Ajker Patrika

ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে ইস্তাম্বুল ব্যয়বহুল নাকি সাশ্রয়ী

ইয়াসির আরাফাত
ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে ইস্তাম্বুল ব্যয়বহুল নাকি সাশ্রয়ী

এককথায় প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা ইস্তাম্বুলের কিছু বিষয় আছে ব্যয়বহুল, আবার কিছু বিষয় আছে তুলনামূলক খুবই সস্তা। আবার কিছু বিষয় আছে ফেয়ার প্রাইজ।

হোটেল ব্যয়

যেকোনো শহর ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রথমেইযেটা দরকার, তা হলো থাকার জায়গা বা অ্যাকোমোডেশন। ইস্তাম্বুল শহরে এক রাত থাকার জন্য হোটেলে কেমন ব্যয় হয়? এটিও এককথায় বলা সম্ভব নয়। ইস্তাম্বুল বিশাল আকারের একটি শহর। এর রয়েছে অসংখ্য মহল্লা। একেক মহল্লায় হোটেলের দামে ভিন্নতা রয়েছে।

তবে পর্যটকেরা সাধারণত ঐতিহাসিক জায়গাগুলো কিংবা তার আশপাশে থাকেন। তাই সেসব জায়গার কথাই উল্লেখ করছি।

আপনার হাতে যদি সময় কম থাকে, তাহলে হোটেলের জন্য ইস্তাম্বুলের সেরা

দুটি জায়গার একটি হচ্ছে সুলতান আহমেত। এটি ইস্তাম্বুলের হিস্টোরিক সেন্টার। এখান থেকে হেঁটে অনেক জায়গা ভ্রমণ করা যায়। আরেকটি জায়গা হলো এমিনোনু। এটি ট্রাভেল হাব। ইস্তাম্বুলের যেদিকেই আপনি যাওয়া-আসা করুন না কেন, এই এলাকা হয়েই আপনাকে যেতে হবে। আমি ছিলাম সুলতান আহমেত এলাকায়। খুব ভালো মানের একটি হোটেলে পাঁচজন পূর্ণ বয়স্ক এবং একটি শিশুর জন্য দুটি রুম নিয়েছিলাম। প্রতি রাতের জন্য রুমগুলোর ভাড়া ছিল ৫৫ ইউরো। সঙ্গে ছিল কমপ্লিমেন্টারি সুস্বাদু নাশতা। খুঁজলে এর থেকেও সস্তা হোটেল পাওয়া যায় সেখানে। তবে পরিবার নিয়ে থাকার জন্য মানসম্মত হোটেল বেছে নিতে হয়েছিল। একলা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে থাকার জন্য আরও কম ব্যয়ে সেখানে হোটেল রুম পাওয়া যায়।

পরিবহন ব্যয়

ভ্রমণে দ্বিতীয় ব্যয় হচ্ছে পরিবহন। ইস্তাম্বুলে এ খাতে খরচ বেশ সস্তা। আমার পরামর্শ হচ্ছে, ইস্তাম্বুলে নেমে একটি সিটি কার্ড করে নিন। সেই কার্ড টপ আপ করে ব্যবহার করতে থাকুন। প্রতিটি স্টেশনে টপ আপ করার জন্য সেলফ সার্ভিস মেশিন রয়েছে। এই একটি সিটি কার্ড ব্যবহার করে ইস্তাম্বুল শহরে বাস, ট্রাম, মেট্রো, ট্রেন, ফেরিসহ সব ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করা যায়। প্রতি রাইডে ভাড়া পড়বে মাত্র ৩৫ টার্কিশ লিরা অর্থাৎ ইউরোর ৭০ সেন্ট। এতে এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ৯৫ টার্কিশ লিরা অর্থাৎ ২ ইউরোর কম দিয়ে মেট্রোরেলে সেন্টারে যাওয়া-আসা করতে পারবেন।

শপিং ব্যয়

শপিংয়ের জন্য ইস্তাম্বুল খুবই সুন্দর শহর। এটি বিখ্যাত বিভিন্ন ধরনের পাথরের গয়নার জন্য। এখানে খুব সুন্দর পাথরের গয়না পাওয়া যায় কম দামে। তা ছাড়া স্মারক হিসেবে তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী নকশা দিয়ে তৈরি অনেক ধরনের জিনিস মোটামুটি সাশ্রয়ী দামেই পাওয়া যায়।

খাবারের ব্যয়

খাবারের ক্ষেত্রে ইস্তাম্বুল ব্যয়বহুল শহর। তবে সস্তায়ও খাবার পাওয়া যায় শহরটিতে। সে ক্ষেত্রে ঘণ্টাখানেকের যাত্রা করে যেতে হবে সিটি সেন্টার থেকে অনেকটাই দূরে, সেটা আসলে বাস্তবসম্মত সমাধান নয়। সেন্টারে রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়াদাওয়া করলে প্রতিবেলা জনপ্রতি ব্যয় হবে ১৫ থেকে ২০ ইউরো। এ ক্ষেত্রে কিছুটা অর্থ সাশ্রয় করার জন্য পরামর্শ হলো, এমন হোটেলে উঠুন, যেখানে কমপ্লিমেন্টারি সকালের নাশতা পাওয়া যাবে। সকালে ভারী নাশতা করে বের হয়ে বিকেলে স্ন্যাকসজাতীয় কিছু খেয়ে নিয়ে রাতের খাবার খাবেন। ইস্তাম্বুলে স্ন্যাকসজাতীয় অনেক ধরনের খাবার পাওয়া যায় বেশ কম দামে। প্রতিদিন দুই বেলা রেস্টুরেন্টে খেতে হলে অনেক খরচ হবে।

টিকিটের দাম

এই শহরে ট্যুরিস্ট বিভিন্ন অ্যাট্রাকশনে প্রবেশ করার জন্য চড়া মূল্যের টিকিট কাটতে হয়। অ্যাট্রাকশন ভিজিটের জন্য ইস্তাম্বুল অনেক ব্যয়বহুল। সুলতানদের বাসস্থান তোপকাপি প্রাসাদে প্রবেশের টিকিট জনপ্রতি প্রায় ৫০ ইউরো, গালাতা টাওয়ারে ২৫ ইউরো, ব্যাসিলিকা সিস্টার্ন ২৮ ইউরো, দোলমাবাচে প্রাসাদ ৩০ ইউরো এবং আয়া সোফিয়া দেখতে ৩০ ইউরো দিয়ে টিকিট কিনতে হবে। প্রথমবারের মতো ইস্তাম্বুল গেলে আপনাদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, ব্যক্তিগত আগ্রহে দু-একটি জায়গা দেখুন।

ঐতিহাসিক গন্তব্যগুলো দেখার টিকিটের দাম বেশি হলেও বিভিন্ন ট্যুর অ্যাকটিভিটি বেশ সস্তা। বসফরাসে শিপে করে বিভিন্ন লাইভ শোসহ তিন ঘণ্টার ডিনার ক্রুজের মূল্য মাত্র ২০ ইউরো, বসফরাসে দুই ঘণ্টার সানসেট ক্রুজ ৫ থেকে ৬ ইউরো, দুই ঘণ্টার সুফি সামা নাচের শো মাত্র ২০ ইউরো। এ ছাড়া এমন অনেক অ্যাকটিভিটি রয়েছে, যেগুলো মোটামুটি সাশ্রয়ী মূল্যে আপনি দেখতে পারবেন।

সব বিষয় বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে, ইস্তাম্বুল যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি সাশ্রয়ীও বটে। তাই এই শহরকে ‘বাই ডিফল্ট ব্যয়বহুল ডেস্টিনেশন’ বলা যায় না। তবে তা নির্ভর করবে আপনার বাজেটের ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিমানবন্দরে ১০ ভুল এড়িয়ে চলুন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
কিছু ছোট প্রস্তুতি ও সচেতনতা পুরো ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে বদলে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
কিছু ছোট প্রস্তুতি ও সচেতনতা পুরো ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে বদলে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

বিদেশ ভ্রমণের আনন্দ শুরু হয় বিমানবন্দর থেকে। সেই আনন্দ ধরে রাখতে চাইলে কিছুটা পরিকল্পনা, সময়জ্ঞান ও সচেতনতা প্রয়োজন। দীর্ঘ সারি, লাগেজের ঝামেলা, সময়মতো না পৌঁছানো, এমনকি বোর্ডিং পাস হারানোর মতো সাধারণ ভুল যাত্রাকে করে তুলতে পারে বিরক্তিকর। এই ভুলগুলোর বেশির ভাগই হয় পরিকল্পনার অভাবে। কিছু ছোট প্রস্তুতি ও সচেতনতা পুরো ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে বদলে দিতে পারে।

যাত্রার আগে গাড়ি ঠিক করবেন না

যাত্রার দিন গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে অনেকে অনলাইনে গাড়ি বুক করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না পেলে এতে বড় বিপত্তি তৈরি হয়। তাই নির্দিষ্ট দিনের জন্য আগেই গাড়ি ঠিক করে রাখা উচিত। এতে বের হওয়ার সময় কোনো সমস্যা পড়তে হয় না।

খুব আগে পৌঁছে যাওয়াও ভুল

অনেকে মনে করেন, যত আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানো যায়, তত ভালো। কিন্তু তা সব সময় নয়। বেশির ভাগ এয়ারপোর্টে ব্যাগ ড্রপ বা চেক-ইন কাউন্টার খোলে ফ্লাইট ছাড়ার তিন ঘণ্টা আগে। তার আগে গেলে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকে না।

দেরি করা বিপজ্জনক

কিছু যাত্রী মনে করেন, অনলাইনে চেক-ইন থাকলে শেষ মুহূর্তে পৌঁছানো যাবে। কিন্তু অনেক এয়ারলাইনস ফ্লাইট ছাড়ার ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে গেট বন্ধ করে দেয়; বিশেষ করে বড় বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন ও গেটে পৌঁছাতে সময় লাগে অনেক। তাই অন্তত এক ঘণ্টা আগে উপস্থিত হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। আর অনলাইন চেকিং না থাকলে অবশ্যই ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হবে।

বিমানবন্দরে মুদ্রা বদল করবেন না

এয়ারপোর্টে কারেন্সি এক্সচেঞ্জ কাউন্টারে রেট সব সময় কম পাওয়া যায়। ভালো সমাধান হলো ভ্রমণের এক বা দুদিন আগে অনলাইনে বা শহরের কোনো নির্ভরযোগ্য মানি এক্সচেঞ্জে আগেভাগে টাকা বদলে নেওয়া। এতে অনেক টাকা সাশ্রয়ী হয়।

দাম না জেনে ডিউটি ফ্রি কেনাকাটা করবেন না

‘ডিউটি ফ্রি’ শব্দটি শুনলেই মনে হয় সবকিছু সস্তা, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। তাই কেনার আগে মোবাইল ফোনে গুগলে দাম দেখে নিন। না হলে আপনাকে ‘ডিউটি ফ্রি’ ট্যাগের জন্যই বাড়তি টাকা গুনতে হবে।

পানির খালি বোতল সঙ্গে না নেওয়া

নিরাপত্তা চেকের সময় পানি নিয়ে ঢোকা যায় না, কিন্তু খালি বোতল নিয়ে ঢোকা যায়। এখন প্রায় সব বিমানবন্দরে পানির ফিলিং স্টেশন আছে। খালি বোতল নিয়ে গেলে নিরাপত্তা পার হওয়ার পর পানি ভরে নিতে পারবেন। এতে দোকানে অতিরিক্ত দামে পানির বোতল কিনতে হবে না।

লাগেজের ওজন না মাপা

এয়ারলাইনসের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাগের ওজন ও মাপ ভিন্ন হয়। বাড়তি ওজনের জন্য বেশ ভালো অঙ্কের অতিরিক্ত ওজন ফি দিতে হয়। তাই ঘর থেকে ব্যাগ ওজন করে নিন। না হলে অপ্রত্যাশিত খরচ ভ্রমণের বাজেট নষ্ট করবে।

অনলাইনে চেক-ইন না করা

বর্তমানে প্রায় সব এয়ারলাইনস অনলাইন চেক-ইন সুবিধা দেয়। এতে বিমানবন্দরে সময় বাঁচে, আবার কিছু ক্ষেত্রে টাকাও বাঁচে। তাই আগেই মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপে চেক-ইন সম্পন্ন করুন।

ফাস্ট ট্র্যাক ব্যবহার না করা

যদিও অনেকের কাছে অতিরিক্ত ৫ বা ১০ ডলার খরচ করে ফাস্ট ট্র্যাক টিকিটের খরচ অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। তবে ভিড়ের সময় এটি বেশ কাজে দেয়; বিশেষ করে ছুটির মৌসুমে দীর্ঘ নিরাপত্তা সারি এড়াতে অনলাইনে আগে থেকে ফাস্ট ট্র্যাক পাস বুক করা বুদ্ধিমানের কাজ।

ফ্লাইট ট্র্যাক না করা

এয়ারপোর্টের ডিসপ্লে বোর্ডে ফ্লাইট বিলম্ব বা গেট পরিবর্তনের তথ্য অনেক সময় দেরিতে আপডেট হয়। অনলাইন ফ্লাইট ট্র্যাকারে আপনার ফ্লাইট নম্বর লিখলেই আগেভাগে রিয়েল টাইম তথ্য পাওয়া যায়। এতে অপ্রয়োজনীয় দৌড়ঝাঁপ ও বিভ্রান্তি কমে।

সময়মতো পৌঁছানো, লাগেজ যাচাই, অনলাইন চেক-ইন বা ফ্লাইট ট্র্যাক করার মতো ছোট ছোট সচেতনতা ভ্রমণকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে। যাত্রার শুরুটা যদি সুন্দর হয়, তাহলে পুরো ভ্রমণ আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।

সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এভারেস্টে আরোহণের স্বপ্ন হয়ে উঠছে ‘দুঃস্বপ্ন’

ফিচার ডেস্ক
এভারেস্টে আরোহণের স্বপ্ন হয়ে উঠছে ‘দুঃস্বপ্ন’

প্রতিবছর শত শত মানুষ এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার জন্য যান। এই যাত্রায় প্রতিবছর বিভিন্ন ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে থাকে পৃথিবীর এই সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। ২০১৯ সালের এক ছবিতে দেখা যায়, শত শত পর্বতারোহী এক সরু ঢালে সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন চূড়ায় ওঠার অপেক্ষায়। দৃশ্যটি যেন এক সতর্কবার্তা। এভারেস্টে দিন দিন ভিড় বাড়ছে। সেখানে অভিজ্ঞদের পাশাপাশি অনভিজ্ঞরাও ভিড় জমাচ্ছে। ফল—অতিরিক্ত ভিড় আর মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি।

২০২৩ সালের সামিট মৌসুমে চূড়ায় উঠতে গিয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। এক মৌসুমে মৃত্যুর এটি রেকর্ড। ২০২৪ সালে ৯০০ জন পান সামিটের অনুমতিপত্র। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়।

৮ হাজার মিটার ওপরে ভয়ংকর ‘ডেথ জোন’ শুরু হয়। সেখানে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ সমুদ্রপৃষ্ঠের এক-তৃতীয়াংশ মাত্র। এই উচ্চতায় শরীরের কোষ ধীরে ধীরে মরে যেতে শুরু করে। মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে তরল জমে। ফলে দেখা দেয় হ্যালুসিনেশন এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হয়।

উচ্চতার সঙ্গে শরীরের প্রতিক্রিয়া

» ৫ হাজার মিটার ওপরে: মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা ও বমি ভাব শুরু হয়।

» ৬ হাজার মিটার ওপরে: ডিহাইড্রেশন, নাক দিয়ে রক্ত পড়া ও হ্যালুসিনেশন দেখা দিতে পারে।

» ৭ হাজার মিটার ওপরে: হাত, পা, নাক, কান বা ঠোঁটে মারাত্মক ফ্রস্টবাইটের ঝুঁকি তৈরি হয়।

» ৮ হাজার মিটার ওপরে: ডেথ জোন। অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক ফুলে যায় এবং নিচের সব ঝুঁকি আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে।

এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার প্রতিটি পদক্ষেপ যেন এক যুদ্ধ। প্রতিটি নিশ্বাসের জন্য লড়তে হয় সেখানে।

প্রকৃতি নয়, বিপদ এখন মানুষের তৈরি

অক্সিজেনের অভাব ছাড়াও রয়েছে তুষারধস, গভীর বরফ খাত, ঘণ্টায় শত কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া এবং মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ঠান্ডার ঝুঁকি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বড় বিপদ হলো ভিড়। ডেথ জোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে অক্সিজেন শেষ হয়ে যেতে থাকে। শরীর জমে যায় ঠান্ডায়, আর সামান্য ভুলই হয়ে ওঠে মৃত্যুফাঁদ।

আবর্জনার পাহাড়ে ঢাকা

বাণিজ্যিক অভিযানের দাপটে আরেকটি ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হয়েছে। তা হলো প্রতি মৌসুমে পড়ে থাকে টন টন বর্জ্য। সেগুলোর মধ্যে আছে ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডার, ছেঁড়া তাঁবু, ক্যানজাত খাবার, এমনকি মানববর্জ্যও। পরিচ্ছন্নতার বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও এভারেস্টকে এখন অনেকে ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ আবর্জনার স্তূপ’ বলছেন।

২০২৪ সালে নেপাল সেনাবাহিনী এভারেস্ট, লোৎসে ও নুপসে থেকে ১১ টন বর্জ্য, ৪টি মৃতদেহ এবং একটি কঙ্কাল উদ্ধার করে।

নতুন নিয়ম, পুরোনো প্রশ্ন

বিপর্যয় মোকাবিলায় নেপালের সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে পর্বতারোহণের অনুমতিপত্র সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২০২৪ সাল থেকে বিদেশিদের জন্য প্রধান মৌসুমে (মার্চ-মে) অনুমতিপত্রের ফি ৩৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকে সন্দিহান এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে। কারণ, এভারেস্ট অভিযানেই ব্যয় হয় ১ লাখ ডলারের বেশি। তাই কয়েক হাজার ডলার বাড়ানোয় অর্থবান অভিযাত্রীদের উৎসাহ কমবে না। হিমালয়ান রেসকিউ অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য বলেছেন, ‘সমস্যা শুধু সংখ্যায় নয়, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার ঘাটতিতেও। তাই এভারেস্টের চূড়ায় যাঁরা উঠতে চান, তাঁদের জন্য যোগ্যতার ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম থাকা উচিত।’

মানবের জয় বনাম প্রকৃতির সীমা

মানুষের জয় করার প্রবল ইচ্ছা ও প্রকৃতির সহনশীলতার সীমা—এই দুইয়ের মধ্যে এখন দাঁড়িয়ে আছে এভারেস্ট। স্থিতিশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা না গড়ে তুললে ঝুঁকিতে পড়বে শুধু প্রকৃতি নয়, সেই সঙ্গে প্রাণও হারাবেন অনেক স্বপ্নবাজ অভিযাত্রী।

সূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নেপাল সরকারের বিভিন্ন নীতি থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে

বাবর আলী, পর্বতারোহী
নেপাল সরকারের বিভিন্ন নীতি থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে

এভারেস্ট জয়ের আগ্রহ অনেকের থাকে। প্রতিবছর এখানে আরোহীর সংখ্যা বাড়ে। যদিও নেপাল সরকার কিছু নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। যেমন আগে অন্তত ৭ হাজার মিটার কোনো পর্বতারোহণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর সঙ্গে চলতি বছর থেকে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ডলার। যেটি আগে ছিল ১১ হাজার ডলার। আর আরোহীর সংখ্যাও নির্ধারণ করা আছে সরকারের পক্ষ থেকে।

কিন্তু বাস্তবতা অনেকটা ভিন্ন। বিভিন্ন নীতি থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে। কারণ, সেখানকার স্থানীয় শেরপা ও এজেন্সিগুলো সব নিয়ম মেনে চলে না। এর বড় কারণ, দেশটির রাজস্বের অন্যতম খাত এটি। তাই অনেক নিয়ম করা হলেও সেটির প্রয়োগ দেখা যায় না। এর সঙ্গে সেখানকার পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থাও খুব ভালো নয়। অনেকে বিভিন্ন জিনিস বা খাবারের প্যাকেট যেখানে-সেখানে ফেলে। এতে দিন দিন আরও নেতিবাচক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। যদিও পর্বতারোহীদের কাছ থেকে পরিবেশ সুরক্ষার জন্যও ফি নেওয়া হয়। কিন্তু সেটার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আবুধাবিতে স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্ট ২০২৫

ফিচার ডেস্ক
আবুধাবিতে স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্ট ২০২৫

বিশ্ব পর্যটনশিল্পের অন্যতম আয়োজন স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্টের চতুর্থ আসর এবার বসবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে। ভ্রমণ প্ল্যাটফর্ম স্কিফটের সঙ্গে এটি যৌথভাবে আয়োজন করছে আবুধাবির সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগ। এটি অনুষ্ঠিত হবে চলতি মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখ।

কেন আবুধাবি

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি এখন আর শুধু তেলনির্ভর অর্থনীতির শহর নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে আবুধাবি বিমানবন্দরে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এটি বৈশ্বিক পর্যটনের জন্য আশাব্যঞ্জক সংকেত। আয়োজকেরা জানান, এই ফোরাম শুধু সম্মেলন নয়, এটি এমন এক মঞ্চ, যেখানে সরকার, সিইও, উদ্যোক্তা, নির্মাতা ও স্থানীয় সম্প্রদায় একসঙ্গে ভ্রমণশিল্পের ভবিষ্যৎ রূপরেখা তৈরি করবে।

স্কিফটের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রাফাত আলী বলেন, ‘বিশ্বের সেরা সিইও এবং ভ্রমণনেতাদের নিয়ে গঠিত এই ফোরাম আমাদের শিল্পের ভবিষ্যৎ গঠনে অবদান রাখছে। সংস্কৃতি, উদ্ভাবন আর আতিথেয়তার এক অনন্য মিশ্রণে আবুধাবি এই আয়োজনের উপযুক্ত স্থান।’

গ্লোবাল মঞ্চ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে

স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রতিবছর বিশ্ব পর্যটনশিল্পের প্রভাবশালী নেতারা মিলিত হন। সেই আয়োজন থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে মধ্যপ্রাচ্য সংস্করণ হিসেবে তৈরি হয় স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্ট।

২০২৪ সালের ফোরামটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল দুবাইয়ে। সেখানে ৩২টি দেশ থেকে ৫০০ জনের বেশি অংশগ্রহণকারী যোগ দিয়েছিলেন। সেই আলোচনায় উঠে এসেছিল ভ্রমণের উত্থান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব ও ভ্রমণ প্রযুক্তির নতুন ধারা। এবারের আসরে আয়োজকেরা আরও বড় মাপের আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন।

নারী নেতৃত্বের নতুন উদ্যোগ

মূল সম্মেলনের বাইরে ‘মিট জেনারেশন নেক্সট’ শিরোনামে বিশেষ উদ্যোগ থাকবে। যার লক্ষ্য ভ্রমণশিল্পে উদীয়মান নারী নেতাদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত নেতাদের যোগাযোগ তৈরি করা। এটি আবুধাবির সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপরেখা পরিবর্তনের একটি অংশ। যেখানে স্থানীয় প্রতিভা বিকাশ ও নারীর অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

এই আয়োজনের গুরুত্ব

স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্ট এখন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী পর্যটন সম্মেলন। এখানে সরকার, করপোরেট, স্টার্টআপ, কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং গবেষকেরা একসঙ্গে আলোচনা করেন ভ্রমণশিল্পের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

ভ্রমণশিল্প দ্রুত বদলে যাচ্ছে। নতুন বাজার, নতুন প্রযুক্তি, নতুন প্রজন্ম—সব মিলিয়ে ভ্রমণের জগৎ প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্ট ২০২৫ সেই পরিবর্তনের দিকনির্দেশনা দেবে। যেখানে মধ্যপ্রাচ্য ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক হতে যাচ্ছে।

সূত্র: স্কিফট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত