Ajker Patrika

সাংবাদিকতা, নাকি ভিউ-বাণিজ্য

ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন
সাংবাদিকতা, নাকি ভিউ-বাণিজ্য

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় গণমাধ্যমকে। মানুষের সামনে সমাজের বাস্তব সত্য তুলে ধরাই হলো একজন প্রকৃত সাংবাদিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিউ-বাণিজ্যের আড়ালে সেই সাংবাদিকতা কি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে না? নাকি লাইক, কমেন্ট, শেয়ারের ভিড়ে ক্রমেই ধুলা জমছে সেই চিরচেনা দর্পণে?

সাংবাদিকতা সব সময় পরিশ্রমী ও চ্যালেঞ্জিং পেশা। দুর্নীতি, দুঃশাসন, অনিয়ম ও অসংগতির বিরুদ্ধে লড়াই করে, সত্যকে তুলে ধরে একজন সাংবাদিক জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যান, সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেন। মৃত্যুভয় বা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংবাদ পরিবেশন করাই সাংবাদিকতার মূল সৌন্দর্য। তাই সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির বিবেক—যাঁরা দেশ, মানুষ ও মানবতাকে সত্যের আলোয় উপস্থাপন করেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকতার জগতে এমন কিছু অসাংবাদিকের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে, যারা মূলধারার সাংবাদিকতার অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে।

আজকের অনেক তথাকথিত সংবাদপত্র বা অনলাইন মাধ্যমের খবরের শিরোনাম দেখলেই বোঝা যায়, গুরুত্বের পাল্লা কোথায়। কোন নায়িকা কী করলেন, কোন খাবার কেন ভালো লাগে, কোন নায়ক কত দামের পোশাক পরলেন, কার সঙ্গে কার সম্পর্ক—এসবই যেন এখন ‘সর্বশেষ সংবাদ’। এ ছাড়া রাজনৈতিক সভায় কোনো নেতার দীর্ঘ বক্তব্য থেকে একটিমাত্র লাইন তুলে নিয়ে রঙিন ফটোকার্ড বানানো, চটকদার শিরোনাম সাজিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছুড়ে দেওয়া—এটাই অনেকের কাছে এখন সাংবাদিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভিউ বাড়ানোর লোভে তাঁরা বেছে নেন অপ্রাসঙ্গিক, বিভ্রান্তিকর কিন্তু চোখধাঁধানো শিরোনাম; পাঠক প্রথমে কৌতূহলী হয়ে ক্লিক করে এবং পরে বুঝতে পারে, ভেতরে তথ্য কম, চটক বেশি। ভিউ বাড়ানোর জন্য এই অনলাইন ভিউ ব্যবসায়ীরা এমন সব অপ্রাসঙ্গিক, আকর্ষণীয় কিন্তু বিভ্রান্তিকর শিরোনাম ব্যবহার করছেন, যা ধীরে ধীরে প্রচলিত গণমাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতাকে নষ্ট করছে। অথচ কনটেন্ট ক্রিয়েটর কিংবা ইউটিউবারদের সঙ্গে প্রকৃত সাংবাদিকদের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত থাকার কথা ছিল। গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো সব বয়সের মানুষের উপযোগী প্রশ্ন ও শিরোনাম নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা। কিন্তু যখন সস্তা জনপ্রিয়তা আর লাখ লাখ ভিউ পাওয়ার নেশায় নিম্নমানের, অর্ধসত্য, রুচিহীন ও আপত্তিকর কনটেন্ট তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন তার সামাজিক প্রভাব ভয়াবহ হয়।

এখন শুধু অনলাইন পোর্টাল বা ফেসবুক পেজে কয়েকটি ছবি বা অনুষ্ঠান কভার করে অনেকে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দিচ্ছেন। আবার অনেকে সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পর্ক না রেখেই ‘অনলাইন টিভি’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে সম্মানিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের চরিত্র হনন করছেন। তাঁরা সাংবাদিকতার নীতিমালা বোঝেন না, বুম বা প্রেসকার্ড কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা-ও জানেন না। অনেকে প্রকৃত সাংবাদিক না হয়েও প্রেসকার্ড হাতে ‘সাংবাদিক’ সাজছেন। ফলে মূলধারার গণমাধ্যমকর্মীরা অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে নজর দেওয়া বিশেষভাবে জরুরি। সাংবাদিকতা যেন ভিউ ব্যবসায়ীদের রঙিন খেলার মাঠ না হয়ে ওঠে। ভাইরাল হওয়ার নেশা ঝেড়ে ফেলে স্থানীয় সমস্যার সমাধান, সম্ভাবনা তুলে ধরা এবং জনগণের কাছে সত্য পৌঁছে দেওয়ার মিশনেই ফিরে যেতে হবে। অন্যথায় এই পেশা হারাবে তার আত্মমর্যাদা। আর সমাজ হারাবে তার নির্ভরযোগ্য দর্পণ। মর্যাদা ফিরে পাবে সাংবাদিকতা, যেদিন কলম আবার সত্যের তলোয়ার হয়ে উঠবে, আর দর্শক-শ্রোতা-পাঠক বুঝবে, সংবাদ বিক্রি হয় না, সংবাদ পরিবেশন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়েও ফখরুল–আখতাররা ভিভিআইপি সুবিধা পাননি কেন—জানাল প্রেস উইং

এক নারীকে স্ত্রী দাবি করে দুই পুরুষের টানাটানি, শেষে ৩ জনই কারাগারে

স্পিকারের বাসভবনই হবে প্রধানমন্ত্রীর অস্থায়ী আবাস

আ.লীগের ঝটিকা মিছিল: মানিকগঞ্জের প্যানেল মেয়র আরশেদ আলীসহ চারজন কারাগারে

ঘরে সদ্য বিবাহিত বিক্রয় প্রতিনিধির লাশ, চিরকুটে লেখা ‘জীবন খুবই কঠিন’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত