ড. কামরুজ্জামান মজুমদার
লকডাউন, ঈদের ছুটি ও বৃষ্টিপাত—এই ত্রিমুখী কারণে ঢাকার মানুষ স্মরণাতীতকালের সবচেয়ে বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে জুলাই মাসের শেষ ১০ দিন। বায়ুর মান বিবেচনায় এটি একটি ‘ম্যাজিক্যাল’ সপ্তাহ গেল। এর আগে বেশ কয়েক বছর ধরেই দূষিত বাতাসের শহর হিসেবে ঢাকা ছিল প্রথম সারিতে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার থেকে সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণের দিক দিয়ে ২০২০ ও ২০১৯ সালের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা শহর। তবে ধীরে ধীরে সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বাংলাদেশের রাজধানী শহর। গত ৩০ জুলাই দেখা গেছে ঢাকা দূষিত নগরীর তালিকায় ৭৭তম স্থানে আছে। সেই হিসাবে সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে রাজধানীবাসী পেয়েছে নির্মল বায়ু।
জুলাই মাসে বায়ুর মান
USAID ও FCDO-এর অর্থায়নে পরিচালিত Anti-Pollution Advocacy Project-এর অধীনে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) পরিচালিত ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানের বায়ু ও শব্দদূষণের ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে দেখা যায় যে ২০২১ সালের জুলাই মাসে গড়ে সর্বোচ্চ বায়ুমান ছিল গুলশান-২ এলাকায় প্রতি ঘনমিটারে ৫৩.৪৮ মাইক্রোগ্রাম এবং গড়ে সর্বনিম্ন বায়ুমান ছিল মতিঝিল এলাকায় প্রতি ঘনমিটারে ১৮.৮৯ মাইক্রোগ্রাম, যা খুব ভালোভাবে অনুমোদিত মানমাত্রার মধ্যেই অবস্থান করছে।
ঈদের সময় বায়ুদূষণ
বিশ্বের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণের (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) গত ৬ বছরের (২০১৬-২০২১) মোট ৫০ দিনের (দুই ঈদের মোট ১০ দিন এবং ঈদের আগের ও পরের মোট ৪০ দিন) ডেটা বিশ্লেষণ করে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। এ গবেষণা থেকে দেখা যায়, ৫০ দিনের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ছয় দিন (একিউআই ০-৫০) বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করে। ২০১৭ সালের ঈদুল ফিতরের পরের দুই দিন বায়ুমান সূচক ছিল যথাক্রমে ৪২ ও ৩৬ এবং ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতরের পরের দিন বায়ুমান সূচক ছিল ৩৭। ২০১৯ সালে ঈদুল আজহার পরের দুই দিন বায়ুমান সূচক ছিল ৪৯ ও ২২, আবার ২০২১ সালে ঈদুল আজহার এক দিন পর বায়ুমান সূচক ৪৪ ছিল। অন্যদিকে এই ৫০ দিনের মধ্যে ৩৩ দিন ঢাকার মানুষ মাঝারি ধরনের (একিউআই ৫১-১০০) বায়ু গ্রহণ করে। ৫০ দিনের মধ্যে ঢাকার বায়ুমান সূচক শুধু ১১ দিন সংবেদনশীল গ্রুপের জন্য অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় অবস্থান করে। এ ছাড়া ছয় বছরের মধ্যে ঈদের সময় গড় বায়ুমান সূচক সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৮ সালে (১২৯) এবং সবচেয়ে কম ছিল ২০১৭ সালে (১০ দিনের গড় বায়ুমান ৬৩)। প্রতিবছরই ঈদের দিন ও ঈদের পরের কিছুদিন ঢাকা শহরের বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে, যাতায়াতের জন্য বেশির ভাগ মানুষ রিকশা কিংবা নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করে এবং ঈদের ছুটিতে অনেক মানুষ ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়, যার ফলে মানুষের চলাচলও কম পরিলক্ষিত হয়। এ ছাড়া গত ছয় বছরের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা বর্ষা মৌসুমে উদ্যাপিত হয়েছে। সব মিলিয়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকা, মানুষের চলাচল কমে যাওয়া এবং বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে ঈদের সময় বায়ুদূষণের পরিমাণ কম পরিলক্ষিত হয়েছে। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় শুধু ঢাকা শহরের ওপর তথ্য প্রদান করা হলেও দেশের অন্যান্য স্থানের বায়ুর মানও ভালো হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। এ ছাড়া নির্মল বাতাসের প্রভাব পড়েছে মানুষের দৃষ্টিসীমায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ঢাকায় দুই থেকে চার কিলোমিটার দূরের জিনিস দেখা যায়, সেখানে এই সময়ে ৭ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরের জিনিসও খালি চোখে দেখা গেছে।
বায়ুদূষণ কমার কারণ
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক জরিপ অনুযায়ী ঢাকা শহরের বাতাসে বস্তুকণার পরিমাণ কমানোর জন্য বৃষ্টিপাত অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ২০২১ সালে ঈদুল আজহার দিন (২১ জুলাই) ঢাকা শহরে টানা প্রায় ১১ ঘণ্টাসহ (সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা) মোট ১৩ ঘণ্টা বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে ছিল, যেখানে ২০২০ সালে ঈদুল আজহার দিন ভালো বায়ুমান ছিল মাত্র চার ঘণ্টা। ২০২১ সালে ২৪ ঘণ্টার হিসাবে ২১ জুলাই বায়ুমান সূচক ছিল ৯৬, যা ২২ জুলাই ছিল ৫৬, ২৩ জুলাই ৪৪ এবং ২৪ জুলাই ২৯। এ বছর কোরবানি ঈদের আগে, ঈদের দিন এবং পরবর্তী সময় ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়, যার ফলে ঢাকা শহরে বস্তুকণা দূষণের পরিমাণ কমে আসে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে ঢাকামুখী মানুষের সংখ্যাও তুলনামূলক কম, করোনাভাইরাসের অধিক বিস্তৃতির ফলে কর্মে ফিরে আসা ঢাকাগামী মানুষের আনাগোনা গত কয়েক বছরের ঈদের তুলনায় অনেক কম ছিল, যার কারণে যানবাহন চলাচলের স্বল্পতা লক্ষ করা যায়। ফলে ঢাকার বায়ুদূষণ কমছে। ঈদের পরবর্তী সময় লকডাউন ঘোষণা থাকায় অনেকেই নিজেদের বাড়িমুখী হয়। ঢাকা মহানগরীতে মোট জনসংখ্যার পরিমাণ ২ কোটি ১৭ লাখ। এই ঈদে ঢাকা ছেড়েছে ১ কোটির বেশি মানুষ, কিন্তু ফিরেছে মাত্র ৮ লাখ। অর্থাৎ, ঢাকা শহরে মোট জনসংখ্যার নানাবিধ কার্যক্রমের ফলে গাড়িতে চলাচল কম ছিল। ওই সময় বন্ধ ছিল কলকারখানা, নির্মাণকাজ বা উন্নয়নমূলক কাজ। ফলে বায়ুদূষণ তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। লকডাউনের এই সময়ে বড় প্রকল্পগুলো স্বাভাবিকের থেকে একটু মন্থর গতিতে চলমান থাকলেও প্রকল্পসংলগ্ন এলাকা দিয়ে চলাচল করা মানুষ ও গাড়ির আনাগোনা ছিল কম, ফলে উৎস থেকে দূষণ ছড়িয়ে পড়াটাও কম ছিল। তাই উন্নতি হয়েছে বায়ুমানের। বায়ুদূষণের তৃতীয় প্রধান উৎস ফিটনেসবিহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও পুরোনো যানবাহন এবং তীব্র যানজট। বর্তমান ঢাকার চিত্র দেখলেই বোঝা যায় রাস্তায় যানবাহনের পরিমাণ কম। ফলে দূষণের পরিমাণ অনেকাংশে কম।
বাসযোগ্য ঢাকার জন্য
করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুদূষণমুক্ত ঢাকা শহরের বর্তমান অবস্থাকে ভুলে না গিয়ে বরং উৎসগুলো চিহ্নিতকরণের মাধ্যম এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে বায়ুদূষণমুক্ত একটি বসবাসযোগ্য ঢাকা শহর গড়ার পরিকল্পনা ও সংকল্প এখনই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আর এর জন্য এ বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা যেতে পারে—মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে, সমন্বয়ের মাধ্যমে সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা, যত্রতত্র বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করা এবং আন্তর্দেশীয় বায়ুদূষণ সম্পর্কে আরও গবেষণা করা। তবেই বায়ুর মান উন্নয়নের জন্য আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো মহামারির অপেক্ষা করতে হবে না। আর একদিন পৃথিবীর বসবাসযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় ওপরের দিকে উঠে আসবে ঢাকার নাম।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ; ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
লকডাউন, ঈদের ছুটি ও বৃষ্টিপাত—এই ত্রিমুখী কারণে ঢাকার মানুষ স্মরণাতীতকালের সবচেয়ে বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে জুলাই মাসের শেষ ১০ দিন। বায়ুর মান বিবেচনায় এটি একটি ‘ম্যাজিক্যাল’ সপ্তাহ গেল। এর আগে বেশ কয়েক বছর ধরেই দূষিত বাতাসের শহর হিসেবে ঢাকা ছিল প্রথম সারিতে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার থেকে সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণের দিক দিয়ে ২০২০ ও ২০১৯ সালের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ এবং বিশ্বের রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা শহর। তবে ধীরে ধীরে সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বাংলাদেশের রাজধানী শহর। গত ৩০ জুলাই দেখা গেছে ঢাকা দূষিত নগরীর তালিকায় ৭৭তম স্থানে আছে। সেই হিসাবে সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে রাজধানীবাসী পেয়েছে নির্মল বায়ু।
জুলাই মাসে বায়ুর মান
USAID ও FCDO-এর অর্থায়নে পরিচালিত Anti-Pollution Advocacy Project-এর অধীনে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) পরিচালিত ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানের বায়ু ও শব্দদূষণের ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে দেখা যায় যে ২০২১ সালের জুলাই মাসে গড়ে সর্বোচ্চ বায়ুমান ছিল গুলশান-২ এলাকায় প্রতি ঘনমিটারে ৫৩.৪৮ মাইক্রোগ্রাম এবং গড়ে সর্বনিম্ন বায়ুমান ছিল মতিঝিল এলাকায় প্রতি ঘনমিটারে ১৮.৮৯ মাইক্রোগ্রাম, যা খুব ভালোভাবে অনুমোদিত মানমাত্রার মধ্যেই অবস্থান করছে।
ঈদের সময় বায়ুদূষণ
বিশ্বের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণের (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) গত ৬ বছরের (২০১৬-২০২১) মোট ৫০ দিনের (দুই ঈদের মোট ১০ দিন এবং ঈদের আগের ও পরের মোট ৪০ দিন) ডেটা বিশ্লেষণ করে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। এ গবেষণা থেকে দেখা যায়, ৫০ দিনের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ছয় দিন (একিউআই ০-৫০) বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করে। ২০১৭ সালের ঈদুল ফিতরের পরের দুই দিন বায়ুমান সূচক ছিল যথাক্রমে ৪২ ও ৩৬ এবং ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতরের পরের দিন বায়ুমান সূচক ছিল ৩৭। ২০১৯ সালে ঈদুল আজহার পরের দুই দিন বায়ুমান সূচক ছিল ৪৯ ও ২২, আবার ২০২১ সালে ঈদুল আজহার এক দিন পর বায়ুমান সূচক ৪৪ ছিল। অন্যদিকে এই ৫০ দিনের মধ্যে ৩৩ দিন ঢাকার মানুষ মাঝারি ধরনের (একিউআই ৫১-১০০) বায়ু গ্রহণ করে। ৫০ দিনের মধ্যে ঢাকার বায়ুমান সূচক শুধু ১১ দিন সংবেদনশীল গ্রুপের জন্য অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় অবস্থান করে। এ ছাড়া ছয় বছরের মধ্যে ঈদের সময় গড় বায়ুমান সূচক সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৮ সালে (১২৯) এবং সবচেয়ে কম ছিল ২০১৭ সালে (১০ দিনের গড় বায়ুমান ৬৩)। প্রতিবছরই ঈদের দিন ও ঈদের পরের কিছুদিন ঢাকা শহরের বিভিন্ন রুটের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে, যাতায়াতের জন্য বেশির ভাগ মানুষ রিকশা কিংবা নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করে এবং ঈদের ছুটিতে অনেক মানুষ ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়, যার ফলে মানুষের চলাচলও কম পরিলক্ষিত হয়। এ ছাড়া গত ছয় বছরের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা বর্ষা মৌসুমে উদ্যাপিত হয়েছে। সব মিলিয়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকা, মানুষের চলাচল কমে যাওয়া এবং বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে ঈদের সময় বায়ুদূষণের পরিমাণ কম পরিলক্ষিত হয়েছে। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় শুধু ঢাকা শহরের ওপর তথ্য প্রদান করা হলেও দেশের অন্যান্য স্থানের বায়ুর মানও ভালো হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। এ ছাড়া নির্মল বাতাসের প্রভাব পড়েছে মানুষের দৃষ্টিসীমায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ঢাকায় দুই থেকে চার কিলোমিটার দূরের জিনিস দেখা যায়, সেখানে এই সময়ে ৭ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরের জিনিসও খালি চোখে দেখা গেছে।
বায়ুদূষণ কমার কারণ
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক জরিপ অনুযায়ী ঢাকা শহরের বাতাসে বস্তুকণার পরিমাণ কমানোর জন্য বৃষ্টিপাত অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ২০২১ সালে ঈদুল আজহার দিন (২১ জুলাই) ঢাকা শহরে টানা প্রায় ১১ ঘণ্টাসহ (সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা) মোট ১৩ ঘণ্টা বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে ছিল, যেখানে ২০২০ সালে ঈদুল আজহার দিন ভালো বায়ুমান ছিল মাত্র চার ঘণ্টা। ২০২১ সালে ২৪ ঘণ্টার হিসাবে ২১ জুলাই বায়ুমান সূচক ছিল ৯৬, যা ২২ জুলাই ছিল ৫৬, ২৩ জুলাই ৪৪ এবং ২৪ জুলাই ২৯। এ বছর কোরবানি ঈদের আগে, ঈদের দিন এবং পরবর্তী সময় ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়, যার ফলে ঢাকা শহরে বস্তুকণা দূষণের পরিমাণ কমে আসে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে ঢাকামুখী মানুষের সংখ্যাও তুলনামূলক কম, করোনাভাইরাসের অধিক বিস্তৃতির ফলে কর্মে ফিরে আসা ঢাকাগামী মানুষের আনাগোনা গত কয়েক বছরের ঈদের তুলনায় অনেক কম ছিল, যার কারণে যানবাহন চলাচলের স্বল্পতা লক্ষ করা যায়। ফলে ঢাকার বায়ুদূষণ কমছে। ঈদের পরবর্তী সময় লকডাউন ঘোষণা থাকায় অনেকেই নিজেদের বাড়িমুখী হয়। ঢাকা মহানগরীতে মোট জনসংখ্যার পরিমাণ ২ কোটি ১৭ লাখ। এই ঈদে ঢাকা ছেড়েছে ১ কোটির বেশি মানুষ, কিন্তু ফিরেছে মাত্র ৮ লাখ। অর্থাৎ, ঢাকা শহরে মোট জনসংখ্যার নানাবিধ কার্যক্রমের ফলে গাড়িতে চলাচল কম ছিল। ওই সময় বন্ধ ছিল কলকারখানা, নির্মাণকাজ বা উন্নয়নমূলক কাজ। ফলে বায়ুদূষণ তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। লকডাউনের এই সময়ে বড় প্রকল্পগুলো স্বাভাবিকের থেকে একটু মন্থর গতিতে চলমান থাকলেও প্রকল্পসংলগ্ন এলাকা দিয়ে চলাচল করা মানুষ ও গাড়ির আনাগোনা ছিল কম, ফলে উৎস থেকে দূষণ ছড়িয়ে পড়াটাও কম ছিল। তাই উন্নতি হয়েছে বায়ুমানের। বায়ুদূষণের তৃতীয় প্রধান উৎস ফিটনেসবিহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও পুরোনো যানবাহন এবং তীব্র যানজট। বর্তমান ঢাকার চিত্র দেখলেই বোঝা যায় রাস্তায় যানবাহনের পরিমাণ কম। ফলে দূষণের পরিমাণ অনেকাংশে কম।
বাসযোগ্য ঢাকার জন্য
করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুদূষণমুক্ত ঢাকা শহরের বর্তমান অবস্থাকে ভুলে না গিয়ে বরং উৎসগুলো চিহ্নিতকরণের মাধ্যম এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে বায়ুদূষণমুক্ত একটি বসবাসযোগ্য ঢাকা শহর গড়ার পরিকল্পনা ও সংকল্প এখনই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আর এর জন্য এ বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা যেতে পারে—মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে, সমন্বয়ের মাধ্যমে সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা, যত্রতত্র বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করা এবং আন্তর্দেশীয় বায়ুদূষণ সম্পর্কে আরও গবেষণা করা। তবেই বায়ুর মান উন্নয়নের জন্য আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো মহামারির অপেক্ষা করতে হবে না। আর একদিন পৃথিবীর বসবাসযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় ওপরের দিকে উঠে আসবে ঢাকার নাম।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ; ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। অনেকের কাছে এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের ওপর আস্থা রেখেছেন। নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল এবং নির্বাচনের পর ভোট গণনার সময় সারা রাত বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৬ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমার, শুধু আমার নয় বরং অনেকেরই। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়ার সুযোগ পেলাম, তখন প্রথম দিন বড় বোনের কাছ থেকে শাড়ি এনে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলাম। সেই দিনের শিহরণ, অনুভূতি এখনো শরীর-মনে দোলা দেয়।
১৬ ঘণ্টা আগেনির্বাচনের পরে যাঁরা মন্ত্রী হবেন, তাঁদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। প্রস্তাব এসেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে। সমালোচনার মুখে সেই পথ থেকে সরে এসেছে সরকার। বাতিল করা হয়েছে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত। বহু দুঃসংবাদের মধ্যে এটি একটি সুসংবাদ। গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল ধরনের এই কেনাকাটার বিষয়টি
১৬ ঘণ্টা আগেজাতীয় প্রেসক্লাবে ৭ সেপ্টেম্বর গণশক্তি আয়োজন করে ‘জুলাই সনদ ও নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা। সেই সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না যে প্রশ্নটি করেছেন, তা কোটি টাকার সঙ্গে তুলনা করাই যায়। তাঁর সহজ জিজ্ঞাসা—‘ভোটের দিন যাঁর যেখানে শক্তি আছে, তাঁর যদি মনে হয় জিততে পারবেন না...
২ দিন আগে