Ajker Patrika

চীনের অবাধ প্রভাব ইন্দো-প্যাসেফিকে সার্বভৌমত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ, নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ২২: ০৯
চীনের অবাধ প্রভাব ইন্দো-প্যাসেফিকে সার্বভৌমত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ, নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র

চীনের অবাধ প্রভাব ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব এবং কৌশলগত স্বশাসনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এ কারণে এই অঞ্চলে ভারসাম্য ও সমৃদ্ধির স্বার্থে আগামী দশকগুলোতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের তৎপরতায় নজরে রাখবে যুক্তরাষ্ট্র।

ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল সম্মেলনের ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রতিযোগিতা’ শীর্ষক অধিবেশনে আজ সোমবার ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ কথা বলেন।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অধিবেশনে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকলস, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার এ অঞ্চল নিয়ে তাঁদের দেশের অবস্থান ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। গতকাল শনিবার তিন দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল সম্মেলন’ শুরু হয়েছে।

চীনের প্রভাব বৃদ্ধি ও বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষের কথা তুলে ধরে পিটার হাস বলেন, ‘অবশ্যই এই অঞ্চল নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। চীনের প্রভাব বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে যে সমৃদ্ধি চায় তা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।’

পিটার হাস আরও বলেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এই অঞ্চলে একটি নতুন যুগের ইঙ্গিত দিয়েছে। এটি একটি উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে আমাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেটিকে কৌশলগত চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে। কর্তৃত্ববাদী শক্তি আন্তর্জাতিক বিষয়ে মৌলিক নিয়ম পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। আমাদের অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্কতার সঙ্গে এই সন্ধিক্ষণে আসতে হবে।’

এই অঞ্চলের নীতি নিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত পোষণ করে পিটার হাস বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি বলতে একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চল বলেছেন, এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সর্বতোভাবেই একমত।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আগামী দশকগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে চীনের প্রভাবের দিকে নজর রাখবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে আন্তর্জাতিক নীতিভিত্তিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে।’

পিটার হাস বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে বলেন, ‘তাঁরা ভাবেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আধিপত্য বিস্তার করে। মূলত এটি সারা বিশ্বের মানবাধিকারের জন্য একটা সাধারণ অধিকার। এটার জন্য বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রই সম্মত হয়েছে। এটা কখনো আধিপত্য নয়। এটা গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশের কথা বললে—তারা পূর্ব বা পশ্চিম কাকে অনুসরণ করবে সেটা বিষয় না। বিষয় হচ্ছে, তারা আমাদের ওই ধারণা বিশ্বাস করে কি না বা একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এটা বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত তারা কী করবে।’

এ সময় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ১৭ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকের কর্মসংস্থান রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির ৫০ ভাগ এই অঞ্চলকেন্দ্রিক। ৬০ ভাগ পণ্য এই অঞ্চলের জলসীমা ব্যবহার করে জাহাজে পরিবহন করা হয়। যুক্তরাজ্য সব সময় মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চায় যেখানে সার্বভৌমত্ব থাকবে। এই অঞ্চলে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা থাকবে স্থিতিশীল, দীর্ঘমেয়াদি। এই অঞ্চলের দেশগুলো ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে চায় যুক্তরাজ্য।’

তিনি বলেন, ‘কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র হওয়ার কারণে যুক্তরাজ্যের নীতি থাকবে গণতন্ত্র ও মুক্ত বাণিজ্য। বাংলাদেশ একসময় গরিব দেশ ছিল। তবে এখন এটি অর্থনৈতিকভাবে অনেক সমৃদ্ধিশালী হচ্ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে এটি উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে যাবে। যুক্তরাজ্য শুরু থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে আছে ও এই অঞ্চল নিয়ে কাজ করবে।’

কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকলস বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসেফিক বিশ্ব ও কানাডার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি কানাডার জন্য দ্বিতীয় ব্যবসায়িক ক্ষেত্র। কানাডা কখনোই চায় না এই অঞ্চলে প্রতিযোগিতার কারণে কোনো ধরনের সংঘাত হোক।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘কানাডা এই অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করছে। কানাডা মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য চাপ দেবে। এটা ভুলে গেলে চলবে না।’

অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার বলেন, ‘দক্ষিণ চীন সাগরে একধরনের উদ্বেগ কাজ করে। সেখানে চীন ও উত্তর কোরিয়া সামরিক মহড়া ও পরীক্ষা চালাচ্ছে। আশপাশের দেশগুলো এসব বিষয়ে উদ্বিগ্ন।’

দিনের আরেকটি অধিবেশনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর এইচ ই চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে। সে নিজেই তার সমস্যার সমাধান খুঁজতে পারে। ইইউ সারা পৃথিবীতেই যেসব দেশের সঙ্গে কাজ করে সেখানে তার আগ্রহের জায়গা থাকে। সব সময় দাতব্য সম্পর্ক থাকবে এমন নয়। বাংলাদেশ তাদের মধ্যে একটি। ইইউ সব দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও শাসন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত