Ajker Patrika

সাবেক ঢাবি ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে শেখ হাসিনার ‘ফোনালাপ’ ট্রাইব্যুনালে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ১৯
সাবেক ঢাবি ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে শেখ হাসিনার ‘ফোনালাপ’ ট্রাইব্যুনালে

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম, ইনান, শয়ন–তাঁদের নিজের বাসায় ডেকে সংঘবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনাকে ফোনে বলেন, ‘ওরা (ছাত্রলীগ নেতারা) আমার বাসায় ছিল সন্ধ্যা থেকে। আমি খবর পাচ্ছিলাম, ওদেরকে আমি ডেকে নিয়ে আসছি। ওরাও আসছে। ওদের সঙ্গে বসে ওদের হলে হলে যেন ছাত্রলীগকে সংঘবদ্ধ রাখে এবং ঢাকা উত্তর, দক্ষিণকে যেন খবর দেয়। এগুলো করতে করতেই হাজার হাজার ছেলেমেয়ে একত্র হয়ে গেছে।’

আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনা ও ঢাবি ভিসি এ এস এম মাকসুদ কামালের কথোপকথনের অডিওতে এসব কথা বলতে শোনা যায়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারা দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দেওয়ার পর ওই অডিও শোনানো হয়। ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জোহা। তিনি এ মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর।

জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালকে পাঁচটি অডিও দেন তানভীর হাসান জোহা। এর মধ্যে চারটি শোনানো হয়। যার মধ্যে দুটি অডিও শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর। আর অন্য দুটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি এ এস এম মাকসুদ কামাল ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথোপকথনের। ট্রাইব্যুনালের আজকের এই বিচারিক কার্যক্রম বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। পরে জোহাকে জেরা করেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এই মামলার অপর আসামি পুলিশের সাবেক প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। চৌধুরী মামুন এরই মধ্যে রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

আদালতে উপস্থাপন করা শেখ হাসিনা ও মাকসুদ কামালের কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো—

শেখ হাসিনা: হ্যালো

মাকসুদ কামাল: আপা, স্লামালাইকুম।

শেখ হাসিনা: হ্যাঁ, ওয়ালাইকুম সালাম।

মাকসুদ কামাল: প্রত্যেক হল থেকে তো ছেলেমেয়েরা তালা ভেঙে বের হয়ে গেছে। এখন তারা রাজু ভাস্কর্যে চার-পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ে জমা হয়েছে। মল চত্বরে জমা হয়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে আমার বাসাও অ্যাটাক করতে পারে।

শেখ হাসিনা: তোমার বাসা প্রোটেকশনের কথা বলে দিছি।

মাকসুদ কামাল: জি জি।

শেখ হাসিনা: আগে একবার করছে।

মাকসুদ কামাল: ওই রকম একটা প্রস্তুতি...লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হয়েছে।

শেখ হাসিনা: লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হলে হবে না, আমি পুলিশ এবং বিডিআর হয়ে বিজিবি আর...বলছি খুব অ্যালার্ট থাকতে এবং তারা রাজাকার হতে চেয়েছে তো, তাদের সবাই রাজাকার। কী আশ্চর্য কোন দেশে বসবাস করি।

মাকসুদ কামাল: জি জি...বলতেছে আমরা সবাই রাজাকার।

শেখ হাসিনা: তো রাজাকারের তো ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও তা-ই করব। একটাও ছাড়ব না, আমি বলে দিছি। এই এত দিন ধরে আমরা কিন্তু বলিনি, ধৈর্য ধরছি, তারা আবার বাড়ছে।

মাকসুদ কামাল: বেশি বেড়ে গেছে এবং অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত.... তো আপা একটু ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাটা আরেকটু বাড়ানো... আর আমার বাসার ওইখানেও....।

শেখ হাসিনা: ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা করছি। সমস্ত ক্যাম্পাসে বিজিবি, র‍্যাব এবং পুলিশ—সব রকম ব্যবস্থা হয়েছে। তোমার বাসার ভেতরে লোক রাখতে বলছি। ভেতরে কিছু রাখা আছে। এত বাড়াবাড়ি ভালো না।

মাকসুদ কামাল: অসম্ভব এবং বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের ছেলেদেরকে মেরেছে। আরও দুই-একটা হলে একই কাজ করেছে। ছাত্রলীগের ছেলেপেলে—সাদ্দাম, ইনান, শয়ন ওরা আমার বাসায় ছিল সন্ধ্যা থেকে। আমি খবর পাচ্ছিলাম, ওদেরকে আমি ডেকে নিয়ে আসছি, ওরাও আসছে। ওদের সঙ্গে বসে ওদের হলে হলে যেন ছাত্রলীগকে সংঘবদ্ধ রাখে এবং ঢাকা উত্তর, দক্ষিণকে যেন খবর দেয়। এগুলো করতে করতেই হাজার হাজার ছেলেমেয়ে একত্র হয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা: কোন দেশে বাস করি আমরা। এদেরকে বাড়তে বাড়তে তো...রাজাকারদের কী অবস্থা হয়েছে দেখিস নাই, সবগুলাকে ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও ছাড়ব না।

মাকসুদ কামাল: হ্যাঁ, এবার এই ঝামেলাটা যাক, এরপরে আমিও নিজে ধরে ধরে যারা এই অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, মেইন যারা আছে, এদেরকে বহিষ্কার করব ইউনিভার্সিটি থেকে।

শেখ হাসিনা: সব এইগুলাকে বের করে দিতে হবে...আমি বলে দিচ্ছি আজকে সহ্য করার পরে অ্যারেস্ট করবে, ধরে নেবে এবং যা অ্যাকশন নেওয়ার নেবে। কারণ, ইংল্যান্ডে এ রকম ছাত্ররাজনীতির জন্য মাঠে নামল, কতগুলি মেরে ফেলে দিল না?

মাকসুদ কামাল: জি জি জি।

শেখ হাসিনা: ওই অ্যাকশন না নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমরা এত বেশি সহনশীলতা দেখাই। আজ এত দূর পর্যন্ত আসছে।

মাকসুদ কামাল: আমি ছাত্রলীগকে বলছি যে, তোমরা কোনো ধরনের ইয়ে করতে যাইও না। যেহেতু আদালতের বিষয়, আদালত নিষ্পত্তি করবে।

শেখ হাসিনা: না এ আদালত হবে না, আবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিছে।

মাকসুদ কামাল: আবার রাষ্ট্রপতিকে কেউ এই রকম বলে যে ২৪ ঘণ্টার রাষ্ট্রপতিকে কেউ আলটিমেটাম দেয় একটা দেশে!

শেখ হাসিনা: রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছে। বেয়াদবির একটা সীমা থাকে...!

মাকসুদ কামাল: আপা, যদি অন্য কোনো খারাপের দিকে যায়, আমি আপনাকে আবার একটু জানাব। কিন্তু রাতের বেলা জানাব না, হয়তোবা আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টার মধ্যে হলে জানাব।

শেখ হাসিনা: কোনো অসুবিধা নাই...আমি সব সময়ই ফ্রি।

মাকসুদ কামাল: জি জি জি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি থেকে বাদ

ঘরে সদ্য বিবাহিত বিক্রয় প্রতিনিধির লাশ, চিরকুটে লেখা ‘জীবন খুবই কঠিন’

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করেও মুখে দুর্গন্ধের কারণ, পরিত্রাণের উপায়

২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর হাইস্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নয়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

বঙ্গবন্ধু জেন–জিদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, হাসিনা সবচেয়ে অজনপ্রিয়: জরিপ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত