Ajker Patrika

বিদায় বিভুদা

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা 
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ০৬
প্রবীণ সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রবীণ সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিভুদা এভাবে চলে যাবেন, সেটা আমরা কেউ ভাবতেও পারিনি। আজকের পত্রিকা পরিবার গত বৃহস্পতিবার থেকেই ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিল। সেদিন সকাল ১০টা ১০ মিনিটে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। এরপর আর ফেরেননি। বউদি উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন, থানায় জিডি করা হয়েছিল। বিভুদা ফোন নিয়ে বের হননি, তাই কেউ খুঁজে পাচ্ছিল না তাঁকে।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে আজকের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল হাসানসহ আমরা যখন বিভুদার বাড়িতে যাই, তখনো মনে আশা, কোথাও হয়তো আছেন তিনি।

যখন ইচ্ছা বেরিয়ে আসবেন। দুশ্চিন্তা কাটবে সবার। কিন্তু বিভুদার অনুজ চিররঞ্জন সরকার যখন বিকেল ৫টার দিকে জানালেন, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার মেঘনা নদীতে একটি লাশ পাওয়া গেছে, ছবি দেখে মনে হচ্ছে বিভুদারই, তখন থেকেই বিষণ্নতায় আমাদের বসবাস।

কত স্মৃতিই না আছে বিভুদাকে ঘিরে। ১৯৯৬ সালে যখন পিএইচডি করে দেশে ফিরি, তখন দৈনিক সংবাদের পাশাপাশি বিভুদার চলতিপত্রে লেখালেখি করেছি। এরপর মৃদুভাষণেও লিখেছি দীর্ঘদিন। আজকের পত্রিকায় একসঙ্গে কাজ শুরু করেছি আমরা।

বিভুদা মাঝে মাঝে হতাশ হতেন। জীবনে কিছুই করতে পারলেন না বলে আক্ষেপ করতেন। মূলত তিনি যে মাপের সাংবাদিক, তাতে তাঁর আর্থিক সংগতি হলো না, এটাই ছিল আক্ষেপের বিষয়। কিন্তু এ কথা সত্যি, আজকের পত্রিকার বিভিন্ন ফ্লোরে গিয়ে তরুণদের সঙ্গে গল্প করতেন তিনি। সম্পাদনা সহকারীদের পাশে বসে লেখা সম্পাদনায় সহযোগিতা করতেন। আজকের পত্রিকার একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো, সবার সঙ্গে সব বিষয়ে কথা বলা যায়। বিভুদার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কতটা প্রাণবন্ত ছিলেন, আমুদে ছিলেন, আড্ডাবাজ ছিলেন, সে কথা বলতে গিয়ে স্থবির হয়ে যেতে চাইছে মন।

কখনো কখনো বলতেন, চাকরি ছেড়ে দেবেন। কামরুল ভাই তাঁকে ডেকে নিতেন। গল্প করতেন। তারপর তাঁর মন শান্ত হতো।

কলাম লেখক হিসেবে বিভুদার সুনাম ছিল সেই আশির দশক থেকেই। ক্ষুরধার ছিল তাঁর লেখনী। সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে তারিখ ইব্রাহিম নামে লিখতেন। তাতে তিনি তারকা সাংবাদিকের তকমা পেয়েছিলেন। এই বিষয়ে অনেক মজার ঘটনা বলতেন আসর করে।

একজন অভিভাবক হিসেবে তাঁকে শ্রদ্ধা করতাম। চাকরিতে নিয়োগের আগেই তাঁকে বলে নিয়েছিলাম, লেখালেখিতে তাঁর স্বাধীনতা থাকবে। তিনি প্রথিতযশা সাংবাদিক। সেভাবেই চলছিল আমাদের চারজনের সম্পাদকীয় পরিবার।

সাংবাদিকের কাজ সত্য বলা। চ্যালেঞ্জ করা। সে কাজটি করেছেন তিনি তাঁর লেখায়। যথাসম্ভব বস্তুনিষ্ঠ থাকতে চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাঁর অবস্থান ছিল পরিষ্কার। মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা দেখলে তিনি সুস্থির থাকতে পারতেন না।

আজকের পত্রিকার জন্য এ এক বড় আঘাত। অভিমান যে এত প্রগাঢ় হয়ে যুক্তিকে হারিয়ে দেবে, সে কথা আমরা কেউ ভাবতেই পারিনি। তাঁর নাতি পরমকে কী গভীর ভালোই না বাসতেন। শুক্রবার পরমকে কাছে থেকে দেখে এলাম। অবোধ শিশুটি জানে না, তাঁর পরমপ্রিয় দাদু আর ফিরবেন না। তাঁর পরিবারের পক্ষে এই শোক সহ্য করা কঠিন।

বিভুদাকে এত তাড়াতাড়ি বিদায় বলতে হবে, তা ভাবিনি কখনো। আশা করেছিলাম, তাঁর চিন্তাক্লিষ্ট মুখে হাসি ফুটবে নিশ্চয়ই। কিন্তু তা আর হলো কই? বরং শোকের রঙে রাঙিয়ে দিলেন দিনটি।

বিদায় বিভুদা। আপনাকে নিয়ে এ রকম একটি বিষণ্ন লেখাও লিখতে হবে, কে জানত!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ মিলল মেঘনায়, শোকাহত আজকের পত্রিকা

‘সামনে চমকপ্রদ বেশ কিছু ঘটনা ঘটবে, অনেক বিষয় আমি জানি’

‘মব’ সৃষ্টি করে ৩ কিশোরকে সেতুর সঙ্গে বেঁধে রাতভর পিটুনি, নিহত ১

সনদ জালিয়াতি: ব্যাংকের চাকরি যাওয়া জাহাঙ্গীরের স্কুল সভাপতির পদও গেল

এনসিটিবি: পাঠ্যবইয়ে আবার পরিবর্তন আসছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত