সামিন ইয়াসার
বর্ষাকাল এলেই যেন ঢাকায় জলাবদ্ধতা ভর করে বসে। জলাবদ্ধতা যখন এই শহরের ঘাড়ে চেপে বসে, তখন এই নগরের মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আজ এই শহরের এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না যদি তারা অপরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে না ঝুঁকত, যদি নদী কিংবা খালের স্থান দখল না করে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা করত।
ঢাকা দিনকে দিন এমন এক স্থানে পরিণত হয়েছে যেখানে কোনো শূন্য স্থান থাকলেই তা দখলের প্রবণতা তৈরি হয়েছে কিছু মানুষের মনে—এমনকি খাল-জলাশয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জলাধারও দখলদারত্ব থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তাই তো ঢাকায় জলাবদ্ধতা চেপে বসে বর্ষা আসতে না আসতেই। এর কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ উভয়কেই যেন দুর্ভোগ আলিঙ্গন করে বসে। পত্রিকার পাতা খুললে দেখা যায়, বাচ্চারা পোশাক গুটিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, বৃদ্ধ বাবা-মাকে কাঁধে ভর করে হাঁটিয়ে নিচ্ছে, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে শুয়ে থাকা রোগীকেও আটকে দিয়েছে এই অভিশপ্ত জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা কেবল রাস্তা নয়, জীবনেও আঘাত হানছে প্রতিদিন, নিশ্চিতভাবেই।
ঢাকার বেহাল ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা প্রায় সবাই অবগত আছি। বৃষ্টি হলেই ড্রেন উপচে ওঠা এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করা, প্লাস্টিক কিংবা পলিথিনের কারণে ড্রেন বন্ধ হয়ে যায়; যা জলাবদ্ধতার অন্যতম একটি কারণ।
খাল কেবল দখল হচ্ছে না; হারিয়েও যাচ্ছে। না, এটা আমার বানোয়াট কোনো কথা না। চলুন, এমনই এক রিপোর্ট আপনাদের সামনে উপস্থাপন করি।
২০১৬ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ঢাকায় খালের সংখ্যা ৫৮টি। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের হিসাবে এই সংখ্যা অন্তত ৬৯টি। তবে বাস্তবে এখন আর অস্তিত্ব নেই অনেক খালের। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দখল ও দূষণসহ নানান অবহেলায় হারিয়ে গেছে এসব খালের অধিকাংশ (সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন)। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে উত্তর-দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে ৬৯টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে এর মধ্যে অনেক খাল বিলীন তো হয়েছেই—যেসব খালের অস্তিত্ব এখনো আছে, তার মধ্যে ডিএনসিসির তত্ত্বাবধানে রয়েছে ২৯টি খাল ও একটি জলাশয় মাত্র! (সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন)। যেখানে দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি; খাল বিলীন হয়ে গেছে। ঢাকায় জলাবদ্ধতা কি তাহলে খুব বেশি আশ্চর্যজনক ঘটনা?
শুধু এসব দেখে গেলেই হবে না, আমাদেরও নিজ নিজ স্থান থেকে সতর্ক এবং সচেতন হতে হবে। আমরা যেন যেখানে-সেখানে ময়লা, প্লাস্টিক কিংবা পলিথিন ফেলে পরিবেশদূষণের সঙ্গে জলাবদ্ধতাকে আমন্ত্রণ করে না নিয়ে আসি, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তবু, এত দুর্ভোগের ভিড়ে স্বস্তি পেলাম একটি শিরোনাম চোখে পড়ার পর—‘প্রাণ ফিরছে ঢাকার খালে’ (সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন)। আরও জানতে পারলাম, দুই সিটি করপোরেশন সূত্র হতে জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ১৯টি খালের সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচিকে বলা হচ্ছে ‘ব্লু-নেটওয়ার্ক’। প্রথম ধাপে ছয়টি খাল সংস্কার করা হবে। সিটি করপোরেশন পরিচালিত ‘ব্লু-নেটওয়ার্ক’ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো—দখল ও দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া খালগুলোকে পুনরায় উদ্ধার ও পুনরুজ্জীবিত করে একটি সংযুক্ত পানিপ্রবাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে নগরীর প্রাকৃতিক ড্রেনেজ কার্যকর হয় এবং জলাবদ্ধতা হ্রাস পায়।
সরকার কিংবা সিটি করপোরেশনের ওপর নির্ভর করে আমাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না, বরং আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং একই সঙ্গে সচেতন হতে হবে ৷ আমাদের এটা বুঝতে হবে, খাল দখল মানে শুধু জমি দখল নয়, এটা পানি যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়, যা নিশ্চিতভাবেই আমাদের নিজেদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক কিংবা আবর্জনা না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। যদি এখন আমরা না থামি, তবে ভবিষ্যতে বৃষ্টি এলেই ডুবে যাবে ঢাকা এবং পরিণত হবে জলাবদ্ধতার শহরে। মনে রাখতে হবে—উন্নয়ন মানে কংক্রিট এবং ইটে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া নয়। প্রকৃতি রক্ষাও উন্নয়নের এক মহান অংশ। প্রকৃতি যদি উন্নয়নের অংশ না হয়ে থাকে তাহলে এই উন্নয়ন একদিন আমাদের ডুবিয়ে দেবে।
এই শহর আমাদের সবার। এই শহরকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সবারই হাতে হাত রেখে এগিয়ে যেতে হবে—শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। যদি আমরা সবাই এগিয়ে আসি, তাহলে ঢাকাকে একদিন জলাবদ্ধতার নয়, পরিচ্ছন্নতার ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের শহর হিসেবে গড়ে তোলা সক্ষম হবে। এবং এটি হবে এই শহরের মানুষের পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
বর্ষাকাল এলেই যেন ঢাকায় জলাবদ্ধতা ভর করে বসে। জলাবদ্ধতা যখন এই শহরের ঘাড়ে চেপে বসে, তখন এই নগরের মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আজ এই শহরের এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না যদি তারা অপরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে না ঝুঁকত, যদি নদী কিংবা খালের স্থান দখল না করে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা করত।
ঢাকা দিনকে দিন এমন এক স্থানে পরিণত হয়েছে যেখানে কোনো শূন্য স্থান থাকলেই তা দখলের প্রবণতা তৈরি হয়েছে কিছু মানুষের মনে—এমনকি খাল-জলাশয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জলাধারও দখলদারত্ব থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তাই তো ঢাকায় জলাবদ্ধতা চেপে বসে বর্ষা আসতে না আসতেই। এর কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ উভয়কেই যেন দুর্ভোগ আলিঙ্গন করে বসে। পত্রিকার পাতা খুললে দেখা যায়, বাচ্চারা পোশাক গুটিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, বৃদ্ধ বাবা-মাকে কাঁধে ভর করে হাঁটিয়ে নিচ্ছে, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে শুয়ে থাকা রোগীকেও আটকে দিয়েছে এই অভিশপ্ত জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা কেবল রাস্তা নয়, জীবনেও আঘাত হানছে প্রতিদিন, নিশ্চিতভাবেই।
ঢাকার বেহাল ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা প্রায় সবাই অবগত আছি। বৃষ্টি হলেই ড্রেন উপচে ওঠা এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করা, প্লাস্টিক কিংবা পলিথিনের কারণে ড্রেন বন্ধ হয়ে যায়; যা জলাবদ্ধতার অন্যতম একটি কারণ।
খাল কেবল দখল হচ্ছে না; হারিয়েও যাচ্ছে। না, এটা আমার বানোয়াট কোনো কথা না। চলুন, এমনই এক রিপোর্ট আপনাদের সামনে উপস্থাপন করি।
২০১৬ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ঢাকায় খালের সংখ্যা ৫৮টি। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের হিসাবে এই সংখ্যা অন্তত ৬৯টি। তবে বাস্তবে এখন আর অস্তিত্ব নেই অনেক খালের। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দখল ও দূষণসহ নানান অবহেলায় হারিয়ে গেছে এসব খালের অধিকাংশ (সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন)। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে উত্তর-দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে ৬৯টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে এর মধ্যে অনেক খাল বিলীন তো হয়েছেই—যেসব খালের অস্তিত্ব এখনো আছে, তার মধ্যে ডিএনসিসির তত্ত্বাবধানে রয়েছে ২৯টি খাল ও একটি জলাশয় মাত্র! (সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন)। যেখানে দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি; খাল বিলীন হয়ে গেছে। ঢাকায় জলাবদ্ধতা কি তাহলে খুব বেশি আশ্চর্যজনক ঘটনা?
শুধু এসব দেখে গেলেই হবে না, আমাদেরও নিজ নিজ স্থান থেকে সতর্ক এবং সচেতন হতে হবে। আমরা যেন যেখানে-সেখানে ময়লা, প্লাস্টিক কিংবা পলিথিন ফেলে পরিবেশদূষণের সঙ্গে জলাবদ্ধতাকে আমন্ত্রণ করে না নিয়ে আসি, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তবু, এত দুর্ভোগের ভিড়ে স্বস্তি পেলাম একটি শিরোনাম চোখে পড়ার পর—‘প্রাণ ফিরছে ঢাকার খালে’ (সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন)। আরও জানতে পারলাম, দুই সিটি করপোরেশন সূত্র হতে জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ১৯টি খালের সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচিকে বলা হচ্ছে ‘ব্লু-নেটওয়ার্ক’। প্রথম ধাপে ছয়টি খাল সংস্কার করা হবে। সিটি করপোরেশন পরিচালিত ‘ব্লু-নেটওয়ার্ক’ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো—দখল ও দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া খালগুলোকে পুনরায় উদ্ধার ও পুনরুজ্জীবিত করে একটি সংযুক্ত পানিপ্রবাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে নগরীর প্রাকৃতিক ড্রেনেজ কার্যকর হয় এবং জলাবদ্ধতা হ্রাস পায়।
সরকার কিংবা সিটি করপোরেশনের ওপর নির্ভর করে আমাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না, বরং আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং একই সঙ্গে সচেতন হতে হবে ৷ আমাদের এটা বুঝতে হবে, খাল দখল মানে শুধু জমি দখল নয়, এটা পানি যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়, যা নিশ্চিতভাবেই আমাদের নিজেদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক কিংবা আবর্জনা না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। যদি এখন আমরা না থামি, তবে ভবিষ্যতে বৃষ্টি এলেই ডুবে যাবে ঢাকা এবং পরিণত হবে জলাবদ্ধতার শহরে। মনে রাখতে হবে—উন্নয়ন মানে কংক্রিট এবং ইটে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া নয়। প্রকৃতি রক্ষাও উন্নয়নের এক মহান অংশ। প্রকৃতি যদি উন্নয়নের অংশ না হয়ে থাকে তাহলে এই উন্নয়ন একদিন আমাদের ডুবিয়ে দেবে।
এই শহর আমাদের সবার। এই শহরকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সবারই হাতে হাত রেখে এগিয়ে যেতে হবে—শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। যদি আমরা সবাই এগিয়ে আসি, তাহলে ঢাকাকে একদিন জলাবদ্ধতার নয়, পরিচ্ছন্নতার ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের শহর হিসেবে গড়ে তোলা সক্ষম হবে। এবং এটি হবে এই শহরের মানুষের পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে দেশে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তখন সাধারণ মানুষের মনে একধরনের ইতিবাচক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল।
৩ ঘণ্টা আগেটাঙ্গাইলের সখীপুর-কচুয়া-আড়াইপাড়া সড়কের যে করুণ অবস্থা, তা আসলে আমাদের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—যেখানে প্রতিদিন স্কুলশিক্ষার্থী, রোগী, কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক ও হাজারো সাধারণ মানুষ চলাচল করে।
৩ ঘণ্টা আগেজুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেল। ওই অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। মূলত তারা ফ্যাসিবাদী সরকারব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। মূলত বাংলাদেশের মূল সমস্যা সেটাই যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি
১ দিন আগেঢুলিভিটা থেকে ধামরাই উপজেলার একটি গ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যাব সীতি গ্রামের আলাদিন পার্কে। হঠাৎ নাকে একটা উৎকট গন্ধ এসে লাগল। যতই এগোচ্ছি গন্ধটা তত বেশি উগ্র হয়ে উঠছে। নাক দিয়ে ঢুকছে দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস, পেটের ভেতরটা যেন ঘুলঘুল করে উঠছে। কারণটা কী? একটু এগিয়ে যেতেই ব্যাপারটা খোলাসা হয়ে গেল। রাস্তার
১ দিন আগে