Ajker Patrika

বিদেশ ভ্রমণে ভিসা পাওয়া কঠিন হচ্ছে

  • আবেদনে জাল কাগজ, মিথ্যা তথ্য দেওয়া অন্যতম কারণ।
  • ভিসার মেয়াদ শেষে না ফেরা অন্যদের সমস্যায় ফেলছে।
  • সমস্যা সামনে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
  • সরকারকে সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ দিলেন বিশেষজ্ঞরা।
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা 
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, ১৫: ০০
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

কর্মী, শিক্ষার্থী ও সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব ক্ষেত্রের পেশাজীবীদের জন্য বিদেশের ভিসা পাওয়া দিনে দিনে জটিল হচ্ছে। বিদেশি দূতাবাসগুলোয় জমা হওয়া ভিসার অধিকাংশ আবেদন নাকচ হচ্ছে। এ ছাড়া আগে সাধারণত সহজে ও দ্রুত পর্যটন ভিসা পাওয়া যেত এমন কিছু দেশেও এ ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগছে। বাংলাদেশিদের ভিসা পাওয়া ও নবায়নের ক্ষেত্রে জটিলতা সামনের দিনগুলোয় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভিসার আবেদন নাকচ হওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও দূতাবাসের কড়াকড়ির কথা বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব কারণ ভিন্ন। অধিকাংশ দেশের ভিসা না পাওয়া এবং ভিসা নবায়ন না হওয়ার জন্য আবেদনকারীরা নিজেরাই দায়ী। এর মধ্যে বাংলাদেশিদের অন্যতম শীর্ষ গন্তব্য ভারত একটি বিশেষ ব্যতিক্রম। দেশটি গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর গুরুতর অসুস্থ রোগী ছাড়া অন্যদের ভিসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তা এখনো বহাল আছে।

ঢাকায় বিদেশি কয়েকটি দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাস ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের হাজার হাজার নাগরিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট দেশে অবৈধভাবে থেকে যাওয়ার প্রবণতা সাধারণভাবে অন্যদের ভিসা পাওয়ার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া জাল কাগজপত্র জমা দেওয়া, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না দেওয়া এবং মারাত্মক ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে ভিসা আবেদন নাকচ হয়। এর বাইরে দূতাবাসে ভিসা কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের বিশ্বাসযোগ্য জবাব দিতে না পারা, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে না জড়ানো এবং ভিসার মেয়াদ শেষে ফিরে আসার নিশ্চয়তা না দিতে পারার কারণেও ভিসা আবেদন নাকচ হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, নেতিবাচক এই দিকগুলো আগেও ছিল, তবে এখন অনেক বেড়ে গেছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবাল ১৬৫টি দেশে তাদের ৩ হাজার ৯৩৬টি অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ভিসার আবেদন গ্রহণের কাজ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ২০টি এবং ভারতে ৮০টি দূতাবাসের হয়ে ভিসাপ্রার্থীদের সেবা দেয়। বাংলাদেশিদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধার বিষয় নিয়ে আজকের পত্রিকা'র সঙ্গে গত বুধবার ভিএফএস গ্লোবালের বাংলাদেশ ও ভারতীয় কার্যক্রমের প্রধান সান্ত্বনা ভট্টাচার্যের কথা হয়।

সান্ত্বনা ভট্টাচার্য জানান, দূতাবাসগুলো আবেদন বিবেচনার পর খামে ভরে পাসপোর্ট ফেরত দেয় বলে ঠিক কত ভিসার আবেদন নাকচ হয়, তা বলা কঠিন। তবে তাঁর অনুমান, বিভিন্ন কারণে অন্তত ৬০ ভাগ আবেদন নাকচ হয়। ভিএফএস ২০২৪ সালে বাংলাদেশে বিভিন্ন দূতাবাসের হয়ে প্রায় ১২ লাখ ভিসার আবেদন প্রসেস করেছে বলে জানান সান্ত্বনা।

ভিএফএসের স্থানীয় প্রধান বলেন, করোনা সংক্রমণের সময় ভিসা ইস্যু কমে যাওয়ার পর মাঝখানে কিছুটা বেড়েছিল। এখন বিভিন্ন কারণে ভিসা পাওয়া আবার কমছে।

কী কী কারণে ভিসার আবেদন নাকচ হয়, এমন প্রশ্নে সান্ত্বনা ভট্টাচার্য বলেন, ভিসাপ্রার্থীদের একটি বড় অংশ আবেদনের প্রক্রিয়া নিজে সম্পন্ন করেন না। অর্থের বিনিময়ে আবেদন করতে গিয়ে বিভিন্ন পেশাদার এজেন্টের সহায়তা নেন। অসাধু এজেন্টরা টাকা নিয়ে ভিসাপ্রার্থীদের জানিয়ে বা না জানিয়ে আবেদনপত্র নিজেদের ইচ্ছেমতো পূরণ করেন। নিজেরাই কাগজপত্র তৈরি করে দেন। দূতাবাসগুলো যাচাই করে অনেক আবেদনকারীর কাগজপত্র জাল ও তথ্যে ভুল দেখতে পায়।

ইংরেজি-প্রধান দেশে কাজ করতে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবে, এমন অনেক ভিসাপ্রার্থী সাক্ষাৎকারে সাধারণ ইংরেজিতেও কথা বলতে পারেন না। এমনকি, কিছু আবেদনকারী দোভাষীর কাছে বাংলাতেও নিজের তথ্য জানাতে বা প্রশ্নের জবাব ঠিকমতো দিতে পারে না।

ভিএফএস প্রধান আরও জানান, বিদেশে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে অনেক নারী লম্বা সময়ের জন্য ‘ফ্যামিলি ভিসা’ চান। কিন্তু সাক্ষাৎকারে ভিসা অফিসার জানতে চাইলে অনেক আবেদনকারী স্বামীর নামও বলতে পারেন না। এতে ভিসা অফিসারের সন্দেহ হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে হয়তো বৈধভাবে অবস্থানরত কাউকে স্বামী হিসেবে দেখিয়ে ভিসা চাওয়া হয়েছে। এর পেছনে মানব পাচারের সম্ভাবনা থাকতে পারে।

ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে যে শুধু ঢাকায় কথা হচ্ছে, তা নয়। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বিদেশ সফরের সময় অনেক দেশ এ বিষয়গুলো তুলেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেশটির একজন মন্ত্রী ভিসার আবেদনপত্রের সঙ্গে ব্যাপকভাবে জাল কাগজপত্র পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।

আরব আমিরাত বহুদিন বন্ধ রাখার পর গত ৮ মার্চ আবার বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া শুরু করে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে গত ১০ মে থেকে আবার ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে।

গত জুনে আমিরাত সরকারের একজন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুহাইল সায়িদ আল খালিল ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধার দিকগুলো আবার তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকীর কাছে। লুৎফে সিদ্দিকী গত ১৭ জুন এক পোস্টে বলেন, আমিরাতে ভিসা ও অবস্থানের নিয়মকানুন ভাঙার ২৫ শতাংশের বেশি ঘটনা ঘটিয়ে থাকে বাংলাদেশিরা। অথচ সরকারি হিসাবে আমিরাতে কাজসহ বিভিন্ন কারণে থাকা বিদেশিদের মাত্র আট শতাংশ বাংলাদেশের নাগরিক।

একজন কূটনীতিক বলেন, শিক্ষাগত, বৈবাহিক ও অন্যান্য কাগজপত্র সত্যায়নের বিষয়গুলো অনলাইনে যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ এপোস্টিল কনভেনশনে যুক্ত হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে চালুর মাস তিনেকের মধ্যেই এপোস্টিলের নকল বারকোডসহ কাগজপত্র আমিরাতে ধরা পড়েছে। আমিরাত শুধু নারী কর্মীদের ভিসা দেওয়া চালু রাখার সময় নারীর নাম দিয়ে পুরুষ প্রার্থীর ভিসা চাওয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে।

বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের মিশনগুলো ভিসার আবেদন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে। সরকারি সফরের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি থাকলে আগে তুলনামূলকভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত। এখন এমন চিঠি থাকার পরও সম্প্রতি উচ্চপদস্থ কয়েক কর্মকর্তার ভিসার আবেদন নাকচ হয়েছে।

মার্কিন দূতাবাস সম্প্রতি একাধিক ফেসবুক পোস্টে বলেছে, প্রত্যেকের ভিসা আবেদন খুঁটিয়ে দেখা হয়। আবেদনকারীকে বিস্তৃত নিরাপত্তা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও সন্ত্রাসবিরোধী ডেটাবেইসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার কাজ। আবেদনকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী ধরনের পোস্ট দেন তা-ও খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে।

জার্মানি যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভিসার সাক্ষাৎকারের জন্য সময় পেতেই এখন দেড় থেকে দুই বছর লেগে যাচ্ছে।

ভিসার ক্ষেত্রে ব্যাপক কড়াকড়ির সুযোগ নিতে তৎপর রয়েছে দালালচক্র। এই চক্রের অনেকেই সহজে ভিসার মিথ্যা নিশ্চয়তা দিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন উপায়ে প্রচারণা চালায়। বহু ভিসাপ্রার্থী তাদের ফাঁদে পা দেন।

ভিসা আবেদনপত্র তৈরির ক্ষেত্রে অন্যের ওপর নির্ভরতা এড়িয়ে চলার তাগিদ দিয়ে ভারত, সুইডেন ও ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দূতাবাস বলছে, আবেদনের সঙ্গে দেওয়া কাগজপত্রের পুরো দায়দায়িত্ব আবেদনকারীর। নিরাপদ থাকতে হলে আবেদনপত্রের ওপর ভিসাপ্রার্থীর নিজের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার।

অতি সম্প্রতি উগ্রপন্থা ও জঙ্গিসংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৫ বাংলাদেশি আটক হওয়ার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

দেশের একজন কূটনীতিক বলেছেন, ঘটনাস্থল মালয়েশিয়ায় হলেও অন্য দেশগুলোও বিষয়টির ওপর নজর রাখছে। জঙ্গিবাদসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশের ভিসা পাওয়া আরও কঠিন হতে পারে।

নাগরিকদের বিদেশের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভিসা দেওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশের সার্বভৌম এখতিয়ার। এ ক্ষেত্রে সরকারের তেমন কিছু করার নেই। তারপরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দূতাবাসগুলোকে নিয়মিত তাগিদ দেওয়া হয়ে থাকে।

ভিএফএস গ্লোবাল কর্মকর্তা সান্ত্বনা ভট্টাচার্য মনে করেন, ভিসা পাওয়ার ভোগান্তি এড়াতে লোকজনের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। ভারতে প্রবাসী ভারতীয় কল্যাণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমন সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে, এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারেরও উচিত সচেতনতা তৈরির জন্য জোরালো কর্মসূচি নেওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

সুদান যুদ্ধে আমিরাতের বিপরীতে মিসর-তুরস্কের বিরল ঐক্য, ঢুকছে অস্ত্র ও ড্রোনচালক

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানের জনশক্তির ঘাটতি পূরণে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
বাংলাদেশি ও জাপানি সংস্থার মধ্যে চারটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি ও জাপানি সংস্থার মধ্যে চারটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

২০৪০ সালের মধ্যে জাপানের শ্রমবাজারে সৃষ্ট ১ কোটি ১০ লাখ জনশক্তির ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া।

আজ শুক্রবার (৭ নভেম্বর) জাপানের নাগোয়া শহরে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত ‘বাংলাদেশ জাপানের জন্য দক্ষ মানবসম্পদসমৃদ্ধ একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় উৎস’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

জাপান আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণার্থী ও দক্ষ কর্মী সহযোগিতা সংস্থা জিটকোর সহযোগিতায় আয়োজিত এ সেমিনার ও পরবর্তী ম্যাচিং ইভেন্টে দুই দেশের প্রায় ২৫০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

স্বাগত বক্তব্যে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী বলেন, জাপানে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে দূতাবাস সব ধরনের সহায়তা দেবে।

সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া জানান, ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন হবে, অন্যদিকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ২ কোটি ৫০ লাখ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী রয়েছে—এ প্রবণতা ২০৪০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

নেয়ামত উল্যা বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাপানের শ্রমবাজারে দক্ষ কর্মী সরবরাহে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবে এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ড. নেয়ামত আরও জানান, জাপানের শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী প্রস্তুতের জন্য বাংলাদেশে ৩৩টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) নির্ধারণ করা হয়েছে, প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এ ছাড়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি ‘জাপান সেল’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা জাপানি শ্রমবাজারের সঙ্গে সমন্বয় ও যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।

সেমিনারে জিটকোর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শিগেও মাতসুতোমি আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বর্তমান অবস্থা ও জাপানের সম্ভাবনা নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

পরে বাংলাদেশি জনশক্তি প্রেরণকারী ও জাপানি নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সেমিনারে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

সুদান যুদ্ধে আমিরাতের বিপরীতে মিসর-তুরস্কের বিরল ঐক্য, ঢুকছে অস্ত্র ও ড্রোনচালক

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৫২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা, বিমানবন্দরে দায়িত্বরত এক অঙ্গীভূত আনসার সদস্যের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাৎক্ষণিক ও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। বাহিনীর মহাপরিচালকের নির্দেশে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত অপরাধে ওই সদস্যকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা রোধে বেতন বৃদ্ধির যৌক্তিক দাবি পে কমিশনের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে।

বাহিনীর বিবৃতি অনুযায়ী, ৫ নভেম্বর রাতে নাইট শিফটে (রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে সকাল ৬টা ৩০ মিনিট) দায়িত্ব পালনকালে অভিযুক্ত অঙ্গীভূত আনসার সদস্য জেনারুল ইসলাম লোভের বশবর্তী হয়ে একটি অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনের কথা বলে পোড়া ভবনের ভেতরে ভস্মীভূত দ্রব্যাদি থেকে কিছু বাটন ফোন লুকিয়ে বের করার চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁকে ঘটনাস্থলেই হাতেনাতে ধরে ফেলা হয়।

ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং বাহিনীর জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখতে, সংশ্লিষ্ট আনসার সদস্যকে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি থেকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়েছে। উপপরিচালক ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকউজ্জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘এত দ্রুততম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাহিনীর সদস্যদের দীর্ঘদিনের অনৈতিক চর্চার ক্ষেত্রগুলো হ্রাস করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হলো।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাহিনী মনে করে, রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে স্বল্প বেতনের মাধ্যমে দিবারাত্রি ডিউটি শেষে জীবিকার মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানো অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের মনস্তাত্ত্বিক প্রেষণার অন্যতম নিয়ামক। এ কারণেই বাহিনীর পক্ষ থেকে সদস্যদের নৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে মনস্তাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে বাহিনীর প্রধান পে কমিশন চেয়ারম্যানের কাছে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের যৌক্তিক বেতন বৃদ্ধির আবেদন করেছেন। বাহিনীর প্রত্যাশা, বেতন বৃদ্ধি হলে সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ ডিউটির ক্ষেত্রে সদস্যরা আরও বেশি নিবেদিত ও নৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে অনুপ্রাণিত হবেন।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও কেপিআই এলাকায় দক্ষতা, সততা ও পেশাদারির সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, দ্রুততর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি সদস্যদের জন্য সার্বিক কল্যাণধর্মী কার্যক্রমের মাধ্যমে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপে সদস্যদের সম্পৃক্ততা ধীরে ধীরে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ আগুনেও অক্ষত স্ট্রংরুমের ভল্ট থেকে চুরি হয়েছে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র। ওই কমপ্লেক্সের স্ট্রংরুম গত রোববার দুপুরে নিয়মিত পরিদর্শনের সময় ভল্ট থেকে অস্ত্রগুলো খোয়া যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

সুদান যুদ্ধে আমিরাতের বিপরীতে মিসর-তুরস্কের বিরল ঐক্য, ঢুকছে অস্ত্র ও ড্রোনচালক

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাইড শেয়ারিংয়ের নতুন ভাড়া

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
রাইড শেয়ারিংয়ের নতুন ভাড়া

রাইড শেয়ারিংয়ের কার, মাইক্রোবাস/ জিপ, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার জন্য নতুন ভাড়ার হার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। রাইডশেয়ারিংয়ের প্রস্তাবিত সংশোধিত নীতিমালায় অটোরিকশা যুক্ত করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স।

রাইডশেয়ারিং সেবার নীতিমালা-২০১৭ সংশোধন করে বিআরটিএ ২ নভেম্বর প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আগে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন-২০১০ অনুযায়ী রাইড শেয়ারিংয়ের ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও তা নতুনভাবে নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত আগস্টে গঠিত বিআরটিএর কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিআরটিএর প্রস্তাবিত ভাড়ার কাঠামো অনুযায়ী মাইক্রোবাস, মোটরকার/জিপ, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ২ কিলোমিটারের মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। মাইক্রোবাসের ২ কিলোমিটারের সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ১১০ টাকা, মোটরকার ও জিপের ১১০ টাকা, অটোরিকশার ৭০ টাকা এবং মোটরসাইকেলের ৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি যানের প্রথম ২ কিলোমিটারের ভাড়ার সঙ্গে ২০ টাকা বুকিং ফি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে প্রথম ২ কিলোমিটারের পর পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৩৮ টাকা। ভ্রমণ চলাকালে প্রতি মিনিটের ভাড়া ২ টাকা। মোটরকার ও জিপে প্রথম ২ কিলোমিটারের পর পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৩৬ টাকা এবং ভ্রমণ চলাকালীন প্রতি মিনিটে ভাড়া ২ টাকা। অটোরিকশার প্রথম ২ কিলোমিটারের পর পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে ১৮ টাকা এবং ভ্রমণ চলাকালীন প্রতি মিনিটে ভাড়া ২ টাকা। মোটরসাইকেলের প্রথম ২ কিলোমিটারের পর পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১৬ টাকা এবং ভ্রমণ চলাকালীন প্রতি মিনিটে ভাড়া ১ টাকা। মোটরসাইকেলের আগে প্রথম ২ কিলোমিটারের ভাড়া ছিল ৮৫ টাকা।

রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিশনের হারও কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিআরটিএ। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা ভাড়ার সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কমিশন নিতে পারবে। আগে এই হার ছিল ৩০ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাইড শেয়ারিংয়ের নানা বিষয়ে একটি আবেদন করেছিলেন রাইডরা। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পরে এটা নিয়ে আমাদের একটি কমিটি হয়েছিল। ওই কমিটি রাইডশেয়ারিংয়ের নানা বিষয় পর্যালোচনা করেছে।’

বিআরটিএ সূত্র জানায়, রাইডশেয়ারিং সেবার প্রস্তাবিত সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী যাত্রী বা চালক কেউ ট্রিপ বাতিল করলে নির্দিষ্ট সময়ের পর বাতিল চার্জ প্রযোজ্য হবে। যাত্রী অনুরোধ পাঠানোর পর চালক গ্রহণ করে যাত্রীর অভিমুখে রওনা হওয়ার পর ৩ মিনিটের মধ্যে ট্রিপ বাতিল করলে কোনো চার্জ লাগবে না। তবে ওই সময়ের পর বাতিল করলে সম্ভাব্য ভাড়ার ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৩০ টাকা (যেটি কম) ক্যানসেলেশন চার্জ হিসেবে নেওয়া হবে, যা চালক ও রাইডশেয়ারিং কোম্পানি সমানভাবে ভাগ করবে।

চালকও অনুরোধ গ্রহণের পর ৩ মিনিটের মধ্যে বাতিল করলে কোনো চার্জ লাগবে না। কিন্তু এর পর বাতিল করলে তাঁর কাছ থেকেও একই হারে চার্জ কাটা হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাইড শেয়ারিংয়ে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ ও কমিশন কমানো যাত্রীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। তবে বাস্তবায়ন ও তদারকি নিশ্চিত করাই মূল চ্যালেঞ্জ। এসব নিয়ম শুধু কাগজে নয়, বাস্তবেও কার্যকর করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

সুদান যুদ্ধে আমিরাতের বিপরীতে মিসর-তুরস্কের বিরল ঐক্য, ঢুকছে অস্ত্র ও ড্রোনচালক

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আপ্যায়নে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের তথ্য ‘সর্বৈব মিথ্যাচার’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৫
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আপ্যায়নে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের তথ্য ‘সর্বৈব মিথ্যাচার’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আপ্যায়নে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে—সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এমন দাবি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং একে ‘সর্বৈব মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করেছে। প্রেস উইং জানিয়েছে, একটি বিশেষ মহল সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘অতি সম্প্রতি মহলবিশেষের পক্ষ থেকে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারে বলা হচ্ছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আপ্যায়ন বাবদ ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। এটি একটি পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা, যা প্রচারকারীরা কমিশনের কোনো ভাষ্য বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই চালাচ্ছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করে। ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কমিশনের মোট বাজেট ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার ২৬ টাকা। এর মধ্যে ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ১২৬ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

বাজেটের মধ্যে আপ্যায়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৫ টাকা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, আপ্যায়ন খাতের অধিকাংশ ব্যয় হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও কমিশনের বিভিন্ন বৈঠক চলাকালে। এসব বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি, তাঁদের সহযোগী, সাংবাদিক, কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

প্রথম পর্যায়ে গত ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৪টি বৈঠক হয়, যেখানে ব্যয় হয় ৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ২৩টি বৈঠক হয়। এতে মোট ব্যয় হয় ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকা। এই বৈঠকগুলোর বেশির ভাগই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলেছে। ফলে নাশতার পাশাপাশি দুপুর ও রাতের খাবারেরও ব্যবস্থা করতে হয়েছে। গড়ে প্রতিদিনের ব্যয় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কম।

তৃতীয় পর্যায়ে সাতটি বৈঠকে ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন, এতে ব্যয় হয় ৭ লাখ ৮ হাজার ৬০০ টাকা।

এ ছাড়া কমিশনের অভ্যন্তরীণ সভা হয়েছে ৫০টি, যার অনেকগুলোই দিনব্যাপী বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনুষ্ঠিত হয়। এই বাবদ মোট ব্যয় হয় ১ লাখ ৫ হাজার ৫২০ টাকা।

রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক, নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক এবং তিনটি সংবাদ সম্মেলনসহ মোট ১৩টি সভায় ব্যয় হয় ২ লাখ ৩৪০ টাকা।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে ১৩টি, যেখানে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৯৬০ টাকা। প্রেস উইং জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞরা এসব বৈঠকের জন্য কোনো ভাতা বা সম্মানী নেননি।

এ ছাড়া গত ৯ মাসে অতিথি আপ্যায়নের জন্য ব্যয় হয়েছে ২ লাখ টাকা। এসব অতিথির মধ্যে ছিলেন বিদেশি কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, সম্পাদক, সাংবাদিক ও অন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘উল্লিখিত বিস্তারিত হিসাব থেকে এটি স্পষ্ট যে, ৮৩ কোটি টাকার দাবি শুধু মিথ্যাচার নয়, বরং ঐকমত্য কমিশন ও তার কার্যক্রমকে হেয় করার একটি সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিত অপপ্রয়াস।’

কমিশনের দাবি, তারা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত দৈনন্দিন সংবাদ থেকেই স্পষ্ট। সাংবাদিকেরা নির্বিঘ্নে কমিশন কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পেরেছেন, কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যরা নিয়মিতভাবে গণমাধ্যমকে তথ্য দিয়েছেন এবং প্রেস ব্রিফিং করেছেন।

এ ছাড়া, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাগুলো সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে।

কমিশন আশা প্রকাশ করেছে, যে অসাধু মহল এই প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, তারা অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘কমিশন তার দায়িত্ব পালনে দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের সহযোগিতা পেয়েছে এবং আশা করে গণমাধ্যমগুলো ভবিষ্যতেও সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

সুদান যুদ্ধে আমিরাতের বিপরীতে মিসর-তুরস্কের বিরল ঐক্য, ঢুকছে অস্ত্র ও ড্রোনচালক

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত