জাহীদ রেজা নূর
যেকোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম হয় ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ ধরনের ভাবনার পথ ধরে। ‘আমরা’ আর ‘ওরা’—এভাবে বিভাজন তৈরি করে এগিয়ে যায় ফ্যাসিবাদ। একটি জনগোষ্ঠীকে ‘ওরা’ বানিয়ে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ঘটনা দেশে দেশে বারবার ঘটে এসেছে। অন্যকে কোনো স্থানই দেওয়া হয় না আলোচনায়। কোনো কোনো দেশে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসে সরকার, কিন্তু কিছুদিন পরই বেরিয়ে আসে তার দন্ত-নখর। এরা সোজাসাপটা ‘পপুলিস্ট’ ঘরানার কথা বলে শুরুতে মানুষের মন জয় করে নেয়, তারপর নিজের অভিসন্ধি প্রকাশ করে থাকে।
প্রচলিত রাজনীতির প্রতি জনগণ আস্থা হারায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাটের কারণে। গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হলে জনগণ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু সে আশা যখন তিরোহিত হয়ে যায়, তখন স্বপ্ন দেখা মানুষও নিরাশ হয়ে যায়। বারবার স্বপ্ন দেখে মানুষ, বারবার হতোদ্যম হয়।
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর প্রসঙ্গ এলে ব্রাজিলের চলমান রাজনীতির কথাও কিছুটা বলতে হয়। শাসকশ্রেণির দুর্নীতি ফাঁস হয়ে গেলে জনগণ হতাশ হয়ে পড়েছিল। ২০১৪ সালে এসে জনগণ প্রচলিত রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। এ রকম পরিস্থিতিতে ডানপন্থীরা যখন বলতে থাকে ‘শক্ত হাতের শাসন’ দরকার, তখন সহজেই তা জনপ্রিয়তা পায়। ‘শক্ত হাতের শাসন’ পৃথিবী অনেকবার দেখেছে। হিটলার-মুসোলিনির শাসন ছিল একরকম, স্তালিনের শাসন ছিল আরেক রকম। কিন্তু সে শাসনের মধ্যে শোষণ কতটা ছিল, সেটা নিয়েও গবেষণা হয়েছে।
ব্রাজিলে তখন ভয়াবহ মন্দা। মন্দা মানেই বেকারত্ব, দারিদ্র্য বেড়ে গেছে। আর এ অবস্থায় বেড়েছে অপরাধ। ব্রাজিলবাসী তখন এমন এক শাসক চাইছিল, যিনি শক্ত হাতে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা দমন করতে পারবেন। নিরাপত্তাহীনতায় নাভিশ্বাস উঠছিল ব্রাজিলবাসীর। মাদক কারবারি চক্র বহু কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। আর গ্যাং বা মবের মাধ্যমে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা হচ্ছিল।
এ রকম এক অবস্থায় উগ্র ডানপন্থীরা বলিষ্ঠভাবে বলতে থাকে, ‘অপরাধীদের গুলি করে মারো।’ এ যেন নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া। এ রকম এক রাজনৈতিক পটভূমিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জইর বোলসোনারো চলে আসেন আলোচনার কেন্দ্রে। ২০১৮ সালে তিনি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জনগণ ভেবে নেয়, তারা কঠোর এক প্রেসিডেন্ট পেয়েছে। কিন্তু আসলে তারা কী পেয়েছিল? তারা দেখল, বোলসোনারোর আমলেই আমাজন জঙ্গল উজাড় হচ্ছে, অভিবাসী ও সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে ব্যাপক ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকেই। বাজারকে মুক্ত করে দেওয়ায় ধনিক শ্রেণি নতুন প্রেসিডেন্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে। কিন্তু দেশের মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত মানুষের নিরাপত্তাহীনতা আর যায় না। অথচ অপরাধ দমন আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন বলেই বোলসোনারোকে ভোট দিয়েছিল এই দুই শ্রেণি! উগ্র ডানপন্থীরা যা করে থাকেন, এই প্রেসিডেন্টও সে কাজটি করেছেন। বিচার বিভাগ, গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন। জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। ২০২২ সালের নির্বাচনে এই উগ্র ডানপন্থী প্রেসিডেন্টকে পরাজিত করে লুলা দা সিলভা ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু বোলসোনারোর মাধ্যমে যে উগ্র ডানপন্থার চাষবাস চলেছিল, তার সমর্থকও কম নয়। তাই ব্রাজিলে রাজনৈতিক সুস্থিতি আসা সহজ কথা নয়। কবে আসবে, তা কেউ বলতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলে বিশ্বের অন্য দেশ থেকে নিজের দেশকে আলাদা করতে চেয়েছেন। ২০১৬ সালে প্রথম যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন থেকেই তিনি জাতির মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের কথা বলে মূলত শ্বেতাঙ্গ ধনী মানুষের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন। অভিবাসন-বিরোধিতা করে তিনি শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মন জয় করে নিয়েছেন। নিজেরাই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী, এ কথা এই শ্বেতাঙ্গরা বেমালুম ভুলে যান। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাঁরা অবৈধভাবে অভিবাসী হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প সোচ্চার।
রিপাবলিকান দলের একটা বড় অংশে উগ্র জাতীয়তাবাদ জায়গা করে নিয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও সেটা বাড়ছে। অভিবাসীদের কারণে ‘আমরা’ই চাকরি পাচ্ছি না, এ রকম একটা মনোভাব সত্যিই ব্যাপকভাবে বাড়ছে। এ কথা সত্য, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ঘণ্টায় সর্বনিম্ন বেতন বেঁধে দেওয়া আছে, কিন্তু অবৈধ অভিবাসীরা তার চেয়েও কম মূল্যে কাজ করে দিচ্ছেন বলে নিম্ন আয়ের বৈধ নাগরিকেরা কাজ হারাচ্ছেন। এটা একটা সমস্যা বটে। কিন্তু ভেবে দেখা হচ্ছে না, কী করে এর প্রতিকার করা সম্ভব। কেউ যদি কম টাকায় কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে, তবে সে সুযোগ তো সে নেবেই। কিন্তু এই শ্রমিকের জন্যও সর্বনিম্ন বেতনের ব্যবস্থা করাটাই তো সংগত। অন্য কিছু নয়।
যেসব কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা উগ্র ডানপন্থী ভাবেন, তার মধ্যে একটি হলো, তাঁর ‘আমেরিকা আগে’ নীতি এবং অপরটি অভিবাসী প্রশ্নে তাঁর অবস্থান, বিশেষ করে লাতিনো ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে তাঁর কঠোর অবস্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী প্রচারণা চালানো হলে তাতে তাঁরা প্রভাবিত হতেই পারেন। যদি বলা হয়, এই বিদেশিরা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে এসে এ দেশের চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছেন, নিরাপত্তাব্যবস্থাকে নষ্ট করছেন, তাহলে অনেকেই তাতে প্রভাবিত হন। ফলে একধরনের ঘৃণার রাজনীতি ছড়িয়ে পড়ে দেশে। গণমাধ্যমকে ‘জনগণের শত্রু’ বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কর্তৃত্ববাদী নেতারা দেশে দেশে এমনটাই বলে থাকেন।
বাংলাদেশে উগ্র ডানপন্থা নিয়েও চিন্তিত জনগণ। উগ্র ডানপন্থার বিকাশে এ দেশে ধর্ম একটি বড় ব্যাপার। মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে তোলার ক্ষেত্রেও উগ্র ডানেরা তৎপর। কেউ কেউ তো এমনও বলে থাকেন, ১৯৪৭ সালের পর ২০২৪ এসেছে। তাঁরা ১৯৭১ সালের সবচেয়ে বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধকেই আলোচনায় আনতে চান না।
এ ব্যাপারটি নিয়ে তরুণসমাজকেই ভাবতে হবে। দেশ কোন পথে চলবে, তা নির্ধারণ করবে তরুণেরাই। মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগের বয়স তখন ছিল চল্লিশের ঘরে, যাঁরা সশস্ত্র সংগ্রাম করেছেন, তাঁদের অনেকেই ছিলেন তরুণ-যুবা। সেই তরুণেরা একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন। একটা দেশ চেয়েছিলেন। ২০২৪ সালেও যাঁরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদেরও চোখে ছিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও উগ্র ডানপন্থা যে বিরাট অন্তরায়, সেটা বলতেই হবে। রাজনীতির মাঠে অনেক কথাই বলা যায়, কিন্তু দেশ চালাতে হলে সবার প্রতি সমান ভালোবাসা নিয়েই চলতে হয়, এ কথা ভুলে গেলে উগ্র ডানপন্থা জাতির গলা টিপে ধরতে আসে।
(সমাপ্ত)
আরও পড়ুন:
যেকোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম হয় ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ ধরনের ভাবনার পথ ধরে। ‘আমরা’ আর ‘ওরা’—এভাবে বিভাজন তৈরি করে এগিয়ে যায় ফ্যাসিবাদ। একটি জনগোষ্ঠীকে ‘ওরা’ বানিয়ে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ঘটনা দেশে দেশে বারবার ঘটে এসেছে। অন্যকে কোনো স্থানই দেওয়া হয় না আলোচনায়। কোনো কোনো দেশে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসে সরকার, কিন্তু কিছুদিন পরই বেরিয়ে আসে তার দন্ত-নখর। এরা সোজাসাপটা ‘পপুলিস্ট’ ঘরানার কথা বলে শুরুতে মানুষের মন জয় করে নেয়, তারপর নিজের অভিসন্ধি প্রকাশ করে থাকে।
প্রচলিত রাজনীতির প্রতি জনগণ আস্থা হারায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাটের কারণে। গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হলে জনগণ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু সে আশা যখন তিরোহিত হয়ে যায়, তখন স্বপ্ন দেখা মানুষও নিরাশ হয়ে যায়। বারবার স্বপ্ন দেখে মানুষ, বারবার হতোদ্যম হয়।
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর প্রসঙ্গ এলে ব্রাজিলের চলমান রাজনীতির কথাও কিছুটা বলতে হয়। শাসকশ্রেণির দুর্নীতি ফাঁস হয়ে গেলে জনগণ হতাশ হয়ে পড়েছিল। ২০১৪ সালে এসে জনগণ প্রচলিত রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। এ রকম পরিস্থিতিতে ডানপন্থীরা যখন বলতে থাকে ‘শক্ত হাতের শাসন’ দরকার, তখন সহজেই তা জনপ্রিয়তা পায়। ‘শক্ত হাতের শাসন’ পৃথিবী অনেকবার দেখেছে। হিটলার-মুসোলিনির শাসন ছিল একরকম, স্তালিনের শাসন ছিল আরেক রকম। কিন্তু সে শাসনের মধ্যে শোষণ কতটা ছিল, সেটা নিয়েও গবেষণা হয়েছে।
ব্রাজিলে তখন ভয়াবহ মন্দা। মন্দা মানেই বেকারত্ব, দারিদ্র্য বেড়ে গেছে। আর এ অবস্থায় বেড়েছে অপরাধ। ব্রাজিলবাসী তখন এমন এক শাসক চাইছিল, যিনি শক্ত হাতে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা দমন করতে পারবেন। নিরাপত্তাহীনতায় নাভিশ্বাস উঠছিল ব্রাজিলবাসীর। মাদক কারবারি চক্র বহু কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। আর গ্যাং বা মবের মাধ্যমে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা হচ্ছিল।
এ রকম এক অবস্থায় উগ্র ডানপন্থীরা বলিষ্ঠভাবে বলতে থাকে, ‘অপরাধীদের গুলি করে মারো।’ এ যেন নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া। এ রকম এক রাজনৈতিক পটভূমিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জইর বোলসোনারো চলে আসেন আলোচনার কেন্দ্রে। ২০১৮ সালে তিনি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জনগণ ভেবে নেয়, তারা কঠোর এক প্রেসিডেন্ট পেয়েছে। কিন্তু আসলে তারা কী পেয়েছিল? তারা দেখল, বোলসোনারোর আমলেই আমাজন জঙ্গল উজাড় হচ্ছে, অভিবাসী ও সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে ব্যাপক ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকেই। বাজারকে মুক্ত করে দেওয়ায় ধনিক শ্রেণি নতুন প্রেসিডেন্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে। কিন্তু দেশের মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত মানুষের নিরাপত্তাহীনতা আর যায় না। অথচ অপরাধ দমন আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন বলেই বোলসোনারোকে ভোট দিয়েছিল এই দুই শ্রেণি! উগ্র ডানপন্থীরা যা করে থাকেন, এই প্রেসিডেন্টও সে কাজটি করেছেন। বিচার বিভাগ, গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন। জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। ২০২২ সালের নির্বাচনে এই উগ্র ডানপন্থী প্রেসিডেন্টকে পরাজিত করে লুলা দা সিলভা ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু বোলসোনারোর মাধ্যমে যে উগ্র ডানপন্থার চাষবাস চলেছিল, তার সমর্থকও কম নয়। তাই ব্রাজিলে রাজনৈতিক সুস্থিতি আসা সহজ কথা নয়। কবে আসবে, তা কেউ বলতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলে বিশ্বের অন্য দেশ থেকে নিজের দেশকে আলাদা করতে চেয়েছেন। ২০১৬ সালে প্রথম যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন থেকেই তিনি জাতির মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদের কথা বলে মূলত শ্বেতাঙ্গ ধনী মানুষের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন। অভিবাসন-বিরোধিতা করে তিনি শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মন জয় করে নিয়েছেন। নিজেরাই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী, এ কথা এই শ্বেতাঙ্গরা বেমালুম ভুলে যান। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং এশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাঁরা অবৈধভাবে অভিবাসী হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প সোচ্চার।
রিপাবলিকান দলের একটা বড় অংশে উগ্র জাতীয়তাবাদ জায়গা করে নিয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও সেটা বাড়ছে। অভিবাসীদের কারণে ‘আমরা’ই চাকরি পাচ্ছি না, এ রকম একটা মনোভাব সত্যিই ব্যাপকভাবে বাড়ছে। এ কথা সত্য, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ঘণ্টায় সর্বনিম্ন বেতন বেঁধে দেওয়া আছে, কিন্তু অবৈধ অভিবাসীরা তার চেয়েও কম মূল্যে কাজ করে দিচ্ছেন বলে নিম্ন আয়ের বৈধ নাগরিকেরা কাজ হারাচ্ছেন। এটা একটা সমস্যা বটে। কিন্তু ভেবে দেখা হচ্ছে না, কী করে এর প্রতিকার করা সম্ভব। কেউ যদি কম টাকায় কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে, তবে সে সুযোগ তো সে নেবেই। কিন্তু এই শ্রমিকের জন্যও সর্বনিম্ন বেতনের ব্যবস্থা করাটাই তো সংগত। অন্য কিছু নয়।
যেসব কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা উগ্র ডানপন্থী ভাবেন, তার মধ্যে একটি হলো, তাঁর ‘আমেরিকা আগে’ নীতি এবং অপরটি অভিবাসী প্রশ্নে তাঁর অবস্থান, বিশেষ করে লাতিনো ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে তাঁর কঠোর অবস্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী প্রচারণা চালানো হলে তাতে তাঁরা প্রভাবিত হতেই পারেন। যদি বলা হয়, এই বিদেশিরা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে এসে এ দেশের চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছেন, নিরাপত্তাব্যবস্থাকে নষ্ট করছেন, তাহলে অনেকেই তাতে প্রভাবিত হন। ফলে একধরনের ঘৃণার রাজনীতি ছড়িয়ে পড়ে দেশে। গণমাধ্যমকে ‘জনগণের শত্রু’ বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কর্তৃত্ববাদী নেতারা দেশে দেশে এমনটাই বলে থাকেন।
বাংলাদেশে উগ্র ডানপন্থা নিয়েও চিন্তিত জনগণ। উগ্র ডানপন্থার বিকাশে এ দেশে ধর্ম একটি বড় ব্যাপার। মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে তোলার ক্ষেত্রেও উগ্র ডানেরা তৎপর। কেউ কেউ তো এমনও বলে থাকেন, ১৯৪৭ সালের পর ২০২৪ এসেছে। তাঁরা ১৯৭১ সালের সবচেয়ে বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধকেই আলোচনায় আনতে চান না।
এ ব্যাপারটি নিয়ে তরুণসমাজকেই ভাবতে হবে। দেশ কোন পথে চলবে, তা নির্ধারণ করবে তরুণেরাই। মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগের বয়স তখন ছিল চল্লিশের ঘরে, যাঁরা সশস্ত্র সংগ্রাম করেছেন, তাঁদের অনেকেই ছিলেন তরুণ-যুবা। সেই তরুণেরা একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন। একটা দেশ চেয়েছিলেন। ২০২৪ সালেও যাঁরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদেরও চোখে ছিল স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও উগ্র ডানপন্থা যে বিরাট অন্তরায়, সেটা বলতেই হবে। রাজনীতির মাঠে অনেক কথাই বলা যায়, কিন্তু দেশ চালাতে হলে সবার প্রতি সমান ভালোবাসা নিয়েই চলতে হয়, এ কথা ভুলে গেলে উগ্র ডানপন্থা জাতির গলা টিপে ধরতে আসে।
(সমাপ্ত)
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দল নিষিদ্ধ করার দাবি যেন এক পুনরাবৃত্ত ইতিহাস। যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা প্রায়ই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিষিদ্ধ করার পথ খোঁজে, আর একটি পক্ষ ‘ফাঁকা মাঠে গোল করার মওকা’ মিলবে ভেবে তাতে সমর্থন জোগায়—যেন নিষিদ্ধ করাই সংকট সমাধানের একমাত্র উপায়।
১ ঘণ্টা আগেপারিপার্শ্বিক অবস্থা, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, লোকমুখের প্রচার ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষণ করলে এক বাক্যে উপনীত হওয়া যায় যে নির্বাচন আসন্ন। কিছুটা দ্বিমত ও সন্দেহ প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। তবে নির্বাচন হলে কারা জনপ্রতিনিধি হবেন, তা নিয়ে কথা বলা দরকার।
১ ঘণ্টা আগেআমাদের চিকিৎসাব্যবস্থায় বড় ক্ষত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি রোগ। দেশের প্রায় ৫৩ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন সদস্য কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত। ‘পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার’ (পিপিআরসি)-এর সম্প্রতি এক গবেষণায় এ ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।
১ ঘণ্টা আগেআগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যতই জোর দেওয়া হচ্ছে, চারপাশে ততই বইছে আশঙ্কার গুমোট হাওয়া। আশঙ্কা দানা বাঁধছে সরকারেরই কিছু কথায়। সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জোর দেওয়ার পাশাপাশি বলা হচ্ছে নির্বাচন ভন্ডুল করার ষড়যন্
১ দিন আগে