Ajker Patrika

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আলোচনায় আসনের ভাগ

  • জামায়াতের পিআর পদ্ধতির দাবি চাপ সৃষ্টির কৌশল, বলছে বিএনপি।
  • আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির একাধিক বৈঠক।
  • বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দূরত্ব কমানোর চেষ্টায় ৯ দলের নেতারা।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আগামী বছরের মধ্য ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। ওই নির্বাচন সামনে রেখে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিসহ কয়েকটি ইস্যুতে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে দুই বড় দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। আলোচনার টেবিলে সমাধান না আসায় বিরোধ গড়িয়েছে রাজপথে। পিআর পদ্ধতিসহ পাঁচ দাবিতে চাপ সৃষ্টি করতে সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে এরই মধ্যে মাঠের কর্মসূচিতে চলে গেছে জামায়াত। যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিরোধ, কর্মসূচি সবকিছুর নেপথ্যের কারণ আগামী নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি।

আসন ভাগাভাগির আলোচনা নতুন করে উঠে এসেছে ভারতীয় একটি গণমাধ্যম ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক সাক্ষাৎকারকে ঘিরে। সেই সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুলের বরাত দিয়ে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী বিএনপির কাছে ৩০টি আসন চেয়েছে; কিন্তু বিএনপি এতে রাজি হয়নি। দলটি জামায়াতকে আরও অনেক কম আসন দিতে চায়, যা জামায়াতের মনঃপূত হয়নি। পিআর নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল বলেও উল্লেখ করা হয় ওই সাক্ষাৎকারে।

‘এই সময়’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্যকে ‘অসত্য, অমর্যাদাকর ও প্রতিহিংসাপরায়ণ’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো প্রবীণ রাজনীতিবিদ দিয়েছেন, তা বিশ্বাস করতে আমাদের কষ্ট হয়। এ বক্তব্যের সঙ্গে সত্য ও শিষ্টাচারের কোনো মিল নেই। এ বক্তব্য যদি তাঁর হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কার কাছে এই আসনগুলো দাবি করেছে—তার প্রমাণ জাতির কাছে উপস্থাপন করার জন্য দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আহ্বান জানাচ্ছি।’

যদিও ‘এই সময়’ পত্রিকাটির সঙ্গে কথা বললেও সাক্ষাৎকার দেননি বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল। জামায়াতে ইসলামীর ৩০ আসন চাওয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি বলেও তাঁর দাবি। গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই সময়’কে আমি কোনো সাক্ষাৎকার দেইনি। কথা হয়েছে; কিন্তু এ ধরনের কোনো কথাই আমি বলিনি।’ বিএনপির মিডিয়া সেলও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতীয় গণমাধ্যম ‘এই সময়’ দলের মহাসচিবের বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রকাশ করেছে।

মির্জা ফখরুলের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যা-ই হোক না কেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগির আলোচনা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র বলছে, আসন ভাগাভাগির বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে দলগুলো ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। যার প্রভাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় ধাপের সংলাপে ফুটে উঠেছে। গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক শরিক গণঅধিকার পরিষদ বিএনপির সঙ্গে জোটে যাবে না বলেও জানিয়েছে একটি সূত্র।

আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসন সমঝোতার বিষয়ে আলোচনার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। জোটগতভাবে আমরা আলোচনা করছি। সব প্রস্তুতি নিয়ে এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আমরা আলোচনার টেবিলে বসব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, আন্দোলনের শরিক দলগুলোর বিষয়ে বিএনপির বিশেষ চিন্তা রয়েছে। যার যতটুকু প্রাপ্য, সেভাবেই তাদের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেটা আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক করা হবে। এখনো এ বিষয়ে শরিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলাপ হয়নি বলেও জানান এই নেতা।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বিএনপির। বিএনপি তাদের পক্ষে রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। বিষয়টি দলের একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করছেন, যার প্রভাব তৃতীয় ধাপের সংলাপে পড়েছে। সামনে তা আরও দৃশ্যমান হবে।

জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা এখনো হয়নি। তবে অচিরেই আলোচনা হবে। আমরা নিজেরা আলোচনা করছি। যুগপৎ আন্দোলনের অন্য শরিকদের সঙ্গেও কথা বলছি। এরপর বিএনপির সঙ্গে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কথা বলার পর সব দৃশ্যমান হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘নির্বাচনী জোট নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা আপাতত হচ্ছে না।’

এদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দল, এবি পার্টি, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদও বৈঠক করেছে বলে সূত্র জানায়। সূত্রের দাবি, এই বৈঠকে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমন্বয় তৈরির পাশাপাশি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দূরত্ব কমিয়ে আনতে এরই মধ্যে ৯টি দলের নেতারা বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাইফুল হক অবশ্য বলছেন, মূলত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এ বৈঠক হয়েছে। সেখানে জোট গঠন বা নির্বাচনী আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক নারীকে স্ত্রী দাবি করে দুই পুরুষের টানাটানি, শেষে ৩ জনই কারাগারে

১৫ শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ ইবির এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে

মার্কা শাপলাই হতে হবে, না হলে নির্বাচন কীভাবে হয় দেখে নেব: সারজিস আলম

ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়েও ফখরুল–আখতাররা ভিভিআইপি সুবিধা পাননি কেন—জানাল প্রেস উইং

ইসির তালিকায় ‘শাপলা’ নেই, বিকল্প প্রতীক নিতে হবে এনসিপিকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত