অনামিকা বড়ুয়া
বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে বুদ্ধপূর্ণিমার তাৎপর্য অত্যধিক। বৈশাখী পূর্ণিমাকে বুদ্ধপূর্ণিমা বলা হয়। মহাকারুণিক তথাগত গৌতম বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বৈশাখী পূর্ণিমা দিনে হয়েছিল যথা: ১. সিদ্ধার্থের জন্ম, ২. বুদ্ধত্বলাভ এবং ৩. মহানির্বাণ। তাই বৌদ্ধদের কাছে এ দিনটি ত্রিস্মৃতিবিজড়িত বুদ্ধপূর্ণিমা নামেও খ্যাত। বুদ্ধপূর্ণিমায় বৌদ্ধ নর-নারী সবাই দান-ধর্ম, পুণ্যকর্ম, কুশল বিনিময়ের মাধ্যম অতিবাহিত করেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বৌদ্ধবিহারে যান, পূজা-বন্দনা করেন, বাতি-ধূপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন, শীল গ্রহণ করে আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য সংকল্প করেন, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছ থেকে ধর্মদেশনা শ্রবণ করেন এবং ভাবনা অনুশীলন করেন। পবিত্র চেতনাকে ধারণ করে তাঁরা দিনটি উদ্যাপন করেন এবং গৌতম বুদ্ধের আদর্শ জীবনের স্মৃতিচারণা করেন।
একসময় কপিলাবস্তু নগরে সাত দিন ধরে চলছিল আষাঢ়ী পূর্ণিমা উৎসব। সপ্তম দিবসে অর্থাৎ পূর্ণিমার দিনে রানি মহামায়া দানোৎসব সম্পন্ন করেন ও সারা দিন উপোসব্রত পালন করেন। দিনশেষে উত্তম আহার গ্রহণ করে তিনি শয়নকক্ষে প্রবেশ করেন এবং সোনার পালঙ্কে শুয়ে পড়েন।
শেষ রাত্রে তিনি যখন গভীর নিদ্রামগ্ন, তখন এক বিস্ময়কর স্বপ্ন দেখেন—চার দিকপাল দেবতা এসে রানিকে পালঙ্কসহ তুলে নিয়ে হিমালয়ের মনোহর পর্বতে এক মনোরম হ্রদের তীরে একটি বিরাট শালবৃক্ষের নিচে এনে রাখলেন। তখন চারদিক পূর্ণিমার চন্দ্রালোকে উদ্ভাসিত। স্বর্গের দেবীরা এসে তাঁকে সরোবরের স্পটিক-স্বচ্ছ জলে স্নান করিয়ে স্বর্গীয় বস্ত্র পরিধান করাচ্ছেন।
রাত্রি অবসানে রানি রাজাকে স্বপ্নের বৃত্তান্ত জানালেন। শুনে রাজা চিন্তিত হলেন। মন্ত্রীদের পরামর্শে রাজ-জ্যোতিষীদের ডেকে রানির স্বপ্নের অর্থ জানতে চাইলেন। তাঁরা জানালেন, রাজেন্দ্রাণী মায়া দেবীর গর্ভে এক মহাপুরুষ জন্ম নেবেন। যদি সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হন, তবে তিনি হবেন এক জগৎপূজ্য মহাসন্ন্যাসী। আর যদি সংসারী হয়ে রাজত্ব করেন, তাহলে হবেন চক্রবর্তী রাজা।
সন্তানসম্ভবা মায়া দেবীর একদিন ইচ্ছা হলো পিতৃগৃহে যাওয়ার। নির্দিষ্ট দিনে দাস-দাসী পরিবৃতা হয়ে সুবর্ণ রথে পিত্রালয়ের উদ্দেশে রওনা হলেন। যাত্রাপথে লুম্বিনীর মনোরম শাল উদ্যানে বিশ্রাম নিতে নেমে এলেন রথ থেকে। এমন সময় তাঁর দক্ষিণ কুক্ষি ভেদ করে, জগৎ আলোকিত করে, ভূমিষ্ঠ হলেন ভাবী বুদ্ধ রাজকুমার সিদ্ধার্থ। কথিত আছে, ভূমিষ্ঠ হয়ে তিনি সপ্তপদ উত্তর দিকে অগ্রসর হন এবং প্রতি পদক্ষেপে তাঁর পায়ের নিচে একটি করে পদ্ম প্রস্ফুটিত হয়। সেদিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমার পুণ্যময় তিথি।
রানির পিতৃগৃহে আর যাওয়া হলো না। সদ্যোজাত সন্তানকে বক্ষে ধারণ করে রাজধানীতে ফিরে এলেন। বহু প্রতীক্ষার শেষে মহামায়ার কোলে এক দেবশিশুর আগমন ঘটেছে, এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে দেরি হলো না। সারা রাজ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। নগর ও রাজপ্রাসাদ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হলো। দরিদ্রের জন্য রাজকোষ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো। আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে সদ্যোজাত শিশুর নামকরণ করা হলো। সবার মনোরথ সিদ্ধ হয়েছে বলে রাজা শুদ্ধোধন পুত্রের নাম রাখলেন সর্ব্বার্থসিদ্ধ বা সিদ্ধার্থ।
কুমারের জন্মের সাত দিন পর রাজপ্রাসাদে শোকের ছায়া নেমে এল। মায়া দেবী মৃত্যুবরণ করলেন। জন্মদাত্রী মায়ের মৃত্যুর পর বিমাতা মহাপ্রজাপতি গৌতমী সিদ্ধার্থের লালনপালনের ভার গ্রহণ করলেন। তাঁর স্নেহে-যত্নে সিদ্ধার্থ ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলেন। গৌতমী লালনপালন করেছিলেন বলে তাঁর অপর নাম হয় গৌতম। সিদ্ধার্থ গৌতম যৌবনে পদার্পণ করলে সুন্দরী রমণী গোপা দেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরই মধ্যে সিদ্ধার্থ গৌতমের বৈরাগ্য চেতনা প্রবল হতে থাকে, সংসারের প্রতি বিরাগ এবং অস্থিরতা দেখতে পান। তখন তাঁর মন শান্ত করার জন্য রাজা শুদ্ধোধন রাজকীয়ভাবে নগর ভ্রমণের ব্যবস্থা করেন।
নগর ভ্রমণে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন এক জরাগ্রস্ত ব্যক্তি, ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি, মৃত ব্যক্তি এবং এক সন্ন্যাসীকে। উক্ত ঘটনা তাঁকে দারুণভাবে ব্যথিত করে। পরদিন তিনি সংসারের মায়া ত্যাগ করার জন্য সংকল্প করেন। এরই মধ্যে সংবাদ পেলেন তাঁদের সংসারে কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেছে এক শিশুপুত্র। তার নাম রাখলেন রাহুল। সিদ্ধার্থ গৌতমের মনে উদয় হলো রাহুল জন্মেছে, আমার বন্ধন জন্মেছে। মুক্তির সন্ধানে বের হবেন, সংসার ত্যাগ করবেন—এ সংকল্পে অটুট থেকে সদ্যোজাত সন্তান রাহুল, মাতা গোপা দেবীকে একপলক দেখে গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সারথি ছন্দককে নিয়ে চলে গেলেন নৈরঞ্জনা নদীর তীরে। গ্রহণ করলেন সন্ন্যাসব্রত। রাজপুত্র দিনযাপন করতে লাগলেন বন-জঙ্গলে, ঋষিদের আশ্রমে। এভাবে সত্যের সন্ধানে কঠিন থেকে কঠিন ব্রত পালন করে যাচ্ছেন, কিন্তু সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছেন না। এভাবে কাটিয়ে দিলেন দীর্ঘ ছয়টি বছর।
অবশেষে কঠিন ব্রত পালনে মুক্তি লাভ সম্ভব নয়—এ বিষয় অবগত হয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে ব্রতী হলেন। আহার-বিহারের প্রতি মনোযোগী হলেন। বটবৃক্ষতলে বসে ভাবতে ভাবতেই সুজাতা নাম্নী এক নারী বৃক্ষদেবতাকে পূজার মানসে পায়সান্ন দান করতে এলেন। তাঁর শ্রদ্ধা প্রদত্ত পায়সান্ন সিদ্ধার্থ গৌতম গ্রহণ করলেন এবং তাঁকে আশীর্বাদ করলেন।
সিদ্ধার্থ গৌতম মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে ব্রত করার সময় পূর্ণিমা দিবসেই তাঁর সংকল্প পূর্ণ করলেন। সব তৃষ্ণা, অবিদ্যা ধ্বংস করে নতুন এক আধ্যাত্মিক জগতের সন্ধান লাভ করে ‘নির্বাণতত্ত্ব’ আবিষ্কার করে জগতে সম্যক সম্বুদ্ধ হিসেবে আবির্ভূত হলেন। তখন থেকেই সিদ্ধার্থ গৌতম সম্যক সম্বুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেন। জীবজগতের সব প্রাণীর দুঃখমুক্তির জন্য তাঁর নব আবিষ্কৃত ধর্মতত্ত্ব দীর্ঘ ৪৫ বছর পর্যন্ত প্রচার করলেন। এরপর গৌতম বুদ্ধ ৮০ বছর বয়সে কুশীনারায় ঘোড়াশাল বৃক্ষতলে উপস্থিত হয়ে মহাপরিনির্বাণ লাভ করলেন, সেদিন ছিল পবিত্র বৈশাখী পূর্ণিমা।
মহাকারুণিক তথাগত গৌতম বুদ্ধের জীবন-দর্শন আমাদের অনুপ্রাণিত করে এই মানবজীবনকে সুন্দরভাবে গঠন করতে, আদর্শ মানুষ হয়ে জীবন ধারণ করতে এবং মানুষের উপকার সাধন করতে। যদি ভালো মানুষের গুণাবলি অর্জন করা না যায়, তাহলে এই দুর্লভ মানবজীবন হবে বৃথা। তাই আসুন, এই পবিত্র বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে মহাকারুণিক তথাগত গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে শান্তিপূর্ণ সমাজ, জাতি ও দেশ গঠন করি।
লেখক: শিক্ষিকা, চট্টগ্রাম
বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে বুদ্ধপূর্ণিমার তাৎপর্য অত্যধিক। বৈশাখী পূর্ণিমাকে বুদ্ধপূর্ণিমা বলা হয়। মহাকারুণিক তথাগত গৌতম বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বৈশাখী পূর্ণিমা দিনে হয়েছিল যথা: ১. সিদ্ধার্থের জন্ম, ২. বুদ্ধত্বলাভ এবং ৩. মহানির্বাণ। তাই বৌদ্ধদের কাছে এ দিনটি ত্রিস্মৃতিবিজড়িত বুদ্ধপূর্ণিমা নামেও খ্যাত। বুদ্ধপূর্ণিমায় বৌদ্ধ নর-নারী সবাই দান-ধর্ম, পুণ্যকর্ম, কুশল বিনিময়ের মাধ্যম অতিবাহিত করেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বৌদ্ধবিহারে যান, পূজা-বন্দনা করেন, বাতি-ধূপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন, শীল গ্রহণ করে আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য সংকল্প করেন, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছ থেকে ধর্মদেশনা শ্রবণ করেন এবং ভাবনা অনুশীলন করেন। পবিত্র চেতনাকে ধারণ করে তাঁরা দিনটি উদ্যাপন করেন এবং গৌতম বুদ্ধের আদর্শ জীবনের স্মৃতিচারণা করেন।
একসময় কপিলাবস্তু নগরে সাত দিন ধরে চলছিল আষাঢ়ী পূর্ণিমা উৎসব। সপ্তম দিবসে অর্থাৎ পূর্ণিমার দিনে রানি মহামায়া দানোৎসব সম্পন্ন করেন ও সারা দিন উপোসব্রত পালন করেন। দিনশেষে উত্তম আহার গ্রহণ করে তিনি শয়নকক্ষে প্রবেশ করেন এবং সোনার পালঙ্কে শুয়ে পড়েন।
শেষ রাত্রে তিনি যখন গভীর নিদ্রামগ্ন, তখন এক বিস্ময়কর স্বপ্ন দেখেন—চার দিকপাল দেবতা এসে রানিকে পালঙ্কসহ তুলে নিয়ে হিমালয়ের মনোহর পর্বতে এক মনোরম হ্রদের তীরে একটি বিরাট শালবৃক্ষের নিচে এনে রাখলেন। তখন চারদিক পূর্ণিমার চন্দ্রালোকে উদ্ভাসিত। স্বর্গের দেবীরা এসে তাঁকে সরোবরের স্পটিক-স্বচ্ছ জলে স্নান করিয়ে স্বর্গীয় বস্ত্র পরিধান করাচ্ছেন।
রাত্রি অবসানে রানি রাজাকে স্বপ্নের বৃত্তান্ত জানালেন। শুনে রাজা চিন্তিত হলেন। মন্ত্রীদের পরামর্শে রাজ-জ্যোতিষীদের ডেকে রানির স্বপ্নের অর্থ জানতে চাইলেন। তাঁরা জানালেন, রাজেন্দ্রাণী মায়া দেবীর গর্ভে এক মহাপুরুষ জন্ম নেবেন। যদি সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হন, তবে তিনি হবেন এক জগৎপূজ্য মহাসন্ন্যাসী। আর যদি সংসারী হয়ে রাজত্ব করেন, তাহলে হবেন চক্রবর্তী রাজা।
সন্তানসম্ভবা মায়া দেবীর একদিন ইচ্ছা হলো পিতৃগৃহে যাওয়ার। নির্দিষ্ট দিনে দাস-দাসী পরিবৃতা হয়ে সুবর্ণ রথে পিত্রালয়ের উদ্দেশে রওনা হলেন। যাত্রাপথে লুম্বিনীর মনোরম শাল উদ্যানে বিশ্রাম নিতে নেমে এলেন রথ থেকে। এমন সময় তাঁর দক্ষিণ কুক্ষি ভেদ করে, জগৎ আলোকিত করে, ভূমিষ্ঠ হলেন ভাবী বুদ্ধ রাজকুমার সিদ্ধার্থ। কথিত আছে, ভূমিষ্ঠ হয়ে তিনি সপ্তপদ উত্তর দিকে অগ্রসর হন এবং প্রতি পদক্ষেপে তাঁর পায়ের নিচে একটি করে পদ্ম প্রস্ফুটিত হয়। সেদিন ছিল বৈশাখী পূর্ণিমার পুণ্যময় তিথি।
রানির পিতৃগৃহে আর যাওয়া হলো না। সদ্যোজাত সন্তানকে বক্ষে ধারণ করে রাজধানীতে ফিরে এলেন। বহু প্রতীক্ষার শেষে মহামায়ার কোলে এক দেবশিশুর আগমন ঘটেছে, এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে দেরি হলো না। সারা রাজ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। নগর ও রাজপ্রাসাদ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হলো। দরিদ্রের জন্য রাজকোষ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো। আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে সদ্যোজাত শিশুর নামকরণ করা হলো। সবার মনোরথ সিদ্ধ হয়েছে বলে রাজা শুদ্ধোধন পুত্রের নাম রাখলেন সর্ব্বার্থসিদ্ধ বা সিদ্ধার্থ।
কুমারের জন্মের সাত দিন পর রাজপ্রাসাদে শোকের ছায়া নেমে এল। মায়া দেবী মৃত্যুবরণ করলেন। জন্মদাত্রী মায়ের মৃত্যুর পর বিমাতা মহাপ্রজাপতি গৌতমী সিদ্ধার্থের লালনপালনের ভার গ্রহণ করলেন। তাঁর স্নেহে-যত্নে সিদ্ধার্থ ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলেন। গৌতমী লালনপালন করেছিলেন বলে তাঁর অপর নাম হয় গৌতম। সিদ্ধার্থ গৌতম যৌবনে পদার্পণ করলে সুন্দরী রমণী গোপা দেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরই মধ্যে সিদ্ধার্থ গৌতমের বৈরাগ্য চেতনা প্রবল হতে থাকে, সংসারের প্রতি বিরাগ এবং অস্থিরতা দেখতে পান। তখন তাঁর মন শান্ত করার জন্য রাজা শুদ্ধোধন রাজকীয়ভাবে নগর ভ্রমণের ব্যবস্থা করেন।
নগর ভ্রমণে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন এক জরাগ্রস্ত ব্যক্তি, ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি, মৃত ব্যক্তি এবং এক সন্ন্যাসীকে। উক্ত ঘটনা তাঁকে দারুণভাবে ব্যথিত করে। পরদিন তিনি সংসারের মায়া ত্যাগ করার জন্য সংকল্প করেন। এরই মধ্যে সংবাদ পেলেন তাঁদের সংসারে কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেছে এক শিশুপুত্র। তার নাম রাখলেন রাহুল। সিদ্ধার্থ গৌতমের মনে উদয় হলো রাহুল জন্মেছে, আমার বন্ধন জন্মেছে। মুক্তির সন্ধানে বের হবেন, সংসার ত্যাগ করবেন—এ সংকল্পে অটুট থেকে সদ্যোজাত সন্তান রাহুল, মাতা গোপা দেবীকে একপলক দেখে গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সারথি ছন্দককে নিয়ে চলে গেলেন নৈরঞ্জনা নদীর তীরে। গ্রহণ করলেন সন্ন্যাসব্রত। রাজপুত্র দিনযাপন করতে লাগলেন বন-জঙ্গলে, ঋষিদের আশ্রমে। এভাবে সত্যের সন্ধানে কঠিন থেকে কঠিন ব্রত পালন করে যাচ্ছেন, কিন্তু সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছেন না। এভাবে কাটিয়ে দিলেন দীর্ঘ ছয়টি বছর।
অবশেষে কঠিন ব্রত পালনে মুক্তি লাভ সম্ভব নয়—এ বিষয় অবগত হয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে ব্রতী হলেন। আহার-বিহারের প্রতি মনোযোগী হলেন। বটবৃক্ষতলে বসে ভাবতে ভাবতেই সুজাতা নাম্নী এক নারী বৃক্ষদেবতাকে পূজার মানসে পায়সান্ন দান করতে এলেন। তাঁর শ্রদ্ধা প্রদত্ত পায়সান্ন সিদ্ধার্থ গৌতম গ্রহণ করলেন এবং তাঁকে আশীর্বাদ করলেন।
সিদ্ধার্থ গৌতম মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে ব্রত করার সময় পূর্ণিমা দিবসেই তাঁর সংকল্প পূর্ণ করলেন। সব তৃষ্ণা, অবিদ্যা ধ্বংস করে নতুন এক আধ্যাত্মিক জগতের সন্ধান লাভ করে ‘নির্বাণতত্ত্ব’ আবিষ্কার করে জগতে সম্যক সম্বুদ্ধ হিসেবে আবির্ভূত হলেন। তখন থেকেই সিদ্ধার্থ গৌতম সম্যক সম্বুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেন। জীবজগতের সব প্রাণীর দুঃখমুক্তির জন্য তাঁর নব আবিষ্কৃত ধর্মতত্ত্ব দীর্ঘ ৪৫ বছর পর্যন্ত প্রচার করলেন। এরপর গৌতম বুদ্ধ ৮০ বছর বয়সে কুশীনারায় ঘোড়াশাল বৃক্ষতলে উপস্থিত হয়ে মহাপরিনির্বাণ লাভ করলেন, সেদিন ছিল পবিত্র বৈশাখী পূর্ণিমা।
মহাকারুণিক তথাগত গৌতম বুদ্ধের জীবন-দর্শন আমাদের অনুপ্রাণিত করে এই মানবজীবনকে সুন্দরভাবে গঠন করতে, আদর্শ মানুষ হয়ে জীবন ধারণ করতে এবং মানুষের উপকার সাধন করতে। যদি ভালো মানুষের গুণাবলি অর্জন করা না যায়, তাহলে এই দুর্লভ মানবজীবন হবে বৃথা। তাই আসুন, এই পবিত্র বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে মহাকারুণিক তথাগত গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে শান্তিপূর্ণ সমাজ, জাতি ও দেশ গঠন করি।
লেখক: শিক্ষিকা, চট্টগ্রাম
বর্তমানে বাংলাদেশে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি একটি সম্ভাবনাময় খাত। এই খাতে ‘পিকার্ড বাংলাদেশ’ তাদের দক্ষতা ও দায়বদ্ধতার মাধ্যমে বিদেশি বাজারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, বিশিষ্ট উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যবসায়ী এবং মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী।
৩ ঘণ্টা আগেরনো ভাইকে আমরা শেষ বিদায় জানালাম আজ এক বছর হলো। সেই ষাটের দশক থেকে হায়দার আকবর খান রনো গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, স্বাধীনতার সংগ্রামে, মানবমুক্তির সংগ্রামে অক্লান্তভাবে ভূমিকা রেখে গেছেন, কখনো রাজপথে আবার কখনো লেখনীর মাধ্যমে।
৩ ঘণ্টা আগেপ্রকল্প মানে উন্নয়ন, নাকি দুর্নীতি-অনিয়ম—এই প্রশ্ন তোলা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মোটেও অস্বাভাবিক নয়। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লাগামহীন লুটপাট যেন এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাজার কোটি টাকার প্রকল্প থেকে শতকোটি ‘নেই’ হওয়া কোনো ব্যাপারই না!
৪ ঘণ্টা আগেচারদিক থেকে যেন রাজ্যের এক অস্থিতিশীলতা আমাদের ঘিরে ধরেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কোনোভাবে স্থিতিশীল বলে গণ্য করা যায় না। তার ওপর পূর্ব সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে আছে মিয়ানমারকে ঘিরে।
১৯ ঘণ্টা আগে