Ajker Patrika

দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

সংবিধান সংস্কার: ধর্মনিরপেক্ষতা কেন বাদ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা কবে, জানালেন আলী রীয়াজ

আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ২৯
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্যরা। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্যরা। ছবি: পিআইডি

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি এই কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিশন এমন সুপারিশ করেছে, যাতে প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা চর্চার সুযোগ না থাকে এবং বাংলাদেশে যেন স্বৈরশাসন ফিরে না আসে।

সংবিধানের প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রকে মৌলিক নীতিরূপে বজায় রেখে কমিশন সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি তিনটি নীতি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে মৌলিক নীতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। এই বিষয়টি কিছু মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সম্প্রতি জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্য ডিপ্লোম্যাটের দক্ষিণ এশিয়া সম্পাদক সুধা রামাচন্দ্রন। সাক্ষাৎকারে আলী রীয়াজ যুক্তি দেন, শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষিত ও চর্চিত ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁর মতে, কমিশন যে বহুত্ববাদের সুপারিশ করেছে তার পরিধি অনেক বিস্তৃত ও ব্যাপক।

সাক্ষাৎকারটি আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—

দ্য ডিপ্লোম্যাট: সংবিধান সংস্কার কমিশন বর্তমান সংবিধানের চার মূলনীতি—সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র থেকে কেবল ‘গণতন্ত্র’ বহাল রাখার সুপারিশ করেছে। এর পেছনে যুক্তি কী?

আলী রীয়াজ: কমিশন সুপারিশ করেছে যে, সংবিধানে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত দেশের প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক। ওই ঘোষণাপত্রে তিন মূলনীতি ছিল—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। মুক্তিযুদ্ধের কয়েক মাস পরই ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণেতারা এসব মূলনীতি উপেক্ষা করেন। এটি বিস্ময়কর যে, প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিগুলো বিস্মৃতির অতলে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল এবং এর পরিবর্তে সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া শুরুর আগে আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে দলীয় চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছিল, সেগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিশন এবং অনেক অংশীজনের মতামত ছিল যে, দেশ যেন প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিতে ফিরে যায়, যা লক্ষ–কোটি শহীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদনের উপযুক্ত উপায়।

আগে ছিল বলে (প্রস্তাবে) গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এমন নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম আকাঙ্ক্ষা বিশেষ করে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শেখ হাসিনার ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণজাগরণের প্রতিফলন হিসেবে গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছেন।

পঞ্চম মূলনীতি (বহুত্ববাদ) সংযোজন করা হয়েছে দেশের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করতে। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ধর্মীয় ও জাতিগত বহুত্ববাদী ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন এবং সেটিকে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির অংশ করা উচিত। শেখ হাসিনা তাঁর বাবা মুজিবের মতোই স্বৈরাচারী শাসনকে চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির মোড়কে বৈধতা দিয়েছেন। গণ–অভ্যুত্থান এই মতাদর্শকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের সুপারিশ কেবল জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কেন বাদ দেওয়া হয়েছে?

আলী রীয়াজ: আমাদের সুপারিশে ধর্মনিরপেক্ষতার (সেক্যুলারিজম অর্থে) পরিবর্তে আরও বিস্তৃত নীতি হিসেবে বহুত্ববাদকে গ্রহণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা সংশোধিত বা পরিত্যক্ত হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার তত্ত্ব ও এর বিভিন্ন রূপকে বিভিন্ন কারণে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। বিশেষ করে, এটি অপশ্চিমা সমাজগুলোর বৈচিত্র্য ধারণে কতটা কার্যকর সে প্রশ্ন তুলেছেন গবেষকেরা। তালাল আসাদ, সাবা মাহমুদ, চার্লস টেলর এবং আশীষ নন্দীর মতো সমাজবিজ্ঞানীদের কাজ স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি সমস্যাযুক্ত।

এই শব্দটির ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। রাষ্ট্রের নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার উদ্ভব হয় ইউরোপের ধর্মযুদ্ধের (ক্রুসেড) পর। সে সময় থেকেই ধর্ম ও সমাজ এই পৃথক্‌করণ ক্রমশ মেনে নিতে শুরু করেছে। এর ফলে এই ‘পবিত্রতা’ বা খ্রিষ্টধর্মের প্রভাবমুক্ত হয়ে রাষ্ট্রের বৈষয়ীকরণের মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা একধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে আবির্ভূত হয়।

তবে এসব তাত্ত্বিক বিতর্কের বাইরেও বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে জাতিকে বিভক্ত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে, গত এক দশকে এক স্বৈরাচারী সরকার এটিকে অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করেছে। বাংলাদেশে পূর্ববর্তী শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকেরা ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলত ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছে। আমাদের কমিশনের সুপারিশ হলো, বহুত্ববাদ গ্রহণ করা। বহুত্ববাদ এমন এক নীতি যা শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্য—হিন্দু, বৌদ্ধ, আহমদিয়া, বাহাই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে না, বরং দলিত ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে। লক্ষণীয় যে, রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সংখ্যালঘু নির্যাতন দীর্ঘকাল ধরে অব্যাহত ছিল।

বাংলাদেশের সংবিধানের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, গত ৫২ বছরের মধ্যে মাত্র ১৮ বছর ৬ মাস সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল। বাকি ৩৩ বছর জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও আওয়ামী লীগ সরকারে থেকেও এটি পুনঃপ্রবর্তনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এরপর ২০১১ সালে শেখ হাসিনা এটি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তাঁর স্বৈরাচারী শাসনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পথে এগিয়ে যান। এমনকি এই ইস্যুতে উচ্চ আদালতও কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: বর্তমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম সহাবস্থান করছে। কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং ইসলামকে আগের জায়গাতেই রাখা হয়েছে। ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কী হবে?

আলী রীয়াজ: ইসলাম ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে এবং এই সময়ে আটবার সংবিধান সংশোধন হয়েছে, কিন্তু এরপরও তারা এটি বাতিলে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ২০২৪ সালের এপ্রিলে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা সংবিধানিক স্ববিরোধ সৃষ্টি করে না। আমরা যখন সমাজের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করেছি তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ৫০ হাজারেরও বেশি মতামত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বিপুলসংখ্যক মত ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে রাখার পক্ষে ছিল।

আমরা আমাদের পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১২১টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করেছি, যার মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পর্যালোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে, ১৯টি দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে এবং ৭৫টি দেশের সংবিধানে ‘পরমেশ্বরের প্রতি বিশ্বাস’–এর কথা উল্লেখ আছে। অনেক পশ্চিমা দেশেও একটি রাষ্ট্রধর্ম বা একক ধর্মের সরকারি স্বীকৃতি রয়েছে। ২০১৭ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছিল, ৮০টিরও বেশি দেশ একটি ধর্মকে সরকারিভাবে অনুমোদন দিয়ে অথবা একটি ধর্মকে অন্য ধর্মের তুলনায় অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে সমর্থন দিয়ে থাকে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৯টি দেশের মধ্যে ২২ শতাংশ দেশের রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে এবং ২০ শতাংশ দেশ একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়। সুতরাং, বাংলাদেশ কোনোভাবেই ব্যতিক্রম নয়।

রাষ্ট্র অনুমোদিত ধর্ম থাকলেও রাষ্ট্র এবং ধর্মের ভূমিকা আলাদা হতে পারে। ইসরায়েলের বার এলান ইউনিভার্সিটির ধর্ম ও রাষ্ট্র (আরএসএস) সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে জনাথন ফক্স বলেছিলেন যে, এ ধরনের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে ভিন্ন হতে পারে। তিনি যুক্তরাজ্য এবং ইরানকে উদাহরণ হিসেবে দিয়েছেন। উভয় দেশেই রাষ্ট্রধর্ম বা সরকারি গির্জা আছে, তবে এই দুই রাষ্ট্রের কার্যক্রমে ধর্মের ভূমিকা একেবারে বিপরীত।

সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মতোই থাকবে। যতক্ষণ না ধর্ম আইনগত ব্যবস্থার উৎস হিসেবে কাজ করছে অথবা রাজনৈতিক–আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে, ততক্ষণ উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। অনেক সময় রাষ্ট্রধর্মগুলো প্রতীকীভাবে বেশি দেখা যায়, এর বাস্তবিক প্রভাব থাকে কম।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: স্বৈরশাসন যে আর ফিরবে না, সংবিধান সংস্কার কমিটি এটি কীভাবে নিশ্চিত করতে চায়?

আলী রীয়াজ: আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছি। যা বাস্তবায়িত হলে ক্ষমতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মধ্যে বিতরণ হয়ে যাবে এবং বর্তমানের মতো প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঠেকাবে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছি। এই পরিষদ সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগের বিষয়ে সুপারিশ করবে। বর্তমানে এই ক্ষমতা শুধু প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আমরা কিছু ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে স্থানান্তরের প্রস্তাবও দিয়েছি। বর্তমান সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কোনো নিয়োগ দিতে পারেন না; আমরা সুপারিশ করেছি এটি সীমিত করা উচিত।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শাসক দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুগত। কারণ, তাঁরা দলের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। এর ফলে খোদ শাসক দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করতে চাইলেও প্রধানমন্ত্রীর অপসারণের জন্য কোনো প্রস্তাব আনা সম্ভব হয় না। আমরা সুপারিশ করেছি, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা থাকতে পারবেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর জন্য সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবও দিয়েছি।

আমরা সুপারিশ করেছি, বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়া উচিত এবং সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। এই সুপারিশগুলো দায়িত্বশীলতা, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই করা, যাতে স্বৈরশাসনের সম্ভাবনা রোধ করা সম্ভব হয়।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: রাজনৈতিক দলগুলো কোন ধরনের পরিবর্তনের বিরোধিতা করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

আলী রীয়াজ: আমাদের সুপারিশের সারাংশ প্রকাশের পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে কোনো গুরুতর সমালোচনা বা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যানের মতো কিছু শোনা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই, তারা পুরো প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষেই জনসমক্ষে আনা হবে।

এসব সুপারিশের অনেকগুলোই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এসেছে। যেমন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার সুপারিশ। এই প্রস্তাবটি রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তবে আমি বুঝি যে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব প্রস্তাব রয়েছে এবং আমাদের কিছু সুপারিশ তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে মেলে না। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। আমি মনে করি, তেমন কোনো পার্থক্য নেই যা নিয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা সম্ভব হবে না।

সবাই এবং আমি বলতে চাচ্ছি, সবারই কিছু পরিবর্তন চাওয়ার রয়েছে। গত ১৬ বছরের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা সবাইকেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পরিবর্তন প্রয়োজন। বাংলাদেশে নজিরবিহীন মাত্রার সহিংসতা হয়েছে। কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধও হয়েছে। শত শত মানুষের মৃত্যু এবং ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার ঘটনা বৃথা যেতে পারে না।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে? নির্বাচিত কোনো সরকারই কী এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবে?

আলী রীয়াজ: প্রাথমিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল, সেগুলো প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যখন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, তখন এগুলো রাজনৈতিক দলগুলো যাচাই–বাছাই করে দেখবে। এরপর সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, শিগগিরই তাঁর নেতৃত্বে একটি ‘কনসেনসাস কমিশন’ গঠন করা হবে, যার মাধ্যমে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া হবে। আশা করছি, একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা হবে। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তায় দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ব্যবস্থা চিহ্নিত করবে। প্রক্রিয়াটি এই ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে। এই আলোচনা থেকে একটি বাস্তবায়নের পথ বের হবে।

অনুবাদ করেছে আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ মামুন হত্যার ঘটনায় ২ শুটার শনাক্ত, গ্রেপ্তার যেকোনো সময়

শটগান–চায়না রাইফেল বাদ, ব্রাশফায়ার মুডে থাকবে এসএমজি— সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে সিএমপি কমিশনার

৪৯তম বিশেষ বিসিএস: ৬৬৮ জনকে নিয়োগের সুপারিশ

দিল্লি বিস্ফোরণে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ উড়িয়ে দিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কে পাবেন মেক্সিকো প্রেসিডেন্টের বিশ্বকাপ টিকিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঐক্যে ফাটল ধরায় নৈরাজ্য

  • গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ।
  • ঢাকা, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ।
  • নির্বাচন সামনে রেখে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
রেজা করিম ও তানিম আহমেদ, ঢাকা 
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০০
গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ছবি: সংগৃহীত
গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তাতে এখন ফাটল ধরেছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট প্রশ্নে বিপরীত মেরুতে চলে গেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে গেছে সমমনা দলগুলোও। এমন বিভক্তির সুযোগ নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জুলাইয়ের পরাজিত শক্তি। দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য। যানবাহনে একের পর এক আগুন দেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয় উপাসনালয়, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো লক্ষ্য করে ছোড়া হচ্ছে ককটেল।

সরকারঘোষিত সময় অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক দলগুলো এখন নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। পাশাপাশি জুলাই জাতীয় সনদ ও গণভোট নিয়ে নিজেদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মাঠে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট দল। এমন একসময়ে রাজধানীসহ দেশজুড়ে নৈরাজ্য ও অস্থিরতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, নানা কারণে সে ঐক্যে ফাটল ধরেছে। জুলাই জাতীয় সনদ ও গণভোট প্রশ্নে মতভিন্নতায় দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়েনের সুযোগ নিচ্ছে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে আসতে পারছে না। দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ায় তাদের মধ্যে বিভাজনটা সৃষ্টি হয়েছে এবং মতভেদ বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে যা সংকটে পরিণত হয়েছে। এর দায় তাদের নিতে হবে।

আগামীকাল ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এদিনকে ঘিরে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। দলটির বিদেশে অবস্থানকারী নেতারা একের পর এক হুমকি দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঢাকা, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গতকালও রাজধানীর সূত্রাপুরে একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে নির্বাচনী গণসংযোগকালে গুলিবিদ্ধ হন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। একই সময়ে সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা। গত সোমবার দিনদুপুরে রাজধানীতে গুলি করে মারা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। এ দুই ঘটনা দীর্ঘদিন পর আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামীতে আরও বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব ঘটনায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে জনমনে, প্রশাসনে দেখা দিয়েছে গভীর উদ্বেগ।

এমন অবস্থার জন্য দলগুলোর ব্যর্থতার পাশাপাশি সরকারের ভূমিকাকেও দায়ী করেছেন অনেক বিশ্লেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারম্যান শারমীন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন শক্তি এখানে কাজ করছে। যারা নির্বাচনকে সঠিক সময়ে হতে দিতে চায় না বা সুষ্ঠু নির্বাচনে যাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনায় অসুবিধা হতে পারে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারগুলো আছে।

বিরাজমান পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনের কারণ নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও। রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে না দেশের প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াত। দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়েনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটার সঙ্গে বর্তমানে সৃষ্ট যে অসন্তোষ বা অশান্তি, তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে আমরা মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘এখানে নির্বাচনকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছে না, নানাভাবে দেশে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তারাই এ বিশৃঙ্খলা করছে।’

চলমান নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য অবশ্য সরাসরি সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছে জামায়াতে ইসলামী। জানতে চাইলে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘এটা তো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের ব্যর্থতা নয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের, তাদের এত বাহিনী কী করে, গোয়েন্দা বাহিনী কী করে? তাদের কাজ তো এগুলো দমন করা। এ ব্যর্থতা হলো সরকারের, সরকারের প্রশাসনের।’

বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকার ও রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতাকে সমানভাবে দায়ী করছে জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। বিভিন্ন ইস্যুতে দলগুলোর অনৈক্যে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ করে দিচ্ছে বলে মনে করেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন। একই সঙ্গে সরকারের ভূমিকাকেও দায়ী করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও আগুন জ্বালিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তি পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে এবং জনমনে ভীতি ছড়াচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন নির্বিকার বলেই এসব ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও ব্যর্থতা রয়েছে। এ ছাড়া আমরা দেখেছি, বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অনেক অপরাধীই জামিন পেয়ে গেছে। তারা কারাগার থেকে বের হয়ে এখন দেশকে অস্থিতিশীল এবং পুরোনো বন্দোবস্তে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।’

রাজধানীতে বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এখানে গোয়েন্দাদের কোনো ব্যর্থতা নেই। এগুলো যেন আর না হয়, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এগুলো যারা করছে তারা দুষ্কৃতকারী। এসব দুষ্কৃতকারীকে প্রতিহত করা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। গতকাল মঞ্চের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও গণভোটের সময় প্রশ্নে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান এবং সরকারের দায়সারা আচরণের ফলে যে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ সুযোগে পরাজিত মাফিয়া গোষ্ঠী অস্থিরতা বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হুমকির মুখে পড়েছে। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ মামুন হত্যার ঘটনায় ২ শুটার শনাক্ত, গ্রেপ্তার যেকোনো সময়

শটগান–চায়না রাইফেল বাদ, ব্রাশফায়ার মুডে থাকবে এসএমজি— সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে সিএমপি কমিশনার

৪৯তম বিশেষ বিসিএস: ৬৬৮ জনকে নিয়োগের সুপারিশ

দিল্লি বিস্ফোরণে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ উড়িয়ে দিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কে পাবেন মেক্সিকো প্রেসিডেন্টের বিশ্বকাপ টিকিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিশেষজ্ঞ মত /বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, হিমশৈলের চূড়ামাত্র

ইফতেখারুজ্জামান
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩০
ড. ইফতেখারুজ্জামান। ফাইল ছবি
ড. ইফতেখারুজ্জামান। ফাইল ছবি

সাম্প্রতিক সহিংস কর্মকাণ্ড কেন হচ্ছে, এসবের দায় কার এবং এগুলো কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, না হিমশৈলের চূড়ামাত্র? এসব প্রশ্নের জবাব বের করা এবং দোষীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার পাশাপাশি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দায়িত্ব।

তবে এটুকু অনুমান করা অযৌক্তিক হবে না যে এর পেছনে মূলত পতিত কর্তৃত্ববাদী শক্তি, যারা অভূতপূর্ব জুলাই আন্দোলনের ফলে তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারছে না। তাদের কোনো অনুশোচনা নেই, যা তাদের কাছে আশা করাও অবাস্তব। বরং তাদের আছে চোরতন্ত্রের ফলে অর্জিত সীমাহীন অর্থ ও পেশিশক্তি, যার ষড়যন্ত্রমূলক ব‍্যবহার করে তারা দেশে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করতে চাইছে।

তাদের রেখে যাওয়া জঞ্জাল অপসারণ করে রাষ্ট্র সংস্কার ও গণতন্ত্রে উত্তরণের অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে ১৬ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য ঐতিহাসিক নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করার লক্ষ্যে দেশে ও দেশের বাইরে থেকে সমন্বিত কৌশলে অপতৎপরতায় লিপ্ত এই স্বার্থান্বেষী মহল। এটি উপলব্ধি করা যেমন কোনো রকেট বিজ্ঞানের বিষয় নয়, তেমনি শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সরকার ও উল্লিখিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হাতে এদের নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করি। যদি এই সক্ষমতার প্রয়োগ অ্যাডহকভিত্তিক না হয়ে সুচিন্তিত ও বহুমাত্রিক কৌশলনির্ভর হয়।

একই সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে বিজয়ী ও বর্তমানে সক্রিয় রাজনৈতিক দলসমূহের সবচেয়ে প্রভাবশালী অংশের মধ্যে চলমান অনৈক্য, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও অসহিষ্ণুতা যেন পতিত অপশক্তির জন‍্য অধিকতর সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না করে, তা মনে রাখা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য অপরিহার্য।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ মামুন হত্যার ঘটনায় ২ শুটার শনাক্ত, গ্রেপ্তার যেকোনো সময়

শটগান–চায়না রাইফেল বাদ, ব্রাশফায়ার মুডে থাকবে এসএমজি— সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে সিএমপি কমিশনার

৪৯তম বিশেষ বিসিএস: ৬৬৮ জনকে নিয়োগের সুপারিশ

দিল্লি বিস্ফোরণে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ উড়িয়ে দিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কে পাবেন মেক্সিকো প্রেসিডেন্টের বিশ্বকাপ টিকিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিশেষজ্ঞ মত /সমঝোতা ছাড়া কোনো সমাজে শান্তি আসে না

রাশেদা কে চৌধূরী
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩১
রাশেদা কে চৌধূরী। ফাইল ছবি
রাশেদা কে চৌধূরী। ফাইল ছবি

দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিঃসন্দেহে অনাকাঙ্ক্ষিত। দীর্ঘ এক শাসনের অবসানের পর মানুষ ভেবেছিল, এবার হয়তো দেশের রাজনীতি ও সমাজে যুক্তি, সহনশীলতা ও ‘গুড সেন্স’ ফিরে আসবে।

কিন্তু সেই আশার বিপরীতে এখন গোটা দেশে ‘ঘোলাটে’ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা। প্রতিনিয়ত অবনতি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। এসব অপতৎপরতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। আর এ পরিস্থিতি কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাঙ্গনগুলোয় উদ্বেগজনকভাবে অস্থিরতা বিরাজ করছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নানা ধরনের উল্টাপাল্টা গোষ্ঠীর উদয় হয়েছে। এগুলো চিহ্নিত করা বা নিরসনের দায়িত্ব তো নাগরিকের না, রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের উচিত এসব বিষয়ে দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব নেওয়া; কারণ, অরাজকতার ভার জনগণের নয়, সরকারকেই বহন করতে হবে। তবে এ দায় শুধু সরকারের ওপর চাপিয়ে দিলেও হবে না। আমরা নাগরিকেরাও এই অবস্থার জন্য কমবেশি দায়ী। কখনো সচেতনভাবে, কখনো অবচেতনে আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব থেকেছি।

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও রাজনীতির মাঠে সমঝোতার দেখা মিলছে না। রাজনৈতিক দলগুলোকেও ভাবতে হবে, জনগণের প্রত্যাশা কী? জনগণ শান্তি চায়, স্থিতিশীলতা চায়। তাই দলগুলোকে কমপক্ষে একটি ন্যূনতম ঐক্যের জায়গায় আসতে হবে। মতবিরোধ থাকবে, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু সমঝোতা ছাড়া কোনো সমাজে শান্তি আসে না।

আজকের এই অস্থিরতার ফলে বিনিয়োগ কমছে, কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে, দারিদ্র্য বাড়ছে। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত জনগণের স্বার্থকে কেন্দ্র করে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়া।

লেখক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ মামুন হত্যার ঘটনায় ২ শুটার শনাক্ত, গ্রেপ্তার যেকোনো সময়

শটগান–চায়না রাইফেল বাদ, ব্রাশফায়ার মুডে থাকবে এসএমজি— সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে সিএমপি কমিশনার

৪৯তম বিশেষ বিসিএস: ৬৬৮ জনকে নিয়োগের সুপারিশ

দিল্লি বিস্ফোরণে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ উড়িয়ে দিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কে পাবেন মেক্সিকো প্রেসিডেন্টের বিশ্বকাপ টিকিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিশেষজ্ঞ মত /সংবিধান রক্ষা করতে গিয়েই এই সংকট

ফরহাদ মজহার
ফরহাদ মজহার। ফাইল ছবি
ফরহাদ মজহার। ফাইল ছবি

নৈরাজ্যের মূল সূত্রপাত হয়েছে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট। সেদিন যদি গণ-অভ্যুত্থান নস্যাৎ করার জন্য একটা কনস্টিটিউশনাল কাউন্টার রেভল্যুশন, মানে সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব না হতো, তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসের গুণগত রূপান্তর ঘটত। গণ-অভ্যুত্থানের পরে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় যদি আমরা যেতাম, তাহলে সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে জনগণকে আমরা যুক্ত করে নিতে পারতাম। কিন্তু জনগণকে আমরা বাংলাদেশ নতুনভাবে গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত করিনি। বিপরীতে আমরা যুক্ত লুটেরা-মাফিয়া শ্রেণির প্রতিনিধিদের সঙ্গে তথাকথিত ‘জাতীয় ঐকমত্য’ স্থাপনের চেষ্টা করছি।

গণ-অভ্যুত্থান যৌক্তিকভাবে যেখানে পৌঁছানোর কথা, আমরা তাকে সেখানে যেতে দিইনি। না দেওয়ার কারণে বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে আমরা সরকারটা গঠন করেছি। বিদ্যমান সংবিধানে ‘উপদেষ্টা’ বলে কোনো কিছু নেই। ফলে এই সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শুরুতেই। অবৈধ সরকার সমঝোতা করতে বসেছে লুটেরা-মাফিয়া শ্রেণির সঙ্গে। ফলে গলদ তো এই জায়গাতেই। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য আমরা এখন নির্বাচনের ধুয়া তুলছি, ভুলে যাচ্ছি, আমরা একটি গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতির মধ্যে আছি।

উপদেষ্টা সরকার শেখ হাসিনার সংবিধান রক্ষা করতে শপথ নিয়েছে। তাহলে কী করে আবার বিভিন্ন রকম কমিশন (জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ ১১টি সংস্কার কমিশন) করে? সংবিধান সংস্কারের কোনো এখতিয়ার তো সরকারের নেই। এই প্রকট স্ববিরোধিতাই হলো এখনকার অস্থিতিশীলতার প্রধান কারণ। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে একতরফা দোষারোপ করা যাবে না। প্রধান দোষ কিন্তু সরকারের।

বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করতে হলে বর্তমান সংবিধান অবশ্যই ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে বলতে হবে—আমরা সাংবিধানিকভাবে আমাদের সংকট সমাধান করার চেষ্টা করেছি এবং আমরা দেখেছি, ঐকমত্য কমিশনের চেষ্টা এবং প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলো কোনো অর্থপূর্ণ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ফলে আমাদের সাংবিধানিকভাবে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের চেষ্টাটা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আমরা এখন বর্তমান সংবিধানকে বাতিল ঘোষণা করছি এবং এখন থেকে আমরা আমরা আমাদের পূর্ণ গাঠনিক ক্ষমতা (Constituent) সম্পন্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলে ঘোষণা করছি। আগামী নির্বাচনটা হবে গণপরিষদ নির্বাচন এবং গণপরিষদে বাংলাদেশের জন্য নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হবে।

তাহলে সংকটটা কী আসলে? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন এবং গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ কায়েম। এটাই তো সংকট? তো গঠনতন্ত্র (Constitution) তৈরি করতে দেবেন না?

বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নেই। সবই লুটেরা-মাফিয়া শ্রেণির প্রতিনিধি। কেন? বলা হয়, নির্বাচন করতে ২০-৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ টাকা দিয়ে কি কোনো সাধারণ লোকের পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব? লুটেরা-মাফিয়া শ্রেণির প্রতিনিধি ছাড়া নির্বাচনের কি কারও সামর্থ্য আছে? তাই নির্বাচনের কথা বলা অবান্তর ও অবাস্তব।

লেখক: কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ মামুন হত্যার ঘটনায় ২ শুটার শনাক্ত, গ্রেপ্তার যেকোনো সময়

শটগান–চায়না রাইফেল বাদ, ব্রাশফায়ার মুডে থাকবে এসএমজি— সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে সিএমপি কমিশনার

৪৯তম বিশেষ বিসিএস: ৬৬৮ জনকে নিয়োগের সুপারিশ

দিল্লি বিস্ফোরণে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ উড়িয়ে দিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কে পাবেন মেক্সিকো প্রেসিডেন্টের বিশ্বকাপ টিকিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত