মুশফিকুর রহমান
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় রাজনৈতিক মতবাদ হলো ‘সাইকেল অব পলিটিক্যাল রেজিম’। মানে ক্ষমতা বা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনশীল। যদিও কোনো শাসক বা শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কথা কখনো মাথায় নিতে পারে না। কিন্তু ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত হয়েছে আদি থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত—রোমান যুগের নিরো, ইতালির মুসোলিনি এবং জার্মানির হিটলারসহ পৃথিবীর তাবৎ ফ্যাসিস্ট শাসককে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে।
প্রতিটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয় বৈদেশিক ষড়যন্ত্র অথবা নিজ দেশের জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে সংগঠিত প্রতিরোধের মাধ্যমে। এ রকম ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণে প্রতিরোধের মাধ্যমে শেখ হাসিনার দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পতন হয়েছিল। কারণ, এই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল ছাত্রদের নেতৃত্বে এবং জনসাধারণের সম্মিলিত অংশগ্রহণে।
এ দেশের নির্যাতিত জনতা জুলাই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। একটি সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা তাদের মধ্যে ছিল। সেই স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের আশা অন্তরে লালন করে, আমজনতা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। শিশু থেকে বৃদ্ধ মানুষ এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। আন্দোলন করতে গিয়ে শত শত শিক্ষার্থী- সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছে এবং অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। আন্দোলন করতে গিয়ে হাজারো মায়ের বুক খালি হয়েছে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত জুলাই আন্দোলন সফল হয়েছে। অনেকে একে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে থাকেন। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার শোষণ-শাসন পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর চেয়ে কম ছিল না।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই যে ছাত্র-জনতা নিজেদের জীবন বিলীন করে দিয়ে শহীদদের প্রতিনিধি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমতায় বসাল, এক বছরের মধ্যে এই সরকার কতটুকু জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পেরেছে?
যারা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, তাদের চিকিৎসার কোনো যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়নি। এখনো প্রত্যন্ত গ্রামে অনেকে, যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, চিকিৎসা করাতে পারছে না; সংসারের হাল ধরতে পারছে না। অনেক শহীদের পরিচয়ও শনাক্ত করতে পারেনি এই অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়েছে।
জনগণ নিজেদের জীবন দিয়েছিল দেশ থেকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস নির্মূল করতে। অথচ ৫ আগস্টের পর থেকে এসব তো কমেনি বরং অন্য রূপে আরও বেশি পরিমাণে বেড়েছে। আবার দেশের মধ্যে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে, কিন্তু তার কোনো বিচার হচ্ছে না।
জনতা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল দেশ থেকে স্বজনপ্রীতি দূর করতে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আশায়। কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবক্ষেত্রে যে জনবল নিয়োগ হয়েছে, তা দলীয় স্বার্থে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার সর্বত্র লঙ্ঘিত হচ্ছে, অথচ প্রশাসন নির্বিকার।
শহীদদের স্বপ্নপূরণের অন্যতম উপায় ছিল পুরো দেশের সিস্টেমকে সংস্কার করা। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করলেও, সংস্কার কীভাবে স্থায়িত্ব পাবে—সে বিষয়ে তারা নির্লিপ্ত। বাস্তবতা দেখে বলা যায়, এই সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের পক্ষে সংস্কার করা সম্ভব হবে না। এমন পরিস্থিতি আমরা ’৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের পরেও দেখেছি। কারণ, দেশের মানুষ কোনো সংস্কারের বাস্তব রূপ দেখতে পায়নি।
সবশেষে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এ সরকার শত শত শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতা পেয়েছে। তারা যেন এমনভাবে দেশ পরিচালনা না করে, যা শহীদদের আত্মত্যাগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় রাজনৈতিক মতবাদ হলো ‘সাইকেল অব পলিটিক্যাল রেজিম’। মানে ক্ষমতা বা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনশীল। যদিও কোনো শাসক বা শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কথা কখনো মাথায় নিতে পারে না। কিন্তু ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত হয়েছে আদি থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত—রোমান যুগের নিরো, ইতালির মুসোলিনি এবং জার্মানির হিটলারসহ পৃথিবীর তাবৎ ফ্যাসিস্ট শাসককে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে।
প্রতিটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয় বৈদেশিক ষড়যন্ত্র অথবা নিজ দেশের জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে সংগঠিত প্রতিরোধের মাধ্যমে। এ রকম ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণে প্রতিরোধের মাধ্যমে শেখ হাসিনার দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পতন হয়েছিল। কারণ, এই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল ছাত্রদের নেতৃত্বে এবং জনসাধারণের সম্মিলিত অংশগ্রহণে।
এ দেশের নির্যাতিত জনতা জুলাই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। একটি সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা তাদের মধ্যে ছিল। সেই স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের আশা অন্তরে লালন করে, আমজনতা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। শিশু থেকে বৃদ্ধ মানুষ এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। আন্দোলন করতে গিয়ে শত শত শিক্ষার্থী- সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছে এবং অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। আন্দোলন করতে গিয়ে হাজারো মায়ের বুক খালি হয়েছে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত জুলাই আন্দোলন সফল হয়েছে। অনেকে একে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে থাকেন। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার শোষণ-শাসন পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর চেয়ে কম ছিল না।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই যে ছাত্র-জনতা নিজেদের জীবন বিলীন করে দিয়ে শহীদদের প্রতিনিধি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমতায় বসাল, এক বছরের মধ্যে এই সরকার কতটুকু জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পেরেছে?
যারা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, তাদের চিকিৎসার কোনো যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়নি। এখনো প্রত্যন্ত গ্রামে অনেকে, যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, চিকিৎসা করাতে পারছে না; সংসারের হাল ধরতে পারছে না। অনেক শহীদের পরিচয়ও শনাক্ত করতে পারেনি এই অন্তর্বর্তী সরকার, যাদের বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়েছে।
জনগণ নিজেদের জীবন দিয়েছিল দেশ থেকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস নির্মূল করতে। অথচ ৫ আগস্টের পর থেকে এসব তো কমেনি বরং অন্য রূপে আরও বেশি পরিমাণে বেড়েছে। আবার দেশের মধ্যে রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে, কিন্তু তার কোনো বিচার হচ্ছে না।
জনতা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল দেশ থেকে স্বজনপ্রীতি দূর করতে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আশায়। কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবক্ষেত্রে যে জনবল নিয়োগ হয়েছে, তা দলীয় স্বার্থে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার সর্বত্র লঙ্ঘিত হচ্ছে, অথচ প্রশাসন নির্বিকার।
শহীদদের স্বপ্নপূরণের অন্যতম উপায় ছিল পুরো দেশের সিস্টেমকে সংস্কার করা। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করলেও, সংস্কার কীভাবে স্থায়িত্ব পাবে—সে বিষয়ে তারা নির্লিপ্ত। বাস্তবতা দেখে বলা যায়, এই সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের পক্ষে সংস্কার করা সম্ভব হবে না। এমন পরিস্থিতি আমরা ’৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের পরেও দেখেছি। কারণ, দেশের মানুষ কোনো সংস্কারের বাস্তব রূপ দেখতে পায়নি।
সবশেষে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এ সরকার শত শত শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতা পেয়েছে। তারা যেন এমনভাবে দেশ পরিচালনা না করে, যা শহীদদের আত্মত্যাগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে দেশে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তখন সাধারণ মানুষের মনে একধরনের ইতিবাচক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল।
১১ ঘণ্টা আগেবর্ষাকাল এলেই যেন ঢাকায় জলাবদ্ধতা ভর করে বসে। জলাবদ্ধতা যখন এই শহরের ঘাড়ে চেপে বসে, তখন এই নগরের মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আজ এই শহরের এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না যদি তারা অপরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে না ঝুঁকত, যদি নদী কিংবা খালের স্থান দখল না করে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা করত।
১১ ঘণ্টা আগেটাঙ্গাইলের সখীপুর-কচুয়া-আড়াইপাড়া সড়কের যে করুণ অবস্থা, তা আসলে আমাদের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—যেখানে প্রতিদিন স্কুলশিক্ষার্থী, রোগী, কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক ও হাজারো সাধারণ মানুষ চলাচল করে।
১১ ঘণ্টা আগেজুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেল। ওই অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। মূলত তারা ফ্যাসিবাদী সরকারব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। মূলত বাংলাদেশের মূল সমস্যা সেটাই যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি
১ দিন আগে