Ajker Patrika

ভোটদানে আগ্রহ কমেছে, বিএনপির ভোটার সর্বোচ্চ: জরিপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটদানের আগ্রহ কিছুটা কমেছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি এখনও সর্বাধিক সমর্থন ধরে রেখেছে। ইনোভিশন কনসালটিং পরিচালিত ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে’ (PEPS)-এর দ্বিতীয় দফার ফলাফলে এই চিত্র উঠে এসেছে।

আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় আর্কাইভ মিলনায়তনে দ্বিতীয় দফার জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। এ বছরের মার্চে প্রথম পর্বের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল।

ভোটদানে আগ্রহ কমেছে

মার্চ মাসে প্রথম পর্বে যেখানে ৬২ শতাংশ উত্তরদাতা ভোট দেওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছিলেন, দ্বিতীয় দফায় সেই হার নেমে এসেছে ৫৭.৮ শতাংশে। তবে যারা ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক পছন্দ প্রকাশের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ৬৫.৭ শতাংশ থেকে দাঁড়িয়েছে ৮৩.২ শতাংশে।

পুরুষ, বয়স্ক এবং পরিবারভিত্তিক উত্তরদাতাদের মধ্যে ভোটদানের আগ্রহ তুলনামূলক বেশি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও নারীরা বেশি দ্বিধাগ্রস্ত। ভোট না দেওয়ার প্রধান কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ। পুরুষদের মধ্যে আবার বেশি উল্লেখ পাওয়া গেছে যে প্রিয় দল অংশগ্রহণ না করলে তারা ভোট দেবেন না।

রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন

দুই পর্বের জরিপে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের সমর্থন বেড়েছে— মার্চের ১৪ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১৮.৮ শতাংশে। বিএনপির সমর্থন সামান্য কমলেও (৪১.৭% থেকে ৪১.৩%) এখনও সর্বাধিক। জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন প্রায় অপরিবর্তিত থেকে ৩০.৩ শতাংশে রয়েছে। এনসিপি কমে দাঁড়িয়েছে ৪.১০ শতাংশে (আগে ছিল ৫.১০%) এবং ইসলামী আন্দোলনের ভোট বেড়ে হয়েছে ৩.১০ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ অংশ না নিলে বিএনপি (৪৫.৬%) এবং জামায়াত (৩৩.৫%) প্রধান সুবিধাভোগী হবে। উল্লেখযোগ্য অংশ (৮.৩%) জানিয়েছেন তাঁরা ভোট দেবেন না।

ভবিষ্যৎ সরকারের প্রতি প্রত্যাশা

ভবিষ্যৎ সরকারের অগ্রাধিকার অর্থনীতি থেকে সরে গিয়ে এখন নিরাপত্তা ও জবাবদিহিতায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নের দাবি সবচেয়ে বেশি (৫৭.৫%)। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণও বড় একটি উদ্বেগ (৫৪.৬%)। পাশাপাশি দুর্নীতি হ্রাস (৩৬.৯%) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্কারের (২০.৩%) দাবি বেড়েছে। অঞ্চলভেদে ভিন্নতা রয়েছে— বরিশাল ও ময়মনসিংহে আইন-শৃঙ্খলা অগ্রাধিকার, রাজশাহীতে কর্মসংস্থান ও দাম নিয়ন্ত্রণ প্রধান দাবি।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দৃষ্টিভঙ্গি

বেশিরভাগ উত্তরদাতা ভারত (৭২.২%) ও পাকিস্তানের (৬৯.০%) সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চান। তবে ভারতে দূরত্ব তৈরি করার পক্ষে থাকা উত্তরদাতার হার পাকিস্তানের তুলনায় কিছুটা বেশি। ধর্মীয় দিক থেকে পার্থক্য স্পষ্ট— মুসলিম উত্তরদাতারা উভয় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের পক্ষে, হিন্দু ও খ্রিস্টানরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তুলনামূলক অনীহা দেখিয়েছেন।

ভোটের সিদ্ধান্তের মানদণ্ড

ভোটারদের কাছে প্রার্থীর যোগ্যতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ (৬৫.৫%)। এরপর প্রার্থীর পূর্ববর্তী কাজ (১৪.৮%) এবং দলের প্রতীক (১৪.৭%)। দলের ইশতেহারকে গুরুত্ব দিয়েছেন মাত্র ৫ শতাংশ। জেন জেড প্রার্থীর দক্ষতা ও কাজকে অগ্রাধিকার দেন, আর বুমার্স+ প্রতীককে বেশি গুরুত্ব দেন। অঞ্চলভেদে ভিন্নতা— চট্টগ্রামে প্রতীকের গুরুত্ব বেশি (১৯.০%), ময়মনসিংহে সবচেয়ে কম (৫.৪%)।

রাজনৈতিক দলের মূল্যায়ন

দলীয় মূল্যায়নে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ অসন্তোষের মুখে (৩৩.৪৩%) এবং সর্বনিম্ন উচ্চ সন্তুষ্টি (১৫.৫২%) পেয়েছে। জামায়াতে ইসলামি সর্বোচ্চ উচ্চ সন্তুষ্টি পেয়েছে (৩০.৩৪%), যদিও এর অসন্তুষ্টির হারও বেশি (১৯.৭৪%)। বিএনপি ২১.৫% উচ্চ সন্তুষ্টি পেয়েছে, তবে অসন্তুষ্টির হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (২৭.৬৪%)।

পুরুষ ভোটাররা বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির প্রতি নারীদের তুলনায় বেশি সমর্থন ও অসন্তোষ দেখিয়েছেন। শহুরে ভোটাররা এনসিপি ও জামায়াতের প্রতি গ্রামীণদের চেয়ে বেশি সমর্থন জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে জনমত

জরিপে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে জনমত বিভক্ত। ৪৫.৭৯% মনে করে সব দলকে সুযোগ দেওয়া উচিত, আর ৪৫.৫৮% মনে করে আওয়ামী লীগকে বিচার না হওয়া পর্যন্ত অংশ নিতে দেওয়া উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরদাতাদের বেশিরভাগ (৬৩.০৫%) অংশগ্রহণের বিপক্ষে, পরিবারভিত্তিক উত্তরদাতারা অন্তর্ভুক্তির পক্ষে বেশি। রাজশাহী ও চট্টগ্রামে বিরোধিতা প্রবল, বরিশালে সমর্থন বেশি (৫৮.৫%)।

অতীত নেতাদের জনপ্রিয়তা

অতীত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর রেটিংয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমান সর্বাধিক জনপ্রিয়। প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা তাঁদের ৭০% এর বেশি রেটিং দিয়েছেন। জেন জেড ভোটারদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা জিয়ার তুলনায় বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে উভয়ের সমর্থন বেড়েছে এবং বুমার্স+ প্রজন্মে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।

খালেদা জিয়ার রেটিং মধ্যম স্তরে (৫০-৭০%) সর্বোচ্চ (৪৬.৫%), এরপর এরশাদ (৪৪.৩%)। শেখ হাসিনার রেটিং সবচেয়ে বেশি মেরুকৃত— ২১.৬% তাঁকে ০% রেটিং দিয়েছেন। আরেকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, জিয়াউর রহমান পুরুষ ভোটারদের মধ্যে নারীদের তুলনায় বেশি সমর্থন পান, যেখানে বঙ্গবন্ধুর সমর্থন দুই লিঙ্গেই প্রায় সমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি থেকে বাদ

ঘরে সদ্য বিবাহিত বিক্রয় প্রতিনিধির লাশ, চিরকুটে লেখা ‘জীবন খুবই কঠিন’

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করেও মুখে দুর্গন্ধের কারণ, পরিত্রাণের উপায়

বঙ্গবন্ধু জেন–জিদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, হাসিনা সবচেয়ে অজনপ্রিয়: জরিপ

২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর হাইস্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নয়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত