Ajker Patrika

প্রতিষ্ঠার দুই দশক

গ্রাম আদালতে আগ্রহ কম

  • সুফল পেতে আইন সংস্কারের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
  • ১০ টাকায় মামলা করা গেলেও সময় বেশি লাগছে।
  • সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি ৯ মাসেও।
  • পুরো কাজে লাগাতে পারলে মামলাজট কমার আশা।
এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা  
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ৫৯
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আদালতে মামলার চাপ কমানো ও বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি থেকে বাঁচাতে ছোটখাটো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য করা হয়েছিল গ্রাম আদালত আইন। ২০০৬ সালে আইনের মাধ্যমে চালু হওয়া গ্রাম আদালতের প্রতি দীর্ঘ দুই দশকেও মানুষের যথেষ্ট আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি। বিচারপ্রার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে তাই নানাভাবে চেষ্টা-চরিত্র চলছে।

গ্রাম আদালতে ফৌজদারি মামলায় ১০ এবং দেওয়ানি মামলার জন্য ২০ টাকা আবেদন ফি। আদালত থেকে মামলা পাঠানো হলে তার জন্য কোনো ফি নেই। এ রকম নামমাত্র খরচে আর স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে কাজ করছে গ্রাম আদালত। অথচ প্রচলিত আদালতে প্রায়ই বছরের পর বছর ঘুরতে হয় বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য। এই আদালতে অভিযোগ জমা হওয়ার পর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হয়। তবে গ্রাম আদালতের সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের আদেশ দেওয়া ছাড়া অন্য শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এই আদালতের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষ প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা এখতিয়ারসম্পন্ন সহকারী জজ আদালতে আপিল করতে পারবে।

গ্রাম আদালত ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সরকার, ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একসঙ্গে কাজ করছে। ২০০৯-১৫ সাল পর্যন্ত ৩৫১টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ পাইলট প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়ন করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়িত হয় ২০১৬-২২ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ছাড়া ৪ হাজার ৪৫৩টি ইউনিয়নে এর তৃতীয় পর্যায় বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৭ সাল পর্যন্ত মেয়াদের এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে ন্যায়বিচারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আইনি সেবা প্রদানের জন্য স্থানীয় বিচারব্যবস্থার উন্নয়ন করা।

গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ তৃতীয় পর্যায় স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রকল্পের লিগ্যাল অ্যানালিস্ট মশিউর রহমান চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গ্রাম আদালতের সুফল জনসাধারণকে জানাতে প্রচার বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিচার সম্পন্ন করার ৯০ দিনের সময়সীমা কমাতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে। আর বিরোধের ধরন দেখে শুরুতেই গ্রাম আদালতে পাঠাতে হলে ফৌজদারি কার্যবিধি এবং পিআরবি সংশোধন করা দরকার। আশা করি, আমাদের নেওয়া উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে গ্রাম আদালতের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাম আদালতের প্রতিনিধিদের অনেকেরই বিচারের অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকে। বিদ্যমান আইন অনুসারে অভিযোগ গঠনের আগে গ্রাম আদালতে মামলা পাঠানো যায় না। এতে সময় অপচয়সহ নানাবিধ হয়রানির শিকার হতে হয় বিচারপ্রার্থীদের। মামলা করা থেকে নিষ্পত্তি পর্যন্ত কখনো কখনো ৫ মাসের বেশি লেগে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, ‘গ্রাম আদালতের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত। অভিযোগ নিষ্পত্তির সময়সীমা ৯০ দিনের বদলে ৩০ দিন করা উচিত। এতে গ্রাম আদালতে দ্রুত অভিযোগ নিষ্পত্তি হবে এবং মামলাজট কমবে।’

গ্রাম আদালত যেসব ফৌজদারি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে তার মধ্যে রয়েছে চুরি, ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, দাঙ্গা, প্রতারণা, ভয়ভীতি দেখানো, নারীর প্রতি অবমাননাকর কথা বলা এবং মূল্যবান সম্পত্তি আটক করা। দেওয়ানি বিরোধের মধ্যে রয়েছে পাওনা টাকা আদায়, স্থাবর সম্পত্তি দখল পুনরুদ্ধার, অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার বা তার মূল্য আদায়, কৃষিশ্রমিকদের পরিশোধযোগ্য মজুরি আদায়, স্ত্রী কর্তৃক বকেয়া ভরণপোষণ আদায় ইত্যাদি।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

গ্রাম আদালতের বিদ্যমান কাঠামোর অতিরিক্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বিচক্ষণ, অভিজ্ঞ এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য শিক্ষিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা প্যানেল গঠন করতে হবে। আদালত গঠনের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি হলে চেয়ারম্যান কোনো উপদেষ্টাকে সদস্য করতে পারবেন। এজলাস কক্ষের কর্মপরিবেশসহ সব কার্যক্রমে বিচারিক পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সূচি ধার্য করতে হবে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের সভাপতিত্বে একটি তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে। গ্রাম আদালতের বিচারিক কার্যক্রম স্বচ্ছ, কার্যকর ও গতিশীল করার জন্য প্রয়োজনীয় সার্কুলার, নির্দেশনা ইত্যাদি জারির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গ্রাম আদালত পুরোপুরি কার্যকর করতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ করেছিল। তবে গত ৯ মাসেও সে সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জানতে চাইলে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য তানিম হোসেইন শাওন বলেন, ‘গ্রাম আদালত সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন নয়। এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। তবে আইন সংশোধনের কোনো উদ্যোগ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে বলে আমার জানা নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনে কথা বললেন তারেক রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৭ বছর নির্বাসনে থাকার পর এখন দেশের মাটিতে। আজ বৃহস্পতিবার ১১টায় ৫৪ মিনিটে তিনি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রথমেই তিনি বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জড়িয়ে ধরেন। পরে স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তারেক রহমানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

এরপর তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনে কুশল-বিনিয়ম করেন। নিরাপত্তা ও বিভিন্ন ধরনের সহায়তার জন্য এ সময় তিনি সরকারপ্রধানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কথোপকথনে তারেককে বলতে শোনা যায়, ‘জি জি...আমার জন্য আমার...জি জি...আপনার শরীর কেমন আছে?’

...

‘হ্যাঁ, দোয়া করবেন, দোয়া করবেন।’ ...

‘আমি আমার পক্ষ থেকে এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনি আপনার পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম আয়োজন করেছেন, বিশেষ করে আমার নিরাপত্তার জন্য। অ্যান্ড উই আর থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ...থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। সব রকম আয়োজনের জন্য।’

...

‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। জি নিশ্চয়ই...ইনশাল্লাহ...ইনশাল্লাহ।’

ভিআইপি লাউঞ্জে তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারেক রহমানের সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।

এরপরই তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু ফুলের মালা পরিয়ে জামাতাকে বরণ করেন নেন। নাতনি জাইমাকেও আদর করতে দেখা যায়। তারেক রহমান এ সময় তাঁর পাশে কিছু সময় বসে থাকেন। এরপর বেলা ১২টা ২০ মিনিটে তারেক রহমানে স্ত্রী ও তাঁর মেয়ে সাদা রঙের একটি জিপ গাড়িতে উঠে বসেন।

দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমান বেলা ১২টা মিনিটে ৩২ মিনিটে লাল সবুজ রঙে একটি বুলেটপ্রুফ বাসে উঠেন। ২ মিনিট পরে বাসটি বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচলের ৩০০ ফিটের সংবর্ধনা মঞ্চের দিকে যেতে শুরু করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর দোষ স্বীকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর দোষ স্বীকার

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তাঁর বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও তাঁর শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন আদালত।

অন্যদিকে ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে জব্দ করা ফায়ার কার্তুজ ও ফায়ার বুলেট সদৃশ বস্তুর ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করে বিস্তারিত মতামত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনজন। একইদিনে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে জব্দ করা কার্তুজ ও বুলেট পরীক্ষার নির্দেশ দেন আদালত।

ঢাকার মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনজনের জবানবন্দি

গতকাল বুধবার সামিয়া, মারিয়া ও সিপুকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি। মামলার তদন্তকর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তিনজনের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। পরে আসামি মারিয়া ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কামাল উদ্দিনের আদালতে এবং সামিয়া ও সিপু ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম জুনাঈদের আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

জবানবন্দিতে তিনজন কী বলেছেন তা জানা যায়নি। তবে বিশ্বস্ত এক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার আগে ও পরে ফয়সাল কি করেছে এবং কি বলেছে সে সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন তিনজন।

এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর এই তিনজনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে ২০ ডিসেম্বর তিনজনকে আবার দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর সামিয়া ও সিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে আটক করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, এ মামলায় গ্রেফতার ফয়সালের মা ও বাবাও স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

কার্তুজ-বুলেট ব্যালিস্টিক পরীক্ষা

বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ ঘটনাস্থলে জব্দ করা ফায়ার কার্তুজ ও বুলেট সদৃশ বস্তু পরীক্ষার নির্দেশ দেন।

আবেদনে বলা হয়, শরিফ ওসমান হাদি ওরফে ওসমান গণি (৩৩) গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটের দিকে পল্টন থানাধীন বিজয়নগর বক্স কালভার্ট রোড সংলগ্ন ডিআর টাওয়ারের সামনে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে গত ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে নিয়ে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃতদেহ বাংলাদেশ বিমান যোগে দেশে এনে ২০ ডিসেম্বর সকালে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।

মামলায় ঘটনাস্থল হতে ফায়ার কার্তুজ ও ফায়ার বুলেট সদৃশ বস্তু আলামত জব্দ করা হয়। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আলামতসমূহ ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করে বিস্তারিত মতামত প্রদান করার জন্য সিআইডির ব্যালিস্টিক শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত