Ajker Patrika

সংস্কারে কর্ণপাত না করলে রাজনৈতিক দলগুলোকে মাশুল দিতে হবে: বদিউল আলম মজুমদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বদিউল আলম মজুমদার। ফাইল ছবি
বদিউল আলম মজুমদার। ফাইল ছবি

সংস্কারের পক্ষে জনমত তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংস্কারের বিষয়ে কর্ণপাত না করে, তবে এর মাশুল তাদেরই দিতে হবে। এমনকি শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করলে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়বদ্ধতা বাড়বে।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রস্তাবিত জুলাই সনদ ও নাগরিক ভাবনা শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এ কথা বলেন তিনি।

সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিনের সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তব্য রাখেন সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা হাসান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ মোহাম্মদ সাহান, জুলাই শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন ও সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

জুলাই সনদের প্রণয়নের সার্থকতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সনদটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা রয়েছে। নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে এবং পরবর্তী সংসদে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হবে এমন মনোভাব পোষণ করলে রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি মনে করি, সংস্কারের ব্যাপারে ব্যাপক জনমত রয়েছে, যা সুজনের জনমত জরিপ থেকেও অনুধাবন করা যায়। তাই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো যদি শুধু নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে এবং সংস্কার বাস্তবায়ন না করে, তাহলে তাদের তার পরিণাম ভোগ করতে হবে।’

মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, মৌলিক অধিকারের মধ্যে যুক্ত হওয়া নতুন বিষয়গুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা স্পষ্ট নয়। আইন প্রণয়নের ব্যাপারে শুধু মতামত নেওয়ার এত খরচ করে উচ্চকক্ষ তৈরি করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’

সনদ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে চৌধুরী বলেন, গণভোটের মাধ্যমেই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য উপায়। এ ছাড়া প্রোক্লোমেশন করে পরবর্তী সংসদে সনদ পাশ করা যেতে পারে।

জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে পাঁচ দফায় আলোচনায় হয়েছে বলে জানান মনির হায়দার। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রথম সংবিধান ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের ব্যাপারে দলগুলো একমত না হওয়ায় কমিশন রাজনৈতিক দল কর্তৃক এক-তৃতীয়াংশ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব আনে। কিন্তু তাতেও দলগুলো সম্মত হয়নি। এখন অনেকেই এ বিষয়ে কমিশনকে দোষারোপ করছেন। আমরা দেখিনি কোনো নারীনেত্রী তাদের দাবি আদায়ে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ঘেরাও করতে কিংবা এ ব্যাপারে কোনো শক্ত দাবি তুলে ধরতে।’ সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারে এখন যেটা হয়েছে সেটা মন্দের ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মনির হায়দার বলেন, ঐকমত্য কমিশন বিগত ছয় মাসে যা অর্জন করেছে তাতে হতাশ করার কারণ নেই। আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি, অন্যান্য দেশে এসব অর্জন করতে সময় লেগেছে গড়ে আড়াই বছর।’ কমিশন এখন দফায় দফায় জাতীয় সনদের বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্ট থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে ড. আসিফ মোহাম্মদ সাহান বলেন, ভবিষ্যতে যে দলই ক্ষমতায় আসবে তার স্বৈরাচারী ও আধিপত্যবাদী হওয়ার সুযোগ খুব একটা কমাবে না এই সনদ। এত নোট অব ডিসেন্ট-সহ জুলাই সনদ কীভাবে গণভোটে দেওয়া হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।’

রাজনৈতিক দলগুলো যদি নোট অব ডিসেন্টের ক্ষেত্রে ছাড় না দেয়, তাহলে সনদটি অর্থবহ পরিবর্তন আনবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সোহরাব হাসান বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় আছে, কারণ দলগুলো নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হলে এখন আর কোনো বিষয়ে গণভোটের সুযোগ নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করা না গেলে কোনো বাস্তবায়নই ফলপ্রসূ হবে না।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জ্যেষ্ঠ গবেষক মির্জা হাসান বলেন, তত্ত্বগতভাবে নাগরিকেরা দেশের মালিক হলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ হয় না। যেমনটা দেখেছি সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়। একটা কথা আছে ‘আর্ট অব দ্য পসিবল, যত দূর সম্ভব’— এমন একটা মনোভাব নিয়ে বর্তমানে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঐকমত্যের বিভিন্ন নিয়ে যে পরিমাণ নোট অব ডিসেন্ট এসেছে তা বেশ হতাশাজনক। এতগুলো সংস্কার একসঙ্গে গণভোটে দেওয়া একটি জটিল বিষয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় আসেনি।’

সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে ভাই মারা গেছে। তার হত্যার হুকুমদাতার বিচারকাজ চললেও এখনো জানি না কোন পুলিশের গুলিতে সে মারা গেছে। একইভাবে অন্য শহীদ পরিবাররাও বিষয়টি জানে না। তিনি বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে চলমান থাকে পরবর্তী সরকারের সময়ও, বিচার যাতে থেমে না যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত