ভজন সরকার
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শেষ কোথায়? আদৌ শেষ আছে কি? মনে হয় না এর শেষ আছে। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের কাজই হলো বিভেদ সৃষ্টি করে রাখা, আধিপত্য সৃষ্টি করে রাখা; মোদ্দাকথায় মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবধান সৃষ্টি করে রাখা। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা ‘আগন্তুক’-এর মনমোহন মিত্রের কথায়, ‘সব প্রচলিত ধর্ম মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করবেই’। ফলে, এক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দাঙ্গা-বিরোধ লেগে থাকবেই।
এমনিতেই প্রচলিত ধর্মের সঙ্গে ধর্মের বিরোধ, তার ওপর বিষফোঁড়ার মতো যুক্ত হয়েছে রাজনীতি এবং ভোটসর্বস্ব তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাজনীতি, যেখানে ‘অধিকাংশ’ই সব। তাই যে যার মতো ‘অধিকাংশ’কে নিজের পক্ষে নেওয়ার জন্য মরিয়া।
একই কারণে আওয়ামী লিগ হেফাজতকে তোয়াজ করে, বিএনপি করে জামায়াতকে। ওপারে মমতা বন্দোপাধ্যায় ভুল উচ্চারণে সুরা যেমন পাঠ করেন, তেমনি করেন ভুলভাল মন্ত্র পাঠ। বাম-কংগ্রেস জোট করে ধর্মগুরু পীরজাদার সঙ্গ আঁতাত। আর মোদীজি তো ধর্মের ঘোড়ায় সওয়ার হয়েই ক্ষমতায়।
সব ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্য গণতন্ত্রের তথাকথিত ‘অধিকাংশ’কে জোরে-মেরে ভয় দেখিয়ে নিজেদের দখলে নেওয়া। তর্কের খাতিরে বলতে পারেন, উন্নত দেশে যেখানে তথাকথিত নির্ভেজাল গণতন্ত্র আছে, সেখানেও কি এমন হয়? অবশ্যই হয়। ‘ওরা’ আমাদের উপমহাদেশের ‘আমরা’র চেয়ে একটু বেশি দিন এসব করে এসেছে, তাই ‘ওরা’ ধর্মের বদলে অন্যভাবে ‘অধিকাংশ’কে বশে রাখে।
যা হোক সে অন্য আলোচনা। এই যে প্রচলিত ধর্মের নামে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ—এসব থেকে মুক্তির উপায় কী? মুক্তির উপায় অনেক, কিন্তু আপাতত কিছুই কার্যকর হবে না, হচ্ছে না। কারণ, রাজনীতির ভেতর ‘পলিটিকস’ ঢুকে যাওয়ার মতো হয়েছে প্রচলিত ধর্মগুলোও। তবু কিছু উপায় তো অনেকে বলেই গেছেন যেমন—
১. প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসে বিজ্ঞান এবং যুক্তির ওপর ভিত্তি করে মানুষের অধিকারকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এই যে প্রায় চার হাজারেরও বেশি প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসী পাঁচ থেকে ছয় শত কোটি মানুষ, তাদের সবাইকে প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাস থেকে বাইরে আনা কি সম্ভব? যদিও ইউরোপের অনেক দেশেই অধিকাংশ মানুষ প্রচলিত ধর্ বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসেছে। তবু এই বিশালসংখ্যক মানুষকে সহজেই ধর্মবিশ্বাসের বাইরে আনা দুরূহ কাজই বটে।
২. ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করা। আধুনিক সভ্যসমাজ এ পথই অনুসরণ করছে। যদিও এ পথটিরও কখনো কখনো অপব্যবহার হয়েছে অনেক দেশে।
৩. ধর্মকে একান্তই ব্যক্তিগত বিশ্বাসের স্তরে রেখে অন্য ধর্মবিশ্বাসীদের সঙ্গে সহাবস্থান। কথাটি বলা যত সহজ, ব্যবহার খুব জটিল। কারণ, প্রচলিত ধর্ম এমন এক জিনিস, যেখানে সম্প্রীতি এবং সহাবস্থান শব্দগুলোই সোনার পাথর বাটি। প্রত্যেক প্রচলিত ধর্ম এবং ধর্মবিশ্বাসীরা মনেই করে, তাদের ধর্ম এবং তাদের বিশ্বাসই শ্রেষ্ঠ। আপনি যদি নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে প্রতিদিন বলেন—আমিই শ্রেষ্ঠ, আমিই এই পাড়ায় খাঁটি এবং সত্য। তবে আপনার অবস্থান কি ওই পাড়ায় বা মহল্লায় সম্প্রীতির হবে?
৪. বিশ্বের প্রচলিত ৪ হাজারের বেশি ধর্মকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে গায়ের জোরে একটি প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের ছায়াতলে টেনে আনা। এ ধারণা শুধু অবাস্তবই নয়, বদ্ধ উন্মাদ বা পাগলের প্রলাপ মাত্র। তর্কের খাতিরে অন্য সব ধর্মবিশ্বাসীদের যেকোনো প্রকারে নিঃশেষ করতে পারলেও কি এক ধর্মবিশ্বাসীরা শান্তিতে সহাবস্থান করতে পারবে? এক কথায় বলা যায়, পারবে না। কারণ, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে ধর্ম ছাড়াও অনেক ইহজাগতিক বিষয় আছে, যার ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকবেই। তাহলে মানুষ কীভাবে বাঁচবে? কোন উপায়ে সমাজে, রাষ্ট্রে কিংবা এ পৃথিবীতে বসবাস করবে? সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার ধারণাও যেমন নতুন নয়, তেমনি নতুন নয় আধুনিক সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার নির্দেশিকাও। আধুনিক সমাজবিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান সে নির্দেশিকায় ধর্মকে ব্রাত্য বা বাতিল ঘোষণা করেছে কিংবা প্রস্তাব করেছে একান্তই ব্যক্তিগত স্তরে সীমাবদ্ধ রাখতে। কিন্তু ওই যে বলছিলাম, রাজনীতির ভেতর পলিটিকস ঢুকে গেছে। আধুনিকতার মধ্যে, সভ্যতার মধ্যে তেমনি ঢুকে গেছে বিভেদ সৃষ্টিকারী ‘প্রচলিত ধর্ম’। মানুষের মুক্তি ঘটুক এতসব বিভাজন থেকে—এ প্রত্যাশাই করি। কিন্তু প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ব্যবধান কি ঘুচবে সহজেই?
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শেষ কোথায়? আদৌ শেষ আছে কি? মনে হয় না এর শেষ আছে। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের কাজই হলো বিভেদ সৃষ্টি করে রাখা, আধিপত্য সৃষ্টি করে রাখা; মোদ্দাকথায় মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবধান সৃষ্টি করে রাখা। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা ‘আগন্তুক’-এর মনমোহন মিত্রের কথায়, ‘সব প্রচলিত ধর্ম মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করবেই’। ফলে, এক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দাঙ্গা-বিরোধ লেগে থাকবেই।
এমনিতেই প্রচলিত ধর্মের সঙ্গে ধর্মের বিরোধ, তার ওপর বিষফোঁড়ার মতো যুক্ত হয়েছে রাজনীতি এবং ভোটসর্বস্ব তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাজনীতি, যেখানে ‘অধিকাংশ’ই সব। তাই যে যার মতো ‘অধিকাংশ’কে নিজের পক্ষে নেওয়ার জন্য মরিয়া।
একই কারণে আওয়ামী লিগ হেফাজতকে তোয়াজ করে, বিএনপি করে জামায়াতকে। ওপারে মমতা বন্দোপাধ্যায় ভুল উচ্চারণে সুরা যেমন পাঠ করেন, তেমনি করেন ভুলভাল মন্ত্র পাঠ। বাম-কংগ্রেস জোট করে ধর্মগুরু পীরজাদার সঙ্গ আঁতাত। আর মোদীজি তো ধর্মের ঘোড়ায় সওয়ার হয়েই ক্ষমতায়।
সব ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্য গণতন্ত্রের তথাকথিত ‘অধিকাংশ’কে জোরে-মেরে ভয় দেখিয়ে নিজেদের দখলে নেওয়া। তর্কের খাতিরে বলতে পারেন, উন্নত দেশে যেখানে তথাকথিত নির্ভেজাল গণতন্ত্র আছে, সেখানেও কি এমন হয়? অবশ্যই হয়। ‘ওরা’ আমাদের উপমহাদেশের ‘আমরা’র চেয়ে একটু বেশি দিন এসব করে এসেছে, তাই ‘ওরা’ ধর্মের বদলে অন্যভাবে ‘অধিকাংশ’কে বশে রাখে।
যা হোক সে অন্য আলোচনা। এই যে প্রচলিত ধর্মের নামে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ—এসব থেকে মুক্তির উপায় কী? মুক্তির উপায় অনেক, কিন্তু আপাতত কিছুই কার্যকর হবে না, হচ্ছে না। কারণ, রাজনীতির ভেতর ‘পলিটিকস’ ঢুকে যাওয়ার মতো হয়েছে প্রচলিত ধর্মগুলোও। তবু কিছু উপায় তো অনেকে বলেই গেছেন যেমন—
১. প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসে বিজ্ঞান এবং যুক্তির ওপর ভিত্তি করে মানুষের অধিকারকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এই যে প্রায় চার হাজারেরও বেশি প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসী পাঁচ থেকে ছয় শত কোটি মানুষ, তাদের সবাইকে প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাস থেকে বাইরে আনা কি সম্ভব? যদিও ইউরোপের অনেক দেশেই অধিকাংশ মানুষ প্রচলিত ধর্ বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসেছে। তবু এই বিশালসংখ্যক মানুষকে সহজেই ধর্মবিশ্বাসের বাইরে আনা দুরূহ কাজই বটে।
২. ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করা। আধুনিক সভ্যসমাজ এ পথই অনুসরণ করছে। যদিও এ পথটিরও কখনো কখনো অপব্যবহার হয়েছে অনেক দেশে।
৩. ধর্মকে একান্তই ব্যক্তিগত বিশ্বাসের স্তরে রেখে অন্য ধর্মবিশ্বাসীদের সঙ্গে সহাবস্থান। কথাটি বলা যত সহজ, ব্যবহার খুব জটিল। কারণ, প্রচলিত ধর্ম এমন এক জিনিস, যেখানে সম্প্রীতি এবং সহাবস্থান শব্দগুলোই সোনার পাথর বাটি। প্রত্যেক প্রচলিত ধর্ম এবং ধর্মবিশ্বাসীরা মনেই করে, তাদের ধর্ম এবং তাদের বিশ্বাসই শ্রেষ্ঠ। আপনি যদি নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে প্রতিদিন বলেন—আমিই শ্রেষ্ঠ, আমিই এই পাড়ায় খাঁটি এবং সত্য। তবে আপনার অবস্থান কি ওই পাড়ায় বা মহল্লায় সম্প্রীতির হবে?
৪. বিশ্বের প্রচলিত ৪ হাজারের বেশি ধর্মকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে গায়ের জোরে একটি প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের ছায়াতলে টেনে আনা। এ ধারণা শুধু অবাস্তবই নয়, বদ্ধ উন্মাদ বা পাগলের প্রলাপ মাত্র। তর্কের খাতিরে অন্য সব ধর্মবিশ্বাসীদের যেকোনো প্রকারে নিঃশেষ করতে পারলেও কি এক ধর্মবিশ্বাসীরা শান্তিতে সহাবস্থান করতে পারবে? এক কথায় বলা যায়, পারবে না। কারণ, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে ধর্ম ছাড়াও অনেক ইহজাগতিক বিষয় আছে, যার ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকবেই। তাহলে মানুষ কীভাবে বাঁচবে? কোন উপায়ে সমাজে, রাষ্ট্রে কিংবা এ পৃথিবীতে বসবাস করবে? সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার ধারণাও যেমন নতুন নয়, তেমনি নতুন নয় আধুনিক সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার নির্দেশিকাও। আধুনিক সমাজবিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান সে নির্দেশিকায় ধর্মকে ব্রাত্য বা বাতিল ঘোষণা করেছে কিংবা প্রস্তাব করেছে একান্তই ব্যক্তিগত স্তরে সীমাবদ্ধ রাখতে। কিন্তু ওই যে বলছিলাম, রাজনীতির ভেতর পলিটিকস ঢুকে গেছে। আধুনিকতার মধ্যে, সভ্যতার মধ্যে তেমনি ঢুকে গেছে বিভেদ সৃষ্টিকারী ‘প্রচলিত ধর্ম’। মানুষের মুক্তি ঘটুক এতসব বিভাজন থেকে—এ প্রত্যাশাই করি। কিন্তু প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ব্যবধান কি ঘুচবে সহজেই?
গত কয়েক দিনে তিনজন জামায়াত নেতার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এই একটা রাজনৈতিক দল, যাদের নেতাদের মধ্যে পরিমিতিবোধ অসাধারণ। প্রায়ই তাঁরা জানেন, কোথায় থামতে হয়। হাসতে হলে ঠোঁট দুটো কতটুকু প্রসারিত করতে হবে, দাঁত কটা প্রকাশিত হতে পারবে—সে হিসাবও সম্ভবত দল তাদের শিখিয়ে দেয়।
২ ঘণ্টা আগেইন্দোনেশিয়া আজ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত। প্রায় ২৮ কোটি মানুষের এই বহুজাতিক ও বহু সাংস্কৃতিক দেশটি দীর্ঘ সামরিক শাসন, কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি ও দুর্নীতির গভীর সংকট অতিক্রম করে গণতান্ত্রিক ধারায় প্রবেশ করেছে।
২ ঘণ্টা আগেইদানীং; কেবল ইদানীং কেন, অনেক আগে থেকেই আমার মনে একটি প্রশ্ন বারবার উঁকি দিয়ে ওঠে যে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কিংবা সমাজে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব কী, তা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারি? জানা আছে কিংবা জানা থেকে থাকলে মনে রাখতে পেরেছি এক একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠা অথবা গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট কী?
২ ঘণ্টা আগেরাজনীতির মাঠটাকে যাঁরা অশ্লীল বাক্যবাণের চারণক্ষেত্র বানিয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন গ্রেপ্তার হয়েছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে। উত্তরা থেকে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কাহিনি সেই আগের মতোই।
২ ঘণ্টা আগে