সৌগত বসু
বাংলাদেশে ঠিক কতসংখ্যক নদী আছে, তা নিয়ে প্রতিবছর বিতর্ক হয়। কখনো সংখ্যা বাড়ে, কখনো কমে। সরকার থেকে প্রকাশিত তালিকাতেও বছর বছর সংখ্যা বদলে যায়। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এই দেশে নদীর সংখ্যা ১ হাজার ১৫৬টি। শুনে মনে হতে পারে, যেন বাড়ি থেকে বের হলেই চোখে পড়বে জলস্রোত, নৌকা, চর—সব মিলিয়ে এক টুকরো বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তবতা খানিকটা অন্য রকম।
ঢাকার মতো যান্ত্রিক শহরে বাস করলে নদী
যেন নিছকই এক স্মৃতি। নদীর নামে যে ধূসর জলধারাগুলো চোখে পড়ে; তাতে না থাকে সেই প্রবাহ, না থাকে প্রাণ। অথচ এই দেশের বুক চিরে বয়ে চলা অসংখ্য নদী কখনো মানুষের জীবিকা, কখনো সংস্কৃতি, আবার কখনো ভালোবাসার প্রতীক হয়ে এসেছে শত শত বছর ধরে।
আমারও একটা সময় পর্যন্ত ছিল এই অপূর্ণতা; নদী না দেখার, না ছোঁয়ার। শহুরে নদী দেখে যে মন ভরত না, সে কথা বলা বাহুল্য। হুট করে কোথাও গেলে বড় কোনো কংক্রিট ব্রিজের নিচ দিয়ে দেখা নদীটুকু যেন জানালার কাচে আটকে যেত। চোখ ছুঁয়ে গেলেও মন ছুঁতে পারত না।
এভাবেই কেটে গেছে বত্রিশটি বসন্ত। ভেবেছিলাম, নদী দেখা বোধ হয় আমার জীবনে আর হয়ে উঠবে না। কিন্তু হুট করে একদিন, মেঘ না চাইতে যেমন বৃষ্টি নামে, তেমনই এক সুযোগ এসে ধরা দিল; নদীর সঙ্গে কাটাতে হবে তিন দিন।
টানা ৭২ ঘণ্টা নদীর সঙ্গে থেকেছি। নদীর আলাদা শব্দ শুনেছি। ‘শোন্ মা আমিনা, রেখে দে রে কাজ ত্বরা করি মাঠে চল,/ এল মেঘনায় জোয়ারের বেলা এখনি নামিবে ঢল।’ এই কবিতা যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েছি, তখন মনে হয়েছে, নদী কী বিশাল! কী ভয়ানক! সেই মেঘনায় দুটি দিন ও রাত কাটিয়ে এলাম। মেঘনা এত বড়! এত্ত! যেন শেষ হচ্ছিল না। ও, বলা হয়নি ‘জ্যোৎস্নার গল্প’ হাউসবোটে ঢাকার মুন্সিগঞ্জের কুণ্ডের বাজার বা বেতকা বাজার থেকে এপ্রিলের এক রাতে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হই। কুণ্ডের বাজার নদীর ঘাটে জ্যোৎস্নার গল্প যেন আমার বাকি তিন দিন নদী ভ্রমণের গল্প লিখতে নোঙর করা ছিল।
রাতে কুণ্ডের বাজার ঘাটেই চরের মাঝে হাউসবোটে চাঁদ আর নদীর শব্দে পার হলো। খুব ভোরে যাত্রা শুরু হলো ইচ্ছামতী নদী দিয়ে। বেলা বাড়তে বাড়তে কখন যেন সেই মেঘনায় চলে এলাম। ঢাকার চারপাশে মেঘনার পানি কালো। শহুরে আবেশ ছেড়ে বের হতেই মেঘনার সবুজাভ পানি দেখা দিল। সারা জীবন পদ্মার ঘোলা জল দেখে বড় হওয়া মানুষ সারা দিন এমন সবুজাভ বিশাল জলরাশিতে স্বভাবত মুগ্ধ ছিলাম। সন্ধ্যায় আমাদের হাউসবোট নোঙর করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভৈরব বাজারে। এর মধ্যে কখন যেন মেঘনা পার হয়ে গল্পের তিতাস নদীতে চলে এসেছি। সহযাত্রীকে বলেছিলাম তখন, এই নদীর গল্পই লিখেছিলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। তবে ভৈরব বাজারে তিতাসের পাড় ছিল নোংরা। শহুরে গন্ধ পেলে মানুষ যেন জাতীয় পশু হয়ে ওঠে। নদীকে তারা খুব অবহেলা করে।
নদী ভ্রমণের মজা ছিল, নদী দেখা আর মন ভরে নদীর মাছ খাওয়া। সেই ইচ্ছা শতভাগ না হলেও মনমতোই পূরণ হয়েছিল হাউসবোটে। আমাদের রুটিন ছিল, সারা দিন নৌকা চলবে আর রাতে কোনো একটা শহুরে ঘাটে বিরতি। সাধারণত নিরাপত্তা এবং অন্য ইস্যুর কারণে বড় নদীতে রাতে এসব হাউসবোট চলাচল করে না। যাহোক, ভৈরব শেষ করে আমাদের বোট গিয়ে পড়ল ঘোড়াউত্রা নদীতে। এই নদীর নাম আমি সেদিনই প্রথম জেনেছি। হালকা সবুজাভ জল আর ধীর লয়ে বয়ে চলা স্রোত! এই অপূর্ব সৌন্দর্য ছিল ওই নদীতে। সারা দিন হাউসবোট ঘোড়াউত্রা পাড়ি দিয়ে চলে এল কিশোরগঞ্জের ইটনায়। ওই দিন ইটনাতে রাত কাটানো হলো।
ধীরে ধীরে সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরদিন খুব ভোরে আমরা চলে এলাম সুরমা নদীতে। সিলেটের সুরমা আর সব নদীর মতো নয়। সুরমা অনেকটা এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে। নদীতে গেছি, তবে বৃষ্টি হবে না; এমন ভাবনা নিয়ে যখন মন খারাপ, তখন আকাশ বেয়ে বৃষ্টি এল ঝরঝরিয়ে। নদীর দুই পাশের গ্রামগুলো বৃষ্টির পর আরও স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছিল। বিকেল ৫টায় আমাদের নৌকা সুনামগঞ্জের টুকের বাজারে নোঙর করল। সেই সঙ্গে শেষ হলো নদী দেখার তিন দিন।
এই তিন দিনে পাড়ি দিয়েছি দেশের ৩৫০ কিলোমিটার জলপথ। তবে এটা সচরাচর বা বাণিজ্যিকভাবে যাওয়ার মতো নদী ভ্রমণ ছিল না। কিন্তু চাইলেই হাউসবোট ভাড়া নিয়ে নদী দেখতে যাওয়া যায়। এ ছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্যাকেজেও নদীপথে ভ্রমণ পরিচালনা করে। এতে খরচ হবে কেবিন অনুযায়ী জনপ্রতি ৭ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
এসেছে বর্ষা। এখন অনেক শুকিয়ে যাওয়া নদী ভরে যাবে। আরও নিবিড়ভাবে জলপথে দেশ দেখার সুযোগ মিলবে।
সতর্কতা
এ সময় নদীপথে চলাচল করলে অবশ্যই নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় লাইফ জ্যাকেট বা জীবন বাঁচানোর সামগ্রী সঙ্গে থাকতে হবে। এ সময় বড় নদীতে বিনোদন ভ্রমণ না করাই ভালো। ছোট অথবা স্রোত কম রয়েছে, তেমন নদীতে যাওয়া ভালো।
বাংলাদেশে ঠিক কতসংখ্যক নদী আছে, তা নিয়ে প্রতিবছর বিতর্ক হয়। কখনো সংখ্যা বাড়ে, কখনো কমে। সরকার থেকে প্রকাশিত তালিকাতেও বছর বছর সংখ্যা বদলে যায়। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এই দেশে নদীর সংখ্যা ১ হাজার ১৫৬টি। শুনে মনে হতে পারে, যেন বাড়ি থেকে বের হলেই চোখে পড়বে জলস্রোত, নৌকা, চর—সব মিলিয়ে এক টুকরো বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তবতা খানিকটা অন্য রকম।
ঢাকার মতো যান্ত্রিক শহরে বাস করলে নদী
যেন নিছকই এক স্মৃতি। নদীর নামে যে ধূসর জলধারাগুলো চোখে পড়ে; তাতে না থাকে সেই প্রবাহ, না থাকে প্রাণ। অথচ এই দেশের বুক চিরে বয়ে চলা অসংখ্য নদী কখনো মানুষের জীবিকা, কখনো সংস্কৃতি, আবার কখনো ভালোবাসার প্রতীক হয়ে এসেছে শত শত বছর ধরে।
আমারও একটা সময় পর্যন্ত ছিল এই অপূর্ণতা; নদী না দেখার, না ছোঁয়ার। শহুরে নদী দেখে যে মন ভরত না, সে কথা বলা বাহুল্য। হুট করে কোথাও গেলে বড় কোনো কংক্রিট ব্রিজের নিচ দিয়ে দেখা নদীটুকু যেন জানালার কাচে আটকে যেত। চোখ ছুঁয়ে গেলেও মন ছুঁতে পারত না।
এভাবেই কেটে গেছে বত্রিশটি বসন্ত। ভেবেছিলাম, নদী দেখা বোধ হয় আমার জীবনে আর হয়ে উঠবে না। কিন্তু হুট করে একদিন, মেঘ না চাইতে যেমন বৃষ্টি নামে, তেমনই এক সুযোগ এসে ধরা দিল; নদীর সঙ্গে কাটাতে হবে তিন দিন।
টানা ৭২ ঘণ্টা নদীর সঙ্গে থেকেছি। নদীর আলাদা শব্দ শুনেছি। ‘শোন্ মা আমিনা, রেখে দে রে কাজ ত্বরা করি মাঠে চল,/ এল মেঘনায় জোয়ারের বেলা এখনি নামিবে ঢল।’ এই কবিতা যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েছি, তখন মনে হয়েছে, নদী কী বিশাল! কী ভয়ানক! সেই মেঘনায় দুটি দিন ও রাত কাটিয়ে এলাম। মেঘনা এত বড়! এত্ত! যেন শেষ হচ্ছিল না। ও, বলা হয়নি ‘জ্যোৎস্নার গল্প’ হাউসবোটে ঢাকার মুন্সিগঞ্জের কুণ্ডের বাজার বা বেতকা বাজার থেকে এপ্রিলের এক রাতে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হই। কুণ্ডের বাজার নদীর ঘাটে জ্যোৎস্নার গল্প যেন আমার বাকি তিন দিন নদী ভ্রমণের গল্প লিখতে নোঙর করা ছিল।
রাতে কুণ্ডের বাজার ঘাটেই চরের মাঝে হাউসবোটে চাঁদ আর নদীর শব্দে পার হলো। খুব ভোরে যাত্রা শুরু হলো ইচ্ছামতী নদী দিয়ে। বেলা বাড়তে বাড়তে কখন যেন সেই মেঘনায় চলে এলাম। ঢাকার চারপাশে মেঘনার পানি কালো। শহুরে আবেশ ছেড়ে বের হতেই মেঘনার সবুজাভ পানি দেখা দিল। সারা জীবন পদ্মার ঘোলা জল দেখে বড় হওয়া মানুষ সারা দিন এমন সবুজাভ বিশাল জলরাশিতে স্বভাবত মুগ্ধ ছিলাম। সন্ধ্যায় আমাদের হাউসবোট নোঙর করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভৈরব বাজারে। এর মধ্যে কখন যেন মেঘনা পার হয়ে গল্পের তিতাস নদীতে চলে এসেছি। সহযাত্রীকে বলেছিলাম তখন, এই নদীর গল্পই লিখেছিলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। তবে ভৈরব বাজারে তিতাসের পাড় ছিল নোংরা। শহুরে গন্ধ পেলে মানুষ যেন জাতীয় পশু হয়ে ওঠে। নদীকে তারা খুব অবহেলা করে।
নদী ভ্রমণের মজা ছিল, নদী দেখা আর মন ভরে নদীর মাছ খাওয়া। সেই ইচ্ছা শতভাগ না হলেও মনমতোই পূরণ হয়েছিল হাউসবোটে। আমাদের রুটিন ছিল, সারা দিন নৌকা চলবে আর রাতে কোনো একটা শহুরে ঘাটে বিরতি। সাধারণত নিরাপত্তা এবং অন্য ইস্যুর কারণে বড় নদীতে রাতে এসব হাউসবোট চলাচল করে না। যাহোক, ভৈরব শেষ করে আমাদের বোট গিয়ে পড়ল ঘোড়াউত্রা নদীতে। এই নদীর নাম আমি সেদিনই প্রথম জেনেছি। হালকা সবুজাভ জল আর ধীর লয়ে বয়ে চলা স্রোত! এই অপূর্ব সৌন্দর্য ছিল ওই নদীতে। সারা দিন হাউসবোট ঘোড়াউত্রা পাড়ি দিয়ে চলে এল কিশোরগঞ্জের ইটনায়। ওই দিন ইটনাতে রাত কাটানো হলো।
ধীরে ধীরে সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরদিন খুব ভোরে আমরা চলে এলাম সুরমা নদীতে। সিলেটের সুরমা আর সব নদীর মতো নয়। সুরমা অনেকটা এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে। নদীতে গেছি, তবে বৃষ্টি হবে না; এমন ভাবনা নিয়ে যখন মন খারাপ, তখন আকাশ বেয়ে বৃষ্টি এল ঝরঝরিয়ে। নদীর দুই পাশের গ্রামগুলো বৃষ্টির পর আরও স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছিল। বিকেল ৫টায় আমাদের নৌকা সুনামগঞ্জের টুকের বাজারে নোঙর করল। সেই সঙ্গে শেষ হলো নদী দেখার তিন দিন।
এই তিন দিনে পাড়ি দিয়েছি দেশের ৩৫০ কিলোমিটার জলপথ। তবে এটা সচরাচর বা বাণিজ্যিকভাবে যাওয়ার মতো নদী ভ্রমণ ছিল না। কিন্তু চাইলেই হাউসবোট ভাড়া নিয়ে নদী দেখতে যাওয়া যায়। এ ছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্যাকেজেও নদীপথে ভ্রমণ পরিচালনা করে। এতে খরচ হবে কেবিন অনুযায়ী জনপ্রতি ৭ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
এসেছে বর্ষা। এখন অনেক শুকিয়ে যাওয়া নদী ভরে যাবে। আরও নিবিড়ভাবে জলপথে দেশ দেখার সুযোগ মিলবে।
সতর্কতা
এ সময় নদীপথে চলাচল করলে অবশ্যই নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় লাইফ জ্যাকেট বা জীবন বাঁচানোর সামগ্রী সঙ্গে থাকতে হবে। এ সময় বড় নদীতে বিনোদন ভ্রমণ না করাই ভালো। ছোট অথবা স্রোত কম রয়েছে, তেমন নদীতে যাওয়া ভালো।
ত্বকের বিশেষ যত্নে হোক বা না হোক, কমবেশি সবাই রোজ ত্বকে দুই বেলা ব্যবহার করেন, এমন একটি প্রসাধনী হচ্ছে ফেসওয়াশ। সাধারণত এটি খুব ভেবেচিন্তে বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না মেনে পছন্দ হলেই কিনে ফেলি। কিন্তু কাজ হয় কি না, সেদিকে অনেক সময় খেয়ালও করি না। কিন্তু নালিশ করেই যাই, অমুক ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ...
৮ ঘণ্টা আগেকফি পান করতে গিয়ে জামাকাপড়ে পড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কখনোবা অসাবধানতাবশত কার্পেট বা মেঝেতেও পড়ে যায়। কফির দাগ তুলতে বেগ পেতে হয়। সঠিক নিয়ম জানা থাকলে কঠিন দাগ নিমেষে দূর করা সম্ভব।
৯ ঘণ্টা আগেএই রোদ, এই বৃষ্টি। এই আবহাওয়ায় সব বয়সী মানুষ নানা ধরনের ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত গরমে, বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুদের ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়, পাশাপাশি এই সময় ওদের মেজাজও খিটমিটে হয়ে থাকে। তাই স্কুলগামী শিশুদের খাবার, জীবনযাপন এবং তাদের খিটমিটে মেজাজ ঠিক রাখার জন্য অভিভাবকদের...
১০ ঘণ্টা আগেরাজা হেনরি ২-এর মনে হয়েছিল, পাই ও পেস্ট্রি খেলে তাঁর সৈন্যরা সব অলস হয়ে যাবে। সে তো আর হতে দেওয়া যায় না। তাই তিনি এ দুটি খাবার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। সেটাই হয়ে গেল আইন। ১২ শতকের এই আইনের নাম ‘পাই অ্যান্ড পেস্ট্রি অ্যাক্ট’। এই আইনে বলা হয়েছিল, রোববার ছাড়া অন্য দিন পাই বা পেস্ট্রি বিক্রি
১০ ঘণ্টা আগে