Ajker Patrika

গুম নিয়ে জাতিসংঘকে সন্তোষজনক জবাব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে ঢাকা

তাসনিম মহসিন, ঢাকা
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ৪২
গুম নিয়ে জাতিসংঘকে সন্তোষজনক জবাব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে ঢাকা

এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে মানুষ জোরপূর্বক বা অনিচ্ছাকৃত গুমের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে জাতিসংঘের। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের কাছে জবাব চাইছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স (ডব্লিউজিইআইডি)। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং এর বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশে গুম নিয়ে ডব্লিউজিইআইডিকে সন্তুষ্ট করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাংলাদেশের কাছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ডব্লিউজিইআইডির প্রশ্নের বিষয়ে তাদের অবগত করা নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় ছাড়াও পুলিশ, র‍্যাবসহ সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদ চৌধুরী। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘জোরপূর্বক বা অনিচ্ছাকৃত গুম নিয়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশের কাছে যা জানতে চেয়েছে, সে বিষয়ে তাদের অবগত করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা।’ 

বৈঠক সূত্র জানায়, গত এক দশকে বাংলাদেশের কাছে ৮৩ জনের গুম হওয়া নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েছে ডব্লিউজিইআইডি। এ নিয়ে আগে বৈঠক করে জাতিসংঘকে উত্তর দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে কোনোবারই জাতিসংঘ বাংলাদেশের উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তাই বিষয়টি এবার গুরুত্বসহকারে নিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ, সামনে ডব্লিউজিইআইডি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপরই রয়েছে ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ। তার আগেই জাতিসংঘকে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সন্তুষ্ট করতে চায় ঢাকা। 

২০২১ সালে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান ও ভাগ্য জানতে চেয়ে বাংলাদেশের কাছে চিঠি দিয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল

দেশে গুম নিয়ে আলোচনা বহু পুরোনো। কিছুদিন পরপরই ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার আবেদন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। দেশের বিশিষ্টজনেরাও এ নিয়ে নানা সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন; দিয়েছেন বিবৃতি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা নানা সময়ে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশের কাছে। বিভিন্ন সময়ে করা এসব প্রশ্নের জবাবও বাংলাদেশ দিয়েছে। কিন্তু সে জবাবে ডব্লিউজিইআইডি সন্তুষ্ট হয়নি। এবার বিশেষত র‍্যাব এবং এর বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘকে সন্তোষজনক একটি জবাব দিতে চাইছে বাংলাদেশ। 

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, জাতিসংঘ এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৮৩ জনের একটি তালিকা দিয়েছে। এর মধ্যে সাতজনের বিষয়ে তথ্য দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। বাকিদের বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তথ্য দিতে হবে। তাই সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কাছ থেকে যথাযথ উত্তর চাওয়া হয়েছে, যাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা জাতিসংঘকে জানাতে পারে। 

বৈঠক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ নিয়ে জাতিসংঘের এ ধরনের নেতিবাচক প্রতিবেদন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ফলে বাংলাদেশে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়ে বিরূপ মনোভাব জন্ম নিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই আগে থেকেই বিষয়টিতে প্রতিকারমূলক প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ও ক্ষতি কীভাবে ঠেকানো যায়, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। 

বৈঠকে উপস্থিত আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাতিসংঘকে বাংলাদেশ যে উত্তর দিয়েছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তবে কেন সন্তুষ্ট হয়নি, তার বিস্তারিত তারা বলছে না। জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাই সভায় উপস্থিত সংশ্লিষ্টদের গতানুগতিক ব্যাখ্যা থেকে বের হয়ে সঠিক ও ‘গ্রাউন্ড রিয়্যালিটি’ দিতে বলা হয়েছে। 

২০২১ সালে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান ও ভাগ্য জানতে চেয়ে বাংলাদেশের কাছে চিঠি দিয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। ডব্লিউজিইআইডি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। সেই চিঠির সূত্র ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি পুলিশের বিশেষ শাখা এসবিতে একটি চিঠি পাঠায়। 

২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ৫০৭ জন জোরপূর্বক নিখোঁজ হয় বলে উল্লেখ করা হয় জাতিসংঘের ২০১৯ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে

এ নিয়ে গত বছরের আগস্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুনিয়ার সব দেশেই কম-বেশি গুম হয়। তবে তারা (জাতিসংঘ) ভারতকে কিছু বলে না। পাকিস্তানকে কিছু বলে না। আমরা তাদের বেশি পাত্তা দিই। তাই তারা আমাদের অনবরত হ্যামার করে।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালে ১ হাজার ৩৪ জন গুম হয়েছে। কই তারা তো এটা নিয়ে কিছুই বলে না! তবে আমাদের কাছে তারা যেটা জানতে চেয়েছে, আমরা তার জবাব দেব।’ 

২০১৯ সালে ডব্লিউজিইআইডির প্রতিবেদনে গুম প্রশ্নে বাংলাদেশ নিয়ে বেশ নেতিবাচক তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়া থেকে সব নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়ার যে ঘোষণা, তা লঙ্ঘন এবং এই ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যর্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ওয়ার্কিং গ্রুপ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গুম অব্যাহত আছে বলে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ৫০৭ জন জোরপূর্বক নিখোঁজ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬২ জন নিহত হয়েছে। নিখোঁজদের মধ্যে ২৮৬ জন ফিরে এলেও ১৫৯ জনের কোনো খোঁজ এখনো মেলেনি। 

এর আগে একই ধরনের প্রতিবেদন ২০১৭ সালে প্রকাশ করেছিল ডব্লিউজিইআইডি। এবার ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউর পর ডব্লিউজিইআইডি আবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। আগের দুই প্রতিবেদনের মতো এমন অভিযোগের উল্লেখ করে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে কোনো নেতিবাচক বিষয় যাতে উঠে না আসে, সে বিষয়ে ঢাকা এবার বিশেষভাবে সচেতন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর সহজ উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত