Ajker Patrika

একমাত্র বিদেশি ‘বীর প্রতীক’ ঔডারল্যান্ড, যাঁর জন্য মুক্তিযুদ্ধের অংশ হলো বাটা

আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ২২
একে এম আবদুল হাই (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়) এবং ঔডারল্যান্ড (ডান দিক থেকে তৃতীয়)। ছবি: Priyoaustralia.com.au
একে এম আবদুল হাই (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়) এবং ঔডারল্যান্ড (ডান দিক থেকে তৃতীয়)। ছবি: Priyoaustralia.com.au

বহুজাতিক জুতা প্রস্তুতকারক কোম্পানি বাটা এখন বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত বিষয়। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ৭ এপ্রিল ছিল বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি। সেদিন বাংলাদেশে বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক বিদেশি কোম্পানির আউটলেটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সেদিন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বাটা। চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনার একাধিক স্থানে বাটার শোরুমে হামলা চালিয়ে জুতাসহ জিনিসপত্র লুটপাট করে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ। এর জন্য সমালোচনার মুখে অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ঘটনায় বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে যে বাটা জড়িয়ে আছে, সেই বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। বিষয়টি জানেন না অনেকে, বিশেষ করে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। মুক্তিযুদ্ধে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পাওয়া একমাত্র বিদেশি ব্যক্তিটি ছিলেন বাটার তখনকার বাংলাদেশপ্রধান।

তাঁর নাম উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ওলন্দাজ নাগরিক ঔডারল্যান্ড একমাত্র বিদেশি, যিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতাযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধাদের তালিকায় বীর প্রতীক পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে ৩১৭ নম্বরে আছে তাঁর নাম।

১৯৯৮ সালের ৭ মার্চ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে ঔডারল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। বীর প্রতীক পদকের সম্মানীর টাকা তিনি দান করে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ গুলশানের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। ২০০১ সালের ১৮ মে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ৮৪ বছর বয়সে ঔডারল্যান্ড মৃত্যুবরণ করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ঔডারল্যান্ড

নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে জন্ম নেওয়া ঔডারল্যান্ড ১৭ বছর বয়সে ১৯৩৪ সালে বাটা শু কোম্পানিতে শু শাইনার বা জুতা পলিশের কাজ নেন। দুই বছর পর চাকরি ছেড়ে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত রয়্যাল সিগন্যাল কোরে সার্জেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪০ সালে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ওলন্দাজ বাহিনীর গেরিলা কমান্ডো হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় উইলিয়াম ঔডারল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিযুদ্ধের সময় উইলিয়াম ঔডারল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭০ সালের শেষের দিকে বাটা শু কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে প্রথম ঢাকায় আসেন ঔডারল্যান্ড। কয়েক মাসের মধেই তিনি কোম্পানি ম্যানেজার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই আরেক যুদ্ধের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক ঔডারল্যান্ড।

১৯৭১ সালের ৫ মার্চ পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে টঙ্গীর মেঘনা টেক্সটাইল মিলের সামনে শুরু হয় শ্রমিক-জনতার মিছিল। সেই মিছিলে প্রশাসনের নির্দেশে গুলি চালায় ইপিআর বাহিনী। ঘটনাস্থলে ৪ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এর প্রভাব পড়ে টঙ্গীর বাটা কোম্পানির কারখানাতেও। স্বচক্ষে এ হত্যাকাণ্ড ও তাণ্ডব দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি ঔডারল্যান্ড।

যুদ্ধের দুই দশক পর বন্ধু আনোয়ার ফারিদিকে লেখা এক চিঠিতে ঔডারল্যান্ড বলেন, ‘তাই ১৯৭১ সালের মার্চে যখন ট্যাংক ও পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় ঢুকে পড়ে, আমি যেন আবার ফিরে গিয়েছিলাম আমার যৌবনের ইউরোপীয় অভিজ্ঞতায়।’

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে ঔডারল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে ঔডারল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালু করলে ঔডারল্যান্ড প্রথম সুযোগেই শহরের বিভিন্ন অংশের ছবি তোলেন, যার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল। এসব ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাঠান। বাঙালিদের ওপর ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও এমন একটি গণহত্যা; নাৎসি বাহিনীর বর্বরতা ও নৃশংসতা দেখেছিলেন তিনি। সেই বর্বরতার বিরুদ্ধে মিত্রবাহিনীর গেরিলা সৈনিক হিসেবে লড়েছিলেন তিনি। ঠিক ২৯ বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতা ও নির্মমতা তাঁর সৈনিক জীবনের স্মৃতিকেই মনে করিয়ে দেয়।

বাটা কোম্পানির মতো বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ঔডারল্যান্ডের। এই সুবিধা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে ‘কারফিউ পাস’ পেয়েছিলেন ঔডারল্যান্ড। নিষিদ্ধ সময়েও শহরে চলাচল করতে পারতেন তিনি। নিজের ফোর্ড ফেয়ারলেন গাড়িতে অস্ট্রেলিয়ার পতাকা ওড়াতেন বলে বাড়তি নিরাপত্তা পেতেন।

প্রথমে ঢাকা সেনানিবাসের ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সুলতান নেওয়াজের সঙ্গে গড়ে তোলেন ঘনিষ্ঠতা। সেনানিবাসে নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয় তাঁর। একপর্যায়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লা খান নিয়াজি, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলিসহ আরও অনেক সামরিক অফিসারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, সামরিক অফিসারদের সভায় অংশগ্রহণের সুযোগও পেয়ে যান তিনি।

সামরিক পোশাকে উইলিয়াম ঔডারল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত
সামরিক পোশাকে উইলিয়াম ঔডারল্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত

ফলে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোপন সংবাদ সংগ্রহ করার সুযোগ পান ঔডারল্যান্ড। সংগৃহীত সব তথ্য তিনি গোপনে পাঠিয়ে দিতেন ২ নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার ও জেড ফোর্সের কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে। পাকিস্তানিদের তাণ্ডবলীলা যখন ভয়ংকর হয়ে ওঠে, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে শুরু করেন গেরিলা প্রশিক্ষণের কাজ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কমান্ডো হিসেবে তিনি ছিলেন অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। তাঁর পরিকল্পনায় ও পরিচালনায় ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বহু অপারেশন সংঘটিত হতে থাকে। মেজর হায়দারের দেওয়া এক সনদে পাওয়া যায়, ঔডারল্যান্ড মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, নগদ অর্থ, চিকিৎসাসামগ্রী, গরম কাপড় ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন।

বাটার কিছু কর্মীকে নিয়ে গোপন দল গঠন করেন ঔডারল্যান্ড। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন বাটার পার্সোনেল ম্যানেজার এ কে এম আবদুল হাই, চিকিৎসক হাফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং কর্মকর্তা আবদুল মালেক ও হুমায়ুন কবির খান।

ঔডারল্যান্ডের ঘনিষ্ঠ আবদুল হাই দ্য ডেইলি স্টারকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ঔডারল্যান্ড বাঙালি ছিলেন না, কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার মতোই তিনি এ দেশকে ভালোবেসেছিলেন।’

তিনি আরও জানান, যুদ্ধের শুরুর দিকে ঔডারল্যান্ডের পরামর্শে তিনি সপরিবার টঙ্গীর বাটা কারখানা এলাকায় চলে যান। পরে পাকিস্তানি বাহিনী পাশের টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (টিআইসি) দখল করে নিলে ঝুঁকি দেখে কারখানার মাঠে দুটো বাংকার তৈরি করেন ঔডারল্যান্ড। বাংকারগুলো পরে ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি ঘাঁটির ওপর ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার সময় ৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচায়।

ঔডারল্যান্ডের নামে গুলশানে সড়ক। ছবি: সংগৃহীত
ঔডারল্যান্ডের নামে গুলশানে সড়ক। ছবি: সংগৃহীত

ঔডারল্যান্ডের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কৌশল তুলে ধরে হাই বলেন, ‘আস্থা অর্জনের জন্য ঔডারল্যান্ড পাকিস্তানিদের প্রশংসা করতেন, আর বাঙালিদের সমালোচনা করতেন। তখন তাঁরা নির্দ্বিধায় নিজেদের পরিকল্পনা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করত। এই সব তথ্য আমরা ঢাকার জিঞ্জিরায় একটি গোপন আস্তানায় পাঠাতাম, যেখান থেকে তা ওসমানীর কাছে পৌঁছে যেত।’

স্ত্রী ও কন্যাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিজের বাসার দরজা খুলে দিয়েছিলেন ঔডারল্যান্ড। বাড়ির ছাদে পানির ট্যাংকে অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন তিনি; নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জুতা, কম্বল এবং ওষুধ পাঠাতেন। নিজের একটি পিস্তল তিনি সেক্টর ২-এর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুলকে দেন। ডা. হাফিজুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত করেছিলেন ঔডারল্যান্ড।

যুদ্ধ চলাকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতেন তিনি। ঢাকায় অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের গোপন সহযোগিতাও পেতেন তিনি। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ঢাকায় ফিরে তিনি আবার পুরোনো কর্মস্থল বাটায় যোগ দেন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এ দেশেই ছিলেন ঔডারল্যান্ড। পরে বাটার পক্ষ থেকে তাঁকে বদলি করা হয় অস্ট্রেলিয়ায়।

জীবনের শেষ দিনগুলোতে প্রায়ই তিনি তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে বলতেন: ‘বাংলাদেশ আমাদের ভালোবাসা; পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও আবেগের এ ধারা অব্যাহত রেখো।’ ঔডারল্যান্ড নিজেই লিখেছেন, ‘ইউরোপের যৌবনের অভিজ্ঞতাগুলো যেন আমি নিজের মধ্যে ফিরে পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে, বিশ্ববাসীকে সেসব জানানো উচিত।’

কেবল চাকরির সূত্রে এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ঔডারল্যান্ডের ত্যাগ অবর্ণনীয়। এই দেশ তাঁর জন্মভূমি নয়, তবু ভালোবেসে ফেলেছিলেন এ দেশের মাটি ও মানুষকে। সেই ভালোবাসা এত তীব্র ছিল যে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন। যদি ধরা পড়তেন, নেমে আসত অত্যাচারের নির্মম খড়গ, গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে তাঁকে হত্যা করতেও দ্বিধা করত না হানাদারেরা। তবু নিজের আদর্শ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতি তীব্র আবেগ ঔডারল্যান্ডকে উদ্বেলিত করেছিল। তাই তো এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন।

তাই উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড থাকবেন প্রত্যেক মুক্তিপ্রাণ বাঙালির প্রাণে। ঔডারল্যান্ড থাকবেন এ দেশের মানুষের ভালোবাসায়। এ দেশের মানুষ চিরশ্রদ্ধায় স্মরণ করবে তাঁকে। আর তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে বাটা। বিনম্র শ্রদ্ধা এই কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধার প্রতি।

লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক

আজকের পত্রিকা

তথ্যসূত্র:

জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা/ মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশীদের ভূমিকা/ সোহরাব হাসান

তথ্যচিত্র: বীর প্রতীক ওডারল্যান্ড/ মাহবুবুর রহমান

Tribute: A friend in need/ Prabir Barua Chowdhury

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৫
তাসনিম জারা। ছবি: সংগৃহীত
তাসনিম জারা। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকা-৯ আসনের মনোনয়নপত্র কিনেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি।

ঢাকার বেশির ভাগ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও ঢাকা-৯ আসন ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। বেশ কিছু দিন ধরে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বিএনপির ফাঁকা রাখা আসনে তাসনিম জারা মনোনয়নপত্র কেনায় সেই গুঞ্জনের পালে হাওয়া লাগল বলে মনে করছেন অনেকে।

ঢাকা-৯ আসন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১,২, ৩,৪, ৫,৬, ৭,৭১, ৭২,৭৩, ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড তথা সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা ও মান্ডা থানা নিয়ে গঠিত। আসনটিতে বিএনপি এখনো প্রার্থী না দিলেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে। এই আসনে জামায়াতের প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী কবির আহমদ।

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর নিজের প্রার্থিতা নিয়ে তাসনিম জারা বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য নির্দেশনা আছে যে, ১৩ তারিখের মধ্যে মনোনয়ন আবেদন ফরম জমা দিতে হবে। তো সেই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলাম। যদি সুযোগ পাই, আশা করছি এনসিপি থেকে আমরা পরিবর্তন আনতে সক্ষম হব।’

গত ৬ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে এনসিপি। আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম বিক্রি চলবে। মনোনয়ন ফরমের দাম ১০ হাজার টাকা। তবে জুলাই আহত ও নিম্ন আয়ের মানুষ ২ হাজার টাকা দিয়ে এই ফরম সংগ্রহ করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১৩ নভেম্বর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে, কোনো আশঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৫৬
সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ১৩ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ওই দিন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে দাবি করেছেন তিনি।

সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায় কবে ঘোষণা করা হবে, ১৩ নভেম্বর সেই তারিখ জানাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ জন্য ১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘১৩ নভেম্বরের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তারা শক্ত অবস্থানে থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। কোনো আশঙ্কা এখানে নেই।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে বড় ধরনের আলোচনা হয়েছে, যে বিষয়ে আপনাদের একটু সহযোগিতা দরকার। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো।’

সন্ত্রাসীরা যাতে সহজে জামিন না পায়, সরকার সে পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। আপনারা অনেক সময় বলেন, সন্ত্রাসীরা খুব তাড়াতাড়ি জামিন পেয়ে যায়। সহজে যাতে জামিন না পায় এ জন্য আমরা তাদেরও অনুরোধ করব, যারা জামিন দেয়, তারা যাতে সন্ত্রাসীদের জামিন না দেয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে আপিলের রায় ২০ নভেম্বর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ২৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে আপিল শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে রায়ের জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য গত ২৭ আগস্ট করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আপিল করেন।

এরপর নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরানোর বিষয়ে আপিলের শুনানি শুরু হয় গত ২১ অক্টোবর। গত ২২,২৩, ২৮ ও ২৯ অক্টোবর এবং ২, ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালে আপিলের ধারাবাহিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি ও রুল প্রদানের পর হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রিটটি খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে। এই রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয় এবং ২০০৫ সালে রিট আবেদনকারীরা আপিল দায়ের করেন।

আপিল বিভাগে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে। ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ অন্যান্য পরিবর্তন আনা হয় পঞ্চদশ সংশোধনী আইনে, যা ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ৩ জুলাই এর গেজেট প্রকাশ করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আবেদন করেন। অন্য চারজন হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া এবং জাহরা রহমান। এরপর ১৬ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।

এ ছাড়া গত বছরের ২৩ অক্টোবর একই আবেদন দাখিল করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এর পর আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে নওগাঁর রাণীনগরের নারায়ণপাড়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও গত বছর একটি আবেদন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনের নিরাপত্তা

ভোটে মব ঠেকানোর কৌশল শিখছেন পুলিশ সদস্যরা

  • চার ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে ১৫০ জন মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হয়।
  • প্রশিক্ষণে নির্বাচনী আইন জানানো, ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি অন্তর্ভুক্ত।
  • ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৮ হাজার ১৩৪ জন পুলিশ সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩১
ভোটে মব ঠেকানোর কৌশল শিখছেন পুলিশ সদস্যরা

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে এক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে। এই ভোটে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ যেমন আগের থেকে ভিন্ন, তেমনি ভোটের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জেও রয়েছে ভিন্নমাত্রা। এই নির্বাচন সুষ্ঠু করা তাই পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেসব মাথায় রেখেই নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। বাহিনীর বিরাট একটি অংশকে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। এর মধ্যে বিশেষ করে ‘মব’ ঠেকানোর কৌশলও শিখছেন তাঁরা।

গত সেপ্টেম্বরে পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেছিলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবারই প্রথম বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। নির্বাচনে সহিংসতাও আমরা মোকাবিলা করতে পারব।’ এ সময় প্রশিক্ষণের বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম) আবু নাসের মোহাম্মদ খালেদ বলেন, প্রশিক্ষণটি অত্যন্ত যুগোপযোগী, আধুনিক। অডিও-ভিডিও ধারণ, ‘মব’ নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন, নির্বাচনী বিধিবিধান —সবকিছুই প্রশিক্ষণে থাকছে।’

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৪৩ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে পুলিশ সদস্যদের পেশাদারি ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য গত জুনে মডিউল তৈরি করে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নেয় পুলিশ। মডিউলে নির্বাচনের চার ধাপ—তফসিল ঘোষণার আগের সময়, তফসিল ঘোষণার পরের সময়, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণে নির্বাচনী আইনবিধি অবহিতকরণ, জনতার ভিড় বা ‘মব’ নিয়ন্ত্রণ, প্রথমবারের মতো বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার, অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, চার ধাপে পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে ১৫০ জন মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং তাঁরা বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে গিয়ে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তিনটি ধাপের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। গত ৫ অক্টোবর থেকে চতুর্থ ধাপে সারা দেশে ১৩০টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে একযোগে এ প্রশিক্ষণ চলছে। পুলিশ সদস্যদের মনোবল ও মানসিক প্রস্তুতি বাড়াতে প্রশিক্ষণে রাখা হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট, ছোট ফিল্ম ও তথ্যবহুল বুকলেট। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এ প্রশিক্ষণ শেষ হবে। এই ধাপে মাঠপর্যায়ের সবচেয়ে বেশি পুলিশ সদস্য প্রশিক্ষণ পাবেন। চার ধাপে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ নির্বাচনী প্রশিক্ষণ নেবে। ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৮ হাজার ১৩৪ জন পুলিশ সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

প্রশিক্ষণ নেওয়া একাধিক পুলিশ সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া, জনতার বিক্ষোভ বা ‘মব’ সামাল দেওয়ার জন্য উপস্থিত বুদ্ধি বা কৌশল গ্রহণের ওপর প্রশিক্ষণে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী পুলিশের দায়িত্ব ও ক্ষমতা কতটুকু, তা প্রশিক্ষণে শেখানো হচ্ছে।

প্রশিক্ষণে ‘মব’ ও সহিংসতা ঠেকাতে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে। ফলে উত্তেজনা শুরু হওয়ার আগেই তা প্রশমিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য সহিংস এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে আগেই স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচনের মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচনে পুলিশের দায়িত্ব কী, আইন অনুযায়ী কী করতে পারবে—এসব বিষয় প্রশিক্ষণে শেখানো হচ্ছে। তাঁরা যেন আইনের সীমার মধ্যে থেকে শান্তভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং ‘মব’ সৃষ্টি হলে আইন অনুযায়ী যে প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণের বিধান আছে, সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন। প্রয়োজনে স্ট্রাইকিং ফোর্সের সহযোগিতা নেবেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র থাকবে। এসব কেন্দ্রে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশে ২ লাখ ৩ হাজার সদস্য রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দেড় লাখ সদস্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁদের ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটেও তাঁদের প্রশিক্ষণ চলছে। মাঠপর্যায়ে উপপরিদর্শক (এসআই), সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও কনস্টেবলরা দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে দুই থেকে চারজন পুলিশ সদস্য থাকবেন।

আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁদের অধিকাংশই মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক উপপরিদর্শক (এসআই) বলেন, ‘গত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছি। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশই গত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রশিক্ষণে তাঁরা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। কিছু নতুন সদস্য রয়েছেন। প্রশিক্ষণে কোন পরিস্থিতিতে কী করণীয়, সে বিষয়ে ক্লাসের মাধ্যমে শেখানো হচ্ছে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) শাহাদাত হোসাইন বলেন, এবারের নির্বাচনের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। তাই আগে থেকে পুলিশ সদস্যদের প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ সদর দপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখা থেকে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের বাজেটের পর তা সমন্বয় করা হতে পারে। পুলিশ সদস্যরা যেন আইনের সীমার মধ্যে থেকে শান্তভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, প্রশিক্ষণে সে বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত