Ajker Patrika

‘গোপনে’ দুই অধ্যাদেশের অনুমোদনে টিআইবির নিন্দা, মতামত নিয়ে সংশোধনের দাবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘গোপনে’ দুই অধ্যাদেশের অনুমোদনে টিআইবির নিন্দা, মতামত নিয়ে সংশোধনের দাবি

ব‍্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫, জাতীয় উপাত্ত ব‍্যবস্থাপনা অধ‍্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার ওপর বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও অংশীজন সম্পৃক্ততা সম্পন্ন না করে তড়িঘড়ি করে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনে গভীর উদ্বেগ, হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে, ওই অধ্যাদেশ দুটি স্থগিত করাসহ পর্যাপ্ত অংশীজনের সম্পৃক্ততা ও বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ প্রক্রিয়া সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন করা সাপেক্ষে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ শনিবার (১১ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে অংশীজনদের সঙ্গে টানাপোড়েন চলমান অবস্থায় সরকার পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে এবং বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। তবে খসড়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা ও ঝুঁকিবিষয়ক অংশীজনের পরামর্শ উপেক্ষা করে সরকার একতরফাভাবে সর্বশেষ খসড়া সম্পর্কে অংশীজনদের অবহিত না করে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন গ্রহণ করেছে, যা নিন্দনীয়।

বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, অনুমোদিত খসড়ায় বিশ্বজুড়ে অনুসৃত উপাত্ত সুরক্ষা মূলনীতি, যেমন—আইনসম্মততা, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা, উদ্দেশ্য সীমাবদ্ধতা, তথ্য ন্যূনতমীকরণ, নির্ভুলতাসহ সততা ও গোপনীয়তা এবং জবাবদিহির বিষয়গুলো বাদ দেওয়া বা ছুড়ে ফেলা হয়েছে। যে বিষয়গুলোকে এ ধরনের আইনের প্রাণ বলে ধরা হয়। অর্থাৎ প্রণয়নের গোড়াতেই আইনটিকে প্রাণহীন ও খোঁড়া করে দেওয়ার অভাবনীয় নজির তৈরি করা হলো।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘টিআইবির হস্তগত হওয়া অনুমোদন পাওয়া খসড়াতে একইভাবে উপাত্ত-জিম্মাদার ও প্রক্রিয়াকারীকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে ১৫ (৪) উপধারায় যেভাবে ছাড়ের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে, তাকে শুভংকরী ফাঁকি বললেও কম বলা চলে।

‘ধারা ২৪ অব্যাহতি-সংক্রান্ত বিষয়াদিতে ‘‘অপরাধ প্রতিরোধের” নামে ব্যক্তিগত উপাত্তে যে ঢালাও প্রবেশাধিকারের সুযোগ রাখা হয়েছে, তা উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘কী বিবেচনায়, কোন উদ্দেশ্যে উপাত্তের সুরক্ষার নামে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার বিধানাবলি অধ্যাদেশটিতে বলবৎ রাখা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা জরুরি। জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষার নামে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করার এখতিয়ারও বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। অথচ বিচার বিভাগীয় তদারকি ছাড়া সরকারি সংস্থাকে ডেটা সার্ভারে বাধাহীন অনুপ্রবেশের সুযোগ দিলে, তা অপব্যবহার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া আইনের মূল চেতনায় ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা-সংক্রান্ত সাংবিধানিক অঙ্গীকার নিশ্চিতের বিষয় প্রতিফলিত হয়নি। যা সত্যিই বিস্ময়কর।’

তথ্যের অপব্যবহারকে যেভাবে আইনটিতে ফৌজদারি অপরাধে রূপ দেওয়া হয়েছে, তা সত্যিই আপত্তিকর এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এর প্রভাব কতটা পড়বে, তা বিবেচ্য ছিল বলেও প্রতীয়মান হয়নি বলেও মনে করে টিআইবি।

একই সঙ্গে উপাত্ত সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নে একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ তৈরি দাবি থাকলেও, তা মানা হয়নি মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অনেকটা আকস্মিকভাবে বৈশ্বিক চর্চার পরিপন্থী, অবাস্তব ধারণাপ্রসূত তথাকথিত উপাত্ত ব‍্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া প্রণয়ন করে কোনো প্রকার উল্লেখযোগ্য বিশেষজ্ঞ পরামর্শ বা অংশীজন সম্পৃক্ততা ছাড়াই অতীব গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাব্য প্রভাব ও ঝুঁকিপূর্ণ তথাকথিত আন্তপরিচালন কর্তৃপক্ষ গঠন করার জন‍্য খসড়া অধ‍্যাদেশের অনুমোদন করেছে, যা বিশেষজ্ঞ অভিমত অনুযায়ী ব্যাপক ঝুঁকি ও আত্মঘাতী পরিণাম বয়ে আনবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, সরকারি ও আমলাতান্ত্রিক পরিসরের বাইরে এ অধ‍্যাদেশের ওপর বৃহত্তর আঙ্গিকে অংশীজনদের অভিমত গ্রহণ করা বা বিবেচনায় নেওয়ার কোনো প্রকার প্রয়াস দেখা যায়নি, যা কর্তৃত্ববাদী চর্চার হতাশাজনক দৃষ্টান্ত।’

টিআইবি মনে করে, বর্তমান ডিজিটালনির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় এই পরিসর-সম্পর্কিত আইন করার উদ্যোগ গ্রহণ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল জগতের পরিসরের ব্যাপকতা বিবেচনায় না নিয়ে, বিদ্যমান ব্যবস্থার সমস্যা চিহ্নিত না করে, সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের এই প্রক্রিয়ায় প্রথম থেকেই অন্তর্ভুক্ত না করে এবং আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের লাভ-ক্ষতির হিসাব না করে যাচাই-বাছাই ছাড়া কেবল একটি বা দুটি আইন দিয়ে এই বিষয়টির বহুমুখী সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা বা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে, সমস্যার সমাধানের বদলে নতুন জটিলতাই বাড়াবে এবং বহুমাত্রিক অধিকার হরণ, বিশেষ করে ব‍্যক্তিগত ও ব‍্যবসায়িক তথ্যের ওপর সরকারি নজরদারির ঝুঁকি বাড়বে বলেও মনে করে টিআইবি।

একই সঙ্গে অধ্যাদেশ দুটি কার্যকর করা থেকে বিরত থেকে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে তাঁদের মতামত গ্রহণ প্রক্রিয়া সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংশোধনপূর্বক বাস্তবায়নের আহ্বান জানায় টিআইবি।

বিষয়:

টিআইবি
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ, দুই যুবক আটক

ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে: সেনাসদর

গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় মর‍াল এফেক্ট পড়েছে, তবে সেনাবাহিনী ন্যায়ের পক্ষে অটল: সেনাসদর

বিয়ের আংটি পরলেন ইশরাক

দূতাবাসে আফগানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নারীদের বাধা, ‘কোনো ভূমিকা নেই’ বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত