উপসম্পাদকীয়
এনজিওর নাট্যকলা ও ডোনার ড্রামা
‘আপনার এনজিও কী করে?’
‘আমরা “জলবায়ু সচেতনতা” নিয়ে কাজ করি।’
‘অবশ্যই! নিজে এসি রুমে বসে চা খেয়ে বোঝাই, কীভাবে গরিবকে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে হয়!’
‘আমরা প্রচারণা চালাই—“পৃথিবী বাঁচাও”, আর তাতে ৫০ লাখ টাকার প্রজেক্ট ফান্ড পাই।’
‘তবে এইটা ঠিক, আপনারা দুস্থদের জন্য অনেক ভাবেন।’
‘হ, ভাবি। তবে মাঝে মাঝে ভাবতে ভাবতেই গাড়ির কিস্তি দিতে হয়, বাচ্চার ইংলিশ মিডিয়াম ফি দিতে হয়। এভাবেই তো দেশসেবা।’
‘ডোনাররা কী চায়?’
‘ওরা শুধু রিপোর্ট চায়, ছবি চায়, ক্যাপশন চায়—বাস্তব চায় না। আমরাও দিই—কৃত্রিম চাষের ছবি, বানানো হাসির মুখ, বাচ্চাদের হাতে রংতুলির বদলে স্ট্যাম্প প্যাড।’
‘বাহ্! তাহলে এনজিও না, আসলে আপনি তো একেকজন সাংস্কৃতিক কুশলী!’
আমলা যখন অ্যাক্টর
‘স্যার, আপনে কি সিনেমার লোক? নাকি সোজা সচিবালয় থিকা আসছেন?’
‘আমার হাঁটার ভঙ্গি দেখেও বুঝছেন না? আমি আমলা। মুখে কম কথা, গলায় হালকা কাশি, মনে অব্যক্ত আদেশ!’
‘আচ্ছা, আপনার অফিসে একটা দরখাস্ত দিয়েছিলাম, মনে আছে?’
‘দরখাস্ত তো নদীর মতো...বয়ে যায়, এসে পৌঁছায় না।’
‘তাই নাকি স্যার? অথচ নাট্যকলায় আপনি অস্কার পেতে পারেন—মানুষকে “আজ নয়, কাল দেখা করবেন” বলার অভিনয়টা এত বাস্তব যে মনে হয় ক্যানভাসে জলরঙ মিশে গেছে!’
‘আমার অভিনয়টাই প্রকৃত প্রশাসন। এক ঘণ্টা ফাইল খোঁজা, তিনবার “স্যার ব্যস্ত”, দুইবার “আপনার কাগজ কোথায়?”...তারপর চা।’
‘স্যার, তাহলে বলি—আপনারা হচ্ছেন রাষ্ট্রের লাইভ থিয়েটার, যেখানে টিকিট ফ্রি, তবু কেউ ঢুকতে ভয় পায়।’
পদ্মা সেতুর প্রেমপত্র
‘তুমি জানো, আমি পদ্মা সেতু। কেউ বলে স্বপ্ন, কেউ বলে ষড়যন্ত্র, কেউ বলে কমিশনের ফাঁদ!’
‘তবু তুমি দাঁড়িয়ে আছো, মাথা উঁচু করে।’
‘হ্যাঁ, দাঁড়িয়ে আছি—শত শত কোটি টাকার বাজেট আর কোটি মানুষের বিতর্ক মাথায় নিয়ে। যেমন প্রেমিক দাঁড়িয়ে থাকে প্রেমিকার বাপের সামনে।’
‘তোমার শরীরে আছে কংক্রিটের চেয়েও শক্ত ভালোবাসা।’
‘আর আছে অনলাইন “টোল” প্রেম। কেউ এলই না, তবু ফেসবুকে ছবি দেয়—“আজ সেতু দেখলাম, মন ভালো হয়ে গেল।” যেন আমি কোনো মনস্তত্ত্ববিদ!’
‘তোমাকে সবাই ভালোবাসে, কিন্তু কেউ কষ্টে টাকা দিতে চায় না।’
‘এটাই তো বাঙালির প্রেম—ছবি তোলার উত্তেজনা আছে, কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার সাহস নাই!’
চাকরির বাজার ও সিভির কান্না
‘আমি একটা সিভি। বয়স ৫ বছর। আজ পর্যন্ত ৩২৮টা জব অ্যাপ্লাই করেছি। কেউ খুলে দেখে না।’
‘তুই কি সরকারি চাকরি চাস?’
‘চাইছিলাম ভাই, কিন্তু ওখানে তো চাকরি নাই, আছে শুধু কোচিং, প্রশ্নপত্র আর গার্ডিয়ানের কান্না।’
‘তাইলে বেসরকারি?’
‘ওখানে বলে “ফ্রেশার নেব না”। কিন্তু কোথায় যে ফ্রেশ হব, কেউ বলে না।’
‘তোকে দেখে আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা মনে পড়ে—অনেক মন খারাপ নিয়ে লিখি, কেউ দেখে না, শুধু কোম্পানির এইচআর স্কিপ করে।’
‘ভাই, আমি একটা সিভি—অথচ নিজেই এখন কাজ খুঁজি, আশা দেই না।’
ছাত্ররাজনীতির সাইলেন্সার
‘ভাই, শুনছি আপনি একসময় ভিপি ছিলেন?’
‘হ, তখন ক্যাম্পাস ছিল আমাদের হাতের মোয়া। এখন শুধু ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে ছড়ায়, ক্যাম্পাসে আর কেউ স্লোগান দেয় না!’
‘স্লোগানের জায়গায় এখন ইনস্টাগ্রামের ক্যাপশন: “পলিটিকস ইজ লাভ”।’
‘ভাই, আগে একটা দেয়াললিখনেই তিনটা প্রেম হতো। এখন দেয়ালই নেই, শুধু ক্লাব হাউজে হাই-হ্যালো।’
‘তাইলে আপনি কী করেন এখন?’
‘আমি এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। কই? ফেসবুকে। প্রতিদিন দুইটা পোস্ট দিই—একটা রিভিউ, আরেকটা মিম।’
‘ভিপির শেষ দশা যখন জিফ (GIF) পোস্ট, তখন বুঝি রাজনীতির শেষ দশাও কাছে...’
এনজিওর নাট্যকলা ও ডোনার ড্রামা
‘আপনার এনজিও কী করে?’
‘আমরা “জলবায়ু সচেতনতা” নিয়ে কাজ করি।’
‘অবশ্যই! নিজে এসি রুমে বসে চা খেয়ে বোঝাই, কীভাবে গরিবকে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে হয়!’
‘আমরা প্রচারণা চালাই—“পৃথিবী বাঁচাও”, আর তাতে ৫০ লাখ টাকার প্রজেক্ট ফান্ড পাই।’
‘তবে এইটা ঠিক, আপনারা দুস্থদের জন্য অনেক ভাবেন।’
‘হ, ভাবি। তবে মাঝে মাঝে ভাবতে ভাবতেই গাড়ির কিস্তি দিতে হয়, বাচ্চার ইংলিশ মিডিয়াম ফি দিতে হয়। এভাবেই তো দেশসেবা।’
‘ডোনাররা কী চায়?’
‘ওরা শুধু রিপোর্ট চায়, ছবি চায়, ক্যাপশন চায়—বাস্তব চায় না। আমরাও দিই—কৃত্রিম চাষের ছবি, বানানো হাসির মুখ, বাচ্চাদের হাতে রংতুলির বদলে স্ট্যাম্প প্যাড।’
‘বাহ্! তাহলে এনজিও না, আসলে আপনি তো একেকজন সাংস্কৃতিক কুশলী!’
আমলা যখন অ্যাক্টর
‘স্যার, আপনে কি সিনেমার লোক? নাকি সোজা সচিবালয় থিকা আসছেন?’
‘আমার হাঁটার ভঙ্গি দেখেও বুঝছেন না? আমি আমলা। মুখে কম কথা, গলায় হালকা কাশি, মনে অব্যক্ত আদেশ!’
‘আচ্ছা, আপনার অফিসে একটা দরখাস্ত দিয়েছিলাম, মনে আছে?’
‘দরখাস্ত তো নদীর মতো...বয়ে যায়, এসে পৌঁছায় না।’
‘তাই নাকি স্যার? অথচ নাট্যকলায় আপনি অস্কার পেতে পারেন—মানুষকে “আজ নয়, কাল দেখা করবেন” বলার অভিনয়টা এত বাস্তব যে মনে হয় ক্যানভাসে জলরঙ মিশে গেছে!’
‘আমার অভিনয়টাই প্রকৃত প্রশাসন। এক ঘণ্টা ফাইল খোঁজা, তিনবার “স্যার ব্যস্ত”, দুইবার “আপনার কাগজ কোথায়?”...তারপর চা।’
‘স্যার, তাহলে বলি—আপনারা হচ্ছেন রাষ্ট্রের লাইভ থিয়েটার, যেখানে টিকিট ফ্রি, তবু কেউ ঢুকতে ভয় পায়।’
পদ্মা সেতুর প্রেমপত্র
‘তুমি জানো, আমি পদ্মা সেতু। কেউ বলে স্বপ্ন, কেউ বলে ষড়যন্ত্র, কেউ বলে কমিশনের ফাঁদ!’
‘তবু তুমি দাঁড়িয়ে আছো, মাথা উঁচু করে।’
‘হ্যাঁ, দাঁড়িয়ে আছি—শত শত কোটি টাকার বাজেট আর কোটি মানুষের বিতর্ক মাথায় নিয়ে। যেমন প্রেমিক দাঁড়িয়ে থাকে প্রেমিকার বাপের সামনে।’
‘তোমার শরীরে আছে কংক্রিটের চেয়েও শক্ত ভালোবাসা।’
‘আর আছে অনলাইন “টোল” প্রেম। কেউ এলই না, তবু ফেসবুকে ছবি দেয়—“আজ সেতু দেখলাম, মন ভালো হয়ে গেল।” যেন আমি কোনো মনস্তত্ত্ববিদ!’
‘তোমাকে সবাই ভালোবাসে, কিন্তু কেউ কষ্টে টাকা দিতে চায় না।’
‘এটাই তো বাঙালির প্রেম—ছবি তোলার উত্তেজনা আছে, কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার সাহস নাই!’
চাকরির বাজার ও সিভির কান্না
‘আমি একটা সিভি। বয়স ৫ বছর। আজ পর্যন্ত ৩২৮টা জব অ্যাপ্লাই করেছি। কেউ খুলে দেখে না।’
‘তুই কি সরকারি চাকরি চাস?’
‘চাইছিলাম ভাই, কিন্তু ওখানে তো চাকরি নাই, আছে শুধু কোচিং, প্রশ্নপত্র আর গার্ডিয়ানের কান্না।’
‘তাইলে বেসরকারি?’
‘ওখানে বলে “ফ্রেশার নেব না”। কিন্তু কোথায় যে ফ্রেশ হব, কেউ বলে না।’
‘তোকে দেখে আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা মনে পড়ে—অনেক মন খারাপ নিয়ে লিখি, কেউ দেখে না, শুধু কোম্পানির এইচআর স্কিপ করে।’
‘ভাই, আমি একটা সিভি—অথচ নিজেই এখন কাজ খুঁজি, আশা দেই না।’
ছাত্ররাজনীতির সাইলেন্সার
‘ভাই, শুনছি আপনি একসময় ভিপি ছিলেন?’
‘হ, তখন ক্যাম্পাস ছিল আমাদের হাতের মোয়া। এখন শুধু ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে ছড়ায়, ক্যাম্পাসে আর কেউ স্লোগান দেয় না!’
‘স্লোগানের জায়গায় এখন ইনস্টাগ্রামের ক্যাপশন: “পলিটিকস ইজ লাভ”।’
‘ভাই, আগে একটা দেয়াললিখনেই তিনটা প্রেম হতো। এখন দেয়ালই নেই, শুধু ক্লাব হাউজে হাই-হ্যালো।’
‘তাইলে আপনি কী করেন এখন?’
‘আমি এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। কই? ফেসবুকে। প্রতিদিন দুইটা পোস্ট দিই—একটা রিভিউ, আরেকটা মিম।’
‘ভিপির শেষ দশা যখন জিফ (GIF) পোস্ট, তখন বুঝি রাজনীতির শেষ দশাও কাছে...’
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে দেশে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তখন সাধারণ মানুষের মনে একধরনের ইতিবাচক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল।
১১ ঘণ্টা আগেবর্ষাকাল এলেই যেন ঢাকায় জলাবদ্ধতা ভর করে বসে। জলাবদ্ধতা যখন এই শহরের ঘাড়ে চেপে বসে, তখন এই নগরের মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আজ এই শহরের এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না যদি তারা অপরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে না ঝুঁকত, যদি নদী কিংবা খালের স্থান দখল না করে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা করত।
১১ ঘণ্টা আগেটাঙ্গাইলের সখীপুর-কচুয়া-আড়াইপাড়া সড়কের যে করুণ অবস্থা, তা আসলে আমাদের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—যেখানে প্রতিদিন স্কুলশিক্ষার্থী, রোগী, কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক ও হাজারো সাধারণ মানুষ চলাচল করে।
১১ ঘণ্টা আগেজুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেল। ওই অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। মূলত তারা ফ্যাসিবাদী সরকারব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। মূলত বাংলাদেশের মূল সমস্যা সেটাই যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি
১ দিন আগে