগরিক নিবন্ধন কমিশন (সিআরসি) গঠন করতে যাচ্ছে (আজকের পত্রিকা, ৫ মার্চ ২০২৫)।
১৪ মার্চ ২০২৫
গত এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’-এর পূর্বাভাস জানিয়েছিল, এ বছর বাংলাদেশে নতুন করে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে এবং দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২১ দশমিক ২ শতাংশে।
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে যখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে—এ রকম পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত নতুন খসড়া নীতিমালা উচ্চশিক্ষার এ সেক্টরে একটা পরিবর্তনের আশাবাদ তৈরি করতে পারে।
৮ ঘণ্টা আগে
ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

দেশে যখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে—এ রকম পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত নতুন খসড়া নীতিমালা উচ্চশিক্ষার এ সেক্টরে একটা পরিবর্তনের আশাবাদ তৈরি করতে পারে।
ইউজিসির প্রস্তাবে অনেক ভালো পরামর্শ আছে। কিন্তু বড় আশাবাদের জায়গা হলো, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর ইচ্ছেমতো টিউশন ফি নির্ধারণ করতে পারবে না। আগের আইনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ নিজে ফি নির্ধারণ করে ইউজিসির কাছ থেকে শুধু অনুমোদন নিত। এতে তারা ইচ্ছেমতো ফি নির্ধারণ করত। সেখানে শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সংকট দেখা হতো না। কিন্তু এখন ইউজিসিই ফি নির্ধারণ করে দেবে আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা মানতে বাধ্য থাকবে। না মানলে জরিমানার মধ্যে পড়তে হবে।
আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধির প্রয়োজন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পাওয়া শুরু হয়। এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় কাছাকাছি সংখ্যায় চলে গেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। একসময় শুধু আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান পরিবারের সন্তানেরা এসব জায়গায় পড়ার সুযোগ পেত। কিন্তু এখন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাও এখানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। বিশেষ করে দরিদ্র হলেও শুধু মেধার কারণে তারা সে সুযোগ পাচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ধনীর সন্তানেরা পড়ার সুযোগ পায়—আগের সেই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেই সুযোগের জায়গাটা এখনো অবারিত হয়নি। কারণ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এখনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশনসহ নানা বাড়তি ফির কারণে নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র ঘরের সন্তানেরা সেখানে অধ্যয়ন করার কথা কল্পনাও করতে পারে না।
একসময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ছিল, এখানে টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রি করা হয়। আদতে কথাটি এখন আর প্রযোজ্য নয়। কারণ, দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুণ, মান ও গবেষণায় এগিয়ে আছে। দেশ এবং দেশের বাইরের নানা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা থেকে সেটা জানা যায়।
এদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ হলো, এখানে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বা বিষয়ওয়ারি বিষয়েই দক্ষ করে তোলা হয়। সেখানে মুক্তবুদ্ধি বা রাজনীতিচর্চার সুযোগ নেই। একই সঙ্গে শুধু ক্যারিয়ারিস্ট হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ফলে এখানকার শিক্ষার্থীরা ফার্মের মুরগির মতো করে গড়ে ওঠে। সমাজ, মানুষ ও রাষ্ট্র নিয়ে তারা ভাবে না। কিন্তু কথাটি যে ঠিক নয়, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণই সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেক ক্ষেত্রে ভালো কিছু আর আলোর মুখ দেখে না। নিয়ম অনুযায়ী, ইউজিসির এই খসড়া প্রস্তাব আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাবে, তারপর মন্ত্রণালয় সেটা অনুমোদন দেবে। আমরা চাই, ইউজিসির এই প্রস্তাবটি বড় বেশি সংশোধিত না হয়ে পাস করা হোক। তাতে শিক্ষাব্যবস্থায় একটা নতুন ধারা তৈরি হতে পারে।

দেশে যখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে—এ রকম পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত নতুন খসড়া নীতিমালা উচ্চশিক্ষার এ সেক্টরে একটা পরিবর্তনের আশাবাদ তৈরি করতে পারে।
ইউজিসির প্রস্তাবে অনেক ভালো পরামর্শ আছে। কিন্তু বড় আশাবাদের জায়গা হলো, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর ইচ্ছেমতো টিউশন ফি নির্ধারণ করতে পারবে না। আগের আইনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ নিজে ফি নির্ধারণ করে ইউজিসির কাছ থেকে শুধু অনুমোদন নিত। এতে তারা ইচ্ছেমতো ফি নির্ধারণ করত। সেখানে শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সংকট দেখা হতো না। কিন্তু এখন ইউজিসিই ফি নির্ধারণ করে দেবে আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা মানতে বাধ্য থাকবে। না মানলে জরিমানার মধ্যে পড়তে হবে।
আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধির প্রয়োজন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পাওয়া শুরু হয়। এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় কাছাকাছি সংখ্যায় চলে গেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। একসময় শুধু আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান পরিবারের সন্তানেরা এসব জায়গায় পড়ার সুযোগ পেত। কিন্তু এখন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাও এখানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। বিশেষ করে দরিদ্র হলেও শুধু মেধার কারণে তারা সে সুযোগ পাচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ধনীর সন্তানেরা পড়ার সুযোগ পায়—আগের সেই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেই সুযোগের জায়গাটা এখনো অবারিত হয়নি। কারণ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এখনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশনসহ নানা বাড়তি ফির কারণে নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র ঘরের সন্তানেরা সেখানে অধ্যয়ন করার কথা কল্পনাও করতে পারে না।
একসময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ছিল, এখানে টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রি করা হয়। আদতে কথাটি এখন আর প্রযোজ্য নয়। কারণ, দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুণ, মান ও গবেষণায় এগিয়ে আছে। দেশ এবং দেশের বাইরের নানা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা থেকে সেটা জানা যায়।
এদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ হলো, এখানে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বা বিষয়ওয়ারি বিষয়েই দক্ষ করে তোলা হয়। সেখানে মুক্তবুদ্ধি বা রাজনীতিচর্চার সুযোগ নেই। একই সঙ্গে শুধু ক্যারিয়ারিস্ট হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ফলে এখানকার শিক্ষার্থীরা ফার্মের মুরগির মতো করে গড়ে ওঠে। সমাজ, মানুষ ও রাষ্ট্র নিয়ে তারা ভাবে না। কিন্তু কথাটি যে ঠিক নয়, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণই সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেক ক্ষেত্রে ভালো কিছু আর আলোর মুখ দেখে না। নিয়ম অনুযায়ী, ইউজিসির এই খসড়া প্রস্তাব আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাবে, তারপর মন্ত্রণালয় সেটা অনুমোদন দেবে। আমরা চাই, ইউজিসির এই প্রস্তাবটি বড় বেশি সংশোধিত না হয়ে পাস করা হোক। তাতে শিক্ষাব্যবস্থায় একটা নতুন ধারা তৈরি হতে পারে।

গণমাধ্যমের খবর, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি নিবন্ধন এবং ইউনিক আইডিসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার একটি স্থায়ী নাগরিক নিবন্ধন কমিশন (সিআরসি) গঠন করতে যাচ্ছে (আজকের পত্রিকা, ৫ মার্চ ২০২৫)।
১৪ মার্চ ২০২৫
গত এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’-এর পূর্বাভাস জানিয়েছিল, এ বছর বাংলাদেশে নতুন করে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে এবং দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২১ দশমিক ২ শতাংশে।
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের কৃষি এখন এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে। একদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে আবাদি জমি; অন্যদিকে কৃষিশ্রমিকের অভাব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। স্বাধীনতার পর যেখানে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৭৫ শতাংশ কৃষিনির্ভর ছিল, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে প্রায় ৪৫ শতাংশে।
৮ ঘণ্টা আগে
ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
১ দিন আগেমাসুদ কামাল

ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
গত বছরের এ সময়ে আমাদের রাজনীতিতে খুব শক্ত একটা ত্রিভুজ সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। বিএনপি-অন্তর্বর্তী সরকার-জামায়াত—এই তিন পক্ষের দহরম-মহরম। তাদের সবারই লক্ষ্য তখন ছিল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা। এর প্রাথমিক ধাপ, কদিন আগে অর্থাৎ ২০২৪-এর অক্টোবরে অর্জিত হয়েছে। সে দিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এই সরকার একটা নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে। এরপর বাকি ছিল মূল দল আওয়ামী লীগকে অকার্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক করা। গত বছরের এ সময়ে সেই চেষ্টা আমরা দেখেছি। প্রশাসনিকভাবে যেমন, ঠিক তেমনি সামাজিকভাবেও স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগবিরোধী প্রচারণা বেশ জোরেশোরেই চলছিল। এ কাজে বিএনপি, জামায়াত, সরকার—সবাই বেশ আন্তরিকও ছিল। সে সময়ে মাঠের শক্তি হিসেবে বেশ বড় একটা ভূমিকা রেখেছে এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টি। তারপর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, আমার বিবেচনায় ত্রিভুজ দহরম-মহরমের সেটাই ছিল পিক-টাইম। এর পর থেকে নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে ধীরে ধীরে সবাই মাঠে নেমে পড়ল। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল দূরত্ব।
মে মাসের ১২ তারিখে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, তার মাসখানেক পর জুনের ১৫ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস লন্ডনে গিয়ে বৈঠক করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। বলতে গেলে ওই বৈঠকটাই যেন সম্পর্কে ভাঙনের ক্ষেত্রে একটা প্রকাশ্য কারণ হতে পারল। জামায়াত অভিযোগ তুলল সরকারের প্রতি—বলল, বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে সরকার। অভিযোগের পেছনের কারণটিও তারা প্রকাশ করল। বলল, ওই বৈঠকের পরই নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের কথাটি বলা হয়েছে। একটিমাত্র দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথার পরিপ্রেক্ষিতে যদি নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হয়, তাহলে সেই দলের প্রতি সরকারের পক্ষপাতের বিষয়টি অস্বীকার করা তো সহজ হয় না।
জুনের পর থেকে যত দিন যেতে থাকল, সাধারণ মানুষের কাছেও বিএনপি-জামায়াতের মুখোমুখি অবস্থানটা পরিষ্কার হতে থাকল। ঐকমত্য কমিশনেও দেখা গেল দুই দলের এই বিরোধের প্রকাশ। সংস্কারের অনেক প্রস্তাবেই বিএনপি-জামায়াতকে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দেখা গেল। বিএনপির পক্ষ থেকে একের পর এক আসতে থাকল নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি। এরপর আবার বিপত্তি দেখা গেল জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে ‘গণভোট’ করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি অনুষ্ঠানের তারিখ নিয়ে। বিএনপি বলল, নির্বাচনের দিনই হোক গণভোট, বিপরীতে জামায়াত বলছে—নির্বাচনের আগে, সম্ভব হলে এই নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে। গণভোটের রায় নিয়ে, সেটার ওপর ভিত্তি করেই হবে নির্বাচন। আবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ, তার খসড়া নিয়েও বড় ধরনের আপত্তি তুলল বিএনপি। আপত্তির মাত্রাটা এতটাই প্রবল যে, তারা বলল—জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। খেলায় যে রেফারির ওপর সব পক্ষ ভরসা রাখে, সে রেফারিই এবার গোল দিয়ে বসে আছে। অর্থাৎ চরম পক্ষপাতের অভিযোগ। যে কমিশনের প্রধান হচ্ছেন খোদ সরকারপ্রধান ড. ইউনূস, তাঁরই বিরুদ্ধে পক্ষপাত ও প্রতারণার অভিযোগ! বিষয়টি কিন্তু এরপর আর হালকা থাকল না।
তাহলে এখন কী হবে? গণভোট কবে হবে? গণভোটে জনগণের সামনে প্রশ্ন কী থাকবে? এসব প্রশ্নের সমাধান কে দেবে? ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও সক্রিয় দুই ব্যক্তি ড. আলী রীয়াজ ও মনির হায়দার এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তড়িঘড়ি করে তাঁদের এই চলে যাওয়া নিয়েও নানা ধরনের সন্দেহ উচ্চারিত হতে থাকল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুজনকে নিয়ে দেখা গেল নানা ধরনের ট্রল। সমাধানের পথ হিসেবে বলা হলো, সরকারপ্রধান ড. ইউনূস এর সমাধান করবেন। এ প্রবণতা আমরা আগের সরকারের আমলেও দেখেছি। সবকিছুই যেন শেখ হাসিনা করতেন। যত সাফল্য, সব তাঁর। মন্ত্রীদের কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বলতেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সাফল্য এসেছে।’ আবার যদি কোনো জটিলতা দেখা দিত, সবাই মিলে মিটিং করে শেষে সিদ্ধান্ত হতো ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ এর সমাধান দেবেন। দল, অঙ্গসংগঠন, কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কোনো কমিটি করতে হবে—অবধারিতভাবেই দায়িত্ব চলে যাবে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর’ কাছে। এভাবেই একজন ব্যক্তি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তিনি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। সব কাজ তাঁকেই করতে হয়। তিনি আসলে অন্যদের মতো নয়, তিনি অনেকটা মহাপুরুষের মতো। আমার মতে, এই স্বৈরাচারী মনোভাবের শুরুটা হয় আশপাশে থাকা মোসাহেবদের কারণেই। এবারও তা-ই হয়েছে, মোসাহেবরা বলতে শুরু করেছেন—ড. ইউনূসই দেবেন শেষ সিদ্ধান্ত!
সরকার অবশ্য অদ্ভুত একটা কাজ করেছে। যখন তাদের ওপর দায়িত্ব এল সংকট নিরসনের, তারা একটা বৈঠক করল, আর বলে দিল—সাত দিনের সময় দেওয়া হলো, এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের বসে সমস্যার নিরসন করতে হবে। যে বিরোধের নিরসন টানা আট মাস রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে সমাধান করতে পারেনি, সেটা সাত দিনে কীভাবে সম্ভব হবে? তা ছাড়া আরেকটি কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। জুলাই সনদ নিয়ে এই বিরোধ, বাস্তবায়ন প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্টগুলোকে না রাখা, এটা আসলে কার দায়? এ অপকর্মটি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যে কমিশনের প্রধান আবার ড. ইউনূস নিজে। তাহলে যে ক্রাইসিস সৃষ্টি করেছে ড. ইউনূসের কমিশন, সেটির সমাধানের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দেওয়া কেন? এদিকে আবার সেই সাত দিনও শেষ হয়ে গেছে গতকাল রোববার। কোনো সমাধান কি হয়েছে? এখন কী হবে? যথারীতি সেই একই কথা বলা হচ্ছে—ড. ইউনূসই দেবেন সমাধান। কিন্তু কীভাবে? তিনি কি খুব বড় রাজনীতিবিদ? আবার যদি ড. ইউনূস কিংবা তাঁর পরিষদ যদি কোনো একটা সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে সেটাকে কি আর ঐকমত্যের সিদ্ধান্ত বলা যাবে? এটা তো তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সরকারই যদি সিদ্ধান্ত দেবে, তাহলে আর সংস্কার কমিশনের নামে এত নাটকের কী প্রয়োজন ছিল? এত সময়ক্ষেপণই বা কেন করা হলো?
এতসব প্রশ্নের জবাব আসলে কে দেবে, কী দেবে, কেউ জানে না। হয়তো জবাব কখনোই পাওয়া যাবে না। তবে বিএনপি কিন্তু এরই মধ্যে সরকারের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে। এর মধ্যে গত শনিবার দেখলাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সরাসরি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন—এভাবে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই। এই সরকার যে কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটাও তিনি তাদের স্মরণে রাখতে বলেছেন। জামায়াতে ইসলামী আবার এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এরই মধ্যে আট দলের একটা জোট বানিয়ে নিয়েছে। এই আট দলকে নিয়ে রাস্তায়ও নেমে গেছে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে। তাদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রকাশ্যে বলেছেন—ঘি তাদের চাই। আর এই ঘি পেতে যদি আঙুল বাঁকা করতে হয়, তারা সেটাই করবে। এ বক্তব্য কি কেবলই রেটরিক, নাকি এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন কোনো হুমকি আছে; সেটাও কিন্তু চিন্তার বিষয়। এসবের বিপরীতে বিএনপিও বসে নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শনিবার এক জায়গায় বললেন, বিএনপির মতো বড় দলের কর্মীরা যদি রাস্তায় নামে, তাহলে সংঘাত হতে পারে।
এ রকম পরিস্থিতিতে জনগণের অবস্থান কোথায়? আমরা এখন বসে আছি ক্লাইমেক্সের অপেক্ষায়! এরই মধ্যে পরস্পরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

ত্রিমুখী সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুভি হয়েছে। এ রকম মুভি দেখেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেবল মুভিতেই কেন, বাস্তবেও ত্রিমুখী সম্পর্কের অনেক ঘটনা আমরা দেখে থাকি। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ত্রিভুজ সম্পর্কের শেষ পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না।
গত বছরের এ সময়ে আমাদের রাজনীতিতে খুব শক্ত একটা ত্রিভুজ সম্পর্ক দেখা গিয়েছিল। বিএনপি-অন্তর্বর্তী সরকার-জামায়াত—এই তিন পক্ষের দহরম-মহরম। তাদের সবারই লক্ষ্য তখন ছিল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা। এর প্রাথমিক ধাপ, কদিন আগে অর্থাৎ ২০২৪-এর অক্টোবরে অর্জিত হয়েছে। সে দিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এই সরকার একটা নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে। এরপর বাকি ছিল মূল দল আওয়ামী লীগকে অকার্যকর ও অপ্রাসঙ্গিক করা। গত বছরের এ সময়ে সেই চেষ্টা আমরা দেখেছি। প্রশাসনিকভাবে যেমন, ঠিক তেমনি সামাজিকভাবেও স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগবিরোধী প্রচারণা বেশ জোরেশোরেই চলছিল। এ কাজে বিএনপি, জামায়াত, সরকার—সবাই বেশ আন্তরিকও ছিল। সে সময়ে মাঠের শক্তি হিসেবে বেশ বড় একটা ভূমিকা রেখেছে এনসিপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টি। তারপর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, আমার বিবেচনায় ত্রিভুজ দহরম-মহরমের সেটাই ছিল পিক-টাইম। এর পর থেকে নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে ধীরে ধীরে সবাই মাঠে নেমে পড়ল। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল দূরত্ব।
মে মাসের ১২ তারিখে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, তার মাসখানেক পর জুনের ১৫ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস লন্ডনে গিয়ে বৈঠক করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। বলতে গেলে ওই বৈঠকটাই যেন সম্পর্কে ভাঙনের ক্ষেত্রে একটা প্রকাশ্য কারণ হতে পারল। জামায়াত অভিযোগ তুলল সরকারের প্রতি—বলল, বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে সরকার। অভিযোগের পেছনের কারণটিও তারা প্রকাশ করল। বলল, ওই বৈঠকের পরই নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের কথাটি বলা হয়েছে। একটিমাত্র দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথার পরিপ্রেক্ষিতে যদি নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হয়, তাহলে সেই দলের প্রতি সরকারের পক্ষপাতের বিষয়টি অস্বীকার করা তো সহজ হয় না।
জুনের পর থেকে যত দিন যেতে থাকল, সাধারণ মানুষের কাছেও বিএনপি-জামায়াতের মুখোমুখি অবস্থানটা পরিষ্কার হতে থাকল। ঐকমত্য কমিশনেও দেখা গেল দুই দলের এই বিরোধের প্রকাশ। সংস্কারের অনেক প্রস্তাবেই বিএনপি-জামায়াতকে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে দেখা গেল। বিএনপির পক্ষ থেকে একের পর এক আসতে থাকল নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি। এরপর আবার বিপত্তি দেখা গেল জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে ‘গণভোট’ করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি অনুষ্ঠানের তারিখ নিয়ে। বিএনপি বলল, নির্বাচনের দিনই হোক গণভোট, বিপরীতে জামায়াত বলছে—নির্বাচনের আগে, সম্ভব হলে এই নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে। গণভোটের রায় নিয়ে, সেটার ওপর ভিত্তি করেই হবে নির্বাচন। আবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশ, তার খসড়া নিয়েও বড় ধরনের আপত্তি তুলল বিএনপি। আপত্তির মাত্রাটা এতটাই প্রবল যে, তারা বলল—জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। খেলায় যে রেফারির ওপর সব পক্ষ ভরসা রাখে, সে রেফারিই এবার গোল দিয়ে বসে আছে। অর্থাৎ চরম পক্ষপাতের অভিযোগ। যে কমিশনের প্রধান হচ্ছেন খোদ সরকারপ্রধান ড. ইউনূস, তাঁরই বিরুদ্ধে পক্ষপাত ও প্রতারণার অভিযোগ! বিষয়টি কিন্তু এরপর আর হালকা থাকল না।
তাহলে এখন কী হবে? গণভোট কবে হবে? গণভোটে জনগণের সামনে প্রশ্ন কী থাকবে? এসব প্রশ্নের সমাধান কে দেবে? ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও সক্রিয় দুই ব্যক্তি ড. আলী রীয়াজ ও মনির হায়দার এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তড়িঘড়ি করে তাঁদের এই চলে যাওয়া নিয়েও নানা ধরনের সন্দেহ উচ্চারিত হতে থাকল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুজনকে নিয়ে দেখা গেল নানা ধরনের ট্রল। সমাধানের পথ হিসেবে বলা হলো, সরকারপ্রধান ড. ইউনূস এর সমাধান করবেন। এ প্রবণতা আমরা আগের সরকারের আমলেও দেখেছি। সবকিছুই যেন শেখ হাসিনা করতেন। যত সাফল্য, সব তাঁর। মন্ত্রীদের কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বলতেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সাফল্য এসেছে।’ আবার যদি কোনো জটিলতা দেখা দিত, সবাই মিলে মিটিং করে শেষে সিদ্ধান্ত হতো ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ এর সমাধান দেবেন। দল, অঙ্গসংগঠন, কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কোনো কমিটি করতে হবে—অবধারিতভাবেই দায়িত্ব চলে যাবে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর’ কাছে। এভাবেই একজন ব্যক্তি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তিনি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। সব কাজ তাঁকেই করতে হয়। তিনি আসলে অন্যদের মতো নয়, তিনি অনেকটা মহাপুরুষের মতো। আমার মতে, এই স্বৈরাচারী মনোভাবের শুরুটা হয় আশপাশে থাকা মোসাহেবদের কারণেই। এবারও তা-ই হয়েছে, মোসাহেবরা বলতে শুরু করেছেন—ড. ইউনূসই দেবেন শেষ সিদ্ধান্ত!
সরকার অবশ্য অদ্ভুত একটা কাজ করেছে। যখন তাদের ওপর দায়িত্ব এল সংকট নিরসনের, তারা একটা বৈঠক করল, আর বলে দিল—সাত দিনের সময় দেওয়া হলো, এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের বসে সমস্যার নিরসন করতে হবে। যে বিরোধের নিরসন টানা আট মাস রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসে সমাধান করতে পারেনি, সেটা সাত দিনে কীভাবে সম্ভব হবে? তা ছাড়া আরেকটি কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। জুলাই সনদ নিয়ে এই বিরোধ, বাস্তবায়ন প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্টগুলোকে না রাখা, এটা আসলে কার দায়? এ অপকর্মটি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যে কমিশনের প্রধান আবার ড. ইউনূস নিজে। তাহলে যে ক্রাইসিস সৃষ্টি করেছে ড. ইউনূসের কমিশন, সেটির সমাধানের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দেওয়া কেন? এদিকে আবার সেই সাত দিনও শেষ হয়ে গেছে গতকাল রোববার। কোনো সমাধান কি হয়েছে? এখন কী হবে? যথারীতি সেই একই কথা বলা হচ্ছে—ড. ইউনূসই দেবেন সমাধান। কিন্তু কীভাবে? তিনি কি খুব বড় রাজনীতিবিদ? আবার যদি ড. ইউনূস কিংবা তাঁর পরিষদ যদি কোনো একটা সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে সেটাকে কি আর ঐকমত্যের সিদ্ধান্ত বলা যাবে? এটা তো তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। সরকারই যদি সিদ্ধান্ত দেবে, তাহলে আর সংস্কার কমিশনের নামে এত নাটকের কী প্রয়োজন ছিল? এত সময়ক্ষেপণই বা কেন করা হলো?
এতসব প্রশ্নের জবাব আসলে কে দেবে, কী দেবে, কেউ জানে না। হয়তো জবাব কখনোই পাওয়া যাবে না। তবে বিএনপি কিন্তু এরই মধ্যে সরকারের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে। এর মধ্যে গত শনিবার দেখলাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সরাসরি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন—এভাবে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই। এই সরকার যে কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটাও তিনি তাদের স্মরণে রাখতে বলেছেন। জামায়াতে ইসলামী আবার এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এরই মধ্যে আট দলের একটা জোট বানিয়ে নিয়েছে। এই আট দলকে নিয়ে রাস্তায়ও নেমে গেছে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে। তাদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রকাশ্যে বলেছেন—ঘি তাদের চাই। আর এই ঘি পেতে যদি আঙুল বাঁকা করতে হয়, তারা সেটাই করবে। এ বক্তব্য কি কেবলই রেটরিক, নাকি এর মধ্যে প্রচ্ছন্ন কোনো হুমকি আছে; সেটাও কিন্তু চিন্তার বিষয়। এসবের বিপরীতে বিএনপিও বসে নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শনিবার এক জায়গায় বললেন, বিএনপির মতো বড় দলের কর্মীরা যদি রাস্তায় নামে, তাহলে সংঘাত হতে পারে।
এ রকম পরিস্থিতিতে জনগণের অবস্থান কোথায়? আমরা এখন বসে আছি ক্লাইমেক্সের অপেক্ষায়! এরই মধ্যে পরস্পরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

গণমাধ্যমের খবর, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি নিবন্ধন এবং ইউনিক আইডিসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার একটি স্থায়ী নাগরিক নিবন্ধন কমিশন (সিআরসি) গঠন করতে যাচ্ছে (আজকের পত্রিকা, ৫ মার্চ ২০২৫)।
১৪ মার্চ ২০২৫
গত এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’-এর পূর্বাভাস জানিয়েছিল, এ বছর বাংলাদেশে নতুন করে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে এবং দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২১ দশমিক ২ শতাংশে।
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের কৃষি এখন এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে। একদিকে বাড়ছে জনসংখ্যা, কমছে আবাদি জমি; অন্যদিকে কৃষিশ্রমিকের অভাব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। স্বাধীনতার পর যেখানে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৭৫ শতাংশ কৃষিনির্ভর ছিল, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে প্রায় ৪৫ শতাংশে।
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে যখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে—এ রকম পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত নতুন খসড়া নীতিমালা উচ্চশিক্ষার এ সেক্টরে একটা পরিবর্তনের আশাবাদ তৈরি করতে পারে।
৮ ঘণ্টা আগে