Ajker Patrika

জুলাই–আগস্ট হত্যাকাণ্ড

হাত উঁচিয়ে সাংবাদিক বলার পরও পুলিশ গুলি করে: নিহত তুরাবের সহকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৩
হাত উঁচিয়ে সাংবাদিক বলার পরও পুলিশ গুলি করে: নিহত তুরাবের সহকর্মী

জুলাই আন্দোলনের সময় সিলেটে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম সাদেক দস্তগীরকে হাত উঁচিয়ে গুলি না করতে বলেছিলেন ফটোসাংবাদিক মো. মোহিদ হোসেন। তারপরও পুলিশ গুলি করে। তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যান নয়াদিগন্তের ফটোসাংবাদিক এ টি এম তুরাব।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে চালানো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন মোহিদ। তিনি স্থানীয় দৈনিক একাত্তরের কথায় কাজ করেন।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আজ মোহিদ ছাড়াও পাঁচজন সাক্ষ্য দেন। তাঁরা হলেন সিলেটের সাংবাদিক হুমায়ুন কবির লিটন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাসনাত আল মতিন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের ওয়ারেন্ট অফিসার তারেক নাছরুল্লাহ, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক মো. রশিদুল আলম এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার রাহাত–বিন–কাশেম।

এ নিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্য দিলেন মোট ৩৫ জন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে সাক্ষীদের জেরা করেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন। শুনানির সময় ট্রাইব্যু্নালে উপস্থিত ছিলেন তিনি।

ফটোসাংবাদিক মোহিদ হোসেন জবানবন্দিতে বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ১৯ জুলাই সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও বিএনপির গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ছিল। তারই অংশ হিসেবে সিলেটের মধুবন পয়েন্টের নিকটে অবস্থিত কালেক্টরেট জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর একটি গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাই। জানাজা শেষে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি জিন্দাবাজারের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ পেছন দিক থেকে অতর্কিতে গুলি বর্ষণ করে। আমি ও আমার সহকর্মী সাংবাদিক আবু তুরাব পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলাম। পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছিল। আমি হাত উঁচিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বলছিলাম, দস্তগীর ভাই (এডিসি) আমরা সাংবাদিক। আমাদের গুলি কইরেন না। তারপরও পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশের গুলিতে আমার সহকর্মী দৈনিক জালালাবাদ ও দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার ফটোসাংবাদিক আবু তুরাব গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।’

মোহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘তুরাবকে আমি রিকশায় করে এবং পরে সিএনজিতে করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন চিকিৎসায় বাধা দেওয়ায় তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ওই দিনই সন্ধ্যায় সে মারা যায়।’

মোহিদ বলেন, ‘পুলিশের এডিসি সাদিক কাউসার দস্তগীর, কোতোয়ালি থানার এসি মিজানুর রহমান, কোতোয়ালি থানার ওসি মহিউদ্দিনসহ আরও অনেকে গুলি বর্ষণ করে। উক্ত ঘটনার একটি ভিডিও সংগ্রহ করেছি। পরে ওই ভিডিও টাইব্যুনালে দেখানো হয়। যেখানে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশকে গুলি করতে এবং গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক আবু তুরাবকে মাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত