Ajker Patrika

‘চুপ করো, শব্দহীন হও...’

রফী হক
‘চুপ করো, শব্দহীন হও...’

জয় গোস্বামী বলেছেন, শঙ্খ ঘোষকে পেয়েছি অভিভাবকের মতো। জয় তাঁর বিভিন্ন কবিতায় এবং গদ্যে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শঙ্খ ঘোষের প্রতি—“সকাল থেকে মাথায় কবিতা নিয়ে জেগে উঠতাম এমন একটা সময় ছিল আমার। আর খুব কচি-বয়সের কথাও নয় সেটা। বছর তিরিশ বয়স অবধিই এমন ছেলেমানুষ একটা ভাব ছিল যে, মাথার কাছে কারও কবিতা বা সেই বিষয়ক বই নিয়ে মাঝেমাঝেই ঘুম ভাঙ্গত। তার চেয়েও বেশি যেটা, সেটা হলো নিজের কোনো না লেখা পঙ্ক্তি নিয়ে অথবা অন্য কারও কবিতা বিষয়ে মুগ্ধতাও বিস্ময় নিয়ে জেগে ওঠা। না, বিরক্তি নয়। কেন না, বিরক্তি যদি থাকবে, তবে আর সেটা মনে রাখা কেন ? ভালো কবিতা না হলে সেটা ভুলে যাওয়াই ভালো । যেতামও।

“কারণ রোজই তো অমনটা হতো না আর। হয়তো বেশি রাত পর্যন্ত কিছু লিখছি, আলো জ্বলছে। মায়ের হাইপ্রেশার । একটুতেই রেগে যায়। বলল, ‘লেখো রাত জেগে আরও। ওইসব লেখো গিয়ে উল্টোপাল্টা। পড়াশুনো তো আর হবে না, ওইসব লেখো, আর শরীর খারাপ করো।’ আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম । সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই হঠাৎ মনে হল, ‘লেখো আয়ু, লেখো আয়ু, চুপ করো, শব্দহীন হও।’ উঠছি, দাঁত মাজছি, মনে পড়ছে, ‘লেখা আয়ু, লেখো আয়ু’ খামোকা আয়ু লিখতে বলছে কেন ? আয়ু কি লেখা যায় নাকি আবার ? আয়ু তো মানুষের হাতে থাকে? আয়ুরেখা, জ্যোতিষীরা বলে। জ্যোতিষী হলো দেবুদা। আমার চেনাশোনার মধ্যে। চাকরিবাকরি পায়নি এখনও। আগে টাইপ শিখত, টিউশনি করত। এখন ফুলটাইম জ্যোতিষ করে। স্টেশনের কাছে একটা চায়ের দোকানে বসে সকালের দিকে। গেলাম সেখানে। দেবুদা, আয়ু কি লেখা যায়? দেবুদা বলে, ‘যাবে না কেন? এই তো কালকেই একজনকে দেখেটেখে দিলাম, ৮১ বছর। এত্ত লম্বা আয়ুরেখা। নেপালের মেজদা। চিনিস?’ আমি বলি, না মানে একটা কবিতায় পড়লাম, লেখো আয়ু। অন্যরকম কোনো মানে নেই তো? ‘কী আবার মানে থাকবে? জ্যোতিষীদের কথাই লিখেছে নিশ্চয়ই। অবশ্য কবিতা তো, যা ইচ্ছে বললেই হলো। গল্পের গোরু গাছে ওঠে জানিস তো। এ তো আবার কবিতার গোরু।’ সবাই হেসে ওঠে।

“আমি বাড়ি ফিরতে থাকি। ভাবনাটা ছাড়ে না। আয়ুরেখা। কারও বা আয়ু ফুরোয়। কারও বা ‘এখনও অনেক দিন’ আয়ু থাকে। সত্যি তো! সে আয়ু আবার লিখতে যাব কেন? আর লিখবই বা কী করে ? কারণ, আয়ু মানেটা কী? আয়ু মানে তো মানুষের জীবৎকাল।

“চমকে দাঁড়িয়ে পড়ি। হ্যাঁ!, জীবৎকাল। আর সেটাই লেখো। গোটা জীবৎকাল লেখো তোমার। প্রত্যেকটা দিন, প্রত্যেকটা মুহূর্ত লিখে রাখো। যে জীবন তোমার কাছে আছে, লিখে রাখো তাকে।

“এক মুহূর্তে কাঁটা দাঁড়িয়ে যায় শরীরে। এই রকম একটা জিনিস লুকিয়ে ছিল এর মধ্যে! ধীরে ধীরে পুরো কবিতাটি মনে পড়তে থাকে।”

‘এত বেশি কথা বলো কেন? চুপ করো, শব্দহীন হও

শষ্পমূলে ঘিরে রাখো আদরের সম্পূর্ণ মর্মর

লেখো আয়ু লেখো আয়ু

ভেঙে পড়ে ঝাউ, বালির উত্থান, ওড়ে ঝড়

তোমার চোখের নিচে আমার চোখের চরাচর ওঠে জেগে

স্রোতের ভিতরে ঘূর্ণি, ঘূর্ণির ভিতরে স্তব্ধ আয়ু

লেখো আয়ু লেখো আয়ু

চুপ করো, শব্দহীন হও।’

[আয়ু, শঙ্খ ঘোষ]

কবি শঙ্খ ঘোষের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতনকাঠামো ৬ মাসের আগেই চূড়ান্ত করার আশ্বাস

কবরস্থানে রেখে যাওয়া নবজাতক হঠাৎ নড়ে উঠল, হাসপাতালে ভর্তি

উপদেষ্টার সভায় শেখ মুজিব-হাসিনার ছবি!

১২ জেলায় বন্যার শঙ্কা, বৃষ্টি থাকবে কত দিন—জানাল আবহাওয়া অফিস

ছাত্রীকে ওড়না ছাড়া দেখতে চান অধ্যক্ষ, স্ক্রিনশট দিয়ে ব্যানার কলেজ গেটে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত