বিভুরঞ্জন সরকার
ঈদের দিন বিকেলে এক আড্ডায় মিলেছিলাম আমরা কয়েকজন। বাঙালির আড্ডা মানে পরনিন্দা, পরচর্চা এবং অবধারিতভাবে আসবে রাজনীতি। মুখে বলা হবে, ‘ধুর, রাজনীতি নিয়ে আবার আলোচনা কি? দেশে রাজনীতি আছে নাকি!’ যা হোক, আমাদের আলোচনায় গানের প্রসঙ্গও এল। গান মানে পুরোনো দিনের গান, সলিল চৌধুরীর লেখা সুর দেওয়া কয়েকটি অসাধারণ গানের কথা একজন তুললেন। আরেকজন বললেন, ‘আরে আমি তো রবি ঠাকুরের গান না শুনে ঘুমাতেই যাই না।’ আমি অবশ্য গানের প্রসঙ্গ এলে চুপ থাকি। গানের সমঝদার আমি নই। আমার কণ্ঠে সুর নেই, আছে অ-সুরের দাপাদাপি।
শ্রীলঙ্কায় বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রবেশ, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পলায়ন, আমাদের দেশে সে রকম নাগরিক বিদ্রোহের আশঙ্কা আছে কি না, শান্তির দেশ জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের গুলিতে মৃত্যু, এর পর জাপানে নিরাপত্তার কড়াকড়ি আরোপ করা হবে কি না—এ সব নিয়েও জ্ঞানগর্ভ মতামত আড্ডায় উঠে এল।
প্রায় ঘণ্টা চারেকে আড্ডা খানাপিনায় এবার ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে হলো সবচেয়ে উত্তেজনা। কারণ, হোস্ট এবং গেস্টদের প্রায় সবাই উত্তরের মানুষ। গত ঈদে সড়ক ব্যবস্থাপনা কিছুটা প্রশংসা পেলেও এবার কেন ১০ ঘণ্টার পথ যেতে ৩০ ঘণ্টা লাগল, সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠল। কথা উঠল, উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন বৈষম্য নিয়েও। সব শাসনামলেই উত্তরের প্রতি অবহেলা কি এ জন্য যে, ওই অঞ্চলের মানুষ তুলনামূলকভাবে শান্তিপ্রিয়!
উঠল দুর্নীতি প্রসঙ্গও। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ যেতে সড়কপথ পুরোটা চার লেনে উন্নীত করতে কেন এত সময় লাগছে? সড়কমন্ত্রীর বাড়ি উত্তরে নয় বলে?
এক সাংবাদিক বন্ধু একটি ঘটনা বললেন। একটি সড়কের কাজ পাওয়ার জন্য একটি চীনা প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাকে একটি সুন্দর চায়ের প্যাকেট গিফট করল। সচিব সাহেব ওই চায়ের প্যাকেট বাসায় নিয়ে খুলে দেখেন, ওই চায়ের প্যাকেটে আসলে চা নেই, আছে ১ লাখ ডলার। এটা যে ঘুষ দিয়ে কাজ পাওয়ার চেষ্টা, তা আর বুঝিয়ে বলার কী আছে?
দেশে দুর্নীতি হয় না, সরকারি বিভিন্ন পদের বড় বড় কর্মকর্তারা কেউ দুর্নীতি করেন না—এমন দাবি যদি কেউ করেন, তাহলে তার সঙ্গে অবশ্যই একমত হওয়া যাবে না। তবে দুর্নীতি কেউ সবাইকে জানিয়ে করেন না। করোনা শুরুর পর আমাদের স্বাস্থ্য খাতের কিছু দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ হয়েছিল এবং বড় রকমের জালিয়াতির অভিযোগে দু-চারজন গ্রেপ্তারও হয়েছিল। এমনও খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনস্থ বিভিন্ন কার্যালয়ে কিছু দুর্নীতিবাজ, স্বেচ্ছাচারী ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দুর্নীতির শক্তিশালী বলয় তৈরি হয়েছে। তারা সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ওষুধ, সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি কেনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে স্বাস্থ্য খাতে জনসাধারণের জন্য বরাদ্দ সরকারি বাজেটের ৭০-৮০ ভাগই হাতিয়ে নিচ্ছে।
গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে কিছু নড়াচড়া হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এতে দুর্নীতি বন্ধ হয়। সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি বা চুরি বন্ধের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। হঠাৎ হঠাৎ দু-একজনকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হলেও আজ পর্যন্ত কারও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে, তা বলা যাবে না। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় কয়েকজনের বাসাবাড়িতে যে বস্তা বস্তা টাকা পাওয়া গেল, সেই টাকা শেষে কোথায় গিয়েছে, কোন কাজে ব্যবহার হয়েছে, তার কোনো খবর কিন্তু কোনো গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়নি। সরকারি লোকজনের দুর্নীতির কথা সরকার স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু অল্প কয়েকজনের চুরির দায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোটা সরকারের ওপরই বর্তায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের ধরে যেন আমরাই চোর হয়ে যাচ্ছি।’ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযানে যদি ধারাবাহিকতা থাকে এবং মানুষের কাছে যদি এটা বিশ্বাসযোগ্য হয় যে, সরকারের কোনো পর্যায় থেকেই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না, তাহলেই কেবল মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে। মানুষের সাধারণ অভিজ্ঞতা হলো, সরকারে থাকলে দুর্নীতি করতেই হয়—যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ।
শেখ হাসিনা অবশ্য অনেক কিছুতেই ব্যতিক্রম। সরকারে থেকে সরকারি লোকদের চোর হিসেবে চিহ্নিত করার বুকের পাটা শেখ হাসিনার পক্ষেই দেখানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ দুর্নীতি বা চুরি হয়, গৃহীত ব্যবস্থা সেই তুলনায় অপর্যাপ্ত বলেই মনে করা হয়।
আমাদের দেশে একটি কথা চালু আছে—মানুষের কথায় জয়, মানুষের কথায়ই ক্ষয়। এখন পর্যন্ত দেশের বেশির ভাগ মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, এই দেশকে যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই, তিনিই আমাদের শেষ ভরসা।
এটা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ কম যে, শেখ হাসিনা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যেভাবে নিরলসভাবে কাজ করছেন, সেভাবে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন না। বিশেষ করে বিএনপি ও তার মিত্ররা তো সারাক্ষণ শেখ হাসিনার নিন্দা-সমালোচনা করছে। শেখ হাসিনার কোনো ভালোই তাদের চোখে পড়ে না। এই একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি দুঃখজনক। কেন এটা ঘটছে?
ব্যক্তিগতভাবে আমার ইদানীং মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানে কোথাও বুঝি খামতি বা ঘাটতি আছে। মাঝেমধ্যে দু-একজন চোর-বাটপার ধরা পড়লেও কারওই বিচার হওয়ার নজির নেই। চোরের সাক্ষী গাঁটকাটার দলকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও হয়তো দেখা যায়।
বিএনপি-জামায়াত আমলে দেশে জঙ্গি উত্থানের ঘটনা ঘটেছিল। আবার ওই আমলেই বাংলা ভাইসহ জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিচারও শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ জন্য কি আমরা বিএনপি বা খালেদা জিয়ার ভূমিকাকে জঙ্গিবিরোধী বলে তারিফ করি? করি না। কারণ, ওটা ছিল রাজনৈতিক কৌশল, আন্তর্জাতিক চাপ এবং ক্ষমতায় থাকার হিসাব-নিকাশ।
শেখ হাসিনার আমলে দুর্নীতিবাজ বা চোরদের কেউ কেউ ধরা পড়ছে। কিন্তু একজনও বিচারের মুখোমুখি হয়নি। দুদক কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে বলে খবর শোনা যায়। কিন্তু ওই তদন্ত শেষ হওয়ার খবর আর শোনা যায় না। কোনোটা শেষ হলেও অভিযোগ প্রমাণ হয় না।
যারা ফেঁসে যায়, তারা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই ফাঁসে। তার মানে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে। তো, এই তথ্য থাকার পরও চোরদের বছরের পর বছর চুরি করার সুযোগ দেওয়া হয় কেন?
এই যে করোনার প্রথম ধাপে মো. সাহেদ নামের এক দুর্বৃত্তকে পাকড়াও করে তাঁর সম্পর্কে, তাঁর বাটপারি নিয়ে কথা বলা হলো, কিন্তু কারা তাঁকে এমন দানবে পরিণত করল এবং তা কেন আড়ালে থাকল? এটা কি ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার ভয়ে?
কুয়েত-কেলেঙ্কারির হোতা লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম ওরফে পাপুল এবং তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কত কিছু হলো। তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হলো। কিন্তু তাঁর উত্থান হলো কীভাবে? আওয়ামী লীগের কোন প্রভাশালীরা কিসের বিনিময়ে তাঁকে এমন দুর্বৃত্ত হতে সহায়তা করলেন, তাঁদের তো টিকিটিও ধরা হলো না। এভাবে নেপথ্য নায়কদের আড়াল করে প্রকাশ্য খলনায়ককে বেত মারলে এমন ভয়ংকর ব্যক্তিদের উত্থান আওয়ামী লীগে অব্যাহত থাকবে না?
আমি বারবার বলি, আওয়ামী লীগের অনেক সঞ্চয় আছে। কিন্তু সেই সঞ্চয়ের যেভাবে অপচয় হচ্ছে, তাতে দেউলিয়া হতেও বেশি সময় লাগবে না।
মানুষের কাছে অসংগতিগুলো যখন ধরা পড়ে তখন তারা হতাশ হয়। প্রশংসার পরিবর্তে তখন নিন্দা করে, অথবা যারা নিন্দা করে তাদের ‘সহমত’ ভাই-বোন হয়ে যায়!
কেউ যখন ‘ধরা খায়’, তখন তার গুষ্টি উদ্ধার করে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা শুরু হয়। ধরা না-খাওয়া কারও বিরুদ্ধে খবর সাধারণত দেখা যায় না। কোনো গণমাধ্যমে তেমন খবর ছাপা হলেও তা আমলে নেওয়া হয় না। শত্রুপক্ষের রটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, সরকার বা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এসব মহলবিশেষের ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এখন অনেকের কাছেই হাস্যকর মনে হয়।
বিপদ তাদের, যারা শেখ হাসিনাকে ‘শেষ ভরসা’ বলে মনে করে। এমন সব ঘটনা ঘটে বা ঘটানো হয়, যার পক্ষে দাঁড়ানো হাসিনাদরদিদের পক্ষেও নৈতিকভাবে সম্ভব হয় না।
সে জন্যই দরকার সরকারি প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে ধারাবাহিক শুদ্ধি অভিযান। যেখানে রোগমুক্তির জন্য শল্য চিকিৎসা দরকার, সেখানে টোটকা চিকিৎসা করলে উপকার পাওয়া যাবে কীভাবে?
বলা হয় ‘সিস্টেম’ বদল করা সহজ নয়। তাই ‘সমঝোতা’ করেই চলতে হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় সমঝোতার পথ আত্মঘাতী। আলেন্দে বাঁচেননি, কাস্ত্রো বেঁচেছেন।
মৌচাকে ঢিল দিয়ে মৌমাছির কামড় সহ্য করলেই না মধু পাওয়া যায়। যারা দেশপ্রেম থেকে, দায়িত্ববোধ থেকে কথা বলার চেষ্টা করে, তাদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু অতি অনুগতরা বিপদের দিনে লাপাত্তা হলেও যাদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় তারা বিপদের মুহূর্তেও ঠিকই পাশে থাকবে। খারাপ সময়ে কাছে পাওয়া যাবে না ‘চাটার দল’-কে। তাই চাটার দল হইতে সময় থাকতেই সাবধান হওয়া জরুরি!
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঈদের দিন বিকেলে এক আড্ডায় মিলেছিলাম আমরা কয়েকজন। বাঙালির আড্ডা মানে পরনিন্দা, পরচর্চা এবং অবধারিতভাবে আসবে রাজনীতি। মুখে বলা হবে, ‘ধুর, রাজনীতি নিয়ে আবার আলোচনা কি? দেশে রাজনীতি আছে নাকি!’ যা হোক, আমাদের আলোচনায় গানের প্রসঙ্গও এল। গান মানে পুরোনো দিনের গান, সলিল চৌধুরীর লেখা সুর দেওয়া কয়েকটি অসাধারণ গানের কথা একজন তুললেন। আরেকজন বললেন, ‘আরে আমি তো রবি ঠাকুরের গান না শুনে ঘুমাতেই যাই না।’ আমি অবশ্য গানের প্রসঙ্গ এলে চুপ থাকি। গানের সমঝদার আমি নই। আমার কণ্ঠে সুর নেই, আছে অ-সুরের দাপাদাপি।
শ্রীলঙ্কায় বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রবেশ, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পলায়ন, আমাদের দেশে সে রকম নাগরিক বিদ্রোহের আশঙ্কা আছে কি না, শান্তির দেশ জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের গুলিতে মৃত্যু, এর পর জাপানে নিরাপত্তার কড়াকড়ি আরোপ করা হবে কি না—এ সব নিয়েও জ্ঞানগর্ভ মতামত আড্ডায় উঠে এল।
প্রায় ঘণ্টা চারেকে আড্ডা খানাপিনায় এবার ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে হলো সবচেয়ে উত্তেজনা। কারণ, হোস্ট এবং গেস্টদের প্রায় সবাই উত্তরের মানুষ। গত ঈদে সড়ক ব্যবস্থাপনা কিছুটা প্রশংসা পেলেও এবার কেন ১০ ঘণ্টার পথ যেতে ৩০ ঘণ্টা লাগল, সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠল। কথা উঠল, উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন বৈষম্য নিয়েও। সব শাসনামলেই উত্তরের প্রতি অবহেলা কি এ জন্য যে, ওই অঞ্চলের মানুষ তুলনামূলকভাবে শান্তিপ্রিয়!
উঠল দুর্নীতি প্রসঙ্গও। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ যেতে সড়কপথ পুরোটা চার লেনে উন্নীত করতে কেন এত সময় লাগছে? সড়কমন্ত্রীর বাড়ি উত্তরে নয় বলে?
এক সাংবাদিক বন্ধু একটি ঘটনা বললেন। একটি সড়কের কাজ পাওয়ার জন্য একটি চীনা প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাকে একটি সুন্দর চায়ের প্যাকেট গিফট করল। সচিব সাহেব ওই চায়ের প্যাকেট বাসায় নিয়ে খুলে দেখেন, ওই চায়ের প্যাকেটে আসলে চা নেই, আছে ১ লাখ ডলার। এটা যে ঘুষ দিয়ে কাজ পাওয়ার চেষ্টা, তা আর বুঝিয়ে বলার কী আছে?
দেশে দুর্নীতি হয় না, সরকারি বিভিন্ন পদের বড় বড় কর্মকর্তারা কেউ দুর্নীতি করেন না—এমন দাবি যদি কেউ করেন, তাহলে তার সঙ্গে অবশ্যই একমত হওয়া যাবে না। তবে দুর্নীতি কেউ সবাইকে জানিয়ে করেন না। করোনা শুরুর পর আমাদের স্বাস্থ্য খাতের কিছু দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ হয়েছিল এবং বড় রকমের জালিয়াতির অভিযোগে দু-চারজন গ্রেপ্তারও হয়েছিল। এমনও খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনস্থ বিভিন্ন কার্যালয়ে কিছু দুর্নীতিবাজ, স্বেচ্ছাচারী ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দুর্নীতির শক্তিশালী বলয় তৈরি হয়েছে। তারা সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ওষুধ, সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি কেনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে স্বাস্থ্য খাতে জনসাধারণের জন্য বরাদ্দ সরকারি বাজেটের ৭০-৮০ ভাগই হাতিয়ে নিচ্ছে।
গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে কিছু নড়াচড়া হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এতে দুর্নীতি বন্ধ হয়। সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি বা চুরি বন্ধের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। হঠাৎ হঠাৎ দু-একজনকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হলেও আজ পর্যন্ত কারও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে, তা বলা যাবে না। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় কয়েকজনের বাসাবাড়িতে যে বস্তা বস্তা টাকা পাওয়া গেল, সেই টাকা শেষে কোথায় গিয়েছে, কোন কাজে ব্যবহার হয়েছে, তার কোনো খবর কিন্তু কোনো গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়নি। সরকারি লোকজনের দুর্নীতির কথা সরকার স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু অল্প কয়েকজনের চুরির দায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোটা সরকারের ওপরই বর্তায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের ধরে যেন আমরাই চোর হয়ে যাচ্ছি।’ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযানে যদি ধারাবাহিকতা থাকে এবং মানুষের কাছে যদি এটা বিশ্বাসযোগ্য হয় যে, সরকারের কোনো পর্যায় থেকেই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না, তাহলেই কেবল মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে। মানুষের সাধারণ অভিজ্ঞতা হলো, সরকারে থাকলে দুর্নীতি করতেই হয়—যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ।
শেখ হাসিনা অবশ্য অনেক কিছুতেই ব্যতিক্রম। সরকারে থেকে সরকারি লোকদের চোর হিসেবে চিহ্নিত করার বুকের পাটা শেখ হাসিনার পক্ষেই দেখানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ দুর্নীতি বা চুরি হয়, গৃহীত ব্যবস্থা সেই তুলনায় অপর্যাপ্ত বলেই মনে করা হয়।
আমাদের দেশে একটি কথা চালু আছে—মানুষের কথায় জয়, মানুষের কথায়ই ক্ষয়। এখন পর্যন্ত দেশের বেশির ভাগ মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, এই দেশকে যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই, তিনিই আমাদের শেষ ভরসা।
এটা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ কম যে, শেখ হাসিনা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যেভাবে নিরলসভাবে কাজ করছেন, সেভাবে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন না। বিশেষ করে বিএনপি ও তার মিত্ররা তো সারাক্ষণ শেখ হাসিনার নিন্দা-সমালোচনা করছে। শেখ হাসিনার কোনো ভালোই তাদের চোখে পড়ে না। এই একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি দুঃখজনক। কেন এটা ঘটছে?
ব্যক্তিগতভাবে আমার ইদানীং মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানে কোথাও বুঝি খামতি বা ঘাটতি আছে। মাঝেমধ্যে দু-একজন চোর-বাটপার ধরা পড়লেও কারওই বিচার হওয়ার নজির নেই। চোরের সাক্ষী গাঁটকাটার দলকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও হয়তো দেখা যায়।
বিএনপি-জামায়াত আমলে দেশে জঙ্গি উত্থানের ঘটনা ঘটেছিল। আবার ওই আমলেই বাংলা ভাইসহ জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিচারও শুরু হয়েছিল। কিন্তু এ জন্য কি আমরা বিএনপি বা খালেদা জিয়ার ভূমিকাকে জঙ্গিবিরোধী বলে তারিফ করি? করি না। কারণ, ওটা ছিল রাজনৈতিক কৌশল, আন্তর্জাতিক চাপ এবং ক্ষমতায় থাকার হিসাব-নিকাশ।
শেখ হাসিনার আমলে দুর্নীতিবাজ বা চোরদের কেউ কেউ ধরা পড়ছে। কিন্তু একজনও বিচারের মুখোমুখি হয়নি। দুদক কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে বলে খবর শোনা যায়। কিন্তু ওই তদন্ত শেষ হওয়ার খবর আর শোনা যায় না। কোনোটা শেষ হলেও অভিযোগ প্রমাণ হয় না।
যারা ফেঁসে যায়, তারা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই ফাঁসে। তার মানে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে। তো, এই তথ্য থাকার পরও চোরদের বছরের পর বছর চুরি করার সুযোগ দেওয়া হয় কেন?
এই যে করোনার প্রথম ধাপে মো. সাহেদ নামের এক দুর্বৃত্তকে পাকড়াও করে তাঁর সম্পর্কে, তাঁর বাটপারি নিয়ে কথা বলা হলো, কিন্তু কারা তাঁকে এমন দানবে পরিণত করল এবং তা কেন আড়ালে থাকল? এটা কি ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার ভয়ে?
কুয়েত-কেলেঙ্কারির হোতা লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম ওরফে পাপুল এবং তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কত কিছু হলো। তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হলো। কিন্তু তাঁর উত্থান হলো কীভাবে? আওয়ামী লীগের কোন প্রভাশালীরা কিসের বিনিময়ে তাঁকে এমন দুর্বৃত্ত হতে সহায়তা করলেন, তাঁদের তো টিকিটিও ধরা হলো না। এভাবে নেপথ্য নায়কদের আড়াল করে প্রকাশ্য খলনায়ককে বেত মারলে এমন ভয়ংকর ব্যক্তিদের উত্থান আওয়ামী লীগে অব্যাহত থাকবে না?
আমি বারবার বলি, আওয়ামী লীগের অনেক সঞ্চয় আছে। কিন্তু সেই সঞ্চয়ের যেভাবে অপচয় হচ্ছে, তাতে দেউলিয়া হতেও বেশি সময় লাগবে না।
মানুষের কাছে অসংগতিগুলো যখন ধরা পড়ে তখন তারা হতাশ হয়। প্রশংসার পরিবর্তে তখন নিন্দা করে, অথবা যারা নিন্দা করে তাদের ‘সহমত’ ভাই-বোন হয়ে যায়!
কেউ যখন ‘ধরা খায়’, তখন তার গুষ্টি উদ্ধার করে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা শুরু হয়। ধরা না-খাওয়া কারও বিরুদ্ধে খবর সাধারণত দেখা যায় না। কোনো গণমাধ্যমে তেমন খবর ছাপা হলেও তা আমলে নেওয়া হয় না। শত্রুপক্ষের রটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, সরকার বা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এসব মহলবিশেষের ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এখন অনেকের কাছেই হাস্যকর মনে হয়।
বিপদ তাদের, যারা শেখ হাসিনাকে ‘শেষ ভরসা’ বলে মনে করে। এমন সব ঘটনা ঘটে বা ঘটানো হয়, যার পক্ষে দাঁড়ানো হাসিনাদরদিদের পক্ষেও নৈতিকভাবে সম্ভব হয় না।
সে জন্যই দরকার সরকারি প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে ধারাবাহিক শুদ্ধি অভিযান। যেখানে রোগমুক্তির জন্য শল্য চিকিৎসা দরকার, সেখানে টোটকা চিকিৎসা করলে উপকার পাওয়া যাবে কীভাবে?
বলা হয় ‘সিস্টেম’ বদল করা সহজ নয়। তাই ‘সমঝোতা’ করেই চলতে হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় সমঝোতার পথ আত্মঘাতী। আলেন্দে বাঁচেননি, কাস্ত্রো বেঁচেছেন।
মৌচাকে ঢিল দিয়ে মৌমাছির কামড় সহ্য করলেই না মধু পাওয়া যায়। যারা দেশপ্রেম থেকে, দায়িত্ববোধ থেকে কথা বলার চেষ্টা করে, তাদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু অতি অনুগতরা বিপদের দিনে লাপাত্তা হলেও যাদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় তারা বিপদের মুহূর্তেও ঠিকই পাশে থাকবে। খারাপ সময়ে কাছে পাওয়া যাবে না ‘চাটার দল’-কে। তাই চাটার দল হইতে সময় থাকতেই সাবধান হওয়া জরুরি!
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিতর্ক যাঁর নিত্যসঙ্গী, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যবসায়ী থেকে রাষ্ট্রনায়ক বনে যাওয়া আশি ছুঁই ছুঁই এই ব্যক্তি এমন সব কর্মকাণ্ড করছেন, যেগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্টদের চর্চিত ধ্রুপদি সংস্কৃতির সঙ্গে বেমানান। ট্রাম্প এমন অনেক নীতি গ্রহণ করছেন, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র বা তাঁর ঘোষিত লক্ষ্যের
১৩ ঘণ্টা আগেদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। আয়তন ১২৬ বর্গকিলোমিটার। হাওরের অবস্থান সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলায়। এই হাওর শুধু মিঠাপানির জলাভূমিই নয়; নয়নাভিরাম এবং জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আধার। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষের জীবিকার উৎসস্থল এই হাওর।
১৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে মাছ ধরতে জেলেরা এখন প্রাচীন পদ্ধতি আর ব্যবহার করছেন না। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের খবর। জেলেরা এক ধরনের অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বা গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ শিকার করছেন। এই ট্যাবলেট অত্যন্ত ক্ষতিকর। কেননা, এটি পানিতে ফেললে জলে থাকা সব মাছ তো মারা যায়ই, সঙ্গে মাটির নিচের মাছগুলোও
১৩ ঘণ্টা আগেচুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা—এই প্রবাদকে সত্যে পরিণত করেছেন জনৈক চোর। মাওলানা ভাসানী সেতুর সড়কবাতির তার চুরি করার পর এবার তিনি চুরি করেছেন শতাধিক রিফ্লেক্টর লাইট। পাঠক, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২৫ আগস্ট, সোমবার আমরা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুর তার চুরির প্রতিবেদন
১৩ ঘণ্টা আগে