Ajker Patrika

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

হুসাইন আহমদ, ঢাকা
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৫৫
সালমান বিন রশিদ শাহ সাইম ও তাঁর বাবা এম এ রশিদ শাহ সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত
সালমান বিন রশিদ শাহ সাইম ও তাঁর বাবা এম এ রশিদ শাহ সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের অনলাইন ট্রাভেল বুকিং প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে আলোচিত নাম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’। সহজে, দ্রুত ও তুলনামূলক কম দামে ফ্লাইটের টিকিট বুকিংয়ের সুযোগ দিয়ে প্ল্যাটফর্মটি দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার আর সুনাম নয়, এটি এখন আলোচনার কেন্দ্রে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও গ্রাহক প্রতারণার অভিযোগে। ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সালমান বিন রশিদ শাহ সাইম এরই মধ্যে লাপাত্তা হয়েছেন।

মতিঝিল থানার মামলায় পুলিশ ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন হেড অব ফাইন্যান্স সাকিব হোসেন (৩২), চিফ কমার্শিয়াল অফিসার সাঈদ আহমেদ (৪০) ও চিফ অপারেটিং অফিসার এ কে এম সাদাত হোসেন (৩২)। সালমান ও তাঁর বাবা এম এ রশিদ শাহ সম্রাটও মামলার আসামি। তবে দুজনই লাপাত্তা।

মামলার বাদী ভুক্তভোগী বিপুল সরকার একটি টিকিট এজেন্সির মালিক। অভিযোগ অনুযায়ী, কমপক্ষে ১৭টি এজেন্সি মিলে প্রায় ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেও টিকিট পায়নি। হঠাৎ করে সব যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি এবং এর কার্যালয় তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যান কর্মকর্তারা।

কে এই সালমান?

সালমান সাইমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে এসএসসি ও ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করেন। কানাডার সেন্ট মেরিস ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে পড়াশোনা করেন। পড়াশোনা শেষ করার আগেই অনলাইন টিকিটিং ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ সাল থেকে অনলাইন ট্রাভেল বুকিং প্ল্যাটফর্ম ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পরিচালক হিসেবে রয়েছেন।

২০১৮ সালে ‘ফিউচার স্টার্টআপ’ নামের এক প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালমান বলেছিলেন, ‘আমরা চাই ট্রাভেল হোক সবার জন্য—শুধু ধনীদের জন্য নয়।’ সেই সময় তাঁর প্রতিষ্ঠানে শতাধিক কর্মী কাজ করছিলেন এবং মাসে হাজার হাজার টিকিট বিক্রি হচ্ছিল বলে দাবি করেছিলেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারে নিজের উত্থানের পেছনের গল্প তুলে ধরেছেন সালমান।

তাঁর বাবা এম এ রশিদ ট্রাভেল এজেন্সি মক্কা গ্রুপ অব কোম্পানিজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। এই প্রতিষ্ঠান মানবসম্পদ রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সদস্য। রশিদ হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব হিসেবে টানা তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের কাউন্সিল চেয়ারপারসন হিসেবেও কাজ করেছেন।

মক্কা গ্রুপের অধীনে রয়েছে এয়ার টিকিট বিক্রি, মেডিকেল সেন্টার, হজ-ওমরাহ ব্যবস্থাপনা, ট্রান্সলেশন সার্ভিস, মানি এক্সচেঞ্জ, মানবসম্পদ ক্লিয়ারেন্সসহ বহু উদ্যোগ। খুব ছোট থেকে শুরু করে তাঁর বাবা এখন বৃহৎ ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।

২০১৫ সালে কানাডায় থাকতেই বাবার সহায়তায় অনলাইন ট্রাভেল বুকিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায় তাঁর যাত্রা শুরু হয়। ২০১৬ সালের এপ্রিলে দেশে ফিরে এসে মক্কা গ্রুপে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর প্রথম কাজ ছিল ব্যবসার ডিজিটাল রূপান্তর।

বাবা এম এ রশিদ শাহ সম্রাট ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট স্ক্রিনশট
বাবা এম এ রশিদ শাহ সম্রাট ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট স্ক্রিনশট

ফ্লাইট এক্সপার্টের যাত্রায় যুক্ত পুরোনো বন্ধু সাদাত–মেহেদী

মক্কা গ্রুপের অধীনে পাঁচটি আইএটিএ লাইসেন্স ছিল, যা সালমানের নতুন উদ্যোগের জন্য সহায়ক হয়। সালমান সাইম Agoda.com ও অন্যান্য ট্রাভেল বুকিং সাইট ঘেঁটে তাদের কার্যক্রম বুঝতে থাকেন। তিনি TBO Group-এর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার অমিত কুমার তিওয়ারির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, TBO Holidays-এর জেনারেল সেলস এজেন্ট (GSA) হিসেবে কাজ করবে মক্কা গ্রুপ। এই সময়ে তাঁর দুই পুরোনো বন্ধু—সাদাত হোসেন (ফ্লাইট এক্সপার্টের সিওও) ও আবদুল গনি মেহেদী (সিটিও)—তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন। তবে জিএসএ নেওয়ার পর বিদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর অনুমোদন নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়। ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর তাঁরা এই অনুমোদন আদায় করতে সক্ষম হন।

দীর্ঘ আট মাসের প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালের ১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইন ট্রাভেল বুকিং প্ল্যাটফর্ম ফ্লাইট এক্সপার্ট চালু হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, ট্রাভেল বুকিংকে প্রযুক্তিনির্ভর, দ্রুত ও সহজ করা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের টিকিট বুকিংয়ের পাশাপাশি হোটেল বুকিং, ট্যুর প্যাকেজ ও ভিসা প্রসেসিংয়ের মতো সেবা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

তিনি স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পান। নিয়মিত বিভিন্ন সেমিনার, বিজনেস কনফারেন্স ও টেক ইভেন্টে বক্তা হিসেবে অংশ নিতেন। তাঁর উদ্যোগকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া কভার করেছিল।

ধস নামল কবে?

তবে ২০২৪ সালের শেষদিক থেকে প্রতিষ্ঠানটি সংকটে পড়ে। বিভিন্ন টিকিট এজেন্সি ও গ্রাহক অভিযোগ করতে থাকে, বুকিং করার পরেও টিকিট আসছে না, টাকা ফেরতও মিলছে না। চলতি বছরের জুলাই মাসে পরিস্থিতি চরমে ওঠে।

এম এ রশিদ শাহ সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত
এম এ রশিদ শাহ সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত

আর চলতি বছরের আগস্টের শুরুতেই হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট, অ্যাপ ও প্রধান কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তালা ঝুলছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ই-মেইল বা ফোন—কোনো মাধ্যমেই ফ্লাইট এক্সপার্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

পালিয়ে যাওয়া ও আত্মপক্ষ সমর্থন

প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক গ্রুপে একটি পোস্ট দিয়ে সালমান লেখেন, তাঁর দুই সহকর্মী তাঁকে ঠকিয়েছেন এবং তিনি অপবাদ ও হুমকির মুখে দেশ ছাড়ছেন। তিনি দাবি করেন—এটি একটি সাজানো চক্রান্ত।

Salman-Identity

হোয়াটসঅ্যাপে সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতারণা করিনি। আমার ওপর বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে। আমি আত্মরক্ষার জন্যই গা ঢাকা দিয়েছি, পালাইনি।’

তবে এই দাবির বিপরীতে ইতিমধ্যে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, অগ্রিম নেওয়া টাকায় টিকিট না কেটে অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে। এমনকি টিকিট বুকিং না করেই ভুয়া পিএনআর দেওয়া হতো, যা ধরা পড়েছে।

ব্যবসায়িক ব্যর্থতা না প্রতারণা?

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফ্লাইট এক্সপার্টের মডেলটা অনেকটা পিরামিড স্টাইলের ছিল। নতুন টাকার ওপর নির্ভর করে পুরোনো গ্রাহকের বুকিং পূরণ করা হতো। কিছু কর্মী বলছেন, এটি পরিকল্পিত প্রতারণা ছিল না—বরং আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষের ফল।

তবে তদন্তকারীরা বলছেন, এভাবে অগ্রিম টাকা নিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা এবং কোনো প্রকার আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া সরাসরি অপরাধ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এসএমই মেলায় ১৬ কোটি টাকার অর্ডার পেলেন উদ্যোক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আট দিনব্যাপী ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন উদ্যোক্তারা। পণ্য বিক্রির পাশাপাশি ১৬ কোটি টাকার পণ্যের অর্ডার পেয়েছেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। আজ রোববার আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুমী এ আলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এর আগে ১১টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় ৩ হাজার উদ্যোক্তা তাঁদের পণ্য বিক্রি করেছেন। ১১টি পণ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের ৫৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি এবং প্রায় ৯৩ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছেন।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ স্টলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার–২০২৫’ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয়।

শতভাগ দেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় এই আয়োজন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ৭ ডিসেম্বর মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করেছে প্রায় সাড়ে তিন শ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি ৭৪টি প্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া হস্ত ও কারুশিল্পের ৫৪টি, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৪০টি; পাটজাত পণ্যের ৩৫টি; কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ২৮টি; শতরঞ্জি, বাঁশ, বেত, হোগলা, সুপারিখোল ও কাঠের ১৫টি; খাদ্যপণ্যের ১৪টি; লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ১৩টি; জুয়েলারি শিল্পের ৯টি; প্রসাধন খাতের সাতটি; তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাতের পাঁচটি; হারবাল–ভেষজশিল্পের পাঁচটি; প্লাস্টিক পণ্যের পাঁচটি; ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস খাতের তিনটি, ফার্নিচার খাতের তিনটি এবং অন্যান্য খাতের ১১টি স্টল।

মেলায় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সেবা প্রদানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আটটি দপ্তর-সংস্থাসহ সরকারের প্রায় ১৫টি সংস্থা, প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

মেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ অর্থায়ন, পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও পণ্যের হালাল সনদ প্রাপ্তি, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ট্রেড মার্ক ও জি আই স্বীকৃতি, স্কিলস ইকোসিস্টেম বিষয়ে ছয়টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আপেল, মাল্টা, কমলাসহ তাজা ফলের শুল্ক কমানোর সুপারিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে তাজা ফলের ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। খেজুরের মতোই এবার আপেল, কমলা, আঙুর, মেস্তারিন, নাশপাতি ইত্যাদি তাজা ফলকে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া এক চিঠিতে এই সুপারিশ করা হয়। রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্য বিবেচনায় এমন সুপারিশ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য, শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে আপেল, কমলা, মেস্তারিন, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আনার আমদানিতে মোট শুল্ক-কর রয়েছে ১২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, আপেল, মাল্টা, আনার ইত্যাদি ফলের স্থানীয় উৎপাদন নেই; তাই এই উচ্চহারে শুল্ক-কর রাখার প্রয়োজনীয়তা সীমিত।

অন্যদিকে উচ্চহারে শুল্ক-কর আরোপের ফলে বৈধ পথে আমদানি কমে তা অবৈধ পথে আমদানিকে উৎসাহিত করতে পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিমাত্রায় বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়তে পারে। উচ্চ শুল্ক-করের ফলে তাজা ফলের আমদানি কমার ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু ভোক্তাসাধারণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না; ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণও কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তাজা ফলকে ‘বিলাস পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে এর ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে নিত্যপণ্য আইন, ১৯৫৬ অনুযায়ী খাদ্যপণ্য হিসেবে তাজা ফল ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ বিধায় এর ওপর আরোপিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা যৌক্তিক করা যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনে ভোটার ও রাজনীতিবিদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে: দেবপ্রিয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৯
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, ‘দেশে শুধু ভোটাররাই নন, রাজনীতিবিদেরাও এখন বিপন্নতার মধ্যে রয়েছেন।’

বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিপিডির ফেলো।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিপন্ন জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কথা উঠে আসে। তবে এর সঙ্গে বড় একটি বিষয় হিসেবে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে সিপিডির এই ফেলো বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার পর এখন নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনী সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব আলোচনার ভিত্তিতে একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি খুব জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না, এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।’

সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমানে সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট গোষ্ঠী প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি।

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও একটি অলিগার্কিক ব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।’

সংস্কার প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে সংস্কার নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে বর্তমান উদ্যোগটি আলাদা, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কমিশন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করলেও তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সিপিডি ফেলো বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ সব সময় পর্যাপ্ত ছিল না। আর শুধু পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ।’

তাঁর মতে, সংস্কার শুধু পরিকল্পনা বা উদ্দীপনার বিষয় নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সচেতনভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেতাদের হাতে উপহারের ফ্রিজ-টিভি হস্তান্তর করল ওয়ালটন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ওয়ালটন পণ্য কিনে ফ্রিজ-টিভি উপহার পাওয়া কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: বিজ্ঞপইত
ওয়ালটন পণ্য কিনে ফ্রিজ-টিভি উপহার পাওয়া কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: বিজ্ঞপইত

ইলেকট্রনিকস পণ্য ক্রয়ে গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা দিতে দেশব্যাপী চলছে ওয়ালটনের ডিজিটাল ক্যাম্পেইন। ক্যাম্পেইনের ২৩তম সিজনে ওয়ালটন ফ্রিজ, এসি, টিভি, ওয়াশিং মেশিন বা বিএলডিসি ফ্যান কিনে গ্রাহকেরা পাচ্ছেন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাইড বাই সাইড ফ্রিজসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ফ্রি ও নিশ্চিত উপহার। গত ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতার হাতে উপহারের পণ্য তুলে দিচ্ছে ওয়ালটন।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন এলাকার ওয়ালটন প্লাজা থেকে ফ্রিজ কিনে সাইড বাই সাইড ফ্রিজ ও টিভি ফ্রি পাওয়া পণ্য ছয় ক্রেতার হাতে তুলে দিয়েছে ওয়ালটন। তাঁরা হলেন— মুন্সিগঞ্জের গোলাম রাব্বানি সিফাত ও গৃহিণী আফসানা আক্তার, নারায়ণগঞ্জের আজমির খান, রূপগঞ্জের সবুর হোসাইন এবং সিদ্ধিরগঞ্জের তারিকুল ইসলাম ও আসমা জাহান বিথী।

গত বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের হাতে উপহার পাওয়া পণ্য তুলে দেন চিত্রনায়ক ও ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিন খান। সে সময় আরও ছিলেন ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান, ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের প্রধান মো. ফিরোজ আলম প্রমুখ।

বিজয়ী ক্রেতাদের মধ্যে গোলাম রাব্বানি সিফাত, আফসানা, আজমির খান ও আসমা জাহান বিথী ফ্রিজ কিনে উপহার পেয়েছেন ওয়ালটনের অত্যাধুনিক সিক্সএনাইন মডেলের সাইড বাই সাইড স্মার্ট ফ্রিজ। অন্যদিকে তারিকুল ইসলাম ফ্রিজ কিনে ফ্রি পেয়েছেন ২১৩ লিটারের ফ্রিজ এবং সবুর হোসাইন ফ্রিজ কিনে পেয়েছেন ওয়ালটনের ৪৩ ইঞ্চি স্মার্ট টেলিভিশন।

উপহারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রায়হান বলেন, ‘ওয়ালটন ক্রেতাদের সব সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং সম্মান করে। সারা দেশে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা ওয়ালটন পণ্য কিনে নানান উপহার পাচ্ছেন যা তাদের যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের মাঝে কয়েকজনের হাতে করপোরেট অফিসে অনুষ্ঠান করে প্রাপ্য পণ্য বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। গ্রাহকদের জন্য আমাদের এ ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকবে।’

অনুষ্ঠানে সাধারণ ক্রেতাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উপহারের পণ্য তুলে দেওয়ায় ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান বিজয়ীরা।

কর্মকর্তারা জানান, সিজন-২৩ এর আওতায় ক্রেতারা দেশের যেকোনো ওয়ালটন প্লাজা, পরিবেশক শোরুম কিংবা অনলাইনে ই-প্লাজা থেকে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন ও বিএলডিসি ফ্যান কেনার পর পণ্যটির ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। এরপর ক্রেতাদের মোবাইলে ওয়ালটন থেকে উপহার পাওয়ার এসএমএস পাঠানো হচ্ছে।

পাশাপাশি ওয়ালটনের ক্রেতাদের জন্য তৈরি ‘আমার আওয়াজ’ মোবাইল অ্যাপ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারী ক্রেতাদের জন্যও এবারের ক্যাম্পেইনে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। ২০২৬ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ওয়ালটন পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের জন্য এই বিশেষ সুবিধা থাকছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত