Ajker Patrika

বিমানবন্দরে ১০ ভুল এড়িয়ে চলুন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
কিছু ছোট প্রস্তুতি ও সচেতনতা পুরো ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে বদলে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
কিছু ছোট প্রস্তুতি ও সচেতনতা পুরো ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে বদলে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

বিদেশ ভ্রমণের আনন্দ শুরু হয় বিমানবন্দর থেকে। সেই আনন্দ ধরে রাখতে চাইলে কিছুটা পরিকল্পনা, সময়জ্ঞান ও সচেতনতা প্রয়োজন। দীর্ঘ সারি, লাগেজের ঝামেলা, সময়মতো না পৌঁছানো, এমনকি বোর্ডিং পাস হারানোর মতো সাধারণ ভুল যাত্রাকে করে তুলতে পারে বিরক্তিকর। এই ভুলগুলোর বেশির ভাগই হয় পরিকল্পনার অভাবে। কিছু ছোট প্রস্তুতি ও সচেতনতা পুরো ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে বদলে দিতে পারে।

যাত্রার আগে গাড়ি ঠিক করবেন না

যাত্রার দিন গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে অনেকে অনলাইনে গাড়ি বুক করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না পেলে এতে বড় বিপত্তি তৈরি হয়। তাই নির্দিষ্ট দিনের জন্য আগেই গাড়ি ঠিক করে রাখা উচিত। এতে বের হওয়ার সময় কোনো সমস্যা পড়তে হয় না।

খুব আগে পৌঁছে যাওয়াও ভুল

অনেকে মনে করেন, যত আগে বিমানবন্দরে পৌঁছানো যায়, তত ভালো। কিন্তু তা সব সময় নয়। বেশির ভাগ এয়ারপোর্টে ব্যাগ ড্রপ বা চেক-ইন কাউন্টার খোলে ফ্লাইট ছাড়ার তিন ঘণ্টা আগে। তার আগে গেলে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকে না।

দেরি করা বিপজ্জনক

কিছু যাত্রী মনে করেন, অনলাইনে চেক-ইন থাকলে শেষ মুহূর্তে পৌঁছানো যাবে। কিন্তু অনেক এয়ারলাইনস ফ্লাইট ছাড়ার ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে গেট বন্ধ করে দেয়; বিশেষ করে বড় বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন ও গেটে পৌঁছাতে সময় লাগে অনেক। তাই অন্তত এক ঘণ্টা আগে উপস্থিত হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। আর অনলাইন চেকিং না থাকলে অবশ্যই ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হবে।

বিমানবন্দরে মুদ্রা বদল করবেন না

এয়ারপোর্টে কারেন্সি এক্সচেঞ্জ কাউন্টারে রেট সব সময় কম পাওয়া যায়। ভালো সমাধান হলো ভ্রমণের এক বা দুদিন আগে অনলাইনে বা শহরের কোনো নির্ভরযোগ্য মানি এক্সচেঞ্জে আগেভাগে টাকা বদলে নেওয়া। এতে অনেক টাকা সাশ্রয়ী হয়।

দাম না জেনে ডিউটি ফ্রি কেনাকাটা করবেন না

‘ডিউটি ফ্রি’ শব্দটি শুনলেই মনে হয় সবকিছু সস্তা, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। তাই কেনার আগে মোবাইল ফোনে গুগলে দাম দেখে নিন। না হলে আপনাকে ‘ডিউটি ফ্রি’ ট্যাগের জন্যই বাড়তি টাকা গুনতে হবে।

পানির খালি বোতল সঙ্গে না নেওয়া

নিরাপত্তা চেকের সময় পানি নিয়ে ঢোকা যায় না, কিন্তু খালি বোতল নিয়ে ঢোকা যায়। এখন প্রায় সব বিমানবন্দরে পানির ফিলিং স্টেশন আছে। খালি বোতল নিয়ে গেলে নিরাপত্তা পার হওয়ার পর পানি ভরে নিতে পারবেন। এতে দোকানে অতিরিক্ত দামে পানির বোতল কিনতে হবে না।

লাগেজের ওজন না মাপা

এয়ারলাইনসের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাগের ওজন ও মাপ ভিন্ন হয়। বাড়তি ওজনের জন্য বেশ ভালো অঙ্কের অতিরিক্ত ওজন ফি দিতে হয়। তাই ঘর থেকে ব্যাগ ওজন করে নিন। না হলে অপ্রত্যাশিত খরচ ভ্রমণের বাজেট নষ্ট করবে।

অনলাইনে চেক-ইন না করা

বর্তমানে প্রায় সব এয়ারলাইনস অনলাইন চেক-ইন সুবিধা দেয়। এতে বিমানবন্দরে সময় বাঁচে, আবার কিছু ক্ষেত্রে টাকাও বাঁচে। তাই আগেই মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপে চেক-ইন সম্পন্ন করুন।

ফাস্ট ট্র্যাক ব্যবহার না করা

যদিও অনেকের কাছে অতিরিক্ত ৫ বা ১০ ডলার খরচ করে ফাস্ট ট্র্যাক টিকিটের খরচ অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। তবে ভিড়ের সময় এটি বেশ কাজে দেয়; বিশেষ করে ছুটির মৌসুমে দীর্ঘ নিরাপত্তা সারি এড়াতে অনলাইনে আগে থেকে ফাস্ট ট্র্যাক পাস বুক করা বুদ্ধিমানের কাজ।

ফ্লাইট ট্র্যাক না করা

এয়ারপোর্টের ডিসপ্লে বোর্ডে ফ্লাইট বিলম্ব বা গেট পরিবর্তনের তথ্য অনেক সময় দেরিতে আপডেট হয়। অনলাইন ফ্লাইট ট্র্যাকারে আপনার ফ্লাইট নম্বর লিখলেই আগেভাগে রিয়েল টাইম তথ্য পাওয়া যায়। এতে অপ্রয়োজনীয় দৌড়ঝাঁপ ও বিভ্রান্তি কমে।

সময়মতো পৌঁছানো, লাগেজ যাচাই, অনলাইন চেক-ইন বা ফ্লাইট ট্র্যাক করার মতো ছোট ছোট সচেতনতা ভ্রমণকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে। যাত্রার শুরুটা যদি সুন্দর হয়, তাহলে পুরো ভ্রমণ আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।

সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দ্রুততম সময়ে ত্বকে উজ্জ্বলতা দেবে যে ৪ খাবার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
এমন উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে স্কিন ডায়েট মেনে চলুন। ছবি: পেক্সেলস
এমন উজ্জ্বল ত্বক পেতে চাইলে স্কিন ডায়েট মেনে চলুন। ছবি: পেক্সেলস

হেমন্তের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আর কদিন পর শুরু হবে বিয়ের মৌসুম। তারপর বড়দিন আর বছর বিদায়ী অনুষ্ঠানগুলো তো পড়েই রয়েছে। ফলে বছরের বাকি সময়টুকু হইহুল্লোড়ে পার হবে। এসব উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ঘরবাড়ি নতুন করে সাজানো থেকে শুরু করে সুস্বাদু খাবার তৈরি—সবখানেই থাকে আড়ম্বর। কেনা হয় নতুন পোশাক ও গয়না। কিন্তু এত সবের মাঝে ত্বকের প্রস্তুতি কী, বলুন তো? বিশেষ দিনের আগে একদিন ফেয়ার পলিশ আর ব্রাইটেনিং ফেশিয়াল করলেই ত্বক উজ্জ্বল হয় না। এটি ভেতর থেকে ভালো থাকলে উজ্জ্বলতা এমনিই আসবে।

স্কিন ডায়েট বিষয়ে জেনে নিন

আজকাল ‘স্কিন ডায়েট’ বলে একটা ব্যাপার বেশ চর্চায় রয়েছে। কী এই স্কিন ডায়েট? একটু খোলাসা করেই বলা যাক। স্কিন ডায়েট হলো এমন এক খাদ্যাভ্যাস, যেখানে স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়া ও পানীয় পান করা হয়। এড়িয়ে চলা হয় কিছু খাবার। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, ত্বক ভেতর থেকে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখা, ব্রণের মতো সমস্যা কমানো, দাগছোপ ও অকালে বলিরেখা পড়তে না দেওয়া এবং ত্বকের অকালবার্ধক্য প্রতিরোধ করা। এই ডায়েটে তাজা ফল, সবজি ও স্বাস্থ্যকর চর্বি বেশি থাকে। আর কম থাকে অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার।

তবে ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখতে বাহ্যিক যত্নের দিকে আমরা যতটা নজর দিই, ঠিক ততটাই অবহেলা করি সুস্থ ত্বকের উপযোগী খাদ্য-পানীয় গ্রহণে। ফলে দিন দিন ত্বক ক্লান্ত হয়ে পড়ে সুস্থতা হারায়। তাই বলে ঘটা করে একদিন স্কিন ডায়েটে ভালো খাবার রেখে পরের তিন মাস বেমালুম ভুলে যাবেন, তা হলে ফল হবে শূন্য। বিশেষ দিনে বিশেষ জেল্লা ছড়াতে চাইলে আটঘাট বেঁধে নামা চাই। প্রতিদিনই স্কিন ডায়েট মেনুতে কয়েকটি খাবার রাখতে হবে।

জাফরান ভেজানো পানি

জাফরান ভেজানো পানি আপনার ত্বক প্রশান্ত ও উজ্জ্বল দেখাতে সাহায্য করবে। ছবি: পেক্সেলস
জাফরান ভেজানো পানি আপনার ত্বক প্রশান্ত ও উজ্জ্বল দেখাতে সাহায্য করবে। ছবি: পেক্সেলস

দ্রুততম সময়ে ত্বকে জেল্লা ফিরে পেতে চাইলে জাফরান ভেজানো পানি পানে উপকার পাবেন। জাফরান ভেজানো পানি তৈরি করতে ২ বা ৩টি জাফরান এক কাপ কুসুম গরম পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে পান করুন। চাইলে রাতে ভিজিয়ে সকালবেলা খালি পেটে পান করতে পারেন। জাফরান ভিটামিন ও প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। এটি আপনার ত্বক প্রশান্ত করতে এবং উজ্জ্বল দেখাতে সাহায্য করবে। এই পানি পান করলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও রক্তসঞ্চালন বাড়ে। শক্তি বৃদ্ধিতেও এর জুড়ি নেই।

আমলকীর শট

আমলকী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খনিজে ভরপুর। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবে ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল দেখায়। প্রতিদিন দুটি আমলকী রস করে এক কাপ কুসুম গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করুন। ত্বকের উজ্জ্বলতা নিজেই টের পাবেন।

আমলকীর শট ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। ছবি: সংগৃহীত
আমলকীর শট ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। ছবি: সংগৃহীত

বাদাম

স্বাস্থ্যকর গুণ থাকায় বাদামকে সুপার ফুড বলা হয়। এতে থাকা আঁশ বিপাক প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক। প্রতিদিন যেকোনো বাদাম এক মুঠো পরিমাণ খেলে উপকার পাওয়া যায়। বাদামের মধ্য়কার ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

সাইট্রাস ফল

সাইট্রাস হলো টকজাতীয় ফল। এ ধরনের ফলের গুণের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। এগুলোতে থাকে ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভোনয়েড, টারপেন ও সাইট্রিক অ্যাসিড। এসব উপাদান এ-জাতীয় ফলগুলোকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্বাদ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা দেয়। লেবু, কমলা ও অন্যান্য টক ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন দূষণ থেকে সৃষ্ট ত্বকের ক্ষতি সারাতে সাহায্য করে। ত্বক ভেতর থেকে পরিচ্ছন্ন রাখতেও এর জুড়ি নেই। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে অর্ধেক লেবু রস করে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। শরীরও চাঙা হয়ে উঠবে, বাড়তি মেদও কমবে; পাশাপাশি ত্বকও চকচকে হয়ে উঠবে। ফলে বিশেষ দিনে মেকআপ ছাড়াই ঝলমল করবে আপনার ত্বক।

সূত্র: এনডিটিভি ফুডস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এভারেস্টে আরোহণের স্বপ্ন হয়ে উঠছে ‘দুঃস্বপ্ন’

ফিচার ডেস্ক
এভারেস্টে আরোহণের স্বপ্ন হয়ে উঠছে ‘দুঃস্বপ্ন’

প্রতিবছর শত শত মানুষ এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার জন্য যান। এই যাত্রায় প্রতিবছর বিভিন্ন ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে থাকে পৃথিবীর এই সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। ২০১৯ সালের এক ছবিতে দেখা যায়, শত শত পর্বতারোহী এক সরু ঢালে সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন চূড়ায় ওঠার অপেক্ষায়। দৃশ্যটি যেন এক সতর্কবার্তা। এভারেস্টে দিন দিন ভিড় বাড়ছে। সেখানে অভিজ্ঞদের পাশাপাশি অনভিজ্ঞরাও ভিড় জমাচ্ছে। ফল—অতিরিক্ত ভিড় আর মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি।

২০২৩ সালের সামিট মৌসুমে চূড়ায় উঠতে গিয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। এক মৌসুমে মৃত্যুর এটি রেকর্ড। ২০২৪ সালে ৯০০ জন পান সামিটের অনুমতিপত্র। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়।

৮ হাজার মিটার ওপরে ভয়ংকর ‘ডেথ জোন’ শুরু হয়। সেখানে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ সমুদ্রপৃষ্ঠের এক-তৃতীয়াংশ মাত্র। এই উচ্চতায় শরীরের কোষ ধীরে ধীরে মরে যেতে শুরু করে। মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে তরল জমে। ফলে দেখা দেয় হ্যালুসিনেশন এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হয়।

উচ্চতার সঙ্গে শরীরের প্রতিক্রিয়া

» ৫ হাজার মিটার ওপরে: মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা ও বমি ভাব শুরু হয়।

» ৬ হাজার মিটার ওপরে: ডিহাইড্রেশন, নাক দিয়ে রক্ত পড়া ও হ্যালুসিনেশন দেখা দিতে পারে।

» ৭ হাজার মিটার ওপরে: হাত, পা, নাক, কান বা ঠোঁটে মারাত্মক ফ্রস্টবাইটের ঝুঁকি তৈরি হয়।

» ৮ হাজার মিটার ওপরে: ডেথ জোন। অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক ফুলে যায় এবং নিচের সব ঝুঁকি আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে।

এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার প্রতিটি পদক্ষেপ যেন এক যুদ্ধ। প্রতিটি নিশ্বাসের জন্য লড়তে হয় সেখানে।

প্রকৃতি নয়, বিপদ এখন মানুষের তৈরি

অক্সিজেনের অভাব ছাড়াও রয়েছে তুষারধস, গভীর বরফ খাত, ঘণ্টায় শত কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া এবং মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ঠান্ডার ঝুঁকি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বড় বিপদ হলো ভিড়। ডেথ জোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে অক্সিজেন শেষ হয়ে যেতে থাকে। শরীর জমে যায় ঠান্ডায়, আর সামান্য ভুলই হয়ে ওঠে মৃত্যুফাঁদ।

আবর্জনার পাহাড়ে ঢাকা

বাণিজ্যিক অভিযানের দাপটে আরেকটি ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হয়েছে। তা হলো প্রতি মৌসুমে পড়ে থাকে টন টন বর্জ্য। সেগুলোর মধ্যে আছে ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডার, ছেঁড়া তাঁবু, ক্যানজাত খাবার, এমনকি মানববর্জ্যও। পরিচ্ছন্নতার বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও এভারেস্টকে এখন অনেকে ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ আবর্জনার স্তূপ’ বলছেন।

২০২৪ সালে নেপাল সেনাবাহিনী এভারেস্ট, লোৎসে ও নুপসে থেকে ১১ টন বর্জ্য, ৪টি মৃতদেহ এবং একটি কঙ্কাল উদ্ধার করে।

নতুন নিয়ম, পুরোনো প্রশ্ন

বিপর্যয় মোকাবিলায় নেপালের সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে পর্বতারোহণের অনুমতিপত্র সীমিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২০২৪ সাল থেকে বিদেশিদের জন্য প্রধান মৌসুমে (মার্চ-মে) অনুমতিপত্রের ফি ৩৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকে সন্দিহান এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে। কারণ, এভারেস্ট অভিযানেই ব্যয় হয় ১ লাখ ডলারের বেশি। তাই কয়েক হাজার ডলার বাড়ানোয় অর্থবান অভিযাত্রীদের উৎসাহ কমবে না। হিমালয়ান রেসকিউ অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য বলেছেন, ‘সমস্যা শুধু সংখ্যায় নয়, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার ঘাটতিতেও। তাই এভারেস্টের চূড়ায় যাঁরা উঠতে চান, তাঁদের জন্য যোগ্যতার ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম থাকা উচিত।’

মানবের জয় বনাম প্রকৃতির সীমা

মানুষের জয় করার প্রবল ইচ্ছা ও প্রকৃতির সহনশীলতার সীমা—এই দুইয়ের মধ্যে এখন দাঁড়িয়ে আছে এভারেস্ট। স্থিতিশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা না গড়ে তুললে ঝুঁকিতে পড়বে শুধু প্রকৃতি নয়, সেই সঙ্গে প্রাণও হারাবেন অনেক স্বপ্নবাজ অভিযাত্রী।

সূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নেপাল সরকারের বিভিন্ন নীতি থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে

বাবর আলী, পর্বতারোহী
নেপাল সরকারের বিভিন্ন নীতি থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে

এভারেস্ট জয়ের আগ্রহ অনেকের থাকে। প্রতিবছর এখানে আরোহীর সংখ্যা বাড়ে। যদিও নেপাল সরকার কিছু নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। যেমন আগে অন্তত ৭ হাজার মিটার কোনো পর্বতারোহণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর সঙ্গে চলতি বছর থেকে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ডলার। যেটি আগে ছিল ১১ হাজার ডলার। আর আরোহীর সংখ্যাও নির্ধারণ করা আছে সরকারের পক্ষ থেকে।

কিন্তু বাস্তবতা অনেকটা ভিন্ন। বিভিন্ন নীতি থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে। কারণ, সেখানকার স্থানীয় শেরপা ও এজেন্সিগুলো সব নিয়ম মেনে চলে না। এর বড় কারণ, দেশটির রাজস্বের অন্যতম খাত এটি। তাই অনেক নিয়ম করা হলেও সেটির প্রয়োগ দেখা যায় না। এর সঙ্গে সেখানকার পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থাও খুব ভালো নয়। অনেকে বিভিন্ন জিনিস বা খাবারের প্যাকেট যেখানে-সেখানে ফেলে। এতে দিন দিন আরও নেতিবাচক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। যদিও পর্বতারোহীদের কাছ থেকে পরিবেশ সুরক্ষার জন্যও ফি নেওয়া হয়। কিন্তু সেটার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আবুধাবিতে স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্ট ২০২৫

ফিচার ডেস্ক
আবুধাবিতে স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্ট ২০২৫

বিশ্ব পর্যটনশিল্পের অন্যতম আয়োজন স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্টের চতুর্থ আসর এবার বসবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে। ভ্রমণ প্ল্যাটফর্ম স্কিফটের সঙ্গে এটি যৌথভাবে আয়োজন করছে আবুধাবির সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগ। এটি অনুষ্ঠিত হবে চলতি মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখ।

কেন আবুধাবি

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি এখন আর শুধু তেলনির্ভর অর্থনীতির শহর নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে আবুধাবি বিমানবন্দরে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এটি বৈশ্বিক পর্যটনের জন্য আশাব্যঞ্জক সংকেত। আয়োজকেরা জানান, এই ফোরাম শুধু সম্মেলন নয়, এটি এমন এক মঞ্চ, যেখানে সরকার, সিইও, উদ্যোক্তা, নির্মাতা ও স্থানীয় সম্প্রদায় একসঙ্গে ভ্রমণশিল্পের ভবিষ্যৎ রূপরেখা তৈরি করবে।

স্কিফটের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রাফাত আলী বলেন, ‘বিশ্বের সেরা সিইও এবং ভ্রমণনেতাদের নিয়ে গঠিত এই ফোরাম আমাদের শিল্পের ভবিষ্যৎ গঠনে অবদান রাখছে। সংস্কৃতি, উদ্ভাবন আর আতিথেয়তার এক অনন্য মিশ্রণে আবুধাবি এই আয়োজনের উপযুক্ত স্থান।’

গ্লোবাল মঞ্চ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে

স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রতিবছর বিশ্ব পর্যটনশিল্পের প্রভাবশালী নেতারা মিলিত হন। সেই আয়োজন থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে মধ্যপ্রাচ্য সংস্করণ হিসেবে তৈরি হয় স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্ট।

২০২৪ সালের ফোরামটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল দুবাইয়ে। সেখানে ৩২টি দেশ থেকে ৫০০ জনের বেশি অংশগ্রহণকারী যোগ দিয়েছিলেন। সেই আলোচনায় উঠে এসেছিল ভ্রমণের উত্থান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব ও ভ্রমণ প্রযুক্তির নতুন ধারা। এবারের আসরে আয়োজকেরা আরও বড় মাপের আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন।

নারী নেতৃত্বের নতুন উদ্যোগ

মূল সম্মেলনের বাইরে ‘মিট জেনারেশন নেক্সট’ শিরোনামে বিশেষ উদ্যোগ থাকবে। যার লক্ষ্য ভ্রমণশিল্পে উদীয়মান নারী নেতাদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত নেতাদের যোগাযোগ তৈরি করা। এটি আবুধাবির সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপরেখা পরিবর্তনের একটি অংশ। যেখানে স্থানীয় প্রতিভা বিকাশ ও নারীর অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

এই আয়োজনের গুরুত্ব

স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্ট এখন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী পর্যটন সম্মেলন। এখানে সরকার, করপোরেট, স্টার্টআপ, কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং গবেষকেরা একসঙ্গে আলোচনা করেন ভ্রমণশিল্পের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

ভ্রমণশিল্প দ্রুত বদলে যাচ্ছে। নতুন বাজার, নতুন প্রযুক্তি, নতুন প্রজন্ম—সব মিলিয়ে ভ্রমণের জগৎ প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া স্কিফট গ্লোবাল ফোরাম ইস্ট ২০২৫ সেই পরিবর্তনের দিকনির্দেশনা দেবে। যেখানে মধ্যপ্রাচ্য ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক হতে যাচ্ছে।

সূত্র: স্কিফট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত