Ajker Patrika

ম্যাজিস্ট্রেটের জরিমানার ক্ষমতা বেড়ে একলাফে ৫ লাখ টাকা, অপরাধ কমে দ্রুত বিচারের আশা

সুলতান মাহমুদ, ঢাকা
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৫, ০০: ০৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩২ ধারায় বর্ণিত বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের জরিমানার ক্ষমতা ব্যাপক বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটরা আগের ১০ হাজার টাকার জায়গায় এখন ৫ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারবেন। সংসদ অধিবেশন না থাকায় সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এরই মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছেন। আইন মন্ত্রণালয় গেজেট বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে।

এই সংশোধনী শুধু আইন প্রয়োগের সক্ষমতা নয়, বরং সামগ্রিকভাবে বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেও সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, জরিমানার পরিমান ব্যাপক বাড়ার ফলে অপরাধপ্রবণতার সঙ্গে উচ্চ আদালতে মামলার জট ও সময়ক্ষেপণ কমবে।

১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩২ ধারা অনুযায়ী, আদালতে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের নিম্ন বর্ণিত দণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা আছে—

* মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটরা পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন।

* দ্বিতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটরা তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন।

* তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটরা দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন।

সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধি অধ্যাদেশে ৩২ ধারায় বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের আর্থিক জরিমানার সীমা বাড়ানো হয়েছে—

* ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটরা এখন ১০ হাজার টাকার বদলে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা

* ২য় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটরা এখন ৫ হাজার টাকার বদলে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা

* ৩য় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটরা এখন আগের ২ হাজার টাকার বদলে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা

অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। ছবি: সংগৃহীত

এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এটি ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবমুখী’ পদক্ষেপ। আগে ম্যাজিস্ট্রেটদের জরিমানার ক্ষমতা খুবই সীমিত ছিল। ফলে অনেক অপরাধের সাজার অপর্যাপ্ত হত। আগে বারবার সংঘটিত হওয়া অপরাধের ক্ষেত্রে সামান্য জরিমানা দিয়ে দায়মুক্তি সম্ভব হত। ফলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা কমত এবং অপরাধপ্রবণতা কমানো যেত না। এছাড়া, বড় অঙ্কের জরিমানার প্রয়োজন হলে মামলাগুলো উচ্চ আদালতে পাঠাতে হতো, ফলে মামলার জট ও সময়ক্ষেপণ বেড়ে যেত।

ইশরাত হাসান আরো বলেন, ‘সংশোধনের ফলে ম্যাজিস্ট্রেটরা এখন আর্থিকভাবে যথাযথ জরিমানা আরোপ করতে সক্ষম হবেন। এতে করে অপরাধ দমন সহজ হবে, বিচারিক প্রক্রিয়ার গতি বাড়বে, উচ্চ আদালতের ওপর চাপ কমবে। ফলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। ৩২ ধারার এই সংশোধন শুধু আইন প্রয়োগের সক্ষমতা নয়, বরং সামগ্রিকভাবে বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেও সহায়ক হবে।’

নতুন ধারা যুক্ত

সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধি অধ্যাদেশে নতুন করে ৪৬এ থেকে ৪৬ই ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় প্রদর্শন, গ্রেপ্তারের স্মারকলিপি প্রস্তুত, পরিবারকে অবহিতকরণ, আঘাতপ্রাপ্ত হলে চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, গ্রেপ্তারের তথ্য সরকারি রেজিস্ট্রারে নথিভুক্ত করা এবং হেফাজতে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার যত্ন নেওয়ার মতো বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

৪৬এ ধারায় বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তা বা অন্য যে ব্যক্তি গ্রেপ্তার করবেন, তিনি—

(ক) নিজের নামের সঠিক, দৃশ্যমান ও স্পষ্ট পরিচয় বহন করবেন, যা সহজে শনাক্ত করতে সহায়তা করবে;

(খ) নিজের পরিচয় প্রকাশ করবেন এবং দাবি করলে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ও গ্রেপ্তারের সময় উপস্থিত ব্যক্তিদের তাঁর পরিচয়পত্র দেখাবেন;

(গ) গ্রেপ্তারের একটি স্মারকলিপি প্রস্তুত করবেন, যা—

(i) অন্তত একজন সাক্ষী কর্তৃক স্বাক্ষরিত হবে, যিনি গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য অথবা গ্রেপ্তারস্থলের কোনো সম্মানিত বাসিন্দা হবেন; এমন কোনো সাক্ষী না থাকলে তার কারণ স্মারকলিপিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে;

(ii) গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি স্বাক্ষর বা অঙ্গুলির ছাপ দিয়ে স্বীকৃতি দেবেন, যদি তিনি অস্বীকার না করেন;

(ঘ) যদি আসামিকে তাঁর বাসস্থান ছাড়া অন্য কোথাও থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, তবে যত দ্রুত সম্ভব, তবে গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির মনোনীত পরিবারের সদস্য, আত্মীয় বা বন্ধুকে গ্রেপ্তারের সময়, স্থান এবং হেফাজতের স্থান জানাতে হবে;

(ঙ) গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলে, ৪৬ই ধারা অনুযায়ী তাঁকে চিকিৎসক বা নিবন্ধিত চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা ও প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে হবে; সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সনদ সংগ্রহ করতে হবে এবং আঘাতের কারণ লিপিবদ্ধ করতে হবে;

(চ) গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি চাইলে গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর পছন্দের আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ বা নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ দিতে হবে।

৪৬বি. ধারায় সরকারি রেজিস্ট্রার, সাধারণ ডায়েরিতে গ্রেপ্তারের নথিভুক্তকরণ ও গ্রেপ্তারের তথ্য প্রদানের বিধি তুলে ধরা হয়েছে—

(১) গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা সরকারি রেজিস্ট্রারে গ্রেপ্তারের কারণ, তথ্যদাতা বা অভিযোগকারীর নাম ও বিবরণ, যার কাছে গ্রেপ্তারের তথ্য দেওয়া হয়েছে সেই আত্মীয় বা বন্ধুর নাম ও বিবরণ, এবং গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির হেফাজতকারী কর্মকর্তার নাম ও বিবরণ লিখবেন।

(২) কোনো থানার অধিক্ষেত্রে হওয়া প্রতিটি গ্রেপ্তার অবিলম্বে সেই থানার সাধারণ ডায়েরিতে নথিভুক্ত হবে। গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা যদি উক্ত থানার সঙ্গে সংযুক্ত না হন, তবে গ্রেপ্তারের পরপরই গ্রেপ্তারের স্মারকলিপির একটি অনুলিপি সেই থানার অফিসার ইনচার্জকে দেবেন এবং তিনি তা সাধারণ ডায়েরিতে নথিভুক্ত করবেন।

(৩) রেজিস্ট্রার বা সাধারণ ডায়েরি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চাহিদা অনুযায়ী গ্রেপ্তারের তথ্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির আত্মীয়, বন্ধু বা প্রতিবেশীকে দিতে বাধ্য থাকবেন।

৪৬সি ধারায় বলা হয়েছে—

প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপার বা মহানগরের পুলিশ কমিশনার একজন সহকারী উপপরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রতিটি জেলা, মহানগর সদর দপ্তর ও থানায় মনোনীত করবেন, যিনি গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের নাম, ঠিকানা ও অপরাধের ধরন সংরক্ষণ করবেন; এই তথ্য প্রতিটি থানা ও জেলা বা মহানগর সদর দপ্তরে, সম্ভব হলে ডিজিটাল আকারে, সুস্পষ্টভাবে প্রদর্শন করা হবে।

৪৬ডি ধারামতে—

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির হেফাজতকারী ব্যক্তির দায়িত্ব হবে তাঁর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার যৌক্তিক যত্ন নেওয়া।

৪৬ই. ধারামতে—

(১) গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি অসুস্থ বা আঘাতপ্রাপ্ত মনে হলে, গ্রেপ্তারের পরপরই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অথবা চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকলে নিবন্ধিত চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা ও প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে হবে; তবে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি মহিলা হলে, সম্ভব হলে মহিলা চিকিৎসক বা মহিলা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে, অথবা মহিলা স্টাফ নার্স বা মহিলা সহকারী উপস্থিতিতে পরীক্ষা করতে হবে।

(২) উপ-ধারা (১) অনুযায়ী পরীক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক বা নিবন্ধিত চিকিৎসক একটি সনদসহ পরীক্ষা ও চিকিৎসার প্রতিবেদন দেবেন, যা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি বা তাঁর মনোনীত ব্যক্তিকে প্রদান করতে হবে।

(৩) গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি অসুস্থ বা আহত অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হলে, ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় চিকিৎসার নির্দেশ দিতে পারবেন; তবে গুরুতর আহত বা অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন হলে এবং শারীরিকভাবে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা সম্ভব না হলে, ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক ভিডিও লিংকের মাধ্যমে হাজির করানো যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

‘বিচারপতি খায়রুলকে হাতকড়া পরানো মানে পুরো বিচার বিভাগকে হাতকড়া পরানো’

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

কোথাও ঘুরতে ইচ্ছা করলে আমাকে জানাবে—ছাত্রীকে খুবি অধ্যাপক

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু: গভর্নর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত