Ajker Patrika

‘অবৈধ’ গাড়ি চলে গোঁজামিলে

  • প্রকল্পের জন্য কেনা গাড়ি কাজ শেষেও পুলে না দিয়ে চলছে ব্যবহার
  • এসব গাড়ির জন্য প্রশাসনিক অনুমতি নেই, টিওঅ্যান্ডইভুক্তও নয়
  • অনুমতি, টিওঅ্যান্ডই না থাকলে গাড়ির জন্য বরাদ্দ দেওয়া যায় না
রাহুল শর্মা, ঢাকা 
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭: ১২
‘অবৈধ’ গাড়ি চলে গোঁজামিলে

প্রশাসনিক অনুমতি এবং টেবিল অব অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট (টিওঅ্যান্ডই) ভুক্ত হওয়া ছাড়াই চলছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের ৭৭টি গাড়ি। ফলে এসব গাড়ির জন্য খরচের (জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ) আইনি ভিত্তি নেই। ‘গোঁজামিল’ দিয়ে চলছে টাকা বরাদ্দ। যেন মাসে মাসে এসব গাড়ির খরচ জোগাচ্ছে ‘ভূতে’।

আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি দপ্তর বা সংস্থা কোনো গাড়ি ব্যবহার করলে সে জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন নেওয়া এবং টিওঅ্যান্ডইভুক্তি বাধ্যতামূলক। এসব না থাকলে সংশ্লিষ্ট গাড়ির জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট সরকারি বরাদ্দ রাখার সুযোগ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাউশির ওই ৭৭ গাড়ির জন্য খরচ নিয়মের মধ্যে হচ্ছে না।

অবশ্য মাউশি সম্প্রতি এই ৭৭টি গাড়ি টিওঅ্যান্ডইভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব গাড়ি ব্যবহারের জন্য ‘ভূতাপেক্ষ’ অনুমোদন চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মজিবর রহমান বলেছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই, অবশ্যই তিনি খোঁজখবর নেবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর মাউশি দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। সারা দেশে এই দপ্তরের অধীন ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং এসব আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীন জেলা শিক্ষা অফিস রয়েছে। নথিপত্র ঘেঁটে এবং মাউশির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে মাউশির প্রধান কার্যালয়, আঞ্চলিক ও জেলা কার্যালয়ে ১০৩টি গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ২৬টি গাড়ি মাউশির সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) আওতায়। এসব গাড়ির জ্বালানি ও অন্যান্য খরচও এই প্রকল্প থেকে ব্যয় হচ্ছে। বাকি ৭৭টি গাড়ি এরই মধ্যে সমাপ্ত হয়ে যাওয়া একাধিক প্রকল্পের। মাউশি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত দপ্তরটির মাত্র পাঁচটি গাড়ি টিওঅ্যান্ডইভুক্ত করা হয়েছে। বাকি গাড়িগুলো টিওঅ্যান্ডইভুক্তি ছাড়াই ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব গাড়ির বেশির ভাগই টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট (টিকিউআই), সেসিপসহ একাধিক প্রকল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, কোনো প্রকল্প শেষ হলে ৬০ দিনের মধ্যে প্রকল্পটির সব সচল যানবাহন সরকারি পরিবহন পুলে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রকল্প পরিচালকের প্রতি এমন নির্দেশনা দিয়ে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি হয়। গাড়িগুলো টিওঅ্যান্ডই তালিকাভুক্ত করারও বিধান রয়েছে। টিওঅ্যান্ডই তালিকাভুক্তির অর্থ হলো সরকারি দপ্তর বা সংস্থার সাংগঠনিক কাঠামোয় অনুমোদিত যানবাহন; যা সাধারণত কোনো কর্মকর্তার পদের বিপরীতে তাঁর যাতায়াতের সুবিধার্থে বরাদ্দ করা হয়। এসব গাড়ি ব্যবহারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত নিয়মকানুন মানা বাধ্যতামূলক এবং এসব গাড়ির জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ থাকে।

জানতে চাইলে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী ১৫ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারি দপ্তরের চলমান গাড়ি অবশ্যই টিওঅ্যান্ডইভুক্ত হতে হবে। এটা আইনি বাধ্যবাধকতা। কারণ, দপ্তর বা সংস্থার প্রাধিকারভুক্ত পদের বিপরীতেই গাড়ি বরাদ্দ থাকে; যা সাংগঠনিক কাঠামোতে উল্লেখ রয়েছে। টিওঅ্যান্ডইভুক্ত যানবাহন ছাড়া অন্য যানবাহনের জন্য অফিশিয়ালি অর্থ ব্যয়ের (জ্বালানি-রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য খরচ) সুযোগ নেই।

তবে মাউশির ব্যবহার করা ৭৭টি গাড়ির ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানা হয়নি। অবশ্য গত ১৯ আগস্ট এই ৭৭ গাড়ি টিওঅ্যান্ডইভুক্ত করার জন্য অনুমতি চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান। ওই চিঠিতে মাউশির প্রধান কার্যালয়, ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর্মপরিধি অনুযায়ী তাঁদের প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে সদ্য সমাপ্ত তিনটি প্রকল্পের আওতায় কেনা গাড়িগুলো নিয়মিত কার্যক্রমে ব্যবহারের অনুমতি দিতে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে ৭৭টি গাড়ি ব্যবহারের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন চাওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ৭৫টি মিতসুবিশি নাটিভা, পাজেরো ও আউটল্যান্ডার ব্র্যান্ডের জিপ। বাকি দুটি মাইক্রোবাস। এসব গাড়ির মধ্যে ৭৪টি গাড়িই টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট (টিকিউআই-১ ও ২) প্রকল্পের অধীনে কেনা হয়েছিল। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে ২০০৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। দু্টি গাড়ি ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ (নানড) প্রকল্পের। সম্প্রতি এই প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি একটি গাড়ি পোস্টগ্র্যাজুয়েট কলেজসমূহের উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে কেনা হয়েছিল। এই প্রকল্প ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেষ হয়। এসব গাড়ির মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে ৯টি, আঞ্চলিক কার্যালয়ে ৫টি এবং বাকি ৬৩টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে।

গাড়ির পেছনে ব্যয় কত

মাউশির নথি থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) মাউশির প্রধান কার্যালয়ের মোট ১০টি গাড়ি ব্যবহারের (১ গাড়ির অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে) জন্য মোট ৪৪ লাখ ২ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বছরে জ্বালানি তেল খরচ ২৭ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা, বছরে অতিরিক্ত তেল খরচ ভ্রমণ ৬ লাখ ৮০ হাজার ৪০০ টাকা, বছরে মেরামত খরচ ৭ লাখ ৫০ হাজার এবং অতিরিক্ত খরচ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অন্যান্য কার্যালয়ের গাড়ির জন্য বার্ষিক বরাদ্দের তথ্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকার বাইরের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতি গাড়ির জন্য মাউশি থেকে মাসিক ১০০-১২০ লিটার জ্বালানি তেল এবং বার্ষিক মেরামত বাবদ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের জন্য মাসিক ১৮০ লিটার জ্বালানি তেল এবং মেরামত বাবদ বার্ষিক ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

সূত্র বলছে, প্রকল্প চলমান থাকা অবস্থায় বেশির ভাগ গাড়ির পরিচালন ব্যয় প্রকল্প থেকে দেওয়া হতো। কিন্তু একাধিক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে গাড়ির খরচ মাউশি থেকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে মাউশির বরিশাল আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক মো. ওমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এত দিন সেসিপ প্রকল্প থেকে গাড়ির জ্বালানি ও অন্যান্য খরচ দেওয়া হতো। এখন মাউশি থেকে খরচ দেওয়া হচ্ছে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। বিভিন্নভাবে তা (গাড়ির খরচ) ‘ম্যানেজ’ করা হতো।

মাউশির রাজশাহীর আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে যা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। বাড়তি অর্থ ব্যক্তিগতভাবে খরচ করা হয়।

এ বিষয়ে মাউশির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, টিওঅ্যান্ডইভুক্ত না হওয়ায় ওই ৭৭ গাড়ির জ্বালানি ও অন্যান্য খরচের কোনো বৈধতা নেই। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন খাত থেকে তাঁরা অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছেন।

টিওঅ্যান্ডইভুক্ত ছাড়া মাউশির ৭৭টি গাড়ির পেছনে অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি চাকরির বিধিবিধানের বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ১৪ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, টিওঅ্যান্ডইভুক্ত ছাড়া সরকারি কাজে কোনো গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ নেই। কারণ, এসব গাড়ি সরকারি নথিভুক্ত বা অনুমোদিত নয়। এসব গাড়ি বাবদ অর্থ ব্যয় (জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ ও গাড়িচালকের বেতন) আর্থিক অনিয়ম। কোনো দপ্তর যদি টিওঅ্যান্ডইভুক্তি ছাড়া গাড়ি ব্যবহার করে, তা অবশ্যই তদন্তের আওতায় আনতে হবে।

মাউশির অধীনে সারা দেশে চলমান গাড়িগুলোর পেছনে খরচের বিষয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তাঁরা অপারগতা জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে তথ্য দিতে নিষেধ আছে।

ওই ৭৭ গাড়ির বিষয়ে মাউশির উপপরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মো. শাহজাহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি পরিচালক (অর্থ ও ক্রয়) অধ্যাপক গোপীনাথ পালের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। গোপীনাথ পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অল্প কিছুদিন হলো এই বিভাগে এসেছি। এ বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য জানা নেই। তবে কিছু জেলায় তেল ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খানকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করা হলেও ধরা হয়নি। পরে সরাসরি কথা বলতে তাঁর দপ্তরে গিয়েও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করে পাওয়া যায়নি। সচিবালয়ে তাঁদের দপ্তরে গিয়েও সাক্ষাৎ মেলেনি।

পরে যোগাযোগ করা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মজিবর রহমান ১৬ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অবশ্যই খোঁজখবর নেওয়া হবে।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ১৬ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকা'কে বলেন, মাউশির মতো প্রতিষ্ঠান যদি সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম। এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গণতন্ত্রের মূল কথা হলো জনগণ ভোট দিতে পারবে: অ্যাটর্নি জেনারেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মহৎ উদ্দেশ্য ছিল জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। গণতন্ত্রের মূলকথা হলো, জনগণ ভোট দিতে পারবে। ভোটাধিকার প্রয়োগটাই এখানে মুখ্য। সে কারণে ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করা) আনা হয়েছিল। সেই ত্রয়োদশ সংশোধনী আপিল বিভাগ বাতিল করলেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। তার প্রধানত দুটি কারণ–একটি হলো এটা নির্বাচিত সরকার না। আরেকটি হলো, এটাতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগে আজ নবম দিনের মতো এ বিষয়ে শুনানি হয়। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ তাদের শুনানি শেষ করে। এরপর ১১ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী আপিল বিভাগ বাতিল করলেন এজন্য যে, বিচারকেরা প্রধান বিচারপতি, প্রধান উপদেষ্টা ইত্যাদি হওয়ার লোভ সামলাতে পারবেন না। যদি এটিই সত্য হয়, তাহলে যেসব বিচারপতি প্রধান বিচারপতি হওয়ার লোভে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে রায় দিয়েছিলেন, সেই সিস্টেমটা বদলানো দরকার।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, এটা প্রমাণিত হয়েছে, নির্বাচিত সরকার হলেই গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারে না। প্রমাণিত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে নিরপেক্ষভাবে, স্বাধীনভাবে, উন্মুক্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

রায় কার্যকর হওয়া প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই রায় সেই দিন থেকেই কার্যকর হবে। তবে জুলাই বিপ্লবের পর একটি সরকার গঠিত হয়েছে। রাজপথ থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে এ দেশের সরকার প্রধান কে হবেন, কোন ধরনের সরকার হবে। দেশের প্রধান বিচারপতি কে হবেন, সেটাও রাজপথ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে। এই যে রেভ্যলুশনের (বিপ্লবের) বিজয়ী শক্তি, এটাকে রেভ্যলুশনের থিওরি জুরিসপ্রুডেন্স বলে। এ থিওরি অনুসারে, এই সরকার একটা নির্বাচনের পথ ধরে হেঁটে গেছে। সেই নির্বাচনের পথে হাঁটতে গিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এই সরকারের পরে যে সরকার আসবে, সেখান থেকে যদি কার্যকর করেন সেখানে কোনো ব্যত্যয় হবে না।’

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সরকার প্রধান যখন ৫ আগস্ট পালিয়ে যায়, তার ক্যাবিনেট যখন পালিয়ে যায়, তার সংসদ সদস্যরা যখন পালিয়ে যায়, তখন রাষ্ট্রপতির সামনে যখন কোনো পথ খোলা থাকে না। রাষ্ট্রপতি ১০৬ ধারায় সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে মতামত নিয়ে সরকার গঠন করেছেন। এই সরকার গঠন শুধু সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ওপর নির্ভর করে না। বিপ্লবের তত্ত্ব অনুসারে মুক্তিকামী জনগণ, বিজয়ী জনগণ, স্বাধীন জনগণ, গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকারী জনগণ যেভাবে নির্ধারণ করবেন—সেটাই সংবিধান, সেটাই আইন। সুতরাং রেভ্যলুশনারি থিওরিতে যে জুরিসপ্রুডেন্স স্বীকার করা হলো, গ্রহণ করা হলো—সেই থিওরিটাকেই আমরা হাইলাইট করছি। ১০৬ সব নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে টাকা আত্মসাৎ, ৬ এজেন্সির মালিক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে টাকা আত্মসাৎ, ৬ এজেন্সির মালিক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৫২৫ কোটি টাকার বেশি আদায় করে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির ১১ মালিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৬টি পৃথক মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন কমিশনে মামলাগুলোর অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মো. আক্তার হোসেন বলেন, এসব রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও কর্মকর্তারা মালয়েশিয়াগামী ৩১ হাজার ৩৩১ জন কর্মীর কাছ থেকে সরকারনির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার পরিবর্তে পাঁচ গুণ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে ৫২৫ কোটি ২২ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেন।

দুদকের সূত্র বলেছে, মেসার্স আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে ৭ হাজার ৪৩০ জনের কাছ থেকে ১২৪ কোটি ৪৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের মালিক রুহুল আমিনকে আসামি করা হচ্ছে। মেসার্স মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে ৩ হাজার ৪৮৯ জনের কাছ থেকে ৫৮ কোটি ৪৪ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, তাঁর স্ত্রী এবং কোম্পানির এমডির নামে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

৩ হাজার ৩২১ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫৫ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা আদায়ের অভিযোগে সাদিয়া ইন্টারন্যাশনালের শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানের বিরুদ্ধে এবং ৮ হাজার ১০১ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১৩৫ কোটি ৬৯ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা আদায়ের অভিযোগে ইম্পেরিয়াল রিসোর্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসাইন ও এমডি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

৫ হাজার ২০২ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৮৭ কোটি ১৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগে আরআরসি হিউম্যান রিসোর্স সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও এমডি মো. আলমগীর কবীর এবং ৩ হাজার ৭৮৮ জনের কাছ থেকে ৬৩ কোটি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগে থানেক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সাবেক এমডি আব্দুল্লাহ শাহেদ, পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন নোমানী ও এমডি শমসের আহমেদের নামে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১১ মার্চ ৩২ জনের বিরুদ্ধে এবং ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বর ১৩টি রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করেছিল মালয়েশিয়া। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেশটি পুনরায় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি করে। তখন শ্রমিক ভিসায় যেতে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা ফি নির্ধারণ করে সরকার, যা ২০২২ সালে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অফিস আদেশের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অ্যাটর্নি জেনারেল পদে থেকেও নির্বাচন করতে পারেন: আসাদুজ্জামান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২০
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি

ক্ষমতায় (পদে) থেকেও অ্যাটর্নি জেনারেল জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন, এখানে অস্পষ্টতার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত আপিলের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) নিজ কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারের কর্মচারী নন, সংবিধানের ৬৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রের আইনজীবী। অ্যাটর্নি জেনারেল ক্ষমতায় থেকেও নির্বাচন করতে পারেন। এখানে কোনো অ্যাম্বিগুইটির (অস্পষ্টতা) কিছু নেই। এটা সেটেল ল।

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমি যতক্ষণ অ্যাটর্নি জেনারেল আছি, ততক্ষণ রাষ্ট্রের আইনজীবী। দায়িত্ব পালনের সময় আমি রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগ করেছি। এর বাইরে না, এর ওপরে-নিচে কোনো জায়গায় না। অ্যাটর্নি জেনারেল যদি মনে করে, সরকারের কোনো অ্যাকশন ডিফেন্ডেবল না, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর; আমি সেই সরকারের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারি—দ্যাট ইজ ল।’

এর আগে গতকাল বুধবার পদ ছেড়ে দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে ভোট করার কথা জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ভোট করব। আমি নমিনেশন ওখানে চেয়েছি। আমি ভোট করব, আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আছি এখনো। আমার অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছেড়ে গিয়ে আমি ভোট করব। যখন সময় আসবে, তখন করব।’

গত বছরের ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পুলিশ সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশ সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত

সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রতারক চক্র জনপ্রতিনিধি বা শীর্ষ কর্মকর্তাদের ছবি প্রোফাইল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে টাকা দাবি করছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) পুলিশ সদর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোনো আইডিতে পরিচিত ব্যক্তির ছবি থাকলেই সেটি তাঁর নিজের নম্বর—এমন ধারণা করা ঠিক নয়। এ ধরনের বার্তায় প্রতিক্রিয়া না দেওয়ার এবং সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে। এ ধরনের প্রতারণায় কেউ জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত