Ajker Patrika

রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে ভারত—ট্রাম্পের দাবির জবাবে যা বলল নয়াদিল্লি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়সওয়াল। ছবি: পিটিআই
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়সওয়াল। ছবি: পিটিআই

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে বলে তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে ট্রাম্পের দাবির জবাবে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, অস্থির জ্বালানি বাজারে ভারতীয় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করাই সব সময় ভারতের প্রধান অগ্রাধিকার।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ভারত তেল ও গ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকারক দেশ। অস্থির জ্বালানি পরিস্থিতিতে ভারতীয় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করাই আমাদের ধারাবাহিক অগ্রাধিকার। আমাদের আমদানি নীতি সম্পূর্ণভাবে এই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্থিতিশীল জ্বালানি মূল্য ও নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের জ্বালানি নীতির দুটি প্রধান লক্ষ্য। এর মধ্যে রয়েছে—জ্বালানি উৎসের বৈচিত্র্য আনাসহ বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী জ্বালানি সংগ্রহের পরিসর বাড়ানো।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে, আমরা বহু বছর ধরে জ্বালানি ক্রয়ের ক্ষেত্রটি সম্প্রসারণের চেষ্টা চালিয়ে আসছি। গত এক দশকে এই প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিক অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনও ভারতের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা গভীর করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এই বিষয়ে আলোচনা চলছে।’

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন যে—ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা হবে না। এটা সঙ্গে সঙ্গে সম্ভব নয়, কিছুটা সময় লাগবে, কিন্তু প্রক্রিয়াটি শিগগিরই শেষ হবে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতের রুশ তেল কেনার বিষয়ে সমালোচনা করে আসছে। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বারবার বলেছেন, ভারত কেবলমাত্র নিজেদের নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে ভালো চুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি তিনি পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিচারিতারও সমালোচনা করে বলেন, ‘ইউরোপের সমস্যাই যেন বিশ্বের সমস্যা, কিন্তু বিশ্বের সমস্যাগুলো ইউরোপের সমস্যা নয়—এই মানসিকতা থেকে পশ্চিমা দেশগুলোকে বের হয়ে আসতে হবে।’

ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখাই ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় দিল্লির বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের অন্যতম কারণ ছিল।

এরই মধ্যে ট্রাম্পের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন বিরোধীরা। ভারতীয় পার্লামেন্ট লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে এক পোস্টে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ট্রাম্পকে ভয় পান।’

রাহুল গান্ধী এক্স পোস্টে লিখেন, ‘১. ট্রাম্পকেই সিদ্ধান্ত নিতে ও ঘোষণা করতে দেন যে—ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না,২. বারবার অপমানের পরও শুভেচ্ছা পাঠিয়ে যান, ৩. অর্থমন্ত্রীর আমেরিকা সফর বাতিল করেছেন, ৪. শারম আল শেখ সম্মেলনে যাননি এবং ৫. অপারেশন সিঁদুর ইস্যুতে ট্রাম্পের দাবির কোনো প্রতিবাদ করেননি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোদির গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া সব মন্ত্রীর পদত্যাগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এক্স
২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এক্স

বিজেপি শাসিত রাজ্য গুজরাট। ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তবে হঠাৎ মোদির গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল ছাড়া রাজ্যের সব মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। মন্ত্রীরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী সেই পদত্যাগপত্রগুলো গ্রহণও করেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনায় দেশের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। হঠাৎ একসঙ্গে পদত্যাগের কারণ কী? আলোচনায় নানা মত। অনেকেই ভাবছেন, নেপালের মতো শীর্ষ পদাধিকারীর ওপর থেকে কী আস্থা হারিয়েছেন ক্যাবিনেটের বাকি সদস্যরা?

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের লক্ষ্যে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি রাজ্যপাল আচার্য দেবব্রতর সঙ্গে দেখা করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের দাবি জানাবেন বলে জানা গেছে।

এ পদক্ষেপকে রাজ্যের প্রশাসনিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষত রাজ্যে আসন্ন রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী মন্ত্রীদের মধ্যে কেবল হার্শ সাঙ্গভি ও রুশিকেশ প্যাটেল নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে পারেন।

এদিকে, বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা আজ রাত ৮টার দিকে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের বাসভবনে গুজরাটের সব বিধায়কের সঙ্গে এক নৈশভোজে মিলিত হবেন। এরপর রাত ৯টা ৩০ মিনিটে মুখ্যমন্ত্রী প্যাটেল রাজ্যপাল আচার্য দেবব্রতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নতুন মন্ত্রীদের তালিকা জমা দেবেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, আগামীকাল নতুন মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের ঘোষণা আসতে পারে। প্রায় ১০ জন নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রীদের প্রায় অর্ধেককে বাদ দেওয়া হবে এই পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শাটডাউনে সপ্তাহে ক্ষতি ১৫ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। ছবি: এএফপি
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। ছবি: এএফপি

দুই সপ্তাহ ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের শাটডাউন তথা অচলাবস্থা দেশের অর্থনীতিতে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতির কারণ হতে পারে। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাতে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা ট্রেজারি সেক্রেটারি তথা মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের আগের বক্তব্য সংশোধন করেছে। বেসেন্ট বলেছিলেন প্রতিদিনই ১৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, স্কট বেসেন্ট বুধবার দুটি অনুষ্ঠানে ভুল ওই হিসাব তুলে ধরেন। তিনি সেখানে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির উদ্দেশে বলেন, তারা যেন ‘নায়ক’ হয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শাটডাউন শেষ করেন।

বেসেন্টের বক্তব্যের সংশোধনী দিয়ে ট্রেজারি বিভাগের ওই কর্মকর্তা জানান, ক্ষতির এই হিসাব হোয়াইট হাউসের কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজার্সের এক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে বেসেন্ট বলেন, শাটডাউন এখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ‘মূল কাঠামোতেও আঘাত করতে’ শুরু করেছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে বিনিয়োগের ঢল নেমেছে—বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই)—তা এখনো টেকসই এবং আরও বাড়ছে, কিন্তু ফেডারেল সরকারের শাটডাউন এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেসেন্ট বলেন, ‘বাজারে চাহিদা আছে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড) ট্রাম্প তাঁর নীতির মাধ্যমে এক বিশাল উত্থান ঘটিয়েছেন। এখন আমাদের পথের একমাত্র বাধা হলো এই সরকার অচলাবস্থা।’ তিনি বলেন, রিপাবলিকান কর আইন ও ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কনীতি বিনিয়োগের এই উত্থান অব্যাহত রাখবে এবং প্রবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করবে।

বেসেন্টের ভাষায়, ‘আমরা এমন এক সময়ের মধ্যে থাকতে পারি, যেমন উনিশ শতকের শেষ দিকে রেলপথের বিকাশ হয়েছিল, বা নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেট আর অফিস প্রযুক্তির বিস্ফোরণ ঘটেছিল।’

বেসেন্ট আরও বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া ২০২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি আগের বছরের তুলনায় কমেছে। ২০২৪ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১ দশমিক ৮৩৩ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্ক জানাননি, তবে বলেন যে আগামী কয়েক বছরে ঘাটতির অনুপাত জিডিপির তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এখনো ট্রেজারি বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে বার্ষিক ঘাটতির হিসাব প্রকাশ করেনি।

গত সপ্তাহে কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (সিবিও) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ২০২৫ অর্থবছরে ঘাটতি সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮১৭ ট্রিলিয়ন ডলারে, যদিও ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে শুল্ক রাজস্ব বেড়েছে ১১৮ বিলিয়ন ডলার। বেসেন্ট সিএনবিসির অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ঘাটতি-জিডিপি অনুপাত এখন পাঁচের ঘরে রয়েছে।’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি চান এই অনুপাত তিনের ঘরে নামুক? জবাবে বেসেন্ট বলেন, ‘হ্যাঁ, তা এখনো সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি আরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি, কম খরচ করি এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখি, তাহলে অনুপাতটি নামানো সম্ভব হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে হিমশিম হামাস, গাজার ‘বাস্তবতা বদলানোর’ হুমকি ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ২৩
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভাঙার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। এদিকে হামাস জানিয়েছ—বিশেষ সরঞ্জাম ছাড়া তারা আর কোনো নিহত ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিতে পারবে না। এরপরই এমন হুঁশিয়ারি দেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল বুধবার রাতে হামাস আরও দুই ইসরায়েলির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৯ নিহত জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের হাতে ফিরেছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাস যে আরও একটি মরদেহ ফেরত দিয়েছে, তা কোনো ইসরায়েলি জিম্মির নয়।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজা থেকে মিসরের রাফা সীমান্ত পারাপারটি আজ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে ‘পরবর্তী কোনো সময়ে’ খোলা হবে। জাতিসংঘ ও মানবিক সংস্থাগুলো এ পথকে গাজায় সাহায্য পৌঁছানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা কোগাতের এক মুখপাত্র জানান, রাফা ক্রসিং দিয়ে ভবিষ্যতেও কোনো মানবিক সহায়তা যেতে দেওয়া হবে না, তবে সীমিত ব্যক্তিগত পারাপার চলবে।

ওই মুখপাত্র বলেন, রাফা সীমান্ত দিয়ে কোনো মানবিক সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে কখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। গাজায় সাহায্য এখনো প্রবেশ করছে অন্য পথ দিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় গাজায় ‘সম্পূর্ণ মানবিক সহায়তা’ নিশ্চিত করা ও সব জিম্মিকে—জীবিত বা মৃত—ফেরত আনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। আঞ্চলিক কূটনীতিকেরা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রথম দিকের দিনগুলো ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ ও ‘সংবেদনশীল’ হবে। জিম্মিদের মরদেহ ফেরত ও সাহায্য প্রবেশের মতো বিষয়গুলোই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার অনেক জটিল অংশ নিয়ে এখনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।

ইসরায়েল ২৮ জন নিহত জিম্মির মরদেহ ফেরত পাওয়ার আশা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, হামাস এখনো বাকি মরদেহগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে বিষয়টিতে আস্থা রাখছে না ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, যদি হামাস চুক্তির শর্ত না মানে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে ইসরায়েল আবার যুদ্ধ শুরু করবে এবং হামাসকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে গাজার বাস্তবতা পরিবর্তন করবে।

অন্যদিকে হামাসের সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আমাদের হেফাজতে থাকা সব জীবিত ইসরায়েলি বন্দী ও যেসব মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল, সেগুলো ফেরত দিয়েছি। বাকি মরদেহগুলো উদ্ধারে বিশেষ সরঞ্জাম ও ব্যাপক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

চুক্তির আওতায় ইসরায়েলকে ৩৬০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহও ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯০টি মরদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক মরদেহেই নির্যাতন ও গুলির চিহ্ন রয়েছে।

গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান আহমেদ আল-ফাররা বলেন, প্রায় সব মরদেহেই চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল, হাত বাঁধা ছিল এবং কপালে গুলি করা হয়েছে। প্রায় সবাইকে যেন সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া নিয়ে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে নতুন করে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাস এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জন গাজা থেকে আটক হয়েছিলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই আনা হয়নি।

হামাসের ওপর চাপ বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, হামাস যদি চুক্তির শর্ত না মানে, তাহলে তিনি ইসরায়েলকে পুনরায় গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করার অনুমতি দিতে পারেন। ট্রাম্প সিএনএনকে ফোনে বলেন, ‘ইসরায়েল আমার নির্দেশ পেলে আবার রাস্তায় নামবে। তারা চাইলে এক মুহূর্তেই হামাসকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে।’

কাৎজের হুমকির পর গতকাল বুধবার রাতে এক মার্কিন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, গাজা এখন এমনভাবে ‘ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে’ যে, মরদেহ উদ্ধারে অনেক বাধা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শুধু চারটি মরদেহ ফেরত আসায় অনেক ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছিল। তবু তারা পরদিনই আরও মরদেহ ফেরত দিয়েছে, যত দ্রুত আমরা তাদের গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছি। আমরা এখন এমন একটি পরিকল্পনা বিবেচনা করছি, যেখানে মরদেহ উদ্ধারকারীদের পুরস্কৃত করা হবে।’

এদিকে মধ্যস্থতাকারী দেশ তুরস্কের গাজায় মরদেহ উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীনা জে–১০সিসহ ১৩২ যুদ্ধবিমান কিনছে ইন্দোনেশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীনের তৈরি জে–১০সি যুদ্ধবিমান। ছবি: সংগৃহীত
চীনের তৈরি জে–১০সি যুদ্ধবিমান। ছবি: সংগৃহীত

চীনের তৈরি ৪ দশমিক ৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে–১০সি কিনতে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, দেশটি চীন নির্মিত ৪২টি চেংদু জে-১০সি যুদ্ধবিমান কিনতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পশ্চিমা বিশ্বের বাইরের কোনো দেশের যুদ্ধবিমান কেনার পথে হাঁটছে জাকার্তা। এর বাইরে, দেশটি তুরস্ক ও ফ্রান্সের কাছ থেকে যথাক্রমে ৪২ ও ৪২টি যুদ্ধবিমান কিনবে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে দেশটি স্বল্প সময়ের মধ্যে ১৩২টি যুদ্ধবিমান কিনবে।

বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, রাজধানী জাকার্তায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী শাফরি শামসুদ্দিন বলেন, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। শামসুদ্দিন বলেন, ‘শিগগিরই এই বিমানগুলো জাকার্তার আকাশে উড়বে।’ তবে কেনা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি আঞ্চলিক সংবেদনশীলতা তৈরি করতে পারে এবং এর ভূরাজনৈতিক প্রভাবও থাকতে পারে। গত মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফ্রেগা ওয়েনাস প্রথমবার জে-১০ কেনার বিষয়টি প্রকাশ করেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনী তখনো চীনা এই যুদ্ধবিমানগুলোর সক্ষমতা যাচাই করছিল, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এগুলো দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে শক্তিশালী করতে পারবে।

অর্থমন্ত্রী পুরবায়া ইউধি সদেও বুধবার নিশ্চিত করেছেন, চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বরাদ্দ অনুমোদন করেছে তাঁর মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, ‘সবকিছু প্রস্তুত। তবে আমি আবার নিশ্চিত হয়ে নিতে চাই, কখন এই বিমানগুলো বেইজিং থেকে জাকার্তায় পৌঁছাবে।’

প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়া সামরিক সরঞ্জাম আধুনিকীকরণ এবং প্রতিরক্ষাশিল্প শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৯ সালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সুবিয়ান্তো চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন, নতুন অস্ত্র ব্যবস্থা, নজরদারি এবং সীমান্ত প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে।

বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের তৈরি যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই পুরোনো এবং আপগ্রেড বা বদলানোর প্রয়োজন আছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত জুনে ঘোষণা দেন, তুরস্ক ইন্দোনেশিয়ায় ৪৮টি কান যুদ্ধবিমান রপ্তানি করবে। এই বিমানগুলো তুরস্কেই তৈরি হবে এবং সেখান থেকেই ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হবে বলে জানান এরদোয়ান।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়া ফ্রান্সের দাসো কোম্পানির ৪২টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি সম্পন্ন করে। এই যুদ্ধবিমানগুলোর প্রথম চালান ২০২৬ সালের শুরুর দিকে পাওয়ার কথা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ইন্দোনেশিয়া ফ্রান্সের তৈরি দুটি স্করপিন ইভলভড সাবমেরিন এবং ১৩টি থ্যালেস গ্রাউন্ড কন্ট্রোল রাডার কেনার ঘোষণাও দিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বেনি সুকাদিস বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনবদ্য অবস্থান নিলেও সরকারের উচিত এই সিদ্ধান্তের ভূরাজনৈতিক প্রভাব অবমূল্যায়ন না করা। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল থাকার পর বেইজিং থেকে বড় অস্ত্র কেনা ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও কূটনৈতিক প্রভাবের প্রেক্ষাপটে ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা অভিমুখে পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবেও পড়া যেতে পারে।’

সুকাদিস সতর্ক করে বলেন, ‘এই পদক্ষেপ দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে আঞ্চলিক সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দিতে পারে, যেখানে চীনের প্রত্যক্ষ স্বার্থ জড়িত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত