Ajker Patrika

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মরহস্য

সজল চন্দ, সিলেট
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মরহস্য

আমাদের সর্বসাধারণের মনে একটা প্রশ্ন সব সময়ই ঘুরপাক খায়—ভগবান যেহেতু অজ, তাহলে তাঁর আবার জন্ম কিসের? এই প্রশ্নের উত্তর ভগবান নিজেই গীতায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। গীতায় ভগবান বলেছেন, তিনি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি অজ অর্থাৎ জন্মরহিত হওয়া সত্ত্বেও এই জড়জগতে জন্মগ্রহণ করেন। কেন তিনি জন্মগ্রহণ করেন তার কয়েকটি কারণ তিনি গীতায় ব্যাখ্যা করেছেন।

প্রথমত তিনি বলেছেন, যখনই ধর্মের অবনতি আর অধর্মের উত্থান হয়, তখনই তিনি নিজে স্বয়ং জড়জগতে মনুষ্যরূপে প্রকাশিত হন। প্রকাশিত হয়ে ভগবৎ-বিদ্বেষীদের দণ্ড দান করেন এবং সাধুসজ্জন ব্যক্তিদের পরিত্রাণ বা রক্ষা করেন। দ্বিতীয়ত তিনি তাঁর ভক্তের মনোবাসনা পূরণের নিমিত্তে এই জড়জগতে আবির্ভূত হন। অর্থাৎ তিনি তাঁর ভক্তের আকুল আবেদনে বসুদেব-দেবকীর পুত্ররূপে এই পার্থিব জগতে আবির্ভূত হন এবং লীলাকার্য সম্পাদন করেন।

পূর্বজীবনে এই বসুদেব এবং দেবকী পৃশ্নি ও সুতপা নামে স্বামী আর স্ত্রীরূপে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তাঁদের কোনো সন্তানাদি না হওয়ায় তাঁরা কঠোর তপস্যা শুরু করেন। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হয়ে তাঁদের অভিপ্রায় জিজ্ঞাসা করেন। প্রত্যুত্তরে ভগবানকে তাঁরা বলেন তাঁদের খুব ইচ্ছা ভগবানের মতো একটা সন্তান লাভের। কিন্তু কৃষ্ণ তো স্বয়ং ভগবান। তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি আর দ্বিতীয় হতে পারবেন না। এদিকে তাঁর ভক্তের মনোবাসনা পূরণও করতে হবে। তাই তিনি দেবকী ও বসুদেবকে কথা দিলেন তাঁদের পরবর্তী জন্মে তিনি স্বয়ং তাঁদের পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করবেন এবং তাঁদের অভিলাষ পূর্ণ করবেন।

তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগে দেবকীনন্দনরূপে এই জড়জগতে আবির্ভূত হন। তাঁর জন্ম সাধারণ শিশুদের মতো হয়নি। কিংবা বসুদেব-দেবকীর মিলনের ফলেও নয়। ভগবান দেবকী মাতার সম্মুখে প্রথমে চতুর্ভুজ বিষ্ণুরূপে আবির্ভূত হন। কিন্তু দেবকী-বসুদেব ভগবানকে দ্বিভুজরূপে প্রকাশিত হওয়ার অনুরোধ করেন। তখন ভগবানের বপু হতে একটা দিব্য জ্যোতি দেবকী মাতার গর্ভসিন্ধুতে প্রবেশ করে এবং ভগবান দেবকী মাতার গর্ভসিন্ধু থেকে সন্তানরূপে এই জড়জগতে প্রকাশিত হন। কিন্তু এদিকে কংস যেহেতু দৈববাণী শুনেছিলেন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান তাঁর মৃত্যুর কারণ হবে, তাই দেবকী এবং বসুদেবকে কংস তাঁর কারাগারে বন্দী করে রেখেছিলেন। এ জন্য সংগত কারণে ভগবানকে কংসের কারাগারেই আবির্ভূত হতে হয়েছিল।

আবার কংসের নির্দেশ ছিল দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানকে তিনি নিজ হাতে হত্যা করবেন। সেহেতু বসুদেব সদ্যোজাত শিশুটিকে রাতের অন্ধকারে নন্দালয়ে নিয়ে যান এবং সেখানে মা যশোদাও একই সময়ে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। বসুদেব তাঁর সদ্যোজাত সন্তানকে যশোদা মায়ের কাছে রেখে যশোদা মায়ের কন্যাসন্তান অর্থাৎ যোগমায়াকে নিয়ে কংসের কারাগারে ফিরে আসেন। পরদিন কংস দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান যোগমায়াকে হত্যা করার জন্য যখন হাতে তুলে নিলেন, তখনই যোগমায়া ঊর্ধ্বগামী হয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।’ এ কথা শুনে তিনি গোকুলে জন্ম নেওয়া সব নবজাত শিশুকে হত্যা করতে শুরু করলেন। অবশেষে তাঁর আসল শত্রু কৃষ্ণের কাছে এলেন। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই একে একে ব্যর্থ হতে লাগল। পরে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ছলনার আশ্রয়ের। অর্থাৎ পুতনাকে দিয়ে বিষপ্রয়োগে কৃষ্ণকে হত্যা করবেন। পুতনা রাক্ষসী তার স্তনে বিষ মাখিয়ে কৃষ্ণকে দুগ্ধপান করাতে গেল। কিন্তু পুতনা অসহ্য যন্ত্রণায় নিজেই মৃত্যুবরণ করল। অবশেষে কংসও কৃষ্ণের হাতে নিহত হলেন।

তাই দেখা যায়, ভগবান বিশেষত দুটি কারণে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন। এক. দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ এবং দুই. ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণের নিমিত্তে। তবে দুষ্কৃতকারীদের বিনাশের চেয়ে তিনি ভক্তের ডাকে সাড়া দেওয়াকে বেশি প্রাধান্য দেন। কারণ, দুষ্কৃতকারীদের দণ্ড দিতে সব সময় ভগবানকে এই জড়জগতে আবির্ভূত হতে হয় না। তিনি প্রকৃতিকে আদেশ করেন আর প্রকৃতি তার ভয়ংকর রূপে পাপীতাপীদের দণ্ড দিয়ে থাকে।

দ্বাপরে ভগবানের আবির্ভাবের মূল কারণ ছিল তাঁর ভক্তের অভিলাষ পূর্ণ করা। গৌণ ছিল দুষ্কৃতকারীদের ধ্বংস করা। যেহেতু এসব দুষ্কৃতকারী তাঁর ভক্তদের নানাভাবে উৎপীড়ন-যন্ত্রণা দিয়ে থাকে, তাই ভক্তের ডাকে তিনি সাড়া দেন। ভক্তের সব সমস্যার সমাধান করেন। তাই তো বলা হয়—ভক্তের অধীন ভগবান, নিজে ছোট হয়ে বাড়ায় ভক্তের সম্মান। জয় শ্রীকৃষ্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

সিঙ্গাপুরে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ৭ হাজার টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত