Ajker Patrika

অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে ‘বাংলাদেশ ঘিরে গুজব প্রচার’ নিয়ে ইইউ পার্লামেন্টে আলোচনা

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ২১: ২৯
অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে ‘বাংলাদেশ ঘিরে গুজব প্রচার’ নিয়ে ইইউ পার্লামেন্টে আলোচনা

অধিকারের শীর্ষ দুই সংগঠকের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গ তুলে বাংলাদেশের ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে গুজব ও অপপ্রচার’ চলছে বলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আলোচনা সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বক্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত সভার আলোচকদের মধ্যে ছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রা।

আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইইউ রিপোর্টারের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে চলমান ‘দেশবিরোধী গুজব ও অপপ্রচার’ নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। এনজিও অধিকারের শীর্ষ দুই সংগঠক আদিলুর রহমান শুভ ও এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে মামলাসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সেপ্টেম্বরে ইইউ পার্লামেন্টে পাস হওয়া অধ্যাদেশ নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেন।

‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র: গুজব এবং অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই’ শীর্ষক সভায় রাজনীতিক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ রশিদ রায়হান বিন এবং লন্ডনের স্টাডি সার্কেলের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোজাম্মেল আলি। ম্যাক্সিমিলান ক্রা ও লন্ডন স্টাডি সার্কেলের যৌথ উদ্যোগে এই সভা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্রের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশকে ঘিরে বৈশ্বিক মঞ্চে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কয়েক বছর ধরে দেশটিতে উল্লেখযোগ্যভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আয়োজিত এ আলোচনা সভার উদ্দেশ্য হলো চলমান এ ইস্যুগুলো নিয়ে সংলাপ শুরু করা। 

তদন্তের বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যমের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে ব্ল্যাকবার্ন বলেন, ‘গণমাধ্যম ছাড়া মানবাধিকারবিষয়ক এনজিওর কাজগুলো কারা যাচাই করে?’

এনজিওগুলোর সমস্যাযুক্ত ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘এনজিওর মানে বেসরকারি সংস্থা হলেও প্রায় প্রত্যেকটি সংস্থারই কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এর মধ্যে কিছু এনজিওর গুজব ছড়ানো এবং অপপ্রচার চালানোর এজেন্ডা রয়েছে।’ 

মোজাম্মেল আলি বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার ও উন্নয়ন পরিস্থিতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেন। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের মানুষের ‘জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে বর্তমান সরকারের চেয়ে বেশি কাজ’ আর কেউ  করেনি।  

বাংলাদেশের মানবাধিকারবিষয়ক মামলা ঘিরে আইনি জটিলতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ভুল তথ্যের ফাঁদে না পড়ার জন্য এই জাতীয় মামলাগুলো মোকাবিলা করার সময় আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন।’

সভায় ইউরোপীয় নীতিনির্ধারক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশ নেন। তাঁরা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া তাঁরা স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং ভুল তথ্য মোকাবিলায় তৃণমূল পর্যায়ের প্রচেষ্টার সমর্থনে বিভিন্ন কৌশল নিয়েও আলোচনা করেন। 

এ পথ কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও এ ধরনের আয়োজনগুলো বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের সমর্থনে আরও সচেতন এবং জড়িত বিশ্ব সম্প্রদায় তৈরির আশা জাগায়। 

আয়োজনে বিভিন্ন মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, স্কলাররাসহ বাংলাদেশ বিষয়ে বিশিষ্ট বক্তা ও বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির দায়ে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও সংগঠনটির পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ড হয়। 

২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশস্থল থেকে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেওয়া হলে তাদের সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তখন হেফাজতে ইসলামীর ৬১ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছিলেন বলে অধিকার দাবি করে এবং প্রচার করে।

তবে ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালানোর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ আনে সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত