Ajker Patrika

দেশে বাড়ছে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ সতর্ক থাকবেন যেভাবে

ডা. কাকলী হালদার
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫৮
দেশে বাড়ছে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ সতর্ক থাকবেন যেভাবে

অ্যানথ্রাক্স হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি তীব্র এবং মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা মূলত গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়। বাংলায় এটি তড়কা রোগ নামেও পরিচিত। এই নাম এসেছে গ্রিক শব্দ ‘অ্যানথ্রাক্স’ থেকে, যার অর্থ কয়লা। রোগের কারণে ত্বকে কালো ক্ষত কিংবা ঘা তৈরি হয়।

বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি

অ্যানথ্রাক্স পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশের মাটিতেই পাওয়া যায়। সুপ্ত দশায় এর স্পোর মাটির অভ্যন্তরে দীর্ঘকাল টিকে থাকে। তবে উন্নত দেশগুলোতে ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচির কারণে রোগটি এখন বিরল বা বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায়। অন্যদিকে আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশে এটি এখনো এন্ডেমিক বা আঞ্চলিক সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কিছু আফ্রিকান দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে।

রোগ যেভাবে ছড়ায়

অ্যানথ্রাক্স সাধারণত এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ছড়ায় না। এটি স্পোরের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।

ত্বকের মাধ্যমে: ত্বকে কোনো ক্ষত বা কাটা স্থান দিয়ে স্পোর প্রবেশ করলে সংক্রমণ হয়। এটিই মানবদেহে অ্যানথ্রাক্সের সবচেয়ে সাধারণ রূপ।

খাদ্যের মাধ্যমে: সংক্রমিত বা অসুস্থ পশুর মাংস ভালোভাবে রান্না না করে খেলে বা কাঁচা মাংসের সংস্পর্শে এলে সংক্রমণ হতে পারে।

নিশ্বাসের মাধ্যমে: অ্যানথ্রাক্সের স্পোর নিশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করলে সংক্রমণ হতে পারে। জীবাণুযুদ্ধের ক্ষেত্রে এই পথই সবচেয়ে বিপজ্জনক।

অ্যানথ্রাক্স রোগের লক্ষণ

এ রোগের লক্ষণগুলো নির্ভর করে স্পোর শরীরের কোথায় প্রবেশ করছে তার ওপর।

রোগের প্রকারভেদ ও প্রধান লক্ষণ

ত্বকের অ্যানথ্রাক্সে প্রথমে ছোট চুলকানিযুক্ত ফোসকা বা প্যাপুল হয়। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সেটি ফেটে গিয়ে একটি কালো রঙের, ব্যথাহীন ক্ষত বা এসচার সৃষ্টি করে, যা কয়লার মতো দেখায়। আশপাশের চামড়া ফুলে যেতে পারে।

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অ্যানথ্রাক্সের ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, রক্ত জমাট বাঁধা এবং গলা অথবা খাদ্যনালিতে ঘা হয়। তবে এটি অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।

নিশ্বাসের অ্যানথ্রাক্সের ক্ষেত্রে ফ্লুর মতো সাধারণ লক্ষণ দিয়ে শুরু হয়। জ্বর, ক্লান্তি, মাংসপেশিতে ব্যথা ইত্যাদি এর প্রধান লক্ষণ। তবে কয়েক দিনের মধ্যে তা শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ও শকে পরিণত হয়, যা মারাত্মক আকার ধারণ করে।

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রোগনির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগের লক্ষণ ও রোগীর ইতিহাস থেকে চিকিৎসকেরা অ্যানথ্রাক্স সন্দেহ করেন। তা ছাড়া ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ত্বকের কালো ক্ষত দেখে সন্দেহ করা হয়।

ল্যাব পরীক্ষায় ত্বকের ক্ষত বা রক্ত থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গ্রাম স্টেইন ও ব্যাকটেরিয়ার কালচার পরীক্ষা করা হয়। বর্তমানে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু দ্রুত শনাক্ত করার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।

চিকিৎসা

অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট রোগ হওয়ায় এর চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়ে। ত্বকের অ্যানথ্রাক্সের জন্য সাধারণত ডক্সিসাইক্লিন বা সিপ্রোফ্লক্সাসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

নিশ্বাসের অ্যানথ্রাক্স মারাত্মক হওয়ার কারণে এর জন্য একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য সহায়ক চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিরোধ

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের জন্য ‘ওয়ান হেলথ’ পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি, যেখানে মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্যকে একত্রে দেখা হয়।

পশুর টিকাদান: আক্রান্ত এলাকায় গবাদিপশুকে নিয়মিত অ্যানথ্রাক্স টিকা দেওয়া সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।

নিরাপদ পশু জবাই: অসুস্থ পশুর মাংস খাওয়া বা জবাই করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মৃত বা অসুস্থ পশুর দেহ উন্মুক্ত না রেখে মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা: কসাই বা পশু নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের ক্ষতযুক্ত ত্বকের মাধ্যমে সংক্রমণ এড়াতে রাবার গ্লাভস, মাস্ক ও অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক পোশাক ব্যবহার করা উচিত।

মানুষের টিকা: সাধারণত সামরিক বাহিনীর সদস্য কিংবা ল্যাব কর্মীদের মতো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য অ্যানথ্রাক্সের টিকা রয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য এটি রুটিন টিকা নয়।

সচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ

বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে সচেতন করতে হবে। সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জনসাধারণের আতঙ্ক দূর করে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব।

প্রতিরোধ জরুরি

» অ্যানথ্রাক্স প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। তাই স্থানীয় ভাষায় পোস্টার, লিফলেট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যানথ্রাক্সের সব তথ্য উন্মুক্ত থাকা জরুরি। এতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে।

» পশু পালন এবং মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি।

» অ্যানথ্রাক্স একটি প্রাচীন রোগ হলেও এটি এখন পর্যন্ত জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ। জনগণকে সচেতন করা এবং সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এই মারাত্মক রোগ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

পরামর্শ দিয়েছেন: সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ, দুই যুবক আটক

ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে: সেনাসদর

দূতাবাসে আফগানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নারীদের বাধা, ‘কোনো ভূমিকা নেই’ বলল ভারত

বিয়ের আংটি পরলেন ইশরাক

ওকে বললে আমাকে নোবেলটা দিয়ে দিত: মাচাদোর সঙ্গে ফোনালাপ শেষে বললেন ট্রাম্প

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত