Ajker Patrika

চানখাঁরপুল হত্যা

সরকারি বেতন-রেশন খাস, গুলি করবি না কেন—কনস্টেবল অজয়কে এডিসি আক্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সরকারি বেতন-রেশন খাস, গুলি করবি না কেন—কনস্টেবল অজয়কে এডিসি আক্তার

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় আজ রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সাক্ষ্য দিয়েছেন পুলিশের দুই সদস্যসহ তিনজন। তাঁদের মধ্যে কনস্টেবল অজয় ঘোষ জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করতে না চাইলে রমনা জোনের সাবেক এডিসি আক্তারুল ইসলাম গালিগালাজ করে তাঁর চায়নিজ রাইফেল ও গুলি কেড়ে নিয়ে কনস্টেবল সুজনকে দিয়েছিলেন।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আজ কনস্টেবল অজয়, আন্দোলনে অংশ নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌরভ আহমেদ ও নায়েক আব্দুর রহমান সাক্ষ্য দেন। জবানবন্দির পর সাক্ষীদের জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এ নিয়ে এই মামলায় ১৬ জন সাক্ষ্য দিলেন।

অজয় ঘোষ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিতে বলেন, এডিসি আক্তার তাঁদের সবাইকে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করার নির্দেশ দেন। তিনি গুলি করতে চাননি। এতে আক্তার তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বলেন, ‘সরকারি বেতন-রেশন খাস না, গুলি করবি না কেন?’ এডিসি আক্তার তাঁর হাতে থাকা চায়নিজ রাইফেল ও ৪০টি গুলি কেড়ে নিয়ে কনস্টেবল সুজনের হাতে দেন। কনস্টেবল সুজন, ইমাজ, নাসিরুল মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, নাজিমুদ্দিন রোড, নবাব কাটরা, বকশীবাজার মোড়ে অবস্থানরত ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেন। পরে তিনি জানতে পারেন, সেখানে ছয় আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৌরভ আহমেদ জবানবন্দিতে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার সময় বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে পুলিশ তাঁদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, রাবার বুলেট ও গুলিবর্ষণ করে। তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন গলিতে আশ্রয় নেন। তিনিসহ অনেকে ১ নম্বর নবাব কাটরা রোডে আশ্রয় নেন।

পুলিশের গুলিতে অনেক আন্দোলনকারী আহত হন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁর পাশে একজন আন্দোলনকারী কিশোরের বুকের বাঁ পাশে গুলি লাগে। তিনি ও আরেকজন আন্দোলনকারী তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই কিশোরের পকেটে থাকা সিমবিহীন বাটন ফোনে কয়েকটি নাম সেভ করা ছিল। ‘মা’ নামে সেভ করা একটি নম্বরে কল দিলে অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়, নিহত ছেলেটির নাম আনাস।

ইনু-হানিফের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কুষ্টিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

আজ বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-কে অবহিত করেছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। পরে আদালত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের নির্দেশ দেন।

এ ছাড়া মেহেরপুরে ছাত্রশিবির নেতাকে হত্যার ঘটনায় করা পৃথক মামলায় সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত