আবেদীন কাদের
আমাদের এক শ্রদ্ধেয় কবিবন্ধু, একসময় দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশায় একসময় তিনিই মাওলানা মান্নানের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় অনেক দিন চাকরি করেছেন। সেটা তাঁর জীবিকার জন্য, আহার সংস্থানের জন্য—এ রকম যুক্তি আমাদের কোনো কোনো বন্ধু তাঁর পক্ষে আমাদের শাহবাগের তক্কাতক্কিতে হাজির করতেন বছর তিরিশেক আগে। কিন্তু এই প্রশ্নটি আমাদের মনে খচখচ করত, তিনি তো অন্য কোনো মালিকের কাগজে কাজ করলেই পারতেন, যে রাজাকার নয়! আমাদের এক কবিবন্ধু সেই কাগজে লিখতেন টাকার জন্য। শাহবাগের আড্ডায় তাঁকে ধরেন আরেক বন্ধু, যিনি ইংরেজি স্কুলে পড়াতেন, ছিলেন ভীষণ নীতিবান, অসাধারণ বন্ধুবৎসল আর মুক্তিযুদ্ধ বা বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে পাথরের মতো অটল যোদ্ধা, চা-শিঙারা খাইয়ে টাকার জন্য লিখিয়ে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কত টাকা পাস ওখানে লিখে? সেটা প্রতি মাসে এখানে এসে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাস, তবু ওখানে লিখিস না। আমাদের খুব কষ্ট হয় তোর লেখা ওখানে দেখলে।’ সেই কবিবন্ধু শুনে লজ্জা পেয়েছিলেন, আর লেখেননি মাওলানা মান্নানের সাপ্তাহিক কাগজে।
সেই মুক্তিযোদ্ধা কবিবন্ধুটি মাওলানা মান্নানের বিষয়ে কোনো দিন কিছু লেখেননি, কিন্তু তাঁর সাপ্তাহিকটিতে কবি শামসুর রাহমান, সুফিয়া কামালসহ পাঁচজন বরেণ্য মানুষের মুখের ছবি সাপের মুখে এঁটে দিয়ে প্রচ্ছদ করেছিলেন। ২৩ এপ্রিল তিনি সাভারের রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সরকারকে পুঁজিবাদী ফ্যাসিস্ট সরকার আখ্যা দিয়ে ‘শ্রমিকের মুক্তির’ জন্য নিজের আর্তি প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারকে সমালোচনা করার হাজার একটা কারণ আছে, সেটা যেকোনো বিবেকী মানুষ করতেই পারেন, কিন্তু পুঁজিবাদী সরকার কি ফ্যাসিস্ট সরকার হয় সবসময়? পুঁজিবাদেরও হাজার ত্রুটি আছে, কিন্তু পুঁজির বিপক্ষে শ্রমিক শ্রেণির হয়ে লড়তে গেলে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি, সেটি আসলে কী? এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ নয় মনে হয়। গত এক শতাব্দীতে বা তার বেশি সময় ধরে মার্কসের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে-বিপক্ষে হাজারটা বই লেখা হয়েছে। এই মতবাদের বিপ্রতীপ দিকে রয়েছে পুঁজিবাদ।
পুঁজিবাদ নিজে এর কবর খোঁড়ে, এটাও সত্যি, কিন্তু মার্কসীয় ব্যবস্থা তার বিরুদ্ধে স্থায়ী অবস্থান নিতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে? কেন হেরে গেল? কেন বারবার পুঁজিবাদ কবর থেকে জেগে উঠছে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। আরনেস্ট ম্যানডেল থেকে আলথুসার, জীন কোহেন থেকে এরাটো, আনোয়ার শেখ থেকে পল সুজি, রিচার্ড বারন্সটিন থেকে নিকোজ পোলানজেস অসংখ্য পণ্ডিত ও শ্রদ্ধেয় গবেষক হাজারটা ব্যাখ্যা দিলেন, কিন্তু একটি সামান্য ব্যাধি বিষয়ে কোনো প্রতিষেধক খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলো না আজও। সেটি হলো বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব গতিতে এগিয়ে যাওয়া এবং ‘বাজার’কে সম্পূর্ণ নিজের কবজায় রাখার কৌশলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোরও জন্য শ্রমিকের হাতে কোনো অস্ত্র দেওয়া। সামান্য একটা মনোজাগতিক ঝোঁক মানবসমাজের, সেটি হলো— ‘যে মুনাফাটা আসবে, তার মালিক আমি’ এই সত্যের প্রতি তীব্র আকর্ষণ! কিন্তু মালিক যদি আমি না হয়ে রাষ্ট্র হয়, তাহলে আমার পরিশ্রমের ফসল আমার না হয়ে যে রাষ্ট্রের হবে, আর তা সমবণ্টন না হয়ে পলিটব্যুরোর সদস্য বা পার্টির বড় কর্তারা যে লুট করবেন, সেটা আমি শ্রমিক ফেরাবো কোন অস্ত্র দিয়ে? এই হতাশা যে শ্রমিক সমাজের ঝিমিয়ে পড়ার কারণ, তার প্রতিষেধক কী আছে রাষ্ট্রের হাতে?
এই সহজ প্রশ্নের উত্তরটি আজ ৭০ বছরে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। শ্রমিকের নামে ক্ষমতা জমা হয় শ্রমিকের দলের কাছে, দলের ক্ষমতার নামে ক্ষমতা জমা হয় পলিটব্যুরোর কয়েকজন সদস্যের হাতে, আর পলিটব্যুরোর নামে তা গিয়ে সবটুকু জমা হয় স্টালিন, মাও বা ক্যাস্ট্রোর হাতে। তাঁরা হয়তো দেশপ্রেমকে সত্যিই মান্য করেন, আর ভালোও বাসেন শ্রমিক শ্রেণিকে অনেক, কিন্তু মানুষ তো তাঁরা? আর ক্ষমতা তো মানুষের হাতে খুব বেশি একটা নিরাপদ নয়, তা কে না জানেন। তাহলে পুঁজির আসুরিক ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য কী অস্ত্র আছে অসহায় শ্রমিক শ্রেণির হাতে?
পুঁজির মালিকের ‘সেলফ মোটিভেসন’ বা আত্মস্বার্থে তীব্র দৌড়ের সঙ্গে হতাশাগ্রস্ত অসহায় শ্রমিক কার স্বার্থে লড়বেন জান-প্রাণ দিয়ে, যে লড়াইয়ের ফসল যাবে পলিটব্যুরোর সদস্যের পকেটে? এই অংকটি খুব জটিল নয়, সামান্য সহজ ব্যক্তিস্বার্থের ঝোঁক! যে কারণে আমার মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু মাওলানা মান্নানের সাপ্তাহিক কাগজে বহুদিন চাকরি করেছিলেন, শুধুই ব্যক্তিস্বার্থ, আর কিছু নয়! সেই সত্য যা রচিবে পুঁজি!
আমাদের এক শ্রদ্ধেয় কবিবন্ধু, একসময় দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশায় একসময় তিনিই মাওলানা মান্নানের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় অনেক দিন চাকরি করেছেন। সেটা তাঁর জীবিকার জন্য, আহার সংস্থানের জন্য—এ রকম যুক্তি আমাদের কোনো কোনো বন্ধু তাঁর পক্ষে আমাদের শাহবাগের তক্কাতক্কিতে হাজির করতেন বছর তিরিশেক আগে। কিন্তু এই প্রশ্নটি আমাদের মনে খচখচ করত, তিনি তো অন্য কোনো মালিকের কাগজে কাজ করলেই পারতেন, যে রাজাকার নয়! আমাদের এক কবিবন্ধু সেই কাগজে লিখতেন টাকার জন্য। শাহবাগের আড্ডায় তাঁকে ধরেন আরেক বন্ধু, যিনি ইংরেজি স্কুলে পড়াতেন, ছিলেন ভীষণ নীতিবান, অসাধারণ বন্ধুবৎসল আর মুক্তিযুদ্ধ বা বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে পাথরের মতো অটল যোদ্ধা, চা-শিঙারা খাইয়ে টাকার জন্য লিখিয়ে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কত টাকা পাস ওখানে লিখে? সেটা প্রতি মাসে এখানে এসে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাস, তবু ওখানে লিখিস না। আমাদের খুব কষ্ট হয় তোর লেখা ওখানে দেখলে।’ সেই কবিবন্ধু শুনে লজ্জা পেয়েছিলেন, আর লেখেননি মাওলানা মান্নানের সাপ্তাহিক কাগজে।
সেই মুক্তিযোদ্ধা কবিবন্ধুটি মাওলানা মান্নানের বিষয়ে কোনো দিন কিছু লেখেননি, কিন্তু তাঁর সাপ্তাহিকটিতে কবি শামসুর রাহমান, সুফিয়া কামালসহ পাঁচজন বরেণ্য মানুষের মুখের ছবি সাপের মুখে এঁটে দিয়ে প্রচ্ছদ করেছিলেন। ২৩ এপ্রিল তিনি সাভারের রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সরকারকে পুঁজিবাদী ফ্যাসিস্ট সরকার আখ্যা দিয়ে ‘শ্রমিকের মুক্তির’ জন্য নিজের আর্তি প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারকে সমালোচনা করার হাজার একটা কারণ আছে, সেটা যেকোনো বিবেকী মানুষ করতেই পারেন, কিন্তু পুঁজিবাদী সরকার কি ফ্যাসিস্ট সরকার হয় সবসময়? পুঁজিবাদেরও হাজার ত্রুটি আছে, কিন্তু পুঁজির বিপক্ষে শ্রমিক শ্রেণির হয়ে লড়তে গেলে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি, সেটি আসলে কী? এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ নয় মনে হয়। গত এক শতাব্দীতে বা তার বেশি সময় ধরে মার্কসের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে-বিপক্ষে হাজারটা বই লেখা হয়েছে। এই মতবাদের বিপ্রতীপ দিকে রয়েছে পুঁজিবাদ।
পুঁজিবাদ নিজে এর কবর খোঁড়ে, এটাও সত্যি, কিন্তু মার্কসীয় ব্যবস্থা তার বিরুদ্ধে স্থায়ী অবস্থান নিতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে? কেন হেরে গেল? কেন বারবার পুঁজিবাদ কবর থেকে জেগে উঠছে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। আরনেস্ট ম্যানডেল থেকে আলথুসার, জীন কোহেন থেকে এরাটো, আনোয়ার শেখ থেকে পল সুজি, রিচার্ড বারন্সটিন থেকে নিকোজ পোলানজেস অসংখ্য পণ্ডিত ও শ্রদ্ধেয় গবেষক হাজারটা ব্যাখ্যা দিলেন, কিন্তু একটি সামান্য ব্যাধি বিষয়ে কোনো প্রতিষেধক খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলো না আজও। সেটি হলো বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব গতিতে এগিয়ে যাওয়া এবং ‘বাজার’কে সম্পূর্ণ নিজের কবজায় রাখার কৌশলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোরও জন্য শ্রমিকের হাতে কোনো অস্ত্র দেওয়া। সামান্য একটা মনোজাগতিক ঝোঁক মানবসমাজের, সেটি হলো— ‘যে মুনাফাটা আসবে, তার মালিক আমি’ এই সত্যের প্রতি তীব্র আকর্ষণ! কিন্তু মালিক যদি আমি না হয়ে রাষ্ট্র হয়, তাহলে আমার পরিশ্রমের ফসল আমার না হয়ে যে রাষ্ট্রের হবে, আর তা সমবণ্টন না হয়ে পলিটব্যুরোর সদস্য বা পার্টির বড় কর্তারা যে লুট করবেন, সেটা আমি শ্রমিক ফেরাবো কোন অস্ত্র দিয়ে? এই হতাশা যে শ্রমিক সমাজের ঝিমিয়ে পড়ার কারণ, তার প্রতিষেধক কী আছে রাষ্ট্রের হাতে?
এই সহজ প্রশ্নের উত্তরটি আজ ৭০ বছরে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। শ্রমিকের নামে ক্ষমতা জমা হয় শ্রমিকের দলের কাছে, দলের ক্ষমতার নামে ক্ষমতা জমা হয় পলিটব্যুরোর কয়েকজন সদস্যের হাতে, আর পলিটব্যুরোর নামে তা গিয়ে সবটুকু জমা হয় স্টালিন, মাও বা ক্যাস্ট্রোর হাতে। তাঁরা হয়তো দেশপ্রেমকে সত্যিই মান্য করেন, আর ভালোও বাসেন শ্রমিক শ্রেণিকে অনেক, কিন্তু মানুষ তো তাঁরা? আর ক্ষমতা তো মানুষের হাতে খুব বেশি একটা নিরাপদ নয়, তা কে না জানেন। তাহলে পুঁজির আসুরিক ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য কী অস্ত্র আছে অসহায় শ্রমিক শ্রেণির হাতে?
পুঁজির মালিকের ‘সেলফ মোটিভেসন’ বা আত্মস্বার্থে তীব্র দৌড়ের সঙ্গে হতাশাগ্রস্ত অসহায় শ্রমিক কার স্বার্থে লড়বেন জান-প্রাণ দিয়ে, যে লড়াইয়ের ফসল যাবে পলিটব্যুরোর সদস্যের পকেটে? এই অংকটি খুব জটিল নয়, সামান্য সহজ ব্যক্তিস্বার্থের ঝোঁক! যে কারণে আমার মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু মাওলানা মান্নানের সাপ্তাহিক কাগজে বহুদিন চাকরি করেছিলেন, শুধুই ব্যক্তিস্বার্থ, আর কিছু নয়! সেই সত্য যা রচিবে পুঁজি!
গত কয়েক দিনে তিনজন জামায়াত নেতার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এই একটা রাজনৈতিক দল, যাদের নেতাদের মধ্যে পরিমিতিবোধ অসাধারণ। প্রায়ই তাঁরা জানেন, কোথায় থামতে হয়। হাসতে হলে ঠোঁট দুটো কতটুকু প্রসারিত করতে হবে, দাঁত কটা প্রকাশিত হতে পারবে—সে হিসাবও সম্ভবত দল তাদের শিখিয়ে দেয়।
৬ ঘণ্টা আগেইন্দোনেশিয়া আজ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত। প্রায় ২৮ কোটি মানুষের এই বহুজাতিক ও বহু সাংস্কৃতিক দেশটি দীর্ঘ সামরিক শাসন, কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি ও দুর্নীতির গভীর সংকট অতিক্রম করে গণতান্ত্রিক ধারায় প্রবেশ করেছে।
৬ ঘণ্টা আগেইদানীং; কেবল ইদানীং কেন, অনেক আগে থেকেই আমার মনে একটি প্রশ্ন বারবার উঁকি দিয়ে ওঠে যে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কিংবা সমাজে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব কী, তা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারি? জানা আছে কিংবা জানা থেকে থাকলে মনে রাখতে পেরেছি এক একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠা অথবা গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট কী?
৬ ঘণ্টা আগেরাজনীতির মাঠটাকে যাঁরা অশ্লীল বাক্যবাণের চারণক্ষেত্র বানিয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন গ্রেপ্তার হয়েছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে। উত্তরা থেকে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কাহিনি সেই আগের মতোই।
৬ ঘণ্টা আগে