Ajker Patrika

ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ

১৫ বছরে দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়ে দ্বিগুণ

  • ঢাকার মোট ভূমির মাত্র ৭% রাস্তাঘাট। এর মাত্র ২.৫% গণপরিবহন উপযোগী।
  • সারা দেশে নিবন্ধিত ব্যক্তিগত গাড়ি আছে ৪ লাখের বেশি।
  • নিবন্ধিত মোটরসাইকেল রয়েছে ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৮টি।
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে ঘটছে উল্টো। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১৫ বছরে ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

বর্তমানে সারা দেশে ৪ লাখের বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। প্রতিদিন এই বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন গাড়ি। একই সঙ্গে বেড়েছে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও; অথচ সড়ক বাড়েনি। শহরের মোট ভূমির মাত্র ৭ শতাংশ রাস্তাঘাট। এর মধ্যে গণপরিবহন উপযোগী সড়ক মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তিগত গাড়ি অল্প যাত্রী বহন করলেও সড়কের বড় অংশ দখল করছে। এর ফলে যানজটের পাশাপাশি বায়ুদূষণে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে।

জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মানুষকে আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা এবং হাঁটার জন্য ফুটপাত দিতে হবে; যাতে মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে গণপরিবহনে আকৃষ্ট হয় এবং সহজে হাঁটতে পারে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত প্রাইভেট কার (ব্যক্তিগত গাড়ি) আছে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩টি। ২০১০ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৯৮৯টি। অর্থাৎ গত প্রায় ১৫ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে প্রাইভেট কার। এদিকে সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা বর্তমানে ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৮টি, যেখানে ২০১০ সালের আগে তা ছিল মাত্র ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫১৪টি। অর্থাৎ ৬ গুণের বেশি বেড়েছে মোটরসাইকেল। নিবন্ধিত প্রাইভেট কারের ৩ লাখ ৫৪ হাজার ২২৬টিই ঢাকায়। রাজধানীতে মোটরসাইকেল রয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫৪টি।

ঢাকার বেশ কিছু পরিবারে প্রত্যেক সদস্যের জন্য একটি বা তারও বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি থাকার কথা জানা যায়। কোনো কোনো বাড়িতে কাজের লোকের জন্যও পৃথক গাড়ি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তিগত গাড়ির এই ধরনের অপব্যবহারই রাজধানীতে বাড়তি চাপ তৈরি করছে।

বুয়েটের এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার সড়কে রিকশার কারণে ৬৪ শতাংশ যানজট সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে ২৯ শতাংশ, বাসের কারণে ৫ শতাংশ এবং তিন চাকার গাড়ির কারণে ২ শতাংশ যানজট হয়।

এমন পরিস্থিতিতে ২০১৩ সালের জাতীয় পরিবহন নীতিমালায় ব্যক্তিগত গাড়ি কমানো এবং গণপরিবহন বাড়ানোর কথা বলা হলেও বাস্তবে তেমন অগ্রগতি হয়নি।

নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কমিয়ে হাঁটা, সাইকেল কিংবা গণপরিবহন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশে ২০০৬ সাল থেকে বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হচ্ছিল। ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন শুরু হয়। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সমাজ ও স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সীমিত করি’।

বুয়েটের এক জরিপে দেখা গেছে, রিকশায় ৪০ শতাংশ, বাসে ৩০ শতাংশ, প্রাইভেট কার ও থ্রি-হুইলারে ৫ শতাংশ করে যাত্রী চলাচল করে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষসহ (ডিটিসিএ) বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। জানতে চাইলে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তার বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি কমালে গণপরিবহনের দরকার হবে। কিন্তু এখনো আমরা উন্নত গণপরিবহনব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। একই সঙ্গে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর সুপারিশ করা যেতে পারে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘সরকার অনেকবার বলেছে, একটি পরিবারে দুটির বেশি গাড়ি অনুমোদন দেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে তা কখনোই কার্যকর হয়নি। বরং সরকারি পর্যায়ে কর্মকর্তাদের গাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ না করে প্রণোদনামূলক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের সড়কে কতসংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি এবং কত গণপরিবহন চলবে, এ ব্যাপারেও কোনো সুস্পষ্ট নীতি সরকার নির্ধারণ করতে পারেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত