Ajker Patrika

শুল্ক স্থগিতের অনুরোধে সাড়া দেওয়ায় ট্রাম্পকে অন্তর্বর্তী সরকারের ধন্যবাদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ৫২
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ছাড়া অন্যান্য দেশগুলোর ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ক আরোপের পরপরই ট্রাম্পের কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সেই চিঠির কয়েক দিন পরই শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা লেখেন, ‘আমাদের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ায় মহামান্য প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ। আপনার বাণিজ্য এজেন্ডার সমর্থনে আমরা আপনার প্রশাসনের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার চীন ছাড়া অন্য সব দেশের ওপর থেকে ব্যাপক শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। এই পদক্ষেপ মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেও প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। ট্রাম্পের মতে, ৭৫টিরও বেশি দেশ তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণেই এই স্থগিতাদেশ। তিনি বলেছেন, এই ৯০ দিনের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশের একটি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসকৃত রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টাপাল্টি শুল্ক কার্যকর থাকবে।

এর আগে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি চিঠি পাঠান গত ৭ এপ্রিল। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টাপাল্টি শুল্ক পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি অন্তত ৯০ দিন স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান, যাতে উভয় দেশের বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টা চিঠিতে উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি একজন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়েছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের জন্য ১৭ কোটি মানুষের ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশি বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির আগ্রহের কথা জানানো। বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে এই ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছিল।

অধ্যাপক ইউনূস আরও জানান, বাংলাদেশই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এলএনজি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ এই খাতে আরও সহযোগিতার পথ খুঁজছে।

তিনি বলেন, তখন থেকেই বাংলাদেশের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে মার্কিন পণ্যের রপ্তানি দ্রুত বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে কাজ করে যাচ্ছেন। এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করবেন।

অধ্যাপক ইউনূস চিঠিতে উল্লেখ করেন, তাঁদের প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য—বিশেষ করে তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো, যা মার্কিন কৃষকদের আয় ও জীবিকার জন্য সহায়ক হবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা দ্রুত বাজারে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি বিশেষ শুল্কমুক্ত সংরক্ষণাগার (বন্ডেড ওয়্যারহাউস) চালু করার কাজ চলছে।

তিনি আরও জানান, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ পণ্যের ওপর বাংলাদেশে শুল্কহার সবচেয়ে কম। উপর্যুক্ত কৃষিপণ্য এবং স্ক্র্যাপ ধাতুর ওপর শুল্ক শূন্য রাখার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। পাশাপাশি গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো শীর্ষ মার্কিন রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ কমানোর কাজ চলছে।

অধ্যাপক ইউনূস বিভিন্ন অশুল্ক বাধা দূর করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কথাও উল্লেখ করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কিছু পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া, প্যাকেজিং, লেবেলিং ও সনদ-সংক্রান্ত নিয়ম সহজতর করা এবং কাস্টমস ও মান নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আরও সহজ করা।

তিনি জানান, বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অ্যাডভান্সড টেকনোলজি, সিভিল অ্যাভিয়েশন, প্রতিরক্ষা খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারবে।

অধ্যাপক ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেন যে এই উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন চলতি ত্রৈমাসিকের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিনি সামান্য সময় প্রার্থনা করেন। তাই তিনি বিনীতভাবে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান। চিঠির শেষে অধ্যাপক ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সদয় সম্মতি প্রত্যাশা করেন এবং তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাইড শেয়ারিংয়ের নতুন ভাড়া

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
রাইড শেয়ারিংয়ের নতুন ভাড়া

রাইড শেয়ারিংয়ের কার, মাইক্রোবাস/ জিপ, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার জন্য নতুন ভাড়ার হার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। রাইডশেয়ারিংয়ের প্রস্তাবিত সংশোধিত নীতিমালায় অটোরিকশা যুক্ত করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স।

রাইডশেয়ারিং সেবার নীতিমালা-২০১৭ সংশোধন করে বিআরটিএ ২ নভেম্বর প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আগে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইডলাইন-২০১০ অনুযায়ী রাইড শেয়ারিংয়ের ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও তা নতুনভাবে নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত আগস্টে গঠিত বিআরটিএর কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিআরটিএর প্রস্তাবিত ভাড়ার কাঠামো অনুযায়ী মাইক্রোবাস, মোটরকার/জিপ, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ২ কিলোমিটারের মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। মাইক্রোবাসের ২ কিলোমিটারের সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ১১০ টাকা, মোটরকার ও জিপের ১১০ টাকা, অটোরিকশার ৭০ টাকা এবং মোটরসাইকেলের ৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি যানের প্রথম ২ কিলোমিটারের ভাড়ার সঙ্গে ২০ টাকা বুকিং ফি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে প্রথম ২ কিলোমিটারের পর পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৩৮ টাকা। ভ্রমণ চলাকালে প্রতি মিনিটের ভাড়া ২ টাকা। মোটরকার ও জিপে প্রথম ২ কিলোমিটারের পর পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৩৬ টাকা এবং ভ্রমণ চলাকালীন প্রতি মিনিটে ভাড়া ২ টাকা। অটোরিকশার প্রথম ২ কিলোমিটারের পর পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে ১৮ টাকা এবং ভ্রমণ চলাকালীন প্রতি মিনিটে ভাড়া ২ টাকা। মোটরসাইকেলের প্রথম ২ কিলোমিটারের পর পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১৬ টাকা এবং ভ্রমণ চলাকালীন প্রতি মিনিটে ভাড়া ১ টাকা। মোটরসাইকেলের আগে প্রথম ২ কিলোমিটারের ভাড়া ছিল ৮৫ টাকা।

রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিশনের হারও কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিআরটিএ। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা ভাড়ার সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ কমিশন নিতে পারবে। আগে এই হার ছিল ৩০ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাইড শেয়ারিংয়ের নানা বিষয়ে একটি আবেদন করেছিলেন রাইডরা। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পরে এটা নিয়ে আমাদের একটি কমিটি হয়েছিল। ওই কমিটি রাইডশেয়ারিংয়ের নানা বিষয় পর্যালোচনা করেছে।’

বিআরটিএ সূত্র জানায়, রাইডশেয়ারিং সেবার প্রস্তাবিত সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী যাত্রী বা চালক কেউ ট্রিপ বাতিল করলে নির্দিষ্ট সময়ের পর বাতিল চার্জ প্রযোজ্য হবে। যাত্রী অনুরোধ পাঠানোর পর চালক গ্রহণ করে যাত্রীর অভিমুখে রওনা হওয়ার পর ৩ মিনিটের মধ্যে ট্রিপ বাতিল করলে কোনো চার্জ লাগবে না। তবে ওই সময়ের পর বাতিল করলে সম্ভাব্য ভাড়ার ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৩০ টাকা (যেটি কম) ক্যানসেলেশন চার্জ হিসেবে নেওয়া হবে, যা চালক ও রাইডশেয়ারিং কোম্পানি সমানভাবে ভাগ করবে।

চালকও অনুরোধ গ্রহণের পর ৩ মিনিটের মধ্যে বাতিল করলে কোনো চার্জ লাগবে না। কিন্তু এর পর বাতিল করলে তাঁর কাছ থেকেও একই হারে চার্জ কাটা হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাইড শেয়ারিংয়ে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ ও কমিশন কমানো যাত্রীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। তবে বাস্তবায়ন ও তদারকি নিশ্চিত করাই মূল চ্যালেঞ্জ। এসব নিয়ম শুধু কাগজে নয়, বাস্তবেও কার্যকর করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আপ্যায়নে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের তথ্য ‘সর্বৈব মিথ্যাচার’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৫
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আপ্যায়নে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের তথ্য ‘সর্বৈব মিথ্যাচার’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আপ্যায়নে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে—সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এমন দাবি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং একে ‘সর্বৈব মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করেছে। প্রেস উইং জানিয়েছে, একটি বিশেষ মহল সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘অতি সম্প্রতি মহলবিশেষের পক্ষ থেকে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারে বলা হচ্ছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আপ্যায়ন বাবদ ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। এটি একটি পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা, যা প্রচারকারীরা কমিশনের কোনো ভাষ্য বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই চালাচ্ছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করে। ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কমিশনের মোট বাজেট ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার ২৬ টাকা। এর মধ্যে ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ১২৬ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

বাজেটের মধ্যে আপ্যায়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৫ টাকা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, আপ্যায়ন খাতের অধিকাংশ ব্যয় হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও কমিশনের বিভিন্ন বৈঠক চলাকালে। এসব বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি, তাঁদের সহযোগী, সাংবাদিক, কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

প্রথম পর্যায়ে গত ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৪টি বৈঠক হয়, যেখানে ব্যয় হয় ৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ২৩টি বৈঠক হয়। এতে মোট ব্যয় হয় ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকা। এই বৈঠকগুলোর বেশির ভাগই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলেছে। ফলে নাশতার পাশাপাশি দুপুর ও রাতের খাবারেরও ব্যবস্থা করতে হয়েছে। গড়ে প্রতিদিনের ব্যয় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কম।

তৃতীয় পর্যায়ে সাতটি বৈঠকে ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন, এতে ব্যয় হয় ৭ লাখ ৮ হাজার ৬০০ টাকা।

এ ছাড়া কমিশনের অভ্যন্তরীণ সভা হয়েছে ৫০টি, যার অনেকগুলোই দিনব্যাপী বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনুষ্ঠিত হয়। এই বাবদ মোট ব্যয় হয় ১ লাখ ৫ হাজার ৫২০ টাকা।

রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক, নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক এবং তিনটি সংবাদ সম্মেলনসহ মোট ১৩টি সভায় ব্যয় হয় ২ লাখ ৩৪০ টাকা।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে ১৩টি, যেখানে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৯৬০ টাকা। প্রেস উইং জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞরা এসব বৈঠকের জন্য কোনো ভাতা বা সম্মানী নেননি।

এ ছাড়া গত ৯ মাসে অতিথি আপ্যায়নের জন্য ব্যয় হয়েছে ২ লাখ টাকা। এসব অতিথির মধ্যে ছিলেন বিদেশি কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, সম্পাদক, সাংবাদিক ও অন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘উল্লিখিত বিস্তারিত হিসাব থেকে এটি স্পষ্ট যে, ৮৩ কোটি টাকার দাবি শুধু মিথ্যাচার নয়, বরং ঐকমত্য কমিশন ও তার কার্যক্রমকে হেয় করার একটি সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিত অপপ্রয়াস।’

কমিশনের দাবি, তারা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত দৈনন্দিন সংবাদ থেকেই স্পষ্ট। সাংবাদিকেরা নির্বিঘ্নে কমিশন কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পেরেছেন, কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যরা নিয়মিতভাবে গণমাধ্যমকে তথ্য দিয়েছেন এবং প্রেস ব্রিফিং করেছেন।

এ ছাড়া, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাগুলো সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে।

কমিশন আশা প্রকাশ করেছে, যে অসাধু মহল এই প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে, তারা অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘কমিশন তার দায়িত্ব পালনে দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের সহযোগিতা পেয়েছে এবং আশা করে গণমাধ্যমগুলো ভবিষ্যতেও সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অনিবন্ধিত ও অননুমোদিত ওষুধ লিখলে শাস্তির নীতিমালা প্রস্তাব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করছেন কমিটির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করছেন কমিটির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে অনিবন্ধিত ও অননুমোদিত ওষুধ লেখা হলে শাস্তির বিধান রেখে নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের কাছে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক তাঁদের ব্যবস্থাপত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) অনুমোদিত ও নিবন্ধিত নয় এমন ওষুধ লিখে আসছেন। এতে রোগীদের স্বাস্থ্য বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বিষয়টি তদন্তে মেডিকেল টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু হেনা চৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন ফার্মাকোলজি বিভাগের সভাপতি ডা. ইলোরা শারমিন এবং উপ-রেজিস্ট্রার (আইন) ডা. আবু হেনা হেলাল উদ্দিন আহমেদ। সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক (আইন) অ্যাডভোকেট তানিয়া আক্তার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএমইউর চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে অনিবন্ধিত ওষুধ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কোনো ওষুধ, ভিটামিন, মিনারেল বা সাপ্লিমেন্টের নাম প্রেসক্রিপশনে লেখা হলে তা আইনভঙ্গের শামিল কি না এবং হলে কী ধরনের আইনি প্রতিকার বা শাস্তি প্রযোজ্য হতে পারে, তা নির্ধারণ করে প্রচলিত আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে কমিটি। এ ক্ষেত্রে প্রামাণ্য আইন হিসেবে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩’ এবং ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০’ উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে—যেসব ভিটামিন, মিনারেল সাপ্লিমেন্ট ও হেলথ কেয়ার প্রোডাক্ট বিদেশ থেকে আমদানি হয়, সেগুলো ডিজিডিএ ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) কীভাবে যাচাই-বাছাই করে, কিংবা এসব পণ্য ব্যবহারের অনুমোদন দেয় কি না, তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ডিজিডিএর ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত ওষুধের তালিকা সহজেই পাওয়া যায়। এই বিষয়ে চিকিৎসকদের সচেতন করতে আইটি সেকশনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রতিকার হিসেবে বিএমইউর চিকিৎসকেরা যেন অননুমোদিত ওষুধ প্রেসক্রিপশনে না লেখেন সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট ছাপানো এবং সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজন করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি অনিবন্ধিত ওষুধ লিখলে সম্ভাব্য শাস্তির বিষয়েও চিকিৎসকদের অবহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ, বহির্বিভাগ এবং প্রবেশদ্বারগুলোতে বড় সাইনবোর্ড স্থাপন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি পাঠানো এবং ডিজিডিএ ও বিএসটিআই কর্তৃক নিবন্ধিত ওষুধের তালিকা বিভাগ ও বহির্বিভাগে সরবরাহের সুপারিশও করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গণতন্ত্রের মূল কথা হলো জনগণ ভোট দিতে পারবে: অ্যাটর্নি জেনারেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ৪৬
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মহৎ উদ্দেশ্য ছিল জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। গণতন্ত্রের মূলকথা হলো, জনগণ ভোট দিতে পারবে। ভোটাধিকার প্রয়োগটাই এখানে মুখ্য। সে কারণে ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করা) আনা হয়েছিল। সেই ত্রয়োদশ সংশোধনী আপিল বিভাগ বাতিল করলেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। তার প্রধানত দুটি কারণ–একটি হলো এটা নির্বাচিত সরকার না। আরেকটি হলো, এটাতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগে আজ নবম দিনের মতো এ বিষয়ে শুনানি হয়। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ তাদের শুনানি শেষ করে। এরপর ১১ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী আপিল বিভাগ বাতিল করলেন এজন্য যে, বিচারকেরা প্রধান বিচারপতি, প্রধান উপদেষ্টা ইত্যাদি হওয়ার লোভ সামলাতে পারবেন না। যদি এটিই সত্য হয়, তাহলে যেসব বিচারপতি প্রধান বিচারপতি হওয়ার লোভে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে রায় দিয়েছিলেন, সেই সিস্টেমটা বদলানো দরকার।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, এটা প্রমাণিত হয়েছে, নির্বাচিত সরকার হলেই গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারে না। প্রমাণিত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে নিরপেক্ষভাবে, স্বাধীনভাবে, উন্মুক্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

রায় কার্যকর হওয়া প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই রায় সেই দিন থেকেই কার্যকর হবে। তবে জুলাই বিপ্লবের পর একটি সরকার গঠিত হয়েছে। রাজপথ থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে এ দেশের সরকার প্রধান কে হবেন, কোন ধরনের সরকার হবে। দেশের প্রধান বিচারপতি কে হবেন, সেটাও রাজপথ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে। এই যে রেভ্যলুশনের (বিপ্লবের) বিজয়ী শক্তি, এটাকে রেভ্যলুশনের থিওরি জুরিসপ্রুডেন্স বলে। এ থিওরি অনুসারে, এই সরকার একটা নির্বাচনের পথ ধরে হেঁটে গেছে। সেই নির্বাচনের পথে হাঁটতে গিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এই সরকারের পরে যে সরকার আসবে, সেখান থেকে যদি কার্যকর করেন সেখানে কোনো ব্যত্যয় হবে না।’

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সরকার প্রধান যখন ৫ আগস্ট পালিয়ে যায়, তার ক্যাবিনেট যখন পালিয়ে যায়, তার সংসদ সদস্যরা যখন পালিয়ে যায়, তখন রাষ্ট্রপতির সামনে যখন কোনো পথ খোলা থাকে না। রাষ্ট্রপতি ১০৬ ধারায় সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে মতামত নিয়ে সরকার গঠন করেছেন। এই সরকার গঠন শুধু সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ওপর নির্ভর করে না। বিপ্লবের তত্ত্ব অনুসারে মুক্তিকামী জনগণ, বিজয়ী জনগণ, স্বাধীন জনগণ, গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকারী জনগণ যেভাবে নির্ধারণ করবেন—সেটাই সংবিধান, সেটাই আইন। সুতরাং রেভ্যলুশনারি থিওরিতে যে জুরিসপ্রুডেন্স স্বীকার করা হলো, গ্রহণ করা হলো—সেই থিওরিটাকেই আমরা হাইলাইট করছি। ১০৬ সব নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত