Ajker Patrika

আমাদের নাটক যেন পথহারা না হয়

আহমেদ শরীফ
আমাদের নাটক যেন পথহারা না হয়

একটি দেশের চলচ্চিত্রের মতো সে দেশের নাটক, টেলিফিল্মও তার সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস তুলে ধরে। নাটক, টেলিফিল্ম মূলত একটি জাতি ও তার সমাজ পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটায়। ছোটবেলা থেকেই বিটিভির কালজয়ী অনেক নাটক দেখে বড় হয়েছি আমরা। স্যাটেলাইট চ্যানেলের কল্যাণে এখন আমাদের নাটকের পরিসর অনেক বড় হয়েছে। দেশের সব টিভি চ্যানেলে প্রতিনিয়ত নাটক, টেলিফিল্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ইউটিউবেও এখন বিস্তর নাটক, টেলিফিল্ম, শর্টফিল্ম তৈরির প্রতিযোগিতা চলছে। সেই সুবাদে আমাদের নাট্যজগৎ এখন সোনালি এক সময় পার করছে বলেই আমার বিশ্বাস। এখন অনেক চৌকস অভিনেতা, অভিনেত্রী যেমন দেখতে পাচ্ছি, তেমনি অনেক দক্ষ পরিচালকও একের পর এক উপভোগ্য নাটক, টেলিফিল্ম উপহার দিচ্ছেন। দুই ঈদ ঘিরে, পূজা, ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশেষ দিনকে ঘিরেও নাটক, টেলিফিল্ম নির্মাণ হয় অনেক।

বরাবরের মতো এবারের ঈদেও নাটক, টেলিফিল্মের পসরা সাজিয়েছিল টিভি চ্যানেলগুলো। অনেক চ্যানেলে সাত-আট দিন জুড়ে সিরিজ নাটকও ছিল। কিন্তু সেসবের প্রতিটিই কি দর্শকের মন জয় করতে পেরেছে? নির্মাণ ও অভিনয় দক্ষতায় সব নাটক, টেলিফিল্ম কি উৎকর্ষের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছে? দর্শক হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে, পারেনি। তা আশা করাও হয়তো বাড়াবাড়ি। তবে নাটক, টেলিফিল্মের কাহিনি, নির্মাণশৈলী যদি গতানুগতিক হয়, তাহলে হতাশই হব আমরা। এটা ঠিক এবারের ঈদেও বেশ কিছু প্রশংসনীয় নাটক, টেলিফিল্ম দেখতে পেয়েছেন দর্শকেরা। সংখ্যাটা তুলনামূলকভাবে অবশ্য কম ছিল। বেশির ভাগ নাটকেই দর্শক হাসানোর চেষ্টা ছিল।

সে ক্ষেত্রে কম নাটকই সফল হয়েছে। আর বেশি বেশি নাটক নির্মাণ হচ্ছে বলেই হয়তো নাটকের নামও এখন উদ্ভট হয়ে উঠছে। বেশ কিছুদিন আগে ‘গোল মরিচ’ নামের একটা নাটক দেখেছিলাম। নিশো, মেহজাবীনের নাটকটা উপভোগ্য ছিল বলা যায়, তবে নাটকের এমন নাম কেন হলো, তা বোঝা যায়নি পুরো নাটক দেখে। এবারের ঈদেও নাটকের উদ্ভট, অপ্রাসঙ্গিক নাম দেওয়ার হিড়িক ছিল। বিটিভিতে ‘হাম্বা ডটকম’, বৈশাখীতে ‘হাঁটা জামাই’, ‘পান-সুপারি ভালোবাসা’, ‘প্রবাসী টাকার মেশিন’, চ্যানেল নাইনে ‘পাগল হমু কেমতে’, ‘কোটি কোটি ভিউ চাই’, এটিএন বাংলায় ‘বগা কান্দে’, একুশে টিভিতে ‘হালকার উপর ঝাপসা’, ‘অফ লাইন মামা অনলাইনে’, আরটিভিতে ‘চান্দের বুড়ি নোয়াখাইল্যা’, দীপ্ত টিভিতে ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল দ্য সেলফি হিরো’, বাংলাভিশনে ‘ভাই লাইভে আসবে উইথ ভাবি’ নামের অনেক নাটক, টেলিফিল্ম দেখা গেছে এবার।

আমাদের নাটক, টেলিফিল্মের বড় এক ভক্ত আমি। নতুন নাটক, টেলিফিল্ম দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকি। আমার বিশ্বাস, আমাদের নাটক কলকাতার নাটক, হিন্দি সিরিয়ালের চেয়ে, পাকিস্তানি নাটকের চেয়ে অনেক গুণ উন্নত। আমাদের নাটক অনেক জীবনঘনিষ্ঠ, অনেক বার্তা বহন করে। আমাদের হাসির নাটকগুলোও অনেক আনন্দময় হয়। অন্যদিকে, হিন্দি সিরিয়াল বা কলকাতার নাটকগুলোয় শুধু ষড়যন্ত্র আর পারিবারিক অশান্তিই মূল উপজীব্য হয়। তবে ঈদসহ বিশেষ দিনগুলোকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে এখন যেসব নাটক নির্মাণ হচ্ছে, সেগুলোর কাহিনি, উপস্থাপনা ও নামের ক্ষেত্রেও যত্নবান হওয়া উচিত নির্মাতাদের। নিজের দেশের নাটক, টেলিফিল্ম নিয়ে সব সময় গর্ব করি আমি ও আমার মতো অসংখ্য বাংলাদেশি। আমাদের এই গর্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্মাতারা উদ্ভট কাহিনি ও উদ্ভট নামের আশ্রয় নেবেন না, সে প্রত্যাশাই করি তাঁদের কাছে। আমাদের নাটকের নির্মাণশৈলী দিনে দিনে আরও অনন্য হবে, পথ হারাবে না, সে আশাও করি নাটকের একজন একনিষ্ঠ দর্শক হিসেবে।

লেখক: সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ মিলল মেঘনায়, শোকাহত আজকের পত্রিকা

‘সামনে চমকপ্রদ বেশ কিছু ঘটনা ঘটবে, অনেক বিষয় আমি জানি’

কিশোরগঞ্জে যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ-গুলি, নিহত ১

‘মব’ সৃষ্টি করে ৩ কিশোরকে সেতুর সঙ্গে বেঁধে রাতভর পিটুনি, নিহত ১

সনদ জালিয়াতি: ব্যাংকের চাকরি যাওয়া জাহাঙ্গীরের স্কুল সভাপতির পদও গেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত