Ajker Patrika

কিশোরীদের অর্ধেকই পুরোনো কাপড় ব্যবহার করেন  

নিজস্ব প্রতিনিধি
কিশোরীদের অর্ধেকই পুরোনো কাপড় ব্যবহার করেন  

ঢাকা: নারীর মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস উপলক্ষে 'নিষিদ্ধকে ভাঙি' স্লোগানে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাজারে নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর দাম কমানো, বাজেটে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার খাত তৈরি, বিনা মূল্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সুরক্ষা পণ্য প্রদানসহ ৬ দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে প্রদর্শনী করেছে নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম। 

আজ শুক্রবার মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস। ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। মাসিক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে, সঠিক তথ্য এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর এই দিনে বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরামের সদস্য মার্জিয়া প্রভা জানান, 'মাসিক সংক্রান্ত নিষিদ্ধতার কারণে অনেক মেয়েরাই ফার্মেসিতে যেতে লজ্জা পায়। পরিবারের অসহযোগিতা এবং উচ্চমূল্যের কারণে প্রায় ৯০ শতাংশ মেয়ে মাসিকের স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহারের ফলে নারীদের জরায়ুমুখের ক্যানসার, ইনফেকশনসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। দেশে জরায়ুর ক্যানসারে প্রতিবছর প্রায় তেরো হাজার নারী মারা যাচ্ছে।'  

ন্যাশনাল হাইজিন বেজলাইন সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ১০ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া কিশোরী তাদের মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন। ৮৬ শতাংশ কিশোরী পুরোনো কাপড় ব্যবহার করে। এর মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ মেয়ে সঠিক নিয়ম মেনে কাপড় ব্যবহার করেন ৷ গৃহে থাকেন কর্মজীবী নন এমন ১২ শতাংশ মাত্র স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন। ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও ওয়াটারএইডের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮ অনুযায়ী, দেশে মাসিকের সময় ৪৩ শতাংশ কিশোরী ডিসপোজিবল প্যাড, ৫০ শতাংশ পুরোনো কাপড় এবং বাকিরা নতুন কাপড় ও তুলা ব্যবহার করে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ২৯ শতাংশ ডিসপোজিবল প্যাড ও ৬৪ শতাংশের বেশি পুরোনো কাপড় ব্যবহার ব্যবহার করে। 

'মাসিক সুরক্ষা বিষয়টি এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে আমলে নেওয়া হয় না। এমনকি হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা এসেছে নারীর মাসিক হয় বলে তারা বিবাহ রেজিস্ট্রারের মতো রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ নিতে পারবে না। আমরা হাইকোর্টের এই নির্দেশনা বাতিল চাই। প্রতি বাজেটে মাসিক সুরক্ষা পণ্যকে 'বিলাসী দ্রব্য' হিসেবে বিবেচনা করে উচ্চহারে ভ্যাট ও ট্যাক্স বসানো হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে মাসিক সুরক্ষার বিষয়টি না দেখে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর ফলে নারীর মাসিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও পণ্যে পরিণত হচ্ছে।' 

অর্থনীতিতে নারীদের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মার্জিয়া প্রভা বলেন, প্রবৃদ্ধির এক বিশাল অংশ নারীদের ঘামে ও শ্রমে আসে। অথচ সরকার সুরক্ষা পণ্যের দাম বাড়িয়ে নারীদের প্রতি অন্যায্যতা সৃষ্টি করছে। উন্নত রাষ্ট্রে সরকারিভাবে নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়। তাই আমরা দাবি জানাই, রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশসম্মত মাসিক সুরক্ষা পণ্য উৎপাদন করে সুরক্ষা পণ্যের ভ্যাট ও ট্যাক্স বাতিল করতে হবে। মাসিকের সময় কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটির বিষয়টি প্রশাসনিক নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ৷ বিনা মূল্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করতে হবে। সম্ভব হলে করোনাকালীন ও দুর্যোগকালীন ত্রাণ এবং রেশনে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। "

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত