নুরুল করিম
অন্ধকারে ডুবে আছে চারপাশ। সেই অন্ধকার চিড়ে আঁকাবাঁকা পথে ছুটে চলেছে জিপ। পোখারা থেকে আমাদের গন্তব্য অন্নপূর্ণার খুব কাছের এক গ্রাম। যেতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টার মতো। বরফসম ঠান্ডা বাতাসে মনে পড়ল, খুব কাছেই বরফের পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে সারি বেঁধে। সূর্য যখন উঁকি দেওয়া শুরু করল, মনোযোগ তখন অন্নপূর্ণায়। আগ্রহ ভরা চোখের সামনেই ধবধবে সাদা পাহাড় গাঢ় কমলা রঙে রাঙাতে শুরু করল, কোনো পাশে আবার হলুদ। আবার কিছুক্ষণ পরই লাল আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে এদিক থেকে ওদিক! এই দৃশ্যের বর্ণনা করা খুব কঠিন। মুগ্ধময় সেই সৌন্দর্যে বুঁদ হতে হতে অন্নপূর্ণা যখন আবারও স্বরূপে ফিরল সাদা হয়ে, তখন আমরা ঘান্দ্রুকের কাছাকাছি।
ঘান্দ্রুক নামটির সঙ্গে প্রথম পরিচয় ফটো শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রামে। বরফের পাহাড় অন্নপূর্ণার খুব কাছে ছোট্ট এই গ্রাম। সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। কোনোটা রিসোর্ট, কোনোটা হোম-স্টে, আবার কিছু কিছু ঘর স্থানীয়দের বাসস্থান। সেসব ঘরের উঠোনে পর্যটকেরা গিয়ে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব সহজে নজর কেড়েছে ঘান্দ্রুক।
ট্রেকারদের কাছে এই গ্রাম অন্য কারণে পরিচিত। এটি অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প ট্রেকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। অনেকে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে দুদণ্ড শান্তির খোঁজে ঘান্দ্রুকে কাটিয়ে নেন কয়েক ঘণ্টা। আবার কারও কারও রাত্রিযাপনের অন্যতম ঠিকানাও এই ঘান্দ্রুক। এর অবস্থান নেপালের গন্ডকি প্রদেশের কাস্কি জেলার অন্নপূর্ণা রেঞ্জে। এর উচ্চতা ২ হাজার ১২ মিটার।
এবারের নেপাল ভ্রমণে আমার মূল গন্তব্য ছিল ঘান্দ্রুক। দেড় ঘণ্টার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু পৌঁছেই উঠে পড়ি পোখারাগামী বাসে। সকালেই পোখারা থেকে জিপযোগে তিন ঘণ্টায় ঘান্দ্রুকের কাছাকাছি পৌঁছে যাই। সেখান থেকে ঘণ্টাখানেক ট্রেকিং দূরত্বের এক হোটেলে উঠি।
ঘান্দ্রুকে প্রবেশ করা মাত্রই অন্নপূর্ণা আর মাছাপুছারে পর্বতের অপার্থিব দৃশ্য স্বাগত জানাল। প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি গ্রামটির পরিবেশও বেশ শান্তিপূর্ণ। পাখির কলকাকলি, পাহাড়ের স্নিগ্ধ বাতাস এবং গ্রামের সাধারণ জীবনযাত্রার দৃশ্য ক্লান্ত মনকে প্রশান্তি দেয়। আমার জন্য বরাদ্দ তিনতলার হোটেলটিতে ঢুকতেই মনে হলো, এটি একটি বাগান। চারপাশে ফুল-ফল ও সৌন্দর্যবর্ধন গাছ দিয়ে সাজানো। আর রুমের বারান্দা থেকে দেখা যায় সাদা ধবধবে অন্নপূর্ণা।
বরফে ঢাকা অন্নপূর্ণা কখনো মেঘের ফাঁকে উঁকি দিয়ে নানা রূপে হাজির হয় চোখের সামনে। বিশেষত, সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সময়। তখন মনে হয়, অগ্নিকন্যার বেশে হাজির হলেন তিনি। আশপাশের শৃঙ্গগুলোও চিক চিক করে স্বর্গীয় রূপ ধারণ করে। বিশেষ করে মাছাপুছারে পর্বত যেন হয়ে ওঠে আগুনের কুণ্ডলী। আর রাতে, চাঁদের আলোয় স্বর্গীয় রূপ ধারণ করে এই শৃঙ্গ।
হিমালয়ের প্রতিবেশী এই গ্রামের প্রকৃতি বৈচিত্র্যময় হলেও এখানকার মানুষের স্বভাব এক। তাদের হৃদয় পর্বতশৃঙ্গের চেয়েও উঁচু। হোটেল রক অ্যান্ড মাডের মালিক লাছিন গুরুং ও তাঁর স্ত্রী প্রতিভা ভুজেলের আপ্যায়ন তা-ই প্রমাণ করল। বাংলাদেশি শুনে, তাঁরা নেপালের নানা সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। দ্বিতীয় দিন সকালে আয়োজন করলেন সেখানকার ঐতিহ্যবাহী সংগীতের আসর এবং রাতে ফায়ার গেম। এখানকার প্রধান খাবার মাষকলাই, ভাত, ধামি মাছ এবং গ্রাম্য পাঁপড়। তাঁদের হোম মেড মোমো খুবই সুস্বাদু; এখনো যেন মুখে লেগে আছে।
ঘান্দ্রুকের বাসিন্দারা প্রধানত গুরুং জনজাতির অংশ। এদের রয়েছে প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। গুরুং সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশির ভাগ হিন্দু। কিছু বৌদ্ধ ও মুসলিম আছে।
অন্নপূর্ণা রেঞ্জের এই গ্রামে গেলে আপনি গুরুং মানুষের অতিথিপরায়ণতা এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী ঘরগুলো দেখতে পাবেন। সুন্দরভাবে সজ্জিত পুরোনো কাঠ দিয়ে তৈরি তাদের ঘরগুলো বিশেষ সাংস্কৃতিক ধারা উপস্থাপন করে।
ঘান্দ্রুকের অর্থনৈতিক জীবনে মূল ভূমিকা পালন করে কৃষি ও পর্যটনশিল্প। কৃষিতে ধান, ভুট্টা, আলু এবং বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ অন্যতম। তবে বর্তমানে পর্যটনশিল্প এখানকার অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। গ্রামে ছোট ছোট হোটেল, গেস্টহাউস এবং লজ ট্রেকারদের জন্য নিরাপদ জায়গা।
ঘান্দ্রুক গ্রামটি শুধু ট্রেকিংয়ের জন্য নয়; বরং একটি সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা, একটি বিশুদ্ধ প্রকৃতিযাত্রাও বটে। যাঁরা নেপালে প্রকৃতির সৌন্দর্য, শান্তিপূর্ণ জীবন এবং নতুন কিছু দেখতে চান, তাঁদের জন্য ঘান্দ্রুক হতে পারে একটি দুর্দান্ত গন্তব্য।
অন্ধকারে ডুবে আছে চারপাশ। সেই অন্ধকার চিড়ে আঁকাবাঁকা পথে ছুটে চলেছে জিপ। পোখারা থেকে আমাদের গন্তব্য অন্নপূর্ণার খুব কাছের এক গ্রাম। যেতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টার মতো। বরফসম ঠান্ডা বাতাসে মনে পড়ল, খুব কাছেই বরফের পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে সারি বেঁধে। সূর্য যখন উঁকি দেওয়া শুরু করল, মনোযোগ তখন অন্নপূর্ণায়। আগ্রহ ভরা চোখের সামনেই ধবধবে সাদা পাহাড় গাঢ় কমলা রঙে রাঙাতে শুরু করল, কোনো পাশে আবার হলুদ। আবার কিছুক্ষণ পরই লাল আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে এদিক থেকে ওদিক! এই দৃশ্যের বর্ণনা করা খুব কঠিন। মুগ্ধময় সেই সৌন্দর্যে বুঁদ হতে হতে অন্নপূর্ণা যখন আবারও স্বরূপে ফিরল সাদা হয়ে, তখন আমরা ঘান্দ্রুকের কাছাকাছি।
ঘান্দ্রুক নামটির সঙ্গে প্রথম পরিচয় ফটো শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রামে। বরফের পাহাড় অন্নপূর্ণার খুব কাছে ছোট্ট এই গ্রাম। সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। কোনোটা রিসোর্ট, কোনোটা হোম-স্টে, আবার কিছু কিছু ঘর স্থানীয়দের বাসস্থান। সেসব ঘরের উঠোনে পর্যটকেরা গিয়ে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব সহজে নজর কেড়েছে ঘান্দ্রুক।
ট্রেকারদের কাছে এই গ্রাম অন্য কারণে পরিচিত। এটি অন্নপূর্ণা বেসক্যাম্প ট্রেকের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। অনেকে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে দুদণ্ড শান্তির খোঁজে ঘান্দ্রুকে কাটিয়ে নেন কয়েক ঘণ্টা। আবার কারও কারও রাত্রিযাপনের অন্যতম ঠিকানাও এই ঘান্দ্রুক। এর অবস্থান নেপালের গন্ডকি প্রদেশের কাস্কি জেলার অন্নপূর্ণা রেঞ্জে। এর উচ্চতা ২ হাজার ১২ মিটার।
এবারের নেপাল ভ্রমণে আমার মূল গন্তব্য ছিল ঘান্দ্রুক। দেড় ঘণ্টার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু পৌঁছেই উঠে পড়ি পোখারাগামী বাসে। সকালেই পোখারা থেকে জিপযোগে তিন ঘণ্টায় ঘান্দ্রুকের কাছাকাছি পৌঁছে যাই। সেখান থেকে ঘণ্টাখানেক ট্রেকিং দূরত্বের এক হোটেলে উঠি।
ঘান্দ্রুকে প্রবেশ করা মাত্রই অন্নপূর্ণা আর মাছাপুছারে পর্বতের অপার্থিব দৃশ্য স্বাগত জানাল। প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি গ্রামটির পরিবেশও বেশ শান্তিপূর্ণ। পাখির কলকাকলি, পাহাড়ের স্নিগ্ধ বাতাস এবং গ্রামের সাধারণ জীবনযাত্রার দৃশ্য ক্লান্ত মনকে প্রশান্তি দেয়। আমার জন্য বরাদ্দ তিনতলার হোটেলটিতে ঢুকতেই মনে হলো, এটি একটি বাগান। চারপাশে ফুল-ফল ও সৌন্দর্যবর্ধন গাছ দিয়ে সাজানো। আর রুমের বারান্দা থেকে দেখা যায় সাদা ধবধবে অন্নপূর্ণা।
বরফে ঢাকা অন্নপূর্ণা কখনো মেঘের ফাঁকে উঁকি দিয়ে নানা রূপে হাজির হয় চোখের সামনে। বিশেষত, সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সময়। তখন মনে হয়, অগ্নিকন্যার বেশে হাজির হলেন তিনি। আশপাশের শৃঙ্গগুলোও চিক চিক করে স্বর্গীয় রূপ ধারণ করে। বিশেষ করে মাছাপুছারে পর্বত যেন হয়ে ওঠে আগুনের কুণ্ডলী। আর রাতে, চাঁদের আলোয় স্বর্গীয় রূপ ধারণ করে এই শৃঙ্গ।
হিমালয়ের প্রতিবেশী এই গ্রামের প্রকৃতি বৈচিত্র্যময় হলেও এখানকার মানুষের স্বভাব এক। তাদের হৃদয় পর্বতশৃঙ্গের চেয়েও উঁচু। হোটেল রক অ্যান্ড মাডের মালিক লাছিন গুরুং ও তাঁর স্ত্রী প্রতিভা ভুজেলের আপ্যায়ন তা-ই প্রমাণ করল। বাংলাদেশি শুনে, তাঁরা নেপালের নানা সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। দ্বিতীয় দিন সকালে আয়োজন করলেন সেখানকার ঐতিহ্যবাহী সংগীতের আসর এবং রাতে ফায়ার গেম। এখানকার প্রধান খাবার মাষকলাই, ভাত, ধামি মাছ এবং গ্রাম্য পাঁপড়। তাঁদের হোম মেড মোমো খুবই সুস্বাদু; এখনো যেন মুখে লেগে আছে।
ঘান্দ্রুকের বাসিন্দারা প্রধানত গুরুং জনজাতির অংশ। এদের রয়েছে প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। গুরুং সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশির ভাগ হিন্দু। কিছু বৌদ্ধ ও মুসলিম আছে।
অন্নপূর্ণা রেঞ্জের এই গ্রামে গেলে আপনি গুরুং মানুষের অতিথিপরায়ণতা এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী ঘরগুলো দেখতে পাবেন। সুন্দরভাবে সজ্জিত পুরোনো কাঠ দিয়ে তৈরি তাদের ঘরগুলো বিশেষ সাংস্কৃতিক ধারা উপস্থাপন করে।
ঘান্দ্রুকের অর্থনৈতিক জীবনে মূল ভূমিকা পালন করে কৃষি ও পর্যটনশিল্প। কৃষিতে ধান, ভুট্টা, আলু এবং বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ অন্যতম। তবে বর্তমানে পর্যটনশিল্প এখানকার অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। গ্রামে ছোট ছোট হোটেল, গেস্টহাউস এবং লজ ট্রেকারদের জন্য নিরাপদ জায়গা।
ঘান্দ্রুক গ্রামটি শুধু ট্রেকিংয়ের জন্য নয়; বরং একটি সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা, একটি বিশুদ্ধ প্রকৃতিযাত্রাও বটে। যাঁরা নেপালে প্রকৃতির সৌন্দর্য, শান্তিপূর্ণ জীবন এবং নতুন কিছু দেখতে চান, তাঁদের জন্য ঘান্দ্রুক হতে পারে একটি দুর্দান্ত গন্তব্য।
‘ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো’। ঋত্বিক ঘটকের এই কথা শোনেনি, এমন মানুষ কি আছে। কোথাও না কোথাও, কোনো না কোনোভাবে এই উক্তি আমরা বহুবার শুনেছি। খুব ইতিবাচক কথা নিঃসন্দেহে। তবে এই ‘ভাবা’ বা ‘ভাবনা’ কিংবা ‘চিন্তা’ শব্দটির উল্টো দিকে আছে ‘দুর্ভাবনা’ শব্দটি।
৫ ঘণ্টা আগেরোমকূপে ত্বক নষ্ট! সেই সঙ্গে নষ্ট শান্তি। বহু কিছু করেও বাগে আনা যাচ্ছে না সেগুলো; বরং ধীরে ধীরে সংখ্যা বেড়ে চলেছে। একটু ধৈর্য ধরে বসুন। এরও প্রতিকার আছে। ঘরোয়া উপায়ে ধীরে ধীরে পোরস বা রোমকূপ বড় হয়ে যাওয়ার সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
৬ ঘণ্টা আগেত্বকের বিশেষ যত্নে হোক বা না হোক, কমবেশি সবাই রোজ ত্বকে দুই বেলা ব্যবহার করেন, এমন একটি প্রসাধনী হচ্ছে ফেসওয়াশ। সাধারণত এটি খুব ভেবেচিন্তে বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না মেনে পছন্দ হলেই কিনে ফেলি। কিন্তু কাজ হয় কি না, সেদিকে অনেক সময় খেয়ালও করি না। কিন্তু নালিশ করেই যাই, অমুক ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ...
১৫ ঘণ্টা আগেকফি পান করতে গিয়ে জামাকাপড়ে পড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কখনোবা অসাবধানতাবশত কার্পেট বা মেঝেতেও পড়ে যায়। কফির দাগ তুলতে বেগ পেতে হয়। সঠিক নিয়ম জানা থাকলে কঠিন দাগ নিমেষে দূর করা সম্ভব।
১৬ ঘণ্টা আগে