আবদুল্লাহ জোয়ারদার
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স ৯ মাস পূর্ণ হয়েছে। মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়েছে। ৯ মাস যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীন হয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী অনেক হয়েছেন। তাঁরা প্রশাসনিকভাবে অনেকটা অভিজ্ঞ হয়ে উঠছেন। প্রথম দিকে তাঁদের নিয়ে নানা কথা থাকলেও মানুষ ভালো কিছু দেখতে চেয়েছিল। তবে বর্তমানে তাদের নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যেসব প্রশ্নের উত্তর জনগণ চায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের সরকারের সময় একটা নিয়ম হয়ে গিয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর করলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করা হতো।
সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরের সময়ের কার্যক্রম সম্পর্কে একটা লিখিত বিবরণ দিতেন। তারপর সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করতে পারতেন। অবশ্য সে প্রশ্নকারীরা ছিলেন সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত। প্রশ্নও করা হতো তেলবাজির মতো। আমাদের শুনতে খারাপ লাগলেও সেসব প্রশ্ন শেখ হাসিনার বেশ ভালো লাগত। কোনো ভিন্নমতের সাংবাদিক গণভবনে যাওয়ার সুযোগ পেতেন না। ওই সাংবাদিকদের সে সময়ের ভূমিকা সম্পর্ক তখন তেমন একটা জানতে পারা যেত না, কারণ কেউ প্রধানমন্ত্রীর বিরাগভাজন হতে চাননি। হাসিনার পতনের পর সেইসব তেলসমৃদ্ধ প্রশ্নকারী সাংবাদিকের অর্থ-সম্পদ সম্পর্ক নানা তথ্য এখন দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে একটা তেলেসমাতি কারবার ঘটে যাচ্ছে দেশে। কিছুদিন পরপরই সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয় ৭-৮টা কোম্পানি। পরে ট্যারিফ কমিশনে দেনদরবার করে দাম বাড়ায়। টিপু মুনশি বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে বৈঠক শেষে বলতেন, দাম আর বাড়বে না। কিন্তু দেখা যেত ওই বৈঠকের পরপরই দাম বাড়িয়ে দিত মিলমালিকেরা। তখন সরকারের পক্ষ থেকে তেমন একটা উৎকণ্ঠা দেখা যেত না। কারণ, মন্ত্রীদের সততা সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ। মিলমালিকেরা দাম বাড়ার অজুহাত দিতেন কোনো সময় আন্তর্জাতিক বাজার, কখনো যুদ্ধ, কখনো ফলন ভালো হয়নি, কখনো ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। বর্তমান সরকারও যদি এসব মিলমালিকের কাছে জিম্মি হয়ে যায়, তাহলে মানুষ যাবে কার কাছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সারা বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে একটা অস্থিরতা দেখা দেয়। তখন দেশের কয়েকটি কোম্পানি বিপুল পরিমাণ গম-সয়াবিন আমদানি করে। তারপর তারা একের পর এক দাম বাড়িয়ে যেতে থাকে। সরকারও মিলমালিকদের পক্ষে নানা কথা বলতে থাকে। তখন ময়দা দিয়ে যেসব খাদ্যপণ্য তৈরি হয়, সেসবের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। সাধারণ হোটেলের একটি পরাটা ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা হয়ে যায়, যা আর কমেনি। কিন্তু আটা-ময়দার দাম এখন আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক কমেছে।
কিন্তু বেকারি ও অন্যান্য পণ্য এখনো সেই জায়গায় রয়ে গেছে। অস্বাভাবিক অর্থ মুনাফা করায় হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসে যায়। তারা আরও অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানি করে। তারপর দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত। সয়াবিন তেলের দাম বাড়তে বাড়তে যদি ৩০০ টাকা হয়, তাহলেও আমরা আশ্চর্য হব না! এদের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা মিলমালিকদের অনুকূলে যে সাফাই গেয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি হিসাব করে দেখিয়েছেন সয়াবিন তেলের দাম লিটার ১৯৭ টাকা হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু ভোক্তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করেছেন! সয়াবিনের দাম বেশি হওয়ায় দেশে সরিষার তেলের দাম অনেক বেশি এবার। এখন অনেকে সরিষা আবাদ ও তেল খেতে শুরু করেছেন। সয়াবিন তেলের উপকারিতা সম্পর্কে বয়ান এখন আর কেউ কানে নেয় না।
২. ছাত্রনেতাদের অর্থদাতা কারা: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সম্পর্কে প্রথমে নানা গুঞ্জন শোনা যেত। এখন সেসব গুঞ্জন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের তদবির করা নিয়ে নানা তথ্য মিডিয়ায় আসছে। বিশেষ করে তাঁদের অর্থবিত্ত সম্পর্কে যেসব ছবি ও সংবাদ ছাপা হয়েছে, তা রীতিমতো আমাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাদের লাইফস্টাইল, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, কথাবার্তা মানুষ সাদা চোখেই দেখতে পাচ্ছে। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তো বলেই ফেললেন বাংলাদেশজুড়ে অনেক সম্পদশালী ব্যক্তি তাঁদের দলকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করছেন। গত সরকারের সময় অনেক ব্যবসায়ী অস্বাভাবিক মুনাফা করেছেন। যেহেতু সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না, তাই তাঁরা যখন-তখন জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিতেন। সেইসব ব্যবসায়ী ছাত্রনেতাদের ভেটের বিনিময়ে কৃপা পাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াতঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের ওইসব কোম্পানির বিভিন্ন মিডিয়ার প্রধান বা সম্পাদক বানিয়েছেন। এ কারণে তাঁদের প্রতিষ্ঠান কোনো মব জাস্টিসের শিকার হয়নি। কোনো কোনো ব্যবসায়ী লন্ডন পর্যন্ত গিয়ে রাতারাতি ভোল পাল্টে ফেলেছেন—এমন কথা বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
৩. জ্বালানি সংকট: অনেক দিন ধরে গ্যাসের সরবরাহ অনেক কম। দিনের বেশির ভাগ সময় আবাসিক চুলায় গ্যাসের চাপ নেই বললেই চলে। অনেক জায়গার গভীর রাতে গ্যাস আসে। তখন রান্না করতে হয়। ঢাকা শহরে অনেক নারী কর্মজীবী। সারা দিন অফিস করে এসে তারপর গভীর রাতে রান্নাঘরে যাওয়া চরম বিরক্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে নারী পোশাক কারখানায় চাকরি করেন, তিনি আবার কীভাবে হাড়খাটুনি খেটে এসে মাঝরাতে উঠে ভোররাত পর্যন্ত রান্নার কাজ করবেন? তিনি তো প্রতিদিন সকাল ৮টার আগেই কারখানার গেটে গিয়ে দাঁড়ান। উচ্চবিত্তদের অনেকেই এখন সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন বাধ্য হয়ে। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা মাসে ১০৮০ টাকা তিতাসকে বিল দিচ্ছে, আবার সিলিন্ডার গ্যাস কিনছেন। এ কারণে তাদের মাসিক খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আয় তা আর বাড়ছে না। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস সরবরাহ ক্রমেই কমছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে, কাতার থেকে এলএনজি গ্যাস আমদানি বাড়ানো হবে, স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফর শেষে। অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখন মারাত্মক গ্যাস-সংকটে ধুঁকছে। কত দিনে গ্যাসের এ সমস্যা কাটবে, তা আমরা জানতে পারছি না। সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে এ ব্যাপারে একটা বাস্তব পদক্ষেপ চাই।
৪. পুঁজিবাজার: বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এক অদ্ভুত জায়গা। যেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শুধু অর্থ হারায়। আর কিছু লোক টাকা কামায়। অন্যান্য খাতে সংস্কার শুরু হলেও পুঁজিবাজার নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। খোদ বিএসইসির ভেতরেই নানা অনিয়ম পাওয়া গেছে। একজনের বিরুদ্ধে অনিয়মের তথ্য পেয়ে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় ১৮ কর্মকর্তার নামে মামলা হয়। তাঁরা পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে এখন অফিস করছেন। প্রতিদিনই সূচক কমছে, আর বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হচ্ছেন। পুঁজিবাজারের টানেলের শেষ প্রান্তে আমরা কোনো আলো দেখতে পাচ্ছি না।
৫. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: গত বছরের জুলাই-আগস্টে পুলিশ বাহিনীকে একটি বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সাড়ে ১৫ বছর পুলিশের কর্তারা ভুলেই গিয়েছিলেন তাঁরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তাঁরা একটি দলের বাহিনী হিসেবে কাজ করতেন। ১৪০০ মানুষকে হত্যা এবং অসংখ্য মানুষকে আহত করেও যখন
আর হাসিনার গদি রক্ষা হলো না, তখন মাঠপর্যায়ের কর্মরতদের কোনো নির্দেশনা না দিয়ে ঊর্ধ্বতনরা নিরাপদ স্থানে চলে যান। যাত্রাবাড়ী, মিরপুর আর উত্তরায় পুলিশ বেশি মার খেয়েছে। পুলিশ এতটা ভয় পেয়েছে যে কোথাও কোনো মব ভায়োলেন্স হলে তারা নির্লিপ্ত থাকছে। পরে সেনাসদস্যরা এসে প্রতিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেই যে খারাপ হয়েছে, ৯ মাস পরেও তা আর স্বাভাবিক হচ্ছে না। তিন দিনের পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আইজিপি বাহারুল আলম দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করেছিলেন তাঁর কাছে কোনো তদবিরের জন্য না আসতে। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি এবং শিল্পে এখন শ্রমিক অসন্তোষ দূর করা সবার আগে দরকার। সরকার দেশবাসীর এ চাওয়া কি মেটাতে পারছে?
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স ৯ মাস পূর্ণ হয়েছে। মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়েছে। ৯ মাস যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীন হয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী অনেক হয়েছেন। তাঁরা প্রশাসনিকভাবে অনেকটা অভিজ্ঞ হয়ে উঠছেন। প্রথম দিকে তাঁদের নিয়ে নানা কথা থাকলেও মানুষ ভালো কিছু দেখতে চেয়েছিল। তবে বর্তমানে তাদের নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যেসব প্রশ্নের উত্তর জনগণ চায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের সরকারের সময় একটা নিয়ম হয়ে গিয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর করলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করা হতো।
সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরের সময়ের কার্যক্রম সম্পর্কে একটা লিখিত বিবরণ দিতেন। তারপর সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করতে পারতেন। অবশ্য সে প্রশ্নকারীরা ছিলেন সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত। প্রশ্নও করা হতো তেলবাজির মতো। আমাদের শুনতে খারাপ লাগলেও সেসব প্রশ্ন শেখ হাসিনার বেশ ভালো লাগত। কোনো ভিন্নমতের সাংবাদিক গণভবনে যাওয়ার সুযোগ পেতেন না। ওই সাংবাদিকদের সে সময়ের ভূমিকা সম্পর্ক তখন তেমন একটা জানতে পারা যেত না, কারণ কেউ প্রধানমন্ত্রীর বিরাগভাজন হতে চাননি। হাসিনার পতনের পর সেইসব তেলসমৃদ্ধ প্রশ্নকারী সাংবাদিকের অর্থ-সম্পদ সম্পর্ক নানা তথ্য এখন দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে একটা তেলেসমাতি কারবার ঘটে যাচ্ছে দেশে। কিছুদিন পরপরই সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয় ৭-৮টা কোম্পানি। পরে ট্যারিফ কমিশনে দেনদরবার করে দাম বাড়ায়। টিপু মুনশি বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে বৈঠক শেষে বলতেন, দাম আর বাড়বে না। কিন্তু দেখা যেত ওই বৈঠকের পরপরই দাম বাড়িয়ে দিত মিলমালিকেরা। তখন সরকারের পক্ষ থেকে তেমন একটা উৎকণ্ঠা দেখা যেত না। কারণ, মন্ত্রীদের সততা সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ। মিলমালিকেরা দাম বাড়ার অজুহাত দিতেন কোনো সময় আন্তর্জাতিক বাজার, কখনো যুদ্ধ, কখনো ফলন ভালো হয়নি, কখনো ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। বর্তমান সরকারও যদি এসব মিলমালিকের কাছে জিম্মি হয়ে যায়, তাহলে মানুষ যাবে কার কাছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সারা বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে একটা অস্থিরতা দেখা দেয়। তখন দেশের কয়েকটি কোম্পানি বিপুল পরিমাণ গম-সয়াবিন আমদানি করে। তারপর তারা একের পর এক দাম বাড়িয়ে যেতে থাকে। সরকারও মিলমালিকদের পক্ষে নানা কথা বলতে থাকে। তখন ময়দা দিয়ে যেসব খাদ্যপণ্য তৈরি হয়, সেসবের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। সাধারণ হোটেলের একটি পরাটা ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা হয়ে যায়, যা আর কমেনি। কিন্তু আটা-ময়দার দাম এখন আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক কমেছে।
কিন্তু বেকারি ও অন্যান্য পণ্য এখনো সেই জায়গায় রয়ে গেছে। অস্বাভাবিক অর্থ মুনাফা করায় হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসে যায়। তারা আরও অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানি করে। তারপর দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত। সয়াবিন তেলের দাম বাড়তে বাড়তে যদি ৩০০ টাকা হয়, তাহলেও আমরা আশ্চর্য হব না! এদের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা মিলমালিকদের অনুকূলে যে সাফাই গেয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি হিসাব করে দেখিয়েছেন সয়াবিন তেলের দাম লিটার ১৯৭ টাকা হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু ভোক্তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করেছেন! সয়াবিনের দাম বেশি হওয়ায় দেশে সরিষার তেলের দাম অনেক বেশি এবার। এখন অনেকে সরিষা আবাদ ও তেল খেতে শুরু করেছেন। সয়াবিন তেলের উপকারিতা সম্পর্কে বয়ান এখন আর কেউ কানে নেয় না।
২. ছাত্রনেতাদের অর্থদাতা কারা: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সম্পর্কে প্রথমে নানা গুঞ্জন শোনা যেত। এখন সেসব গুঞ্জন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের তদবির করা নিয়ে নানা তথ্য মিডিয়ায় আসছে। বিশেষ করে তাঁদের অর্থবিত্ত সম্পর্কে যেসব ছবি ও সংবাদ ছাপা হয়েছে, তা রীতিমতো আমাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাদের লাইফস্টাইল, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, কথাবার্তা মানুষ সাদা চোখেই দেখতে পাচ্ছে। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তো বলেই ফেললেন বাংলাদেশজুড়ে অনেক সম্পদশালী ব্যক্তি তাঁদের দলকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করছেন। গত সরকারের সময় অনেক ব্যবসায়ী অস্বাভাবিক মুনাফা করেছেন। যেহেতু সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না, তাই তাঁরা যখন-তখন জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিতেন। সেইসব ব্যবসায়ী ছাত্রনেতাদের ভেটের বিনিময়ে কৃপা পাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াতঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের ওইসব কোম্পানির বিভিন্ন মিডিয়ার প্রধান বা সম্পাদক বানিয়েছেন। এ কারণে তাঁদের প্রতিষ্ঠান কোনো মব জাস্টিসের শিকার হয়নি। কোনো কোনো ব্যবসায়ী লন্ডন পর্যন্ত গিয়ে রাতারাতি ভোল পাল্টে ফেলেছেন—এমন কথা বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
৩. জ্বালানি সংকট: অনেক দিন ধরে গ্যাসের সরবরাহ অনেক কম। দিনের বেশির ভাগ সময় আবাসিক চুলায় গ্যাসের চাপ নেই বললেই চলে। অনেক জায়গার গভীর রাতে গ্যাস আসে। তখন রান্না করতে হয়। ঢাকা শহরে অনেক নারী কর্মজীবী। সারা দিন অফিস করে এসে তারপর গভীর রাতে রান্নাঘরে যাওয়া চরম বিরক্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে নারী পোশাক কারখানায় চাকরি করেন, তিনি আবার কীভাবে হাড়খাটুনি খেটে এসে মাঝরাতে উঠে ভোররাত পর্যন্ত রান্নার কাজ করবেন? তিনি তো প্রতিদিন সকাল ৮টার আগেই কারখানার গেটে গিয়ে দাঁড়ান। উচ্চবিত্তদের অনেকেই এখন সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন বাধ্য হয়ে। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা মাসে ১০৮০ টাকা তিতাসকে বিল দিচ্ছে, আবার সিলিন্ডার গ্যাস কিনছেন। এ কারণে তাদের মাসিক খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আয় তা আর বাড়ছে না। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস সরবরাহ ক্রমেই কমছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে, কাতার থেকে এলএনজি গ্যাস আমদানি বাড়ানো হবে, স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফর শেষে। অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখন মারাত্মক গ্যাস-সংকটে ধুঁকছে। কত দিনে গ্যাসের এ সমস্যা কাটবে, তা আমরা জানতে পারছি না। সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে এ ব্যাপারে একটা বাস্তব পদক্ষেপ চাই।
৪. পুঁজিবাজার: বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এক অদ্ভুত জায়গা। যেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শুধু অর্থ হারায়। আর কিছু লোক টাকা কামায়। অন্যান্য খাতে সংস্কার শুরু হলেও পুঁজিবাজার নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। খোদ বিএসইসির ভেতরেই নানা অনিয়ম পাওয়া গেছে। একজনের বিরুদ্ধে অনিয়মের তথ্য পেয়ে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় ১৮ কর্মকর্তার নামে মামলা হয়। তাঁরা পরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে এখন অফিস করছেন। প্রতিদিনই সূচক কমছে, আর বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হচ্ছেন। পুঁজিবাজারের টানেলের শেষ প্রান্তে আমরা কোনো আলো দেখতে পাচ্ছি না।
৫. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: গত বছরের জুলাই-আগস্টে পুলিশ বাহিনীকে একটি বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সাড়ে ১৫ বছর পুলিশের কর্তারা ভুলেই গিয়েছিলেন তাঁরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তাঁরা একটি দলের বাহিনী হিসেবে কাজ করতেন। ১৪০০ মানুষকে হত্যা এবং অসংখ্য মানুষকে আহত করেও যখন
আর হাসিনার গদি রক্ষা হলো না, তখন মাঠপর্যায়ের কর্মরতদের কোনো নির্দেশনা না দিয়ে ঊর্ধ্বতনরা নিরাপদ স্থানে চলে যান। যাত্রাবাড়ী, মিরপুর আর উত্তরায় পুলিশ বেশি মার খেয়েছে। পুলিশ এতটা ভয় পেয়েছে যে কোথাও কোনো মব ভায়োলেন্স হলে তারা নির্লিপ্ত থাকছে। পরে সেনাসদস্যরা এসে প্রতিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেই যে খারাপ হয়েছে, ৯ মাস পরেও তা আর স্বাভাবিক হচ্ছে না। তিন দিনের পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আইজিপি বাহারুল আলম দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করেছিলেন তাঁর কাছে কোনো তদবিরের জন্য না আসতে। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি এবং শিল্পে এখন শ্রমিক অসন্তোষ দূর করা সবার আগে দরকার। সরকার দেশবাসীর এ চাওয়া কি মেটাতে পারছে?
চারদিক থেকে যেন রাজ্যের এক অস্থিতিশীলতা আমাদের ঘিরে ধরেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কোনোভাবে স্থিতিশীল বলে গণ্য করা যায় না। তার ওপর পূর্ব সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে আছে মিয়ানমারকে ঘিরে।
৫ ঘণ্টা আগেআমাদের দেশের রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনা স্বাভাবিকভাবে ঘটছে, নাকি কারও ইশারায়, তা জানা খুব জরুরি হয়ে উঠেছে। একই দিনে এত বেশি সংবাদের জন্ম হচ্ছে এবং সংবাদগুলো দেশকে অস্থিরতার দিকে যেভাবে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে মনে হয়, সত্যিকারের কাজের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কেউ কেউ ফায়দা লোটার...
১৩ ঘণ্টা আগেবর্তমানে আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের অন্যায়, অবক্ষয় ও অমানবিকতার মুখোমুখি হচ্ছি। প্রতিদিন নানা প্রচারমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে হত্যা, ধর্ষণ, দুর্নীতি, প্রতারণা, পারিবারিক সহিংসতা ও সামাজিক বৈষম্যের খবর। এসব দেখে আমরা আতঙ্কিত হই, বিরক্ত হই, মাঝে মাঝে প্রতিবাদও করি। তবে একটু গভীরভাবে ভাবলেই বোঝা যায়...
১৩ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ তিন বছর নেগোসিয়েশনের পর ৬ মে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারত এমন একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে সক্ষম হয়, যেটিকে উভয় দেশই ‘ল্যান্ডমার্ক ট্রেড ডিল’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বাড়তি ট্যারিফ আরোপের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিকে মারাত্মক একটা ঝাঁকুনি দিয়েছেন, তখন এমন চুক্তি ভারত ও যুক্তরাজ্য উভয়
২ দিন আগে